Tuesday 30 September 2008

জসিমুদ্দিন রোড থেকে বেতার বাংলাদেশঃ হত্যাকান্ড কখনোই নিখুত হতে পারে না

পুর্বকথনঃ

বাংলা সাহিত্যের তলানিতে জমা প্রিটেনশানের গাদ নাড়িয়ে পানি একটু ঘোলা করা যাক!

সাহিত্যিক -প্রিটেনশানের শুরু সাহিত্যের ছাত্র ও অধ্যাপকদের হাতে।রবিন্দ্রনাথ এদলের নয়।কিন্তু তিরিশের সব কবি এ-দলের।তিরিশের দশকে বুধ্বদেব বসুর নেতৃত্বে জিবনানন্দসহ অন্যান্য অধ্যাপক কবিদের সবচেয়ে বড় অপরাধ এই যে রবিন্দ্র-নজরুল ধারা থেকে নিজেদের স্বতন্ত্র করে তুলতে একযোগে তারা কবি জসিমুদ্দিনের মৌলিকতা নিয়ে কখনোই কোন কথা বলেননি। তাকে সাহিত্যের মানচিত্র থেকে উতখাত করবার চিরস্থায়ি বন্দোবস্ত করেছিলেন তিরিশিও কবিকুল।

জ়সিমুদ্দিনই সে সময় একমাত্র রবিন্দ্র পরবর্তি কবি যিনি বাংলা ভাষার সহজিয়া মুলধারার সাথে আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন “নক্সি কাথার মাঠ” , “সোজন বাদিয়ার ঘাট” এর মত ব্যলাড জ়াতিয় কাব্যে।বিশ্ব-কবিতায় লোরকা তখন তার গাথা ও ব্যলাড ধর্মি নাটকে যা করছিলেন তা জসিমুদ্দিনেরই ফোকলোর ঘরানার।হতে পারে তিরিশের কোন অধ্যপকের হাতেই লোরকা পৌছোয়নি।কিন্তু পঞ্চাশের, ষাটের, সত্তরের ঢাকায়, কোলকাতায় লোরকা পৌছনোর পরও জ়সিমুদ্দিনের সাথে লোরকার যোগাযোগ চিন্নিত না করে অধ্যপকেরা ব্যস্ত থাকেন তিরিশিও কৌশলে চোরাগোপ্তা হামলায়। ইংরেজি বিভাগের যে সব ছাত্র গাথার আঙ্গিকে লেখেন তারা লোরকার দুয়েন্দের নাম নেন, জসিমুদ্দিনের নাম বলতে লজ্জা পান।হিনমন্যতা বৈ কি!

তিরিশিও হামলায় রবিন্দ্রনাথ নিশ্চিত একই সাথে বিব্রত ও ভ্যবাচেকা খেয়ে গিয়েছিলেন।জ়সিমুদ্দিন ছিলেন তার ছাত্র।তিনি নিজে লালন, হাসনে মুগ্ধ; অঢেল নিয়েছেন বাংলার ও বিশ্বের লোক কাহিনি থেকে; জসিমুদ্দিনকে তিনি আদর করে নাম দিয়েছিলেন “পল্লি কবি”।এতে হায়েনার দঙ্গল যে কি রকম উৎকট আনন্দ পেয়েছিল তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু কোন হত্যাকান্ডই নিখুত নয়।জ়সিমুদ্দিনের ব্যপারে তিরিশিও কবিকুল এবং রবিন্দ্রনাথের অপর দুই কৃতি গদ্য প্রয়াসি ছাত্র মূজতবা আলি ও আবূ সইদ আইউবের নিরবতাই বাংলা সাহিত্যের মুলধারাকে ব্যহত করবার ষড়যন্ত্রি হিসেবে তাদের সন্দেহভাজন করে।অতি ভক্তি কিসের যেন কুলক্ষন?

তিরিশের অধ্যপকেরা জ়সিমুদ্দিনের প্রতি যা করেছিলেন, ষাটের আধ্যপকেরা তা করলেন কবি ওমর আলির সাথে।কিন্ত এবারও হত্যাযগ্বের চিন্ন পেছনে রেখে গেলেন হত্যাকারিরা।

পরাবস্তবতা বাংলার ছাত্রদের হাতে হয়ে ওঠে বিশ্বাসের সিড়ি।হা হতোস্মি!প্রাগাধুনিকতার জিন্দাবাদ দেয়া হয় এমনকি আধুনিকের চেয়েও রদ্দি আঞ্চলিক ভাষায়!এরা লোক সাহিত্যের সাথে আধুনিকতার এবং প্রাগাধুনিকতার পরম্পরা ধরতে ব্যর্থ।কারন তাদের গুরুগন এখনো স্বিকার করতে রাজি নন যে রবিন্দ্র-নজরুল সাহিত্যের সমকালিন প্রয়োগধর্মিতা বুঝতেই আমাদের নিবিড়ভাবে এবং বিশ্বসাহিত্যের আলোকে জসিমুদ্দিন, ওমর আলিদের নিয়ে ভাবনা জরুরি হয়ে উঠেছে।

প্রাককথনঃ

তিরিশ থেকে ষাটের কবি ও অধ্যাপকদের হাতে বাংলা কবিতার যে কৃত্রিম সমিকরন দাড়িয়েছিল তা প্রায় হ্যচকা টানে সত্তরে খসে পড়বার কথা।বাআন্নর ভাষা আন্দলন এবং একাত্তরের মুক্তিযূধ্ব এলেন পো, বোদলেয়ার, এজরা পাউন্ড থেকে ধার করা বুনিয়াদ ধ্বসিয়ে দেবার কথা।কিন্তু রবিন্দ্রনাথের সচিব, উপসচিব বেশে যারা একসময় জ়সিমুদ্দিনকে
নিয়ে কথা বলাকে আন-স্মার্ট বলে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তাদের অনুগত ছাত্ররাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে বাংলা ও ইংরেজি বিভাগে জাকিয়ে বসে আছে।এদের অনেকেই প্রগতিবাদি সরনিতে সদম্ভে হাটা চলা করেন।বা হাতে ছাত্রিকে চড় মেরে ডান হাতে নারিবাদি কলাম লেখেন।এদের স্ববিরোধি হাতে গড়া ভাল ছাত্রদের দল বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রকে শক্তিশালি করেন আর খারাপ ছাত্ররা পরিচিত হন সাংবাদিক হিশেবে।সবাই এক কলকির কমরেড!

যারা দুয়েন্দে দুয়েন্দে করতেন তাদের উত্তরসুরিরা বব ডিলানের নাম নেয়া শুরু করলেন।কিন্তু আজম খান যে জসিমুদ্দিন রোডেরই বাসিন্দা তা জেনেও না জানার ভান করেন।

যা ছিল ফোকলোর তাই গড়াতে গড়াতে আরবান ফোক।শিত সকালের ভাপ ওঠা তালের রস খেয়ে ফেলিনি দর্শন।কিন্তু এই সহজিয়া যাত্রাপথকে গেয় বলে নকল শোনাকে আসল শোনা বলে গছিয়ে দেবার চালিয়াতিটা করলো কারা?

নাম ধরে ধরে এগোই।আমাদের সময় সবচেয়ে সফলভাবে চালিয়য়াতিটি করেছে আব্দুল মান্নান সৈয়দ এবং আব্দুল্লাহ আবু সাইদ।ঢাকা ও কোলকাতাতে প্রতিপত্তিশালি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে জোগাজোগের সুবাদে এ-দুজন এমন একটা মেরুকরন দাড় করিয়েছে যে এদের সাথে না থাকলে কোনরকম প্রাতিষ্ঠানিক স্বিকৃতি অসম্ভব।দু, মাথাওয়ালা স্ফিংস।
আর এ-স্ফিংসের রিমোট কন্ট্রোলার হচ্ছে সৈয়দ আলি আহসান নামের সাক্ষাত শয়তান।এটি হচ্ছে সরেশ কবি ধরে ধরে নিকেশ করবার ত্রয়কা।এদের শিকারের তালিকাও বেশ রমরমাঃ আল মাহমুদ, আবিদ আজাদকে এরা কাটা লেজ় মুড়োসহ গিলে ফেলেছিল।আল মাহমুদের অবস্থা হছ্যে তিমিতে গেলা নুহ নবির মত।ওর লেখা আত্মজিবনি হচ্ছে সারা গায়েমুখে বমি মাখা লেংটা একটা লোকের আত্মজিবনি।

আসমানি কিতাবধারি এই বলয়ের বাইরে থেকে যারা কবিতা চর্চা করেছে তাদের অনেকেই কবিতায় শ্বার্বভৌম হলেও দর্শনের ঘাটতি পূরন করতে চেয়েছেন কখনো কলা কৈবল্যবাদে কখনো মার্ক্সবাদের আশ্রয়ে।রফিক আজাদকে প্রথম গোত্রে, নির্মলেন্দু গুনকে ফেলা যাবে দ্বিতিয় গোত্রে।আবার দুই গোত্রের বিবাদ ঘুচিয়ে কখনো কখনো এরা স্বতস্ফুর্তবভাবেও লিখেছেন, যদিও তা কম।

তিরিশ থেকে ষাটের পুরনো সমিকরনকে সবচেয়ে সার্থকভাবে পাশ কাটিয়েছেন শামসুর রাহমান।জসিমুদ্দিনেরই ব্যলাড শামসুরের হাতে পেয়েছে সরাসরি রাস্তা থেকে উঠে আসা প্রতিবেদনধর্মি বর্ননার মাত্রা।
শামসুরের সত্তর পরবর্তি কবিতাগুলো এই একপেষে, একরৈখিক নান্দনিকতা থেকে সরে আসে।সমকাল হয়ে ওঠে ওর কবিতার বহিরংগ, ব্যলাড তাতে যোগ করে অন্তরংগ গিতলতা।আবুল হাসান যেখানে উকিঝুকি দিচ্ছিলেন, শহিদ কাদরি যেখানে আটকে গিয়েছিলেন রাইটার্স ব্লকে, শামসুর শেশ কবিতাটি পর্জন্ত সেই বর্ননাকে খোলামিলের দোলাচলে এগিয়ে নিয়েছেন নন্দন-নিরপেক্ষ কবিতার স্বার্বভৌমে। নন্দন-নিরপেক্ষ?একটু বিস্তৃত হওয়া যাক।

লালন ও আর সব ভক্তিমার্গি লোকাচারের সাথে দরবারি ধ্রুপদ এবং চার্চ মিউজিকের স্বরলিপি মিশিয়ে রবিন্দ্রনাথ যে-একান্ত-ভারতিও-নন্দনের গোড়া পত্তন করেছিলেন;নজরুল যাতে সেনানি জোশ যোগ করেছিলেন; তিরিশের কবিদের রবিন্দ্র-নজরুল বিরোধিতায় তা গড়ায় একেপেষে পশ্চিমি-নন্দনের সিমানায়।অন্যদিকে ফররুখ আহমেদরা দাড় করিয়ে ফেলেছে ইসলামি আদর্শ ভিত্তিক নন্দন যা নজরুলের ভঙ্গিটূকূ নিয়েছে নজরুলের ধর্ম-নিরপেক্ষ আত্মাকে বাদ দিয়ে।

কমিউনিস্ট পার্টির কবি-কর্মিদের সেচ্ছাসেবক সমাজ বাস্তবতার বাকোয়াজি; সুভাস, সমর সেনদের মুখোমুখি কোলকাতায় বিনয়, শক্তি, সুনিলদের কাছে তিরিশের সমিকরনগুলো যে কারনে স্বস্তিদায়ক মানে হয়েছে; বায়ান্নর এবং একাত্তরের মুল্যবোধের প্রতি আন্তরিক বাংলাদেশের কোন কোন কবির কাছে সেই সমিকরন একই কারনে হয়ে উঠেছে আস্বস্তিকর, গূমোট।তিরিশের কবিদের দেশবিহিন ধরে নিলে, পঞ্চাশ,ষাটের বাংলাদেশি কবিরা একটা সুনির্দিষ্ট দেশ পেয়ে গেছে।নতুন দেশ মানে নতুন শব্দ, নতুন সমিকরন।কোলকাতার কবিরা যখন ভারতিও নিরাপত্তার ভেতর নিশ্চিন্তে দেশবিহিন উপনিবেশিক তিরিশিও নান্দনিকতার বিকাশকেই তাদের গন্তব্য মনে করেছে,তখন ধবংশস্তুপের ওপর দাঁড়ানো আর বাদ বাকি মানুশদের মতই বাংলাদেশের কবিদেরও ছিড়ে, ফুড়ে যাওয়া শব্দগুলোকে আবার কুড়িয়ে আনতেই রাস্তায় নামতে হয়েছে।সমিকরনের আয়োজন তখন বিলাসিতা।

জাতিয়তাবাদের জুজু, ইসলামের নৈর্ব্যাক্তিকতা, তিরিশিও দেশবিহিনতা সব কিছু ছাপিয়ে কবিতার স্বাশ্বত আত্মনিরপেক্ষ বাকমহিমার প্রাথমিক বোল ফোটাতেই নির্মলেন্দু গুন, রফিক আজাদদের অতিকথনের আশ্রয় নিতে হয়েছে।বোল ফুটলো; আর তাকে সংজত কন্ঠশ্বরে, দৈনন্দিন ব্যক্তির জয় পরাজয়ের বর্ননাধর্মি গাথায়ও রুপান্তর করেছে ঐ রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুনই।কোলকাতায়ও এ-সময় ছেলেমানুশি হিপি হই চই হয়েছে।কিন্তু তা নিয়ে ম্যডিসন স্কয়ারে কোন কনসার্ট হয় নাই।স্বাধিনতা বাংলাদেশকে উদোম করে দেখালো সে কতটুকু বিপন্ন।সম্পন্নতায় যেতে অনিবার্জভাবেই নন্দন-নিরপেক্ষতা তৈরি হল।এই জাত্রাপথে একই কবি অনায়াসে পাশ বদল করে লিখে ফেলছে "আজ রোববার , আজ ম্যন্ড্রেক্স..." এবং "হুলিয়া' র মত কবিতা।

বাংলা কবিতার ইতিহাসে এই নন্দন-নিরপেক্ষ সাময়িক জায়গাটি গুরুত্বপুর্ন এ-কারনে যে এর পরের পর্জায়ে অনেক কবিই ফিরে গেছেন কলা কৈবল্যবাদি পুনরাব্রৃতিমুলক অনুশঙ্গে কিম্বা জায়নামাজে কিম্বা দুটোতেই একসাথে।

এক্কেবারে খাস বাংলাদেশের ব্যলাড বা গাথাধর্মি কবিতাকে এপিক-বর্ননার পরিনতিতে নিতে শামসুর ছাড়াও ছোট তরফে মুহাম্মদ রফিক, আবিদ আজাদ এবং রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লার নাম করতে হবে।এদের মধ্যে শামসুর রাহমান, আবিদ আজাদ, রুদ্র প্রয়াত।আবিদ আজাদ মাণ্ণান সৈয়দের পাল্লায় পড়ে চলে গিয়েছিলেন জান্তার ছোড়া কবিতার জলসায়।কিন্তু জসিমুদ্দিনের ফোকলোর আরবান ফোকে গড়িয়ে নিয়েছে যে ভিড় উপচানো বাংলাদেশি রেলগাড়ি সেখানে নির্মলেন্দু গুনের পাশাপাশি আবিদ আজাদের নামও নিতে হবে।

যাক বলছিলাম এদের আন্তরিক কবিতা চর্চার বাইরে দার্শনিক ঘাটতির কথা যেখানে চালিয়াতেরা সুই হয়ে ঢূকে ফাল হয়ে বেরিয়ে গেছে।এদের আরেকটি ঘাটতি হচ্ছে মনস্তত্ত্ব।মুহাম্মদ রফিকের "কপিলা" কবিতাটা লেখবার প্রনোদনা সম্পর্কে বলা রফিকেরই মন্তব্য নিয়ে আমি আর্টস.বিডি...তে লিখেছিলাম।যে প্রশ্নগূলো আমি তখন ঊঠিয়েছিলাম সে-সবের উত্তরের ওপরই নির্ভর করছে সামনের দিনগুলোতে আবার কি আরবান ফোক নৈর্ব্যক্তিক প্রেমের কবিতায় পর্যবসিত হবে কি না?রফিকের মন্তব্যসহ আমার প্রতিক্রিয়া পুরোটাই এখানে তুলে দিলামঃ

মুহাম্মদ রফিকঃ‘অসচেতন সচেতনা বা সচেতন অসচেতনা সর্বপ্রকার সৃষ্টিশীলতার আদি ও মূল প্রণোদনা কবিতারও।’

ভয়ংকর মন্তব্য। ‘স্বয়ংক্রিয়’তার বিপরিতে এ লাইনটিতে ‘সর্বপ্রকার’র‘মূল’ ও ‘প্রণোদনা” শব্দগুলোর ব্যবহার আমার প্রিয় লেখক , নিউরোলজ়ির গুরু
অলিভার স্যক্সকে নিশ্চিত অস্বস্তিতে ফেলে দেবে।

১) রফিক স্বৈরতন্ত্র বিরোধি।অন্যদিকে এজরা পাউন্ড ঢাকঢোল পিটিয়ে হিটলারের নারকিয় স্বৈরতন্ত্রের পুজারি।সুতরাং ব্যক্তির রাজনৈতিক অবস্থান কবিতার প্রনোদনায় প্রভাব ফেলতেও পারে, আবার নাও ফেলতে পারে।কালের মুখপাত্র হয়েও কবিতা কাল -নিরপেখ্য হতে পারে।

২) ‘অসচেতন’ ‘অসচেতনা’ …Archaic উপলব্ধিজ়াত আত্মরক্ষামুলক জান্তবতাগুলো প্রণোদনার প্রাথমিক স্তর , প্রধান বা মুল নয়।এই শিশুসুলভ স্তরে অনেকে নিরিহভাবে আটকে যেতে পারে।এদের আমরা প্রতিবন্দি বলি।আবার অনেকে এই প্রাথমিক স্তরের সাথে উচু স্তরের নান্দনিক ছদ্মবেশ ধারন করতে পারে।হিটলার ও হানিবল লেক্টার এর দৃষ্টান্ত।

৩) কবিতার রহস্যময়তা আর ভুডু শিল্পের কুহেলিকা এক হতে পারে কি?

৪) সগ্যা ও সংগার লড়াইএ মেধা ও দখ্যতার নিরিখেই মানুষ অন্যান্য জন্তু থেকে আলাদা একই নিক্তির কারনেই সবাই গাড়ি চালানো শিখতে পারলেও সবাই ফরমুলা ওয়ানের প্রতিদ্বন্দি হতে পারে না।

৫)দখ্যতা ও মেধার পর আসে অনুশিলনের প্রয়াস।এতে কে কি রকম প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক সহায়তা পাবে তার ওপর নিরভর করছে চুড়ান্ত উতকর্ষ।ভ্যন গগ বা জন ন্যশ কিন্তু স্কিতজোফ্রেনীয়ার কারনে মহাশিল্পি বা মহাগনিতবিশারদ হন নি। হয়েছেন, কেন না মেধা, দখ্যতা নিরনিত হবার পর অনুশিলনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রাথিশঠানিক ও পারিবারিক সেবা পেয়েছেন নিরন্তর।

৬) দ্রস্টব্য যে উপমহাদেশের সব বিস্ববিদ্যলয়গুলো বিশ্বের অন্যান্য অনেক বিশ্ববীদ্যালয়ের মত খ্রিস্টান জাজকদের হাতে তৈরি।নান্দনিক শিল্পের অনেক শাখাতেই এখনো খ্রিশটাণী ‘ Gods Gift’ধারনা চালু রয়েছে।এই দৈব-ব্রাম্যন্যবাদের সাথে শিল্পের ও শিল্পির অস্তিত্বের সংগ্রাম আত্যন্তিকভাবেই সচেতন।


ওস্তাদের মাইর শেশ রাইতেঃ

বালাডের ওপর মুহুর্মুহু চোরাগোপ্তা হামলার তথ্য উদঘাটন করতে গিয়ে, ভাড়াড় ঘরে পেয়ে যাই একের পর এক কঙ্কালের হদিশ!মূহাম্মদ রফিকের কাছে তোলা প্রশ্নগূলো ছিল অনেক দিন ধরে লালিত সমিকরনেরই রবাহুত উস্কানি।সেই উস্কানি থেকেই ভাবতে শুরু করি যে এমনত হতেই পারে না যে আমি যেরকমটা ভাবছি সেরকমটা আর কেঊ ভাবেনি!যে লেখাগুলোর সাথে, যে লেখকদের সাহচর্জে আমি বেড়ে উঠেছি সেগুলোকেই আবার আষ্ঠেপৃষ্ঠে পড়তে শুরু করি!

আবিস্কার করি আমার গাথা ও এপিকের সমিকরনে নাগরিক মাত্রিকতায় সবচেয়ে জরুরি কবি হয়ে ঊঠছে মূশ্তাফা আনোয়ার।সে আরেক লম্বা হত্যযজ্ঞ্ব!আমি "তুত" , "কোন ডাকঘর নেই" সতরশোতমোবার পড়ে শেশ করি।বাংলা বালাড আর কখনোই চরাক্রান্ত হবে না বুঝতে পারি।বুঝে যাই কোন শক্তিবলেঃ মনস্তত্ত্ব ,নান্দনিক-দেহতত্ত্ব এবং অস্তিত্ত্ববাদি দর্শনের কোন মিশেল-সালসায় বুদ মূস্তাফা মুক্তিযুধ্ব পরবর্তি কোন মেরুকরনেই জড়িত হয়ে পড়েন নাইঃ গান্ধি, সক্রেটিস, কিয়েরকেগার্ড, জর্জ বাটাই, আনাইস নিন,ফ্ল্যমেঙ্কো, ব্যালাড, লোরকা, জসিমুদ্দিন,সিলভিয়া, জাহানারা,তালের রস,দোচুয়ানি, তিন চুয়ানি, আজম খান,শেফালি ঘোশ, শ্যাম সুন্দর... সবকিছুকেই আমি এক সুতোয় পেয়ে যাই। আমার শহরের রাস্তায় আমার সময়ের ডাইনোসরদের জখমে ভরা জিবাস্মের দিকে আমি অত্যন্ত মন খারাপ চোখে তাকিয়ে থাকি...।

চয়ন খায়রুল হাবিব

লন্ডন সেপ্টেম্বার/২০০৮

Sunday 28 September 2008

রেঙ্গুন সনেটগুচ্ছ

পোকি সিরিজ





রাজহাসের কিমাঃ

পোকিযন্ত্রগুলোর নতুন নাম দিতে দিতে
শশাদের বিজে ছড়ালি কাকাতুয়াদের ভোর

কাকাতুয়ারা কেবল শশাতে থাকতে চায়
কারন শশাতে প্রচুর পানি
এবং পানির অপর নাম শব্দের সৈন্ধব লবন

কাজ ফেরতা জিন্স খুলে
প্যন্টি ব্রা ফতুয়া মেঝেতে ছুড়ে ফেললি
বুকের দুই বিল্লিছানাকে আদর করতে করতে
বুকের নাম কি হবে - স্তন, কুচ, মাই
নাকি শুধুই দুধের কেজো ভান্ড
এ-নিয়ে সুতন্বি, সোলায়মানি, অভ্রে তুমুল লঙ্কাকান্ড

তুল্কালাম মেটাতে পাঠালাম চাইকোভস্কির রাজহাস
পালক ছাড়িয়ে বললি ঃ
আমরাই চাক্কু চাপাট আমরাই রাজহাসের কিমা
নুন আছে পান্তাও শুধু নাই জিবনের বিমা

বৈশ্নবিঃ

ফুলাইয়া ফাপাইয়া কাপাইয়া কাপাইয়া
আমার খুলিতে তুই এখন নাচনদারের ঢুলি
কিন্তু পোকি তাহার কে সেই বা আমার কে

বিতর্ক উস্কে উস্কে পোকিযন্ত্র সুস্পষ্ট করতে
সেভ করলি বয়োঃসন্ধির যোনিকেশ
শ্যমসুন্দর বৈষ্ণবের ধুনে বৈষ্ণবি শেফালিদের সমাবেশ

শ্যম কালুয়ার চোলুয়াতে ভিজে আমরা বল্লামঃ
যাহা যৌনতা তাহাই পরমাত্মা

বেহুলার নির্বন্ধ ভাঙ্গে ২০০৮এর যাদুই-বাস্তবতা

গাছপাকাঃ

এটা কিভাবে সম্ভব হ’লো
সংগমচুড়ায় উঠে এলো রাস্ট্রবিজ্ঞানের পাকা পাকা কুল বরুই
কিভাবে বরুইগুলোর টোল পড়া লালচে চামড়ায়
ফাশদড়ি পরালো সুন্দরবনি বাঘের লবন কাটা দাত
অল্প একটু কামড়ে অল্প একটু ছাল ছাড়িয়ে
বরুইয়ের পেষা বারুদে অল্প একটু লবন মাখিয়ে
বালক বালিকাদের স্কুলে স্কুলে
কুল আর ফুল বরুইদের সঅদা ঠেলে
সপ্তগ্রামে পোকি চেচালোঃ ক্লাইমেক্স
রাস্ট্রবিজ্ঞানের আওতার বাইরে ন্যয্যমুল্যের গাছপাকা সেক্স

চাদমারিঃ

পুর্নিমায় না হেসে
পোকি বাসা বাধে মিরপুরের বোটানিক্যাল বাগানে
শ্যমলা রাজকুমারি গোলাপের সাথে
লাল বস্রাই শঙ্করে পোকি’র কোমরে এক নতুন রুবাই
সাকির নাপাকি বির্জ মুখে ঢেলে
পোকি চলে পুলিশ লাইনে রাজারবাগের আস্তাবলে
ঘোড়াগুলো চাদগন্ধে চ চ চাদপাগল
ঘোড়ালিঙ্গে ভর করে পোকি পুরোপুরি ল্যংটা
কিন্তু চাদের মেয়েলিপনাকে বললি বাই বাই টা টা

মাহোনির মাংগলিকঃ

শালিখেরা খয়েরি হতে হতে মাটি পোড়ানো উনুনের আচে
আর পোকি’দের ওড়বার বাসনাকে কখনো দাহ

কখনো কাফনে জড়িয়েছিলি

এটা লাশের সাথে উল্লাসের পচনের সাথে পাচনের
ডানার সাথে অডানার বিপরিত সহবাসের প্রতিক

শামুকে গড়াতে গড়াতে বালু তাতানো সৈকতের পিশাচে
কামনাকে কামারের নেহাইয়ে শাখারির করাতে

এটা আনাইস নিনের সাথে আঙ্গুরের
গাজনের সাথে পাতনের আপতিক মাহোনির মাংগলিক

কিসিং গোরামিঃ

কবিতাটা আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম

কিসিং গোরামি খুব অদ্ভুত মাছ
নারি পুরুষ সবসময় জোড় বেধে থাকে
কিছুক্ষন পরপর মুখোমুখি থেমে
একে অন্যকে ঠোটে ঠোট ঘষে সুধায়ঃ
এটাকে কি চুমু বলে, এটাকে কি চুমু বলে

মুল কবিতাটির সময় আমার য়্যকোয়ারিয়ামে
মাত্র এক জোড়া কিসিং গোরামি ছিল
জোড়ের পুরুষটি হঠাট মারা গিয়েছিল
নারি-গোরামিটি প্রবালে , শ্যাওলায়, গুগলিতে
চুমুর স্মৃতিতে চুমু দিতে দিতে সুধায়ঃ
এটাকে কি চুমু বলে, এটাকে কি চুমু বলে

ঠোট ঘশতে ঘষতে নারিটিকে ঠোট হারাতে দেখে
পুরো মুখ মাথা উপুড় করে ডুব দিয়েছিলাম
ছোট্ট য্যকোয়ারিমটাতে

পোকি পোকি গোরামিগুলো এখন আবার
হাজার জোড়া কিসিং গোরামিতে হাসে

মাছ কুমারিঃ

ভ্রুতে জমা ঘামে বগুড়ার দইয়ের ব্যকটেরিয়া
নাকের কোনায় যশোরের কই ভাজা গন্ধ
হাসতেই দাতের মাড়িতে রাজশাহির রেশমের গুটি
পদ্মার ইলিশেরা শেয়ারের বাজার উল্টায় দুই বুকের বায়
কালো বাক্স খুলে বের করলি সিল্কের নরম ঢেকুর
বাক্স বন্ধ করে চাবি ছুড়লি বানভাসি জলে
খুজতে যাই খুযতে যাই বলে ডুব দিলি তুই
আর আমার জালে জড়ালো ঝাক ঝাক
মাছকুমারির মুচকি মুচকি হাসি মাছকুমারি পোকি’র ছোট্ট আকাশ

নখঃ

সবাই ঘুমাছ্যে
এমন কি পোকি’র দশ আঙ্গুলের নখ
সবাই ঘুমাচ্ছ্যে
এমন কি পোকি’র নাকের নোলক
এক্কেবারে নিশ্চিত ঘুম
কারন নিশিথের নিঝ্যুম গাথা
গরম ভাপ ওঠা কৃশ্নচুড়ায় শিমুলে

গর্তেঃ

রাত গহিনে গোপনে
আব্বার জন্য সদ্য খোড়া গর্তে
কোটর থেকে চোখ উপড়ে দৃষ্টি বিসর্জন দিলি
জিহবা খসায় নতুন জিহবার জিম্মাদার হলি
বাদবাকি অংগপ্রত্যংগের উত্তরাধিকার
সাত পুরুশের ভিটার খানদানে
সার সার অসার গর্তে ছুড়ে
ঘরে ফিরে খিচলি গুদনযন্ত্র
দশ আঙ্গুলের মখমালি মন্ত্রে
পোকি-অঙ্গের ফেনানো উর্বরতায় দেখতে পেলি
ছুড়ে ফেলা অংগগুলো সোহাগের উছিলায়
জুড়ে বসেছে ব্যঙ্গাচিদের আত্মায়

গর্মিলঃ

মেঘলা এ্নভেলাপ হাতে এলি অবশেষে
সংগিনির ছলে মাতাল মাতংগিনি
মাতংগ বিনাশে মেতে রতির চুড়ান্তে
হননের নন্দনে সম্মানিত দুইগুন তিনগুন মুকুট ধারন
ধড় আলগা কাটা মাথা
পুং পোকার অনু জিবনের অনু জাবেদা হিসাবের অনু লেনদেন
অবসানে ভাবি কি করে অনন্য এই পোকি
এদ্দিন গোপন রেখেছে রতি অঙ্কের এই বিরাট গর্মিল
মগজ তরঙ্গে মুদ্রাভংগ শেষে
বুঝি পোকি আততায়িনি বটে
কিন্তু ভাতারখাকি বিশ্বাসঘাতিনি নয়
কারন পোকি’র চোখে আন্তরিক বিদায়ের পানি
ফোপানির আড়ালে পোকি বলেঃ
আমিও তোরে চাই য্যমন লালনে সিরাজ সাই

অপেক্ষাঃ

রঙ্গিন পেন্সিলে আক কষে
যেখানে থাকে থাকে সাজানো থাকবার কথা
মাথা মুখ বুক কোমর হাত পা
ঠিক ঠিক সেরকম এবং কিছুটা কাল্পনিক আকিবুকিশেষে
সুধালামঃ ঐ রে পোকি , নাক ফোড়াবি, নোলক পরবি
চোখে দিবি কাজলের টান

উত্তরে জানালি যে কোনটাই নিবিনা
একে একে ব্যর্থ হ’লো
রুপটান কারুকার্জ ভাস্কর্জের আবেদন আয়োজন

রঙ্গিন পেন্সিল পুথিপত্র সব ছুড়ে
আমরা পোকি’র অপেক্ষায়
একলা একলা একলা

খেলনা বেহালাঃ

বন্ধুত্বে তা দিতে দিতে পোকি বিবাহ বাজারে গেল
এক টাকা মুল্যমানে নামতাখাতায় নাম জারি হ’লো

বিয়া বিয়া খেলা ভেঙ্গে পুড়লি ইটভাটার চুল্লিতে
পোড়া ইটগুলোকে পিছমোড়া বেধে

টেরাকোটায় তাতালি স্মরন
শিত সকালের ভব জোয়ালে মাভৈ হাসন

অরগাজমঃ

ডিনামাইটে জিবন লাইটে
হরনে বদলায় পোকি’র পাপড়িরা
আত্মার সাথে যৌনতার সুক্ষভেদ লক্ষনগুলো
শুন্যতার সুড়ংগপথে গিলে খায় পোকি’র ভাবাবেগ
ন’মাস পর যে শিশু জন্মালো
বিস্ফোরকের ডিটনেটর হৃতপিন্ডের বদলে
কার্তুজের ছররা চেহারার আদলে

নিজের সাথে নিজের ধস্তাধস্তির অস্বস্তি পার হতে
সে-শিশু খুজতে থাকলো আগের জনমের হারানো সঙ্কেত-শিকড়
খুজে না পেয়ে সে মহাক্ষিপ্ত
জঙ্গমে জঙ্গমে অরগাজমে মহালিপ্ত

আহ গুদারাঃ

হারাবার একটু আগে একেবারে ছেড়াখোড়া
কোলের বাচ্চার হাতের তালুর সমান পতাকাটি
যখন বদলালো সামনে দাড়ামো ভাস্কর্জটির গুদারায়
বললামঃ কখনোই কবিতা লিখি নাই বাংলায়
আপনার অবমাননায়

পতাকাটি স্নাতোকোত্তর সাবানে
পরমের পিছলাপিছলা ধাক্কাধাক্কির উদ্বোধনে
যখন আবারো বদলালো সামনে এলানো পোকি’র আপন গুদারায়
বুড়িগংগায় খাবি খেতে খেতে দিলাম চিতকারঃ
কক্ষনো কবিতা লিখি নাই বাংলা ভাষায়
আগুন ওগরাতে ওগরাতে বললেনঃ
মর ব্যটা মিনশে বসিলার কেতুরওঠা ইটভাটায়

আহ গুদারা

আকাশমুখিঃ

এইভাবে আকাশমুখি ভিজাঘাসে শুকনা চামড়া ঘষে
আদিম আদম-হাওয়া-রসে ভিজে ভিজে ভাবো
এই শুকনা চামড়া ঘাসের ভিজাটুকু শুষে
শরিরেও ছড়াবে আকাশের শিকড়
আর হলুদ থেকে হলুদে গড়াতে গড়াতে পুরোপুরি পুড়বার আগে
পোকি’দের রোদপোড়া ফুশফুশে ছড়াবে
হলুদের দির্ঘতমো ভিজা ভিজা পোকিপোকি ঘাস

ঘরকন্যাঃ

খাবার টেবিলে বসা সিংহটার সাথে
সিঙ্ঘ সিঙ্ঘ খেলতে খেলতে সিঙ্ঘের কেশরে
হাতির দাতের চিরুনি বোলাচ্ছি
সিঙ্ঘের নখে পরাচ্ছি কমলা নখ পালিশ
সারাদিনের উপোশ সিঙ্ঘটা প্রথমে খাবে আমাকে
তারপর কমলা নখের থাবায় ঘাড় মটকাবে পোকি’র
এই এলো বলে

কবিতাঃ

জানতাম না কবিতাকে কি নামে ডাকতে হয়
এ ও এনাম সেনাম গছিয়ে দিতে চাইলে
নামগুনে কবিতাগুলোকে পানসা ঠেকতে
কাউকে না জানিয়ে আমি কবিতাকে
পোকি বলে ডাকা শুরু করতে
অন্যরাও এ-নাম সে-নাম বাদ দিয়ে
কবিতার সাথে পোকি’র বিয়েতে
আমার ঘটকালি মেনে নিল

আর তা থেকে সর্বনাশের সুচনা হ’ল
যারা ঐ বিয়ে মানল না
তাদের সাথে আমাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হ’লো

সাহিত্য কারখানার উটকো মজদুরেরা দাড়িয়ে পড়লো
কবিতা ও পোকি’র বিরুদ্ধে
প্রকৃতির সাথে বিপনন কর্মিদের যুধ্বে

তৈরি হ’লো অনেক হিরোশিমা অনেক নাগাসাকি
শেষমেশ জয়ী বাংলা কবিতা জ়য়ি পিলখানা রোডের পোকি

সবুজঃ

সবুজে পোকি বার বার ভোগে
রক্তজবা দেখলেই ওকে বোবাতে পায়
কানামাছি খেলতে খেলতে বর্ষার কাদামাঠে
হঠাত চারপাশে ঝাক ঝাক অচেনা ডানা
প্রলাপে চঞ্চল এক বালিকা-বিউগল
তালকানা সুরে আবারো সবুজ জরে
আমাকে পোড়াতে এসে
নিজে পুড়ে ছুড়ে ফেলেছে আমাকে আরো আরো
গভির সবুজের ঘোরে
হ্যন্স ক্রিসচিয়ানের রুপকথায়ঃ

রাজকুমারকে পরিচয় দেবার অভিশাপে
মিলিয়েছিলে বাতাসি সাগরের নোনা নিস্বাসে

তার আগে পোকি আমাকে বলেছিল অদৃশ্য হতে
আর শান্ত হাওয়াকে গিলেছিল সাওতালি সাগর
চরদখলি হাংগর

প্রজাপতি হবে নাকি রেশম পোকার গুটিগুলো
সিল্কে গড়াবে- এই আক্ষেপ কারো জানা হবেনা
কারন আমি মাথা পেতে নিয়েছিলাম

পোকি’র প্রথম অধ্যাদেশঃ আমি অদৃশ্য
কিন্তু পোকি আমাকেত বোবা হতে বলে নাই

সুতরাং আমি বলি বেশ জোরেসোরে বলিঃ
পোকি’রে , গোরস্থানে জ্বলে জিবনের মাধ্যমিক জ়োনাকি

চামড়ায়ঃ

বকুলভেজা ঐ চামড়ায় মিহি ঘামে আটা ভিজায়
আমরা স্নাতকোত্তর রুটি বানাবো
গরম গরম সুস্বাদু রুটি
মুখে দিলেই গলে যাবে পোকি’র স্যকাসেকি সোয়াদে

উল্কিঃ

চেহারা চিরে চিরে চামড়াকাটা অক্ষরে
পোকি নিজদেহে আকিবুকি কাটে
গাছগাছালির বাকলে পিপড়ের সারি
পিপড়েদের মুখে মুখে কাগজকাটা অক্ষরের মিতালি
চামড়াকাটা অক্ষরেরা চামড়ায় শুকায়
পিপড়েদের অচিন বাসায়


সিন্ধুসারসঃ

আবাগির দুই বূকের বোটায়
সিন্ধুসারসের সাতার


জাদুর মাদলঃ

শক্ত শক্ত নিরাসক্ত মুখগুলোকে
চেহারার আদল দিতে দিতে
সৈনিক ও মিছিলকারিদের মাঝখানে
গিতবিতান হাতে দাড়ানো চয়ন যখন নির্বাসিত
তখন ঠিক পাশেই আবার জলজ্যন্ত পোকি
কিভাবে ওদের থেকে পালালে-
জিজ্ঞেস করতে ও জানালো
আমি শুধু চাটি দিয়েছিলাম
আমাদের যাদুর মাদলে

মুখঃ

গেট পেরিয়ে এত এত মৌনতার সমিল
কেউ কেউ অপেক্ষা করে গেটের বাইরে
গেটের ভেতর যারা তারা আপেক্ষা বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর
কারন অপেক্ষা ছাড়া মুখ ফিরে পাওয়া মুশকিল
একবার পোকি হলে কে হতে চায় মুখের মিছিল

নজরুলের মাজারেঃ

পোকি এখনো নিওমিত নজরুলের মাজার জেয়ারতকারি
আমি দিনে ঠেলি পোকি’র সওদা রাতের পেষা ফুলচুরি

রাতের পেষায় অপর সহকর্মিদের সাথে দেখা হলে
সবার অভিজোগ পানির সংকট নিয়ে -যা গড়িয়েছে গোরস্থানের ফুলে

তুইত কোন খোজ, খবর রাখিস না
আমাদের সবার ওপর এখন পৌরসভার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

বলবোরে দিনের বেলা পোকি’র কাছে তোদের উদ্বেগের খবর
ভবের হাটে বানাবো জরুরি অবস্থার কবর

ব্রক্ষপুত্রঃ

ময়মনসিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চিরে বয়ে যাওয়া
ব্রক্ষপুত্র নদ কতকাল যে পোকি’র জন্য অপেক্ষমান ছিল
কে জানে।নৌকার মাঝি বলেছিলঃ
এই নদ নারি পেলে খুশি
সঠিক নারির অভাবে বানজলে আমাদের ভাষায়।

আপনার কথার নিহিত অর্থ কি?
আপনি কি কুমারি বলির দিকে ইঙ্গিত করছেন?
পোকি মাঝিকে এ-প্রশ্ন সুধাতে, মাঝি বলেঃ
না না ছি ছি এটা কি বলেন।আমি বলছিলাম,
এই যে সোহাগ, মহব্বত আপনেরা একে অপরকে দিচ্ছেন
তাতে এই নদ খুশি মহাখুশি

পোকিঃ আপনার বয়স কত?
মাঝিঃ সত্তরের কম নয়, প্রথম বড় যুধ্বের কালে জন্ম
পোকিঃ পেষিত এখনো বেশ পোক্ত
মাঝিঃশক্তের আর কি আছে?বউটা চলে গেল।
বেহেস্ত নসিব হোক।নাত নাতকুরে সংসার ভরন্ত।
তবু পরান পুড়ে।

পোড়ানি বাড়লে ব্রক্ষপুত্রে আসি
আমার মত এই নদেরও বৌ প্রবাসি

ওমর আলির কাছেঃ

আমি আর পোকি কবি ওমর আলির কাছে যাই
এই যে আপনার শ্যমলা মেয়ে নাইয়রি এসেছে

কবি বলেঃ বেশত দুধেল একেবারে জাত কাস্মিরি গাই
ঢাকার অত্যাচারে বেড়েছে দেখি চামড়ার চেকনাই

আমাকে ওমর আলির কাছে গচ্ছিত রেখে
পোকি ঢোকে আমার নাকে চোখে মুখে


কাঠালিচাপা দোলনচাপাঃ

দফতর ফেরত তুই এখন গার্হস্থ্যের সেবিকা
ঘুরে ঘুরে হাত ছোয়ালি সাবানদানিতে কলের পানিতে
প্লাস্টিকে চায়নায় ব্রার হুকে জিন্সের জিপে
কাজ-গরম পেটে তলপেটে ডুবালি ফ্ল্যমেঙ্কো নাচের আভা
কাঠালিচাপার বুদবুদি শাম্পাইনে নাচালিরে নাচালিরে নাচালি

গার্হস্থ্যের বাইরে মেপে মেপে
হাত ছোয়ালি কি বোর্ডে মাউসে কাগজে কলমে
এখানেও প্লাস্টিক চায়না সাবানদানি কলের পানি সব আছে
কিন্তু কাজ-গরম পরিবেশ কুচকাওয়াজে কঠিন
কুচকেও কুচকালিনা

এক লাফে দফতরকে ঢোকালি গার্হস্থ্যে
দোলালি দোলনচাপার দোলনায় দোলনায় দোলনায়

কোরকির জয়ের পতাকাঃ

একদিন দুই কাধ ছিড়ে ঐ দুই ডানা অজানা আবাবিল নির্ভরে
নোনতা নিমকি আর ঘন দুধের শ্রিমঙ্গলি চাপাতায় ভেষে

মহাপ্লাবনের নৌকায় অবদমনের তলকুঠুরিতে উচ্ছাসের উপহার
আর সব গোপন রসদ আবিস্কারের ভয়ে বিস্ময়ে বলেছিলামঃ বিকৃতি

চোখে রেশমের গুটিপোকা ঠেশে
দেয়ালে গাথা শেকলে হাত পায়ে কড়া পরিয়ে বলেছিলিঃ সুখ

নাভির অনেক নিচের কামানো তলপেটের নিচেকার নাভিস্বাসে
ঘামের ফোটাগুলো যে দেহটাকে ধরে রেখেছিল

হাটু ছড়ানো উরুতে বিস্তৃত কালো চামড়ার বুটে
মেঝেতে তার হিলের আস্ত্রাখানি আঘাতে

বন্দি মাংসপিন্ডে লালা জিব বুলিয়ে
কোমরে বানিয়েছিলি এক অভিজাত কাকড়ার ভাস্কর্জ

কংক্রিটের খাড়া চাঙ্গাড়িগুলো
আঠালো আঠালো শব্দ উগরে দিচ্ছিলো

বাস্তিল থেকে ঢাকার কেন্দ্রিয় কারাগারে
যাবতজিবনে দন্ডিত উদরে

নিল ফড়িংঃ

নিল ফড়িং কোন ভঙ্গিতে বসলে গরমে গলা
মোড়ক খোলা টফি চকোলেট লজেন্সগুলো
আরো পুরোপুরি গলবে ভাবতে ভাবতে স্নানঘর মগ্ন
চুল বেয়ে কানের লতি ছাড়িয়ে পানির ঠোটগুলো
ঠোট মেলালো পানির ভেতরকার জল শ্যওলার আবহাওয়ায়

নিল ফড়িঙ্গের দেহভার নিল ফড়িঙ্গের ডানায়
গুদারা-অঙ্গের দুই উচু পাড়ে জিহবার নতুন রাজনিতি
যোনিকে তুই পানিতে প্যচালিঃ যুক্তিতে মুক্তি নাই
মুক্তিতে যুক্তি বলে দুঃস্বপ্নে চ্যাচালি

নিল ফড়িঙ্গের আত্মায় পরমাত্মার স্ট্র্যপ-অন
নকলটাই এখন আসলের চেয়ে আসল মাংসল ধন
যোনিতে যোগ হ’লো প্লাস্টিকের পুরুষাংগ
নারির উত্তেজনা জয় করে অপর নারির সংগ

চয়ন খায়রুল হাবিব

মার্চ-সেপ্টেম্বার/২০০৮
ব্রিটানি-লন্ডন


'পোকি সিরিজ' গ্রন্থবদ্ধ হয়েছে 'ডৌল : জুলেখার জেরা পর্ব' সংগ্রহে, ২০১৫

Friday 26 September 2008

মাছের সওয়ারকে খাবে মহাশির মাছ



"এমনি বড় সে মাছ এমনি বড় তার আশ
ঢাকাতে তা থেকে বানানো হত সতরঞ্চের তাস"

মছলি খেকো বাঙ্গালের ওপর বেশ মজা নিয়েছিল
শাহ জালাল, শাহ পরান, সুলতান শাহ বলখির দল

চাউর করেছিলঃ
সন্দিপে এসেছে ওরা মাছের আজ্ঞায় মোর ইচ্ছায়

চাপাবাজির আক্কেল সেলামিও দিয়েছিল মাছের সওয়ারিরা
লগারিদমের যাদুকর পোসাইডনের বংশধরদের হাতে

কেন জানি আলিবর্দির নাতি সিরাজের নাম শুনলেই
মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আমার

সিরাজোদৌলার সাথে বংগবন্ধুর তুলনাও
আমার ভাল লাগে না

একুশে ফেব্রুয়ারি ব্যপারটাইত
মাছের সওয়ারি আরব ব্যপারিদের ওপর এক হাত নেয়া

গৌড় গোবিন্দ আর পরশুরামকেও ফেরত চাই না
মাছের সওয়ারিদের মামদোবাজিও মানি না

তিস্তা থেকে রামগঙ্গায়
মিঠা পানির মহাশির মাছ
ঘেরজাল পার হয়ে ফিরুক বোধগয়ায়

চয়ন খায়রুল হাবিব
সেপ্টেম্বার ২০০৮

ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি... বাড়ি কই গো...

বাংলাদেশের মানুষ এ-কথা সে-কথার পর না সুধিয়ে পারে না, জিজ্ঞ্বেস করেঃ বাড়ি কোথায়?

রবিন্দ্রনাথের কত বাড়ি ছিল- জোড়াসাকোর ঠাকুরবাড়ি, শিলাইদহে কুঠিবাড়ি, বোলপুরে উত্তরায়ন, দার্জিলিং, লন্ডন, ব্রিস্টল আরো কত কি!বাড়ি মানে বাড়ি, প্রাসাদোপম বাড়ি!রবিন্দ্রনাথ বেশ হিশাবি লোক ছিলেন।ওর জিবতকালে জোত জমা যেমন বাড়িয়েছিলেন, তেমনি নিজের মেধাকেও মুহুর্তের জন্য কমতে দেন নাই।বাড়িগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বদলে ফেলেছিলেন।

মাইকেলেরও অনেক বাড়ি ছিল।কিন্তু ওর বাবা ছেলের ধর্মান্তরে রেগেমেগে ঐসব বাড়িতে মাইকেলের প্রবেশে নিশেধাজ্ঞ্বার পাশাপাশি মাইকেলকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল।
আয়-ঊপার্জনহিন,বাড়িবিহিন, বিলাত ফেরত ব্যারিস্টার মাইকেল স্ত্রিসহ উঠেছিলেন কোলকাতার সবচেয়ে বনেদি হোটেলে!

নজ়রুলের বাড়ি ছিল বর্ধমান জেলার পুরুলিয়ায়।নজরুলের ডাক নাম দুখু মিয়াই বলে দেয় নজরুলের বাড়ির হাল!পরে গ্রামোফোন কোম্পানিকে গান বেচে নজরুল কামিয়েছিলেন অঢেল।নিউরো সিফিলিসে পঙ্গু নজরুলকে বাংলাদেশ সরকার স্বাধিনতার পর ঢাকার ধানমন্ডিতে অত্যন্ত সুন্দর দোতালা বাড়ি দিয়েছিল।বাড়ির সাথে সেবা ও অঢেল খাই খরচ।খিলখিল কাজিদের বিমানে মাগনা ঘোরাঘোরি।বাংলাদেশের অবস্থা তখন খুবই খারাপ।খুবই খারাপ।দারিদ্রের আত্মস্লাঘা দেশ ভুলতে চেয়েছিল আতিথিয়েতার মাহাত্মে!

জিবনানন্দের জন্ম বরিশালে।কাজসুত্রে কোলকাতায় বসবাস।বাড়ি ছিল , কিন্তু বৈঠকখানা ছিলনা!

কবিদের বাড়ি আছে কি নাই; সে বাড়িতে শোবার ঘর, বসবার ঘর , রান্নাঘর, স্নানের ঘর এসব কি কবিতাকে প্রভাবিত করে?সবাইত ভালভাবে থাকতে চায়।কিন্তু অন্যেরটা কেড়ে ভাল থাকা কবিরা নিশ্চই চায় না।রুটিকে পুর্নিমার পোড়া চাদ হিসেবে দেখতে সুকান্তের হয়ত তেমন ভালও লাগে নাই।আর সুকান্তের কবিতা ব্যবহার করে যে কমিউনিস্টরা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার চিরস্থায়ি বন্দবোস্ত করেছে তাদের পাশন্ডতা, পাশবিকতাত সব অর্থে মানুষের যে কোন মানবিক অর্জনকেই ধুলিস্মাত করে দিতে পারে।

যে বাংলাদেশ নজরুলকে বাড়ি দিয়েছিল ঢাকাতে, সেই শহরেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নামে বস্তিগুলোকে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বুলডজার দিয়ে।কবি নজরুলের কবিতা পাঠকেরাই এ-কাজটি করেছে।রোম শহর পূড়বার সময় নিরোর বাশি বাজানোর মত বস্তিবাসিদের দফায় দফায় উদবাস্তু বানানোর সময় বই মেলা, ইদের আনন্দমেলা কোনোটাতেই কমতি পড়ে নাই।

শামসুর রাহমানের সবসময় ছিলেন ভাড়াটে।্যে গনতন্ত্রের জন্য ও আমৃত্যু সংগ্রাম করেছিল তাতে বাড়িওয়ালা, ভাড়াটে, বস্তিবাসি সবার অংশগ্রহনের অধিকার থাকবার কথা।অভিজাত এবং মধ্যবিত্যদের নাক উচু, নৈর্বাক্তিতার ব্যক্তিগত সমিকরন তৈরি করতেই কি শামসুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের পড়ার বা ডিগ্রি সনদের তোয়াক্কা করেন নাই?শ্বৈরতন্ত্রের প্রতিবাদে সরকারি চাকুরিতেও ইস্তফা দিয়েছিলেন।

বিশ্বের আর বাদবাকি মধ্যবিত্তের মতই বাংলাদেশি মধ্যবিত্তও নিজেদের স্বার্থরক্ষায় বেশ একজোট।সৈনিকদের হাতে চাত্রদের লাঞ্ছনা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কারাবন্দি করবার পর মিডিয়াতে, রাস্তায়, অন লাইনে, দেশে , প্রবাসে আমরা মধ্যবিত্তদের না মরতেই গায়েবানা জানাজার সমস্বর মোনাজাতও শুনেছি।শুনতে না চাইলে গাড়ি পুড়িয়ে, রাস্তার ছোট ব্যবসায়িকে হত্যা করে শুনতে বাধ্য করা হয়েছে।কিন্ত্য যে লোকগুলো বৈশাখি মেলাতে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে বেলি ফুলের মালা গাথে; ফুচকা, চটপটি ফেরি করে; বাসা বাড়ি আর গার্মেন্টসে কায়িক শ্রম সর্বরাহ করে তাদের উচ্ছেদে মধ্যবিত্তের এককাট্টা না হওয়া ্যে হাত খাওয়ায় সে হাত কেটে ফেলবারই শামিল।

জালিয়নওয়ালাবাগে ব্রিটিশের পৈশাচিকতার পর , অর স্বেতাংগ এবং স্বদেশি অভিজাতকুল নাখোশ হবে জেনেও রবিন্দ্রনাথ নাইটহুড খেতাব ফেরত দিয়েছিলেন।শান্তিনিকেতন গড়েছিলেন এমনি আক্ষরিক বিশ্ব ভারতির আদলে যে ওখানে সমাজের সবচেয়ে উচু শ্রেনির ইন্দিরা ও সবচেয়ে নিচু শ্রেনির রাম কিঙ্কর অনায়াসেই তাদের মেধার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন।সাওতালদের জন্য গড়েছিলেন একের পর এক স্কুল আর হাসপাতাল।

আমি নিশ্চিত নান্দিগ্রাম আর ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি উচ্ছেদে রবিন্দ্রনাথ চুপ করে থাকতেন না।

আমার জ়ন্ম , বেড়ে ওঠা ঢাকাতে।ওখানে কেন , কোথাও আমার বাড়ি নাই।কিন্তু তবু আমি ঘরামি!দুয়ার বন্ধের চাবি আমি ঘর খোলা মাত্র বাইরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছি!

চয়ন খায়রুল হাবিব

লন্ডন সেপ্টেম্বার/২০০৮



Thursday 25 September 2008

টাইমলাইন সাবদার

ডিসেম্বার ২০০৮: দানবিয় পুতুলি বালিকা ময়দানবিয় সুই সুতাতে ফুড়ে
সিলায়ে দিয়েছিল রাস্তার সাথে বাস ট্রাক রিক্সা
রেললাইনের সাথে রেলগাড়ি সমুদ্রের সাথে জাহাজ

ডিসেম্বার ৩০০৮: জ্যুল ভার্নি সুলতানি হাতির সওয়ার সাবদার সিদ্দিকি
পুতুল দানবির তলাশে নামেন পুনর্মিলনি দিপের বংগবাজ সিমানায়

ডিসেম্বার ৪০০৮: সাবদার আবিস্কার করেন
পিং পং টেবিলে ঘুমালে স্বপ্নরা খুব পিং পংময় হয়

ভিনসেন্ট : সূর্যসুখী এলিজি


ইহজগতের সূর্যমুখীরা যখন পরজগতের অলৌকিক মাছরাঙ্গায়
এফোঁড় ওফোঁড় সুন্দরবনের আনোনা বানমাছ পারশে'দের অন্তিম শ্বাসে
বাওয়ালিদের ঘেরজালে শুনেছিলাম
হিরার খনিতে হিরাকৃতি মাছদের মানুষী গলার গান

জয় সুরাইয়া জয় আমাদের চমচম মিয়া


পিলখানার বি,ডি,আর গেট থেকে
শহিদ মিনার অব্দি উনিশষো পছাত্তুরে
মহাবট অশথ্য রেন্ট্রির খোন্দল থেকে খোন্দলে
ডাক হরকরা মাটির পাতালে ছড়ি্যেছে
মাইলকে মাইল লম্বা আবুল হাসানের কবিতার রাত

সে-রাতের একপাশে অমাবশ্যা
অন্যপাশে পুর্নিমার চাদ
চাদের বুকের বোটায়
দুরকম বাংলাদেশকে চুমোচুমির হাহুতাশ শেষে
ঢাকার রাস্তাঘাটে বাজারে ক্যাম্পাসে পার্কে
আর পুলিশের চৌকিতে শাপলা শালুকের ডাটায়
বানভাশি ফনাগোটানো গোখ্রাদের লুকোনোর
আয়জোনে মুগ্ধ কবি আবুল হাসান দেখেছিল
রাতের বেলাকার আজিম্পুর কলনির পুকুরগুলোর বুকে
খোলা আর বন্ধ জ়ানালাগুলোয়
লাল নিল সবুজ় পাচমিষেলি ছায়াদের সাথে
পর্দাদের দ্বন্ধ

পর্দা ও ছায়াদের দোলাচলে
আবুল হাসান এখন লক্ষিন্দার
আর সুরাইয়া খানম হলো বেহুলা
এক লক্ষিন্দারকে লুকিয়ে আরেক আবুল হাসান
এক বেহুলাকে না জানিয়ে আরেক সুরাইয়া
গোলাপি কাকড়াদের উত্তেজনায় এফোড় ওফোড়
কামড়াকামড়ি জড়াজড়ি শেষে দুজনের ঘামে ঝলশায়
সাগরশেচা বালির মিহিদানা মুক্তার নেক্লেস
এ-দুজন এখন অবিনশ্বর
মুক্তি ও মুক্তার মালিক ও মাল্কিন


ধিন্তাধিনাত মহুয়ায় মাত বেহুলা চিতকার করেঃ
অই লক্ষিন্দার আমার মুক্তা ফিরায় দে
লখিন্দারে কয়ঃ অরে আমার মরা মুক্তার মা
গারমেন্টসে যা , কাম কৈরা খা

অই অই ঝগড়া কাজিয়া ভালা না
এ-বলে আবুল হাসান ও সুরাইয়া খানমকে
আমি লক্ষিন্দার ও বেহুলার স্বপ্ন সিথানে বসাই
অনুজ কবির বিনিত নিবেদনে
পোড়াবাড়ির চমচম শুধাই

চমচমগুলো এখন লোমশ কান্না হয়ে
কাচের শোকেসে বসে আছে
এবং বসে বসে আঠাআঠি ফাটাফাটি মজায় দেখছে
মিষ্টির কারিগরেরা হাটূর ওপর লুঙ্গি তুলে
রফিক জব্বার নুর হোসেন চলেসের
মৃত্যুর বার্তাবাহক পুরোনো খবরের কাগজ ঘষে ঘষে
শোকেসের কাচের ওপর থেকে
মিষ্টির আঠা পরিস্কার করছে

রাস্তার অন্যপারে জিঞ্জিরা হোটেলে
ডিম বাদাম দারুচিনি মেশানো
ভুতুড়ে চায়ের চুমুকে চুমুকে
আবুল হাসান সুরাইয়ার আচল সরানো বুকে
হঠাত থমকে গুলিয়ে ফেলেছে
কোনটা গনতন্ত্রের এন্টিকাটার
আর কোনটা বারবার বিক্রি হওয়া
আত্তার ধনুষ্টংকার

ঃ তোমার ডাকনাম কি
ঘুমজড়ানো সুরাইয়ার এ-প্রশ্নে
আবুল হাসান বলেছিল ঃ
ডাকনামগুলো জিবন ও যত্নের সিমান্ত
আমার ডাকনাম জ্যোতি
মেয়ে হলে ডেকো মৌলিক বোলে
ছেলে হোলে ডেকো দ্বৈত
আর ওদের বোলো
আমার আরেকটা ডাকনাম হোলো চমচম মিয়া

শোক ও শ্বৈরতন্ত্রের দেশে
ওরা যাতে সবসময় হাসে

জয় আবুল হাসান জয় চমচম মিয়া

জয় সুরাইয়া খানম জয় চমচম মিয়া


চয়ন খায়রুল হাবিব
লন্ডন অগাস্ট ২০০৭

নাযদিকিয়াঃ

'ডৌলঃ জুলেখার জেরা পর্ব', ২০১৫ সংগ্রহে কবিতাটি গ্রন্থবদ্ধ।



নাযদিকিয়াঃ রুমি ও শামস স্মরনেঃ

সুগন্ধে আমি নাচি
সুগন্ধে আমি বাচি

নাচিয়ের দেহ থেকে ওঠে ভাপ
আকাশনিল পরিতাপ গোত্তা খেয়ে নামে কোনিয়ার কমলায়

কমলার খোসা ছড়াতে ছড়াতে
আড় পেতে শুনি রুমি ও শামসের কথোপকথনঃ