Saturday 27 April 2013

নোম্যান্সল্যান্ডের মুক্তিযোদ্ধ্বা সাবদার সিদ্দিকি* : ভাঙ্গা লিরিকে, ভাঙ্গা বয়ানে

পুরান ঢাকাতে বুলবুল ললিতকলা একাডেমির সিড়িতে সাবদার সিদ্দিকি!**
গোল্লার ছুটঃ
নৈরাজ্যের স্