স্লোপ আর্ট ম্যুরাল, শিল্পী রুহুল আমিন কাজল।ধামাইল, গফরগাঁও, এশিয়ান হাইওয়ে। ফটো, লেখক। |
গৌরচন্দ্রিকা
''কালো মেঘা নামো নামো, ফুল তোলা মেঘ নামো,
ধূলট মেঘা, তুলট মেঘা, তোমরা সবে ঘামো!''*
গফরগাঁওয়ে স্বাগতম।শিল্পী রা, কাজলের সাথে।ফটো, ইব্রাহিম। |
''আজো এই গাঁও অঝোরে চাহিয়া ওই গাঁওটির পানে,
নীরবে বসিয়া কোন্ কথা যেন কহিতেছে কানে কানে |''*
গতিপথ বদলে ফেলার কারণে ব্রক্ষপুত্র কোথাও আদি-ব্রক্ষপুত্র, কোথাও পুরাতন, কোথাও মরা-ব্রক্ষপুত্র বলে পরিচিত। ব্রহ্মপুত্র তিব্বত ও আসামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের কাছে ব্রহ্মপুত্র দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরববাজারের দক্ষিণে মেঘনায় পড়েছে। ১৭৮৭ সালে ভূমিকম্পের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদ এর তলদেশ উত্থিত হওয়ায় এর গতিপথ বদলে যায়।
শিলা নদী, ফেব্রুয়ারি, ২০২৩। ফটো, লেখক। |
বাংলাদেশের মানুষের সুখদুখের গল্পগাঁথা, কিচ্ছা, জারিগান, চিত্রপট, এমনকি পুরাণের আখ্যান নদী বিধৌত। কালিকা পুরাণে আছে, আসামের পূব দিকে মিসিমি পাহাড়ের চুড়ায় ব্রহ্মকুণ্ড নামে একটি কুণ্ড আছে৷ এটি হিন্দুদের পবিত্র তীর্থ৷ এই ব্রহ্মকুণ্ডে পরশুরাম পাপ থেকে উদ্ধার পান, অর্থাৎ এখানে তার হাত থেকে কুঠারটি খসে পড়ায় তিনি এর মহিমা দেখে অন্যের উপকারার্থে পারটি কাটিয়ে দেন ৷ ফলত এর জল দেশ-দেশান্তরে যায়৷ পরিতাপের বিষয়, নদীমাতৃক বাংলাদেশে শুধু নগরে নয়, গ্রামেও এখন বেশির ভাগ মানুষ সাঁতার জানে না। শিল্পী কাজল আমাকে তার নয় বছরের এক চাচাতো বোনের পুকুরে পিছলে ডুবে মৃত্যুর করুন কাহিনী জানিয়েছিলেন। তিনি ও তার ডেনিশ স্ত্রী লিস মশাখালীতে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চান, যার শিক্ষা কর্মসূচিতে সাঁতার শেখা অন্তর্ভুক্ত হবে।
ব্রক্ষপুত্রের গল্প আমাকে বার বার টানে। হাজার বছর ধরে, ব্রক্ষপুত্র পারে হাজারো রুপাই ফসল ফলায়, রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা বাধায়, সাজুদের প্রেমে কাতর হয়। ব্রক্ষপুত্রের গতি বদলের মত গানের সুর, শিল্প- সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি বদলায়। ২০২৩সালের ফেব্রুয়ারিতে মশাখালি ছোয়া ব্রক্ষপুত্রের নাতকুর শিলা নদী পারে বসে শিল্পী রা,কাজলের মুখে যেরকম একের পর এক তার শৈশব, কৈশোরের গল্প শুনছিলাম, আশির দশকে এগারোসিন্দুর ট্রেন ধরে সেরকম কবি রিফাত চৌধুরী ও আমি বার বার গেছি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চিরে বয়ে যাওয়া ব্রক্ষপুত্র পারে, তখন সেখানকার ছাত্র, সতীর্থ কাজল শাহনেওয়াজের কাছে। নিজেরাই হয়ে উঠেছিলাম নতুন গল্প, নতুন কবিতার রুপকার।
