সাথী, ভালো নাম শাহনাজ পারভীন :
পাঁচ ফোড়নে উত্তরাধুনিক অমিত্রাক্ষরে!
![]() |
Doctor Shahnaz Pervin. Nickname, Shathi. |
আমি যে সময়, যে আবহে জন্মেছিলাম, সেখানে তেমন কারো জন্মদিন পালন করা হতো না। যে দাদাকে এমন কি আমার দেড় যুগ বয়সে বড় বোনও দেখে নাই, তার জন্মদিন বিপুল ভাবে গ্রামে পালিত হতো সুফি পীর হিসেবে। সরকারি চাকুরি এবং পাসপোর্টের সুবাদে আমার বাবার জন্মদিন থাকলেও পালিত হতো না। আমার মায়ের জন্মদিন আমরা জানি না। আমার যমজ কঙ্কণ এবং আমার জন্মদিন মনে রাখতো একই দিনে জন্ম নেয়া আমাদের মেজো বোন ইভা।
অন্য ৪ ভাই, বোনের জন্মদিন আমার এখনো মনে থাকে না। ওরা বড় হয়ে উপার্জন শুরুর পর, ওদের জন্মদিনগুলো উদযাপনের বিষয় হয়ে ওঠে। তবে বাবা, মাকে কখনো জন্মদিন পালিত হওয়া ছাড়াই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হয়।
ইয়রোপে এসে ছেলে, মেয়ের মায়েদের সাথে মিশে বুঝতে পারি যে জন্মদিন পালনের জন্য বড় মানুষ, পীর, উপার্জনক্ষম হবার দরকার নাই। পশ্চিমে জন্মদিনের আরেক নাম, 'নেম-ডে' বা 'নাম-দিবস'। দিনটাতে পরিচিতজন যার জন্মদিন, তার নামে শুভেচ্ছা-পত্র লিখে, পিঠা কেটে তাকে মনে পড়ায়ে দেয়, সেও এই পৃথিবীতে একটি অর্থপূর্ন অস্তিত্বের ধারক।
![]() |
Shati with Emeritus Professor of fine arts Hashem Khan Nondon Bishshomela - 2024. TSC, Dhaka University. |
কিছুক্ষন পর, ২৭শে সেপ্টেম্বার সাথীর জন্মদিন। ৭ সেপ্টেম্বার আমার ছেলে মাতিস-জ্যোতির জন্মদিন। ২০শে সেপ্টেম্বার আমার সেজো বোন রুবির জন্মদিন। ৫ সেপ্টেম্বার ছিলো অগ্রজ কবি সৈয়দ তারেক, ওড়িষার শিল্পী বন্ধু প্রশান্ত কুমার এবং আজিমপুরে স্কুলের বন্ধু ভিক্টরের জন্মদিন। তেসরা সেপ্টেম্বার ছিলো অনুজ গল্পকার তারিক আল বান্নার জন্মদিন। ২৯শে সেপ্টেম্বার বাঙলা ভাষার অভিভাবক সরকার আমীনের জন্মদিন। মধ্য বিশে ইউরোপে এসে জন্মদিনের মোজেজা বোঝা চয়নকে সামাজিক মাধ্যামের এপ্স এতোগুলা জন্মদিন মনে করিয়ে দিলো।
এত জন্মদিনের ভেতর সাথীর জন্মদিনকে দূর থেকে কিভাবে বিশিষ্ট করে তোলা যায়, ভাবতে ভাবতে এ লেখাটির তোড়জোড়, যেখানে লেখার বর্ণে বিভিন্ন ফুলের তোড়ার সাথে স্মৃতির ফ্রেমগুলোকে বয়ে নেয়া যায় নক্ষত্রলোকের গ্যালাক্টিক বন্দরে! ছোটোখাটো, চঞ্চল সাথীকে নিয়ে কোথা থেকে শুরু করা যায়?
![]() |
Shathi with two of her students. Bangalir Porichoy Kabbo Palm Leaf Scroll Exhibition. National Museum, Dhaka.2O23. |
সাথীর রিপোর্ট কখনো আমাদের "স্বাস্থ্য সনদ", আবার কখনো "মৃত্যু সনদ"। জটিল কেস ছাড়াও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা অনেক সময় দেহাংশ পাঠান ওর কাছে পরীক্ষার জন্য। একবার একটা জিহ্বার নমুনা এলো, রিপোর্ট অনুযায়ী সেটা এক বৃদ্ধ লোকের। মাইক্রোস্কোপে দেখে সাথী বুঝলো, জিহ্বার কোষে অনেক আঘাতের দাগ। সবচেয়ে বড় ব্যাপার,দাগগুলো বৃদ্ধের নিজের দাঁতের নয়—অন্য কারো দাঁতের চিহ্ন। হয়তো চুমু খাওয়া, হয়তো কামড়। পরে প্রমাণিত হলো, বাড়ির ভাড়াটে পরিবার মিলে বৃদ্ধকে মারধর করে, আর তাদের মেয়ে কামড়ে তার জিহ্বা ছিঁড়ে ফেল্লে, রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়। সাথী যেন একসাথে শার্লক, ফেলুদা আর পোয়ারোর মাইক্রোস্কোপিক রূপ।
![]() |
Shathi with her students and Afroza Jamil Konka. National Museum.2023. |
এই অণুবিক্ষণীক পর্যবেক্ষনের আবেগী চাপ কখনো যান্ত্রিক গন্ডিতে বাঁধা থাকে না। দূরের লোক, যে কখনো জানবে না, একটি মানবিক চোখ তার অণু, পরমাণুর রেখাচিত্রে খুঁজে বেড়াচ্ছে আমাদের বংশানুক্রমিক প্রতিরোধের ক্ষমতাকেন্দ্রগুলো। সে রিপোর্ট অনুযায়ী অপরাপর শাখার চিকিৎসকেরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে সে ক্ষমতাকেন্দ্রগুলোকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে। যত সময় যাচ্ছে, এ চেষ্টা তত সফল হচ্ছে, আবার কখনো নিমেষে ব্যার্থ হচ্ছে।
আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রয়াত সংস্কৃতি কর্মি আসলাম শিহিরের থাইরয়েড স্লাইড দেখে সাথী বুঝে যায়, এটা চিকিৎসার অতিত সর্বগ্রাসী ক্যান্সার। চার দিক থেকে বার বার দেখে, নিশ্চিত হয়েও এ দুসংবাদ আসলামকে ও সহসা জানাতে চায় নাই। চিকিৎসাযোগ্য হলে সাথে সাথে জানাতো। ঘুরপথে আসলামকে আরেকজনের রিপোর্ট নিতে বলে। সাথীর রিপোর্টের সাথে সে রিপোর্ট হবহু মিলে গেলো। এর পর কয়েক মাস আসলামের সাথে আমার কথা হতো। সে মনোবেদনা এখনো আমার ভেতর রয়ে গেছে। আমরা চিন্তা করি না, কত ভাবে চিকিৎসকেরা আমাদের মনোবেদনাগুলো তাদের দৈনন্দিনতায় বয়ে বেড়াচ্ছে।
প্রবল চাপের কাজের পাশাপাশি, সাথী সংস্কৃতি আর সাহিত্য নিয়ে ভীষণ আগ্রহী, আর কৌতূহলী। নানান সাংস্কৃতিক ‘অভিযানে’ সঙ্গী হিসেবে আমি সবসময় অবাক হয়েছি, কিভাবে সব প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করে সাংস্কৃতিক কাজে অংশ নিতে। গত কয়েক বছরে যখন আমি তালপাতার পুঁথি প্রকল্প আর "নন্দন বিশ্বমেলা" শুরু করি, সাথী সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
![]() |
Shathi cheking the spellings of Bangalir Porichoy Kabbo, Palm Leaf Scroll, next to Afroza Jamil Konka. |
‘বাঙালির পরিচয় কাব্য’ তালপাতার পুঁথি আমি লিখেছিলাম, আফরোজা জামিল কঙ্কা করেছিলেন চিত্রাঙ্কন, প্রশান্ত মহারানা করেছিলেন খোদাই—আর পুরো প্রক্রিয়া থেকে জাতীয় যাদুঘরে প্রদর্শনী পর্যন্ত সাথী আমাদের সবার প্রাণের সাথী ছিলো। কঙ্কা আর সাথী খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেলো। একই ব্যপার দেখেছি, যখন গাছ-প্রেমী আমিনুল ইসলাম দ্বিজেন শর্মা পুরস্কার পান। যদিও আমিনুল সাহেব নিজের গ্রামে বিশাল বাগান করেছেন, তিনি প্রকৃতিবিদ, জীব বিজ্ঞানী দ্বিজেন শর্মাকে চিনতেন না। সাথী ঠিক করলো তাকে দ্বিজেন শর্মার লেখা একটা বই উপহার দেবে। আর পুরস্কার নেবার সময় আমিনুল সাহেব বিশেষভাবে তাকে আমন্ত্রণ করেছিলেন।
সাথীর এ সূক্ষ্ম সংবেদনশীলতা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো ওকে আমার প্রিয় শিল্পী বীরেন সোমের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। বীরেন সোমের ছবি আমি বহু বছর ধরে দেখছি। বুঝেছি তার আঁকার সূক্ষ্ম রেখাগুলো কেবল চারুকলার শিক্ষার ফল নয়। এটা আমার নিজের তদন্তের পদ্ধতি—মানুষের আসল সময় আর অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসে বাস্তবের বাইরে এক অতিরিক্ত বাস্তব বা পরাবাস্তবতা। বীরেন সোম এক সময় দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের একমাত্র আর্বোরিয়ামে, আর সেখানে তার কাজ ছিলো গাছের ট্যাক্সোনমিক্যাল ড্রয়িং। পাতা আর গাছের মাইক্রোস্কোপিক খুঁটিনাটি বীরেন'দাকে এসব সুক্ষ রেখার কারুকাজ ক্যানভাসে এনে দিয়েছিলো। তার ওপর যারা লিখেছে, তারা কিন্তু এ দিকটা ধরতে পারে নাই। একসাথে উনি আবার অনেক কিছু ভুলেও যান।
![]() |
From left, Biren Shome, Shathi, Tarun Ghosh, Choyon Khairul Habib |
আমি ঢাকায় থাকাকালীন সাথী সহ যাই মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে আর বলধা গার্ডেনে। আমি জানি—ওই জায়গাগুলোতে ওর প্রাণ-রসায়ন কাজ করে সবচেয়ে ভালো, আমারটাও।
একজন মেধাবী ছাত্র, একজন প্রকৃতি প্রেমী, এমন কি একজন নিরামিষ ভোজীও যান্ত্রিকভাবে স্পর্শকাতরতা, মানবিকতা হারিয়ে সব কিছুকে এক মুখী তত্বের ছাঁচে ফেলে আত্মকেন্দ্রিক জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। কিম্বা যদ্দূর বহির্মুখী, সামাজিক হলো, তা সেই স্পর্শকাতরতা-বিহীনতার সম্প্রসারণ, সামাজিক বিতর্ককে যুক্তির জালে, আজ্ঞাবহতার বলে দোষে, গুণে মেশানো ব্যক্তিকে অস্বীকার করবার আয়োজনে পর্যবসিত হতে পারে।
সাথী এখানে সাধ্যমত নিজের ছাত্রছাত্রীদের মিশ্র পটভূমি ধারণ করে, তাদেরকে সাংস্কৃতিক বিচিত্রতার দিকে উৎসাহিত করে। আজকের যে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে সাথী প্যাথলজি বিভাগের প্রধান, তার ভিত্তিতে জড়িতদের প্রবণতাও নিশ্চয় পেশাগত উৎকর্ষতার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিচিত্রতাকে ধারণ করেছিলো।
![]() |
Shathi at Baldha Gardens, Dhaka.2024? |
বর্তমানের যে ঢাকাতে সাথী কাজ করছে, তার বিবর্তন ও দেখেছে চোখের সামনে। আজকের হাই-রাইজ, জ্যাম শাসিত, পরিবেশ দুষিত, কংক্রিট মহানগর যে কালে ছিলো আধা ঘুমন্ত, ঘন সবুজের আবহে মাঠ, পুকুর, খালি খালি রাস্তা ঘাট, দোতলা, একতলা বাংলোর ছিমছাম শহর, সে কালে সাথীর শৈশবের শুরু গ্রিন রোডের সরকারি কোয়ার্টারে। বাবার অসুস্থতার কারণে ক্লাস ফোরে চলে যেতে হয় আদি-নিবাস জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে। হারিকেন জ্বালানো গ্রামীণ পরিবেশে, ধাপে ধাপে স্কুল, কলেজে ভালো ফলাফল করে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে এলো।
নব্বই দশকে সাথী যখন পুরান ঢাকাতে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে আবাসিক ছাত্রী হয়ে এলো, তখনো বুড়িগঙ্গাকে মিটফোর্ড থেকে দেখা যেতো। মজার ব্যাপার, আবাসিক ছাত্রী হবার সুবাদে মহাচাপের মেডিকেল পড়াশোনার ভেতর সাথী সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিচিত্র মেলামেশা বজায় রেখেছিলো। চারুকলাতে আমার যমজ কঙ্কণের পাঠ-সূত্রে, ওর ব্যাচ-মেট, সিনিয়র যাদের সাথে পথচলতি আড্ডা দিতাম, তাদের ভেতর রাফি ভাই ছিলো সাথীদের সলিমুল্লাহ সার্কেলের অন্তর্গত। একবার শিল্পকলাতে আমার নাটকে রাফি ভাই এবং জার্মান প্রবাসী রতনকে এনে, ছবি পাঠিয়ে সাথী আমাকে চমকে দিয়েছিলো।
একই সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে সাথীর ঘনিষ্ট অনুজ বর্তমানে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ রীতার স্বামী হচ্ছে জাতীয় পদক প্রপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান। প্রচন্ড গরমের বিকেলে 'নন্দন বিশ্বমেলা - ২০২৪'এ টি,এস,সি সাতার-পুলের পাশে, গথিক মঠের চুড়ায় টিয়াপাখিদের পাগলুটে চিৎকার, পার্ফর্মেন্স আর্টের ছেলেমেয়েদের ভিড়ে রীতা, সাথীর হাটাহাটি দেখে মনে হচ্ছিলো, ওরা দুজন সলিমুল্লাহর দিনগুলোতে ফিরে গেছে।
![]() |
Rita and Shati.Nondon Bishshomela - 2024. TSC, Dhaka University. |
বর্তমানে ৮৪ বছর বয়সী, চাঁদপুর থেকে আগত হাশেম খান ৬০এর দশক থেকে ইতিহাসের মোড়ে মোড়ে মুক্তিযুদ্ধসহ ঢাকার বদল দেখেছেন। সহস্রাব্দের এদিকে সে শহর ডালকান্ড এমন ভাবে ছড়িয়েছে যে এখানে প্লাস্টিকের ফুল আর তাজা ফুলের পার্থক্য বোঝা কঠিন। এই মোড় বদলে হাশেম খানের সতীর্থ রফিকুন নবী ওরফে রনবীর টোকাই'র সামাজিক অভিধানে উত্তরণ ঘটেছে পথকলিতে, অবনমন ঘটেছে ড্যান্ডিখোর পরিচয়ে। এখানে ওনাদের চারপাশে ঘটে গেছে আশির সামরিক স্বৈরশাসন এবং তার পতন, শাহবাগ আন্দোলন, ২০২৪এ বেসামরিক স্বৈরশাসনের পতন।
![]() |
From left, Choyon, Shathi and her son Babu. Beauty Boarding, Old Dhaka.2024. |
ওপরে বাবুর প্রসঙ্গে এসে আমার যমজের মানসিক অসুস্থতা, আমার সন্তানের মানসিক অসুস্থতায় আমি য্যানো একটা বাতিঘর দেখতে পেলাম। বিগত সরকার প্রধানের কন্যা অটিজম এবং আরো বিভিন্ন ডিজেবিলিটির নিয়মিত কস্মেটিক ধুঁয়া তুলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক হয়ে গিয়েছিলেন। সরকার পতনের পর দেখা গেলো, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সামরিক বাহিনীর প্রতিবন্ধী স্কুল ছাড়া গত সতেরো বছরে এ খাতে আর কিছু ঘটে নাই। সাথীর ছেলেদের মত আরো লাখো প্রতিবন্ধীর জন্য অবশ্য বিগত সরকার কয়েক শ টাকার ভাতা চালু করে গেছে। আবার সে ভাতা সরকারের ভেতরের লোকদের কারসাজিতে, পাসওয়ার্ড ভেঙ্গে চলে যায় সঙ্ঘবদ্ধ মাফিয়ার পকেটে। একটা দেশে, যেখানে প্রতিবন্ধীদেরও পুঁজি করা হয়, তাদের বরাদ্দও তসরুপ করা হয়, সেখানে সামগ্রিক সচেতনতার মান কোথায়, তা বোঝা যায়।
যে মহানগরে সাথী ছাত্রছাত্রীদের চিকিৎসা বিদ্যা শেখাচ্ছে, তাতে ওস্তাগারের হাতুড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে অবিরাম সামাজিক ভাংচুর চলছে। ভবিষ্যৎমুখী প্রবর্তনাগুলোকে অনেক সময় পিছে টেনে ধরছে প্রতিক্রিয়াশীল কালো শক্তি। এই টানাপোড়েনে সাথীর মতো আরো অনেকের স্বাধীনতাবোধ, সাংস্কৃতিক এবং মানসিক অবকাশটুকুর ন্যুনতম পরিসর তৈরি করে।
শুরুতে বলেছিলাম যে সাথীর চোখ, ওর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এখন সাথীকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যাবহার করতে হচ্ছে। একটা সময় আসবে, যখন মানুষের স্বাভাবিক চোখ অণূবীক্ষণীক হয়ে যাবে। সে সময় আমাদের পরের প্রজন্মগুলো যান্ত্রিকতার যে সীমা-সন্ধিতে দাঁড়াবে, সেখানে সাথীর নিজের মননের পাশাপাশি, ওর হাতে তৈরি হওয়া ছাত্রছাত্রী, ওর সাথে মেশা মানুষদের সজ্ঞা, স্পর্শকাতরতা আমাদের জন্য মহাশূন্যে অবকাশের মঞ্চ হয়ে দাঁড়াবে, তা লেখা বাহুল্য।
শুভ জন্মদিন সাথী। শুভ ২৭শে সেপ্টেম্বর। অনেক অনেক ভালোবাসি।
চয়ন খায়রুল হাবিব
২৬/০৯/২৫
ব্রিটানি, ফ্রান্স
পাঁচ ফোড়নের কথা বলতে একদম ভুলে গেছিলাম!
সব বাঙালের মত আমার প্রিয় খাবার ঘন ডাল, আর ভাত। ডালে পাঁচ ফোড়ন দেয়ার যাদুটা শিখেছি সাথীর কাছে। যাদুটাকে ধরলাম, বিশ্বের পাচ সনেট মাস্টারের নামে!
পাঁচ ফোড়নে উত্তরাধুনিক অমিত্রাক্ষরে :
মসুরির ডালে শরতের সুগন্ধ,
রাস্তায় কানে তালা, পাগলা হর্ন,
জানতাম না ফোড়নের যাদু,
পাঁচ দেহঘড়ি, পাঁচ গোপন মন্ত্র।
রাজস্থানি মেথি ছোঁয় মধুসূদনের হাওয়া-মহল,
মৌরিতে ইটালির পেত্রার্কা, মাইকেলেঞ্জেলো,
কালোজিরাতে নাচার ইংরেজের শেকসপিয়ার,
পুশকিনি ওনেগিনিও ঘাগরা জিরাকে নাচালো,
চয়নের ঘুম ভাঙ্গালো ডিজনের বিজন সরিষা।
বাগারের ছন্দে জাগে তাজা এক ভোর,
ডালের ভিতর নগরের তেজালো নিশ্বাস,
সাধারণ রান্নাবান্নায়, সনেটের ঘরকন্নায়,
পাঁচ ফোড়ন শেখায় ঘ্রাণের বর্ণমালা,
ঝিরিঝিরি, রিমঝিম রূপকথার উচ্চারণ!
চয়ন খায়রুল হাবিব
২৮/০৯/২৫
ব্রিটানি, ফ্রান্স
Photo Courtesy : Nondon Bishshomela, Evan Galib, Choyon Khairul Habib.