Saturday 28 October 2017

'প্রেসের কবিতা'র ঢাকা




ঐ যে ভাই কাঙ্গাল হরিনাথের ছাপাখানাঃ
চাষাভুষার চালচিত্র ছাপানোর পাশাপাশি বেশ কিছু গান বেধে
পরিত্রান চেয়েছিলো লালনের আস্তানায়
সে-ছাপাখানার পত্রিকাতে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের কড়া সমালোচনার প্রতিক্রিয়াতে
রামকিঙ্কর'কে এম্পাওয়ার করতে
রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ ছেড়ে শান্তিনিকেতনে চলে গেলো
আর কিঙ্করের তাড়নায় বাংলাদেশের নভেরা হারালো প্যারিসের কুয়াশায়

একদল বালক বালিকা পায়ে কেডস জিনস আর হলুদ টি শার্ট গায়ে চড়ায়ে
গোলাপ ফুলদের বসরাই মিথের কাছে  ঢাকার মানুষদের বিক্রি করলো
ঢাকার মানুষেরা হলুদ টি-শার্টের কাছে শিলাইদহের কদম ফুল
শিলাইদহের কদম ফুলের কাছে কাস্মিরের আপেলের বিচি
কাস্মিরের আপেলের কাছে অরুনাচলের আখরোট
অরুনাচলের আখরোটের কাছে ইস্তাম্বুলের আতরি রুমাল
ইস্তাম্বুলের আতরি রুমালের কাছে মিটফোর্ডের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
মিটফোর্ডের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে সিঙ্গাপুরের এয়ার এম্বুলেন্স
সিঙ্গাপুরের এয়ার এম্বুলেন্সের কাছে চিনের দোয়াত কলম
চিনের দোয়াত কলমের কাছে কাঙ্গাল হরিনাথের ছাপাখানা
কাংগাল হরিনাথের ছাপাখানার কাছে ব্লুমসবারির ট্রেডল প্রেস
ব্লুমসবারির  ট্রেডল প্রেসের কাছে আহমেদ মুজিবের 'প্রেসের কবিতা'

'প্রেসের কবিতা'র কাছে বালক বালিকারা শুধালোঃ

একে কি শিত বলে না কি একে কি শিতের মমি বলে

শিতকে শিতকাল বানাতে শিতের কাছে গাজর ফুলকপি ইত্যকার
তেলচিত্রের রংগুলো ক্যানভাসে জুবুথুবু
শুকাবে না কি কুকড়াবে না কি মচকাবে
এরকম দোদুল্যমানতায় ইংলিশ রোডের নাচুনিদের কাছে
আগুনের অরিজিনাল বল্লরিঃ নাচের ভিতরে অনেক রকম গান
সব্বাই'র স্বরলিপির সাথে সব্বাই'র স্বরলিপির  দেখভাল
কিন্তু ছেলেমেয়েকে চিনতে না পেরে আব্বাগন আম্মাগন নাকাল
যেমন কদমেরা চিনতে পারে নাই নিজেদের গায়ে চড়ানো হলুদ টি-শার্ট
মৌসুমের ভজঘটে গ্রিস্মকাল'টা চিরস্থায়ি হলে যেরকম'টা হয় আর কি

নিম্ন মধ্যবিত্ত মুড়িঘন্টে সোনালি ইরির ভাত দলা পাকাতে পাকাতে
স্কিতজোফ্রেনিক জমজ কঙ্কন আধোস্বরে বলেই ফেল্লোঃ
'কচি'র কবিতা তোমার বন্ধুদের ভিতর সবচেয়ে স্মার্ট আর পরিচ্ছন্ন'
'প্রেসের কবিতা' সংগ্রহের কবি-নাম মৌলিকতার আহমেদ মুজিব
ডাক নাম কচি আমাদের থেকে কয়েক বছরের বড়

'প্রেসের কবিতা' দেখতে কি রকম ?
এ-প্রশ্নের উত্তরে আমরা যদি বলিঃ ওটা একটা প্রেসমত ছিলো
তাহলে প্রেসগুলা তখনকার দিনে কি রকম ছিলো
ফর্মা পুরনের যোগ বিয়োগের সমিকরনের
অসম প্রান্তে এবং ডিজিটাল ছাপাছাপির আগে পরে
কচি আমার এবং কঙ্কনের হৃদয় ছুয়েছেনে
নিজেদের প্রেমিকের নাম আমার এবং কঙ্কনের গুব্লেট
কিন্তু প্রেসের কবিতার কবি নাম পার্মানেন্ট ইনলেট

বৈরি শিবিরে পা দিতে একজন বলে উঠলোঃ
'প্রেসের কবিতা নামে কোন বই ছাপা হয়েছিল বলে সত্যিই আমি জানতাম না
সেক্স চেঞ্জে ব্যার্থ মেনোপোজে ভোগা
এক ইভেন্টস ম্যানেজার কবি ও গল্পকার অভিমান ভরে বল্লোঃ
কচি আমাকে কোনদিন ওর কোন বই দেয় নাই
'প্রেসের কবিতা' না-জানা এবং না-পাওয়া দুইজন মিডিয়াপাড়াতে গেলো
আর মিডিয়াপাড়া তখন অজানা এবং অপাওয়ার অপয়া ঢেকুরের মাঝখানে
আল্লামা ইকবাল দোহাই পেড়ে খোদা-হাফেজকে আল্লা-হাফেজে বদলালো
কচি মুচকি হেসে ঢাকা শহর থেকে বিদায় নি্যে
আল্লা-হাফেজসহ ২০০০ সালে ইটালিতে চলে গেলো

আমাদের আজিম্পুরের বাসার উল্টাদিকে
সত্তর এবং আশির মাঝামাঝি অব্দি
কচিরা কলোনি-ভবনের একতলাতে
দুই ঘরের বাসাতে বাবা  মাসহ সাত ভাই বোন মিলেমিশে
সব ভাই বোন অনেক রকমের বইপত্র পড়তো
কচি এবং ওর  অল্প বড় ভাই সবুজ দুইজনে ভাল ফুটবল খেলতো
সবুজ কবিতা লিখতে লিখতে লেখক শিবিরের স্বেচ্ছাসেবি বনে গিয়ে
কবিতা লেখা ছেড়ে তত্বের বাদাড়ে হারালো

খুব অল্প বয়সে মানে মেট্রিক-পাশ অপরুপ রঞ্জনা
মেট্রিক-পাশ কচিকে বিয়ে করে ফেলেছিলো
বিয়ে করে ফেলার পর একটা চাকুরি কচির জরুরি হয়ে পড়ে
এবং কিভাবে কিভাবে ঢাকেশ্বরি মন্দিরের কাছে
সত্তর দশকের কবি আবিদ আজাদের শিল্পতরু প্রেসে
ম্যানেজারির চাকুরি জুটায়ে ফেলেছিলো

আবিদ আজাদই কচি'র 'প্রেসের কবিতা' বের করে দেয়
সে-সময় শিল্পতরু থেকে প্রকাশিত কবিতা সংগ্রহের
লেখকদের অনেকে মান্নান সৈয়দ'কে দিয়ে ফ্ল্যাপ লিখায়ে নিতো
কোন কিছু  চাপানোর ইচ্ছা ছাড়াই কচিকে তাগাদা দিতে
আবিদ ভাই বলতেনঃ পান্ডুলিপিতো করলেন,
মান্নান ভাই প্রতিদিন আসছে, ওনাকে বললেই্তো ফ্ল্যাপ লিখে দেবে

কিন্তু মান্নান সৈয়দ'কে দিয়ে ফ্ল্যাপ না লিখায়ে
কচি আমাকে দিয়ে ফ্ল্যাপ লিখায়ে নিলো
এবং নিসংশয়ে সবাইকে দেখায়ে দি্লো
কাদের বিবরনি আমরা ধারন করি এবং করি না
আবিদ ভাই'র 'শিল্পতরু' ছেড়ে কাঠাল বাগানের আরেক প্রেসে
ম্যানেজারি করবার সময় ওর হাত দিয়ে বেরুলো
আমার 'চাকমা চিত্র' গ্রন্থিকা
কাকে উতসর্গ করবো জানতে চাইলে
কচি বসায়ে দিলো শামসুর রাহমানের নাম

কচি আর রঞ্জনাকে পাশাপাশি দেখলে
আমার মনে হ'তো কুস্তিগিরের বিপরিত শব্দ হচ্ছে কুস্তিগাই
কুস্তিগির আর কুস্তিগাইদের পাশাপাশি দেখলেই বুঝতামঃ
এক পাল গরু আর গাভিন'কে হাটায়ে হাটায়ে
দুরের রাজস্থান থেকে গাবতলি কোরবানির হাটে নিয়ে আসা হ'লো

মানে গরুরা বিরানি পাকাবে
আর বাবুর্চিরা জ্যান্তমরা কুস্তিগিরদের দেহে সান্ডার তেল মাখাবে
তারপর কুস্তিগিরদের বুকে মাই গজাবে
এবং সেক্স চেঞ্জ কুস্তিগাইদের স্যাঙ্গাতেরা কুস্তিগিরদের হত্যা করবে
মানে কুস্তিগির কুস্তিগাই আর নাই আছে কেবল স্যাঙ্গাতেরা
যাদের বলতে পারোঃ
সুশিল সমাজের স্বার্থরক্ষাকারি হরেক রকমের হরেক  হাউসের পত্রিকা

প্রেসযন্ত্রের ধ্বংশস্তুপে চাপা পড়ে আছে 'প্রেসের কবিতা'র ব্যালেরিনা-ঢাকা


চয়ন খায়রুল হাবিব
১৬/১১/১৪
ব্রিটানি