মধ্যযুগে কিশোরগঞ্জ থেকে আমরা পেয়েছি 'মনসা মঙ্গলের' রচয়িতা বংশীদাস ভট্ট এবং তার মেয়ে বাংলা ভাষায় 'রামায়ন' রচয়িতা চন্দ্রাবতীকে। 'মৈমনসিংহ গীতিকার' কবি নয়ানচাঁদ ঘোষ 'চন্দ্রাবতী চরিতকথা' রচনা করেন। উপনিবেশিক আমলের শেষ বেলায় একই কিশোরগঞ্জের নীরদ চন্দ্র চৌধুরী রচনা করেন 'আত্মঘাতী বাঙালি'। সত্তর দশকের লিরিকাল কবি আবিদ আজাদও কিশোরগঞ্জের। বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে আমরা পেয়েছি রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ, মামুনুর রশিদ, তসলিমা নাসরিনের মতো শক্তিশালী লেখক, লেখিকাদের। আমার বড় ভাই, বাংলাদেশের প্রথম সুপারসনিক বৈমানিক শহীদ ফ্লাইট লেফটেনেট আইনুল হাবিব ৭০ দশকে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে পড়ার সূত্রে, শৈশবে বাবার গাড়িতে প্রতি মাসে অন্তত একবার গেছি বংশাই নদী তীরের মির্জাপুরে। কেউ বলে বংশাই, কেউ বলে বংশী, এটা পুরাতন ব্রক্ষপুত্রের একটি শাখা নদী। নরসুন্দা তীরে কিশোরগঞ্জেও গেছি কয়েকবার, যে নরসুন্দাও এসেছে পুরাতন ব্রক্ষপুত্র থেকে। কংশ নদী পারের বারহাট্টাতে সময় কাটিয়েছি নির্মলেন্দু গূনের সান্নিধ্যে তার বাড়িতে। ব্রক্ষপুত্রের শাখা, প্রশাখা ঢুকে গেছে আমার কবিতার শিরা, উপশিরায়, হয়ে উঠেছে আমার 'নৈকট্যধাম' :
''পোড়ানি বাড়লে ব্রক্ষপুত্রে আসি
আমার মত এই নদেরও বৌ প্রবাসি''***
শিলা নদী তীরে দ্বারকানাথ মিত্রের দাহমন্দীর। ফটো, লেখক। |
গফরগাঁও, মশাখালী গ্রামে অবস্থানের সময় এক বিকেলে শিলা নদী পাড়ে বসে কাজলদার মুখে শুনলাম, ওনার শৈশবে ১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধ্বের সময়কালে সেই শিলা নদীর পাড়ে ঘটে যাওয়া এক মর্মন্তদ ঘটনা। কিশোর কাজলকে ওনার মা পাঠিয়েছেন দুধ আনতে। পথে বয়সে কিছু বড় কয়েক জন তরুনের সাথে ওনার দেখা। তখন গফফরগাঁওয়ের এখানে ওখানে পাক সেনারা ঘাটি গেড়েছে, সাথে পেয়েছে স্থানীয় রাজাকারদের। এরকম একটি দল বন্দুক উচিয়ে ওনাদের থামালো।
কালো পোষাকের রাজাকারদের কজন আসেপাশের গ্রামের, যাদের কারো কারো সাথে ঐ তরুণদের পরিবারের জমি সংক্রান্ত বিবাদ রয়েছে। রাজাকারদের একজন কাজলদাকে চিৎকার দিয়ে হটিয়ে দিলো, বাকিদের নিয়ে গেলো স্থানীয় ক্যাম্পে। দুধ নিয়ে ফেরার পথে, নদী তীরে জটলা দেখে এগিয়ে কিশোর কাজল শুনতে পেলো, ক্যাম্প থেকে ফেরত এনে শিলা নদী তীরে সার বেঁধে দাড় করিয়ে সাথের বন্দী তরুনদের হত্যা করা হয়েছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ঐ হত্যাযজ্ঞের মুখে অনেক দ্বারকানাথের অধস্তন শেষ সম্বল হাতে করে পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে চলে গেছিলেন।
ভুতের গলি থেকে তিস্তা এক্সপ্রেসে
গফরগাঁওয়ে স্বাগতম
বাম থেকে সুমন, অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, আমি, ইব্রাহিম, সর্বডানে রা,কাজল।গফরগাঁও সরকারি কলেজে। |
''কেহ কেহ নাকি গভীর রাত্রে দেখেছে মাঠের পরে
মহা-শূন্যেতে উড়াইছে কেবা নকসী কাঁথাটি ধরে''*
ম্যুরাল থেকে শিল্পীর সাথে সূর্যাস্ত দেখা, সাথে লোকজ সুন্দর প্রকল্প সহযোগী সুমন।ফটো, ইব্রাহিম। |
তার পর ধীরে ধীরে ম্যুরালটার মুখোমুখি হলাম । স্থানীয় তরুন দম্পতিদের একটা দঙ্গলকে দেখলাম ছবি তুলছে ম্যুরালটার ওপরে দাঁড়িয়ে, মোটর বাইক আরোহী কিছু তরুণকে দেখলাম আশেপাশে, সবাই তাদের গতি নিয়ে ম্যুরালটার আসেপাশে স্লথ হয়ে আসছে। কিম্বা আমি হয়তো কল্পনায় ঝুপ করে এক ঝাক বালি হাসের গোত্তা খাওয়া দেখলাম ম্যুরালটার এখানে ওখানে আকা হাসের আদলে। চাইকোভস্কি অনায়াসে এখানে 'সোয়ান লেক' ব্যালের মঞ্চায়ন করতে পারবে। এসব মিশ্র অনুভূতি নিয়ে ম্যুরাল ছাড়িয়ে এবং ম্যুরালের বিস্তারকে সাথে নিয়ে হাটতে থাকলাম ধানক্ষেতের আল ধরে। সে আবেশের রেশ ধরে আবার অটোতে চেপে, প্রবল ভাঙ্গা রাস্তায় তুমুল ঝাকুনি খেতে খেতে হাজির হলাম, কাজলদা ও ওনার ডেনিশ স্ত্রী লিজ রাসমুসেন কাজলের বাড়ি মশাখালী গ্রামে।
কিশোরী শারমিন।ফটো, লেখক। |
সাজুর মায়ের লাউ শাক
টিনচালা বাড়িটা ঘিরে পুকুর, বিভিন্ন জাতের গাছের বাগান, আর যত দিকে চোখ যায় ধানক্ষেত। তার ভেতর দাড়ি, কমার মত এখানে ওখানে আরো আরো টিনচালা বাড়ি, খড়ের চিন, টং ঘর, মসজিদের মিনার, কোথাও আর পতিত জমি নেই। এত ধানক্ষেত, এত জমাটি সবুজ দেখে স্বস্তি না কি অস্বস্তিতে ভুগবো, এসব ভাবতে ভাবতে চলে এলো কাজলদার ভাইয়ের বৌয়ের হাতের রান্না। এই রান্নাতে যে ভাত, ডাল, চ্যাপার ভর্তা, লাউ শাক ভাজি, কখনো হাসের মাংস, তার সবকিছুতে পুষ্টির পাশাপাশি একটা স্বতন্ত্র-সুঘ্রান রয়েছে। একটু ঝালের দিকে হলেও সুঘ্রানের পরতগুলো মলিন হয় না। আটপৌরে স্বল্প ব্যাঞ্জন রন্ধন শিল্পের সমস্ত নন্দনকে আদায় করে নেয় কড়ায়গণ্ডায়। সে-রান্না বয়ে নিয়ে আসতো কাজলদার ভাসতি কিশোরী শারমিন। এর পর শারমিনকে দেখেছি এটা, ওটা করছে, বটি হাতে মাচা থেকে লাউ শাক কাটতে। মনে পড়ে গেছে সেই রুপাই আর সাজুকে!
''কচি কচি হাত পা সাজুর, সোনায় সোনার খেলা,
তুলসী-তলায় প্রদীপ যেন জ্বলছে সাঁঝের বেলা।''*
গ্রামের বাড়িতে সকালের নাস্তার রুটি বেলছেন রা, কাজল। ফটো, লেখক |
রাজধানীর জটে ফেরার দিন ঘনিয়ে এলো। তার আগের বিকেলে কাজলদার বাসায় দেখা করতে এলেন মশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির ভাই। যাবার সময় সেদিন রাতে রুপবান যাত্রাপালার নিমন্ত্রণ জানালেন। মশাখালীর স্কুলের বাজারে মুখি শাহ মিসকিনের মাজার প্রাঙ্গণ সংলগ্ন মাঠে আয়োজন করা হয়েছে এই রাতব্যাপি পালার। চেয়ারম্যান মনিরকে চায়ের নেমন্তন্ন জানাতে কাজলদার উঠানে হাজির হলো গ্রামের কিছু বধু। তাদের সাথে স্বাচ্ছন্দ কথাবার্তায় এবং পরে যাত্রাপালার মহাভিড়েও মনির ভাইকে দেখলাম অনাবিল, আন্তরিক।
চেয়ারম্যান মনির সর্বডানে, কাজলদা ও আমি রুপবানের সাথে। |
রাত নটার দিকে আমাদের যাত্রাপালা প্রাঙ্গণে নিয়ে যেতে অটো নিয়ে এলো কাজলদার এক জ্ঞাতি ভাই। ঘুটঘুটে অন্ধকারে, ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় এক্রোবেটিক করতে করতে এগিয়ে চলছে অটো। সামনের হেডলাইট ধানক্ষেতে, রাস্তায় আছড়ে পড়ছে হারিকেনের আলোর মত। ড্রাইভারকে পেয়ে বসলো গল্পে। এক কালভার্টের কাছাকাছি হতে সে বললো, ব্রিজের নিচে খালে কয়েক বছর আগে একটা বস্তায় পাওয়া গেছিলো একজনের কাটা হাত, পা, আর আরেক বস্তায় কল্লাকাটা মুখ। দূর গ্রামের যারা এই বীভৎস হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছিল, তাদের সবাই ধরা পড়েছিল কাটা মুখের চেহারা স্থানীয়রা চিনে ফেলায়। ব্রিজের কাছাকাছি হতে নিচের পানির দিকে তাকাতে আমার রীতিমত ভয় লাগছিলো, ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে দেখি হালকা মোচের তলে সে মুচকি মুচকি হাসছে।
অবশেষে পৌছালাম শাহ মিসকিনের মাজার প্রাঙ্গণের মাঠে। সেখানে বিপুল শামিয়ানার নিচে চারপাশে তুমুল ভিড় নিয়ে মাঝখানে হেলোজেনের আলোতে উজ্জল যাত্রামঞ্চ। একস্টিকের জায়গা নিয়েছে শক্তিশালী এমপ্লিফায়ার বুমবক্স। মনির ভাই ওনার বক্তৃতার সময় কাজলদা ও আমাকে দুই পাশে নিয়ে মঞ্চে উঠলেন। চেয়ারম্যনের আতিথ্যের সুবাদে যখন একেবারে সামনে বুমবক্সের সামনে বসানো হলো, প্রমাদ গুনলাম! এক কানে একেবারেই শুনি না, বাকি কানের পর্দাও বুঝি এবার গেলো।
প্রম্পটার ও রহিম বাদশা। ফটো, লেখক। |
বেশ মজা পাচ্ছিলাম, কিন্তু বাদ সাধলো কান, আমার মাথা দপদপিয়ে উঠলে মনির ভাই, কাজল দা ও আমাকে নিয়ে গেলেন মঞ্চের পেছনে, মেকাপ রুমে, সেখানে বসে আমরা মূল মঞ্চের কিছুটা দেখতে পাচ্ছিলাম, আর উপভোগ করছিলাম মঞ্চের পেছনে আরেক রসালো মঞ্চ নাটক। দর্শকদের ভেতর অত্যাল্প সঙ্খ্যক বোরখাধারী কিছু মহিলা, আর কিশোর, কিশোরী থাকলেও মূল ভিড় ছিলো পুরুষের, যাদের সবাই একটু রুপবানকে দেখতে চায়। চেয়ারম্যানের অতিথি হিশেবে এখানেও আমরা অগ্রাধিকার পেলাম। কড়া মেকাপে খুবই ছোটখাটো রুপবানের সাথে ছবি তুললাম মনির ভাই, কাজল দা ও আমি।
ফটো শুটের পর মনির ভাই আমাদের মিসকিন শাহর মাজার ঘুরে দেখালেন, মাজারের লেটকা খিচুড়ি খাওয়ালেন। আশেপাশের ছোট ছোট টানা টিনচালা, পাকা একতলা ঘরগুলো তখন ফাকা। ওরশের সময় এখানে মুরিদ, মাস্তানেরা ঢোলের দমদমায় গান গেয়ে সুফি জিকির-আসকার করে। রাত একটার দিকে আবার ফেরা, নৈশব্দের ঝিমুনি ধরানো ঘুটঘুটে অন্ধকারে পুরো অটো তখন হয়ে উঠেছে এক অতিকায় জোনাক পোকা, গল্পের ভেতরে ভাসমান এক গহীন গল্প!
রুপসী বাংলায় ভাঁটফুলের দেশে
গফরগাঁওয়ে এখানে ওখানে জলজংলায়, পথের ঢালে ঘুঙ্গুরের মত ফুটে থাকা ধবল ফুলগুলো আমাকে বার বার টানছিলো। নাম মনে করতে না পেরে নিজের ওপর রাগ হচ্ছিলো। কাজলদার স্লোপ ম্যুরালের ঢালেও হাটু সমান গাছগুলোতে সেই নাম মনে না পড়া ফুল ফুটে আছে থোকায় থোকায়, হাইওয়ের ট্রাফিকে সবুজ পাতাগুলো ধুলায় ধুসরিত, পিপাসায় কাতর। কাজলদাও নাম মনে করতে পারছিলো না। যাকেই জিজ্ঞেস করি, সে বলে, 'এই ফুলের নাম নাই, এগুলা আগাছা।'
ভাঁটফুলের আবহে স্লোপ আর্ট।ছবি, লেখক। |
মশাখালী গ্রামে কাজলদার বাবামায়ের কবরের পাশে উনিশ বছর বয়সী তরুণী যূথীর কবর। ভাঁটফুলের নাম মনে না করতে পেরে, নতুন নাম দেবার তাড়নায় কাজলদার পরামর্শে তরুণী যূথী স্মরণে ফুলগুলোকে আপাতত নাম দিয়েছিলাম, 'ফাল্গুনী যূথী'! বোটানিস্টতো কাউকে চিনি না , প্যাথলজিস্ট অধ্যাপিকা ডক্টর শাহনাজ পারভীন সাথী ফুলের নামের প্রতি যত্নবান। ছবি তুলে পাঠাতে, সাথী জানালো ঐ ফুলগুলো 'ভাঁটফুল', সাথে পাঠালো জয়পুরহাটের তুলশীগঙ্গা তীরের ভাঁটফুলের ছবি এবং জীবনানন্দের 'রুপসী বাংলা' থেকে,
"বেহুলাও একদিন ---ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়,বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়"**
শিল্পকর্ম কখন মহত্বের মহিমা পায়? যখন তা আরো আরো মহৎ শিল্পকর্মের সাথে তুলনীয় হয়ে মিশে যেতে পারে, অন্যকে আরেকটু এগোতে উৎসাহিত করে, নিজেকে ছাড়িয়ে যায়। ধামাইলে রুহুল আমিন কাজলের স্লোপ আর্ট গড়িয়ে গড়িয়ে মিশে যায় শিলা নদী ধরে ধরে সেই সুদূরের তুলশীগঙ্গায়!
চয়ন খায়রুল হাবিব
৫/০৩/২৩
ঢাকা, বাংলাদেশ
সূত্র :
স্লোপ ম্যুরাল, শিল্পী রা, কাজল। 'লোকজ সুন্দর' প্রকল্প।
গৌরচন্দ্রিকা তথ্য, ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেন রচনাবলী।
*জসিম উদ্দীনের 'নকশী কাঁথার মাঠ' থেকে উদ্ধৃতি।
**জীবনানন্দ, 'রুপসী বাংলা' থেকে উদ্ধৃতি।
***চয়ন খায়রুল হাবিব, 'নৈকট্যধাম' থেকে উদ্ধৃতি।
নদী বিষয়ক তথ্য, ড. অশোক বিশ্বাস, 'বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা'।
ফটো, সুমন, ইব্রাহিম ও লেখক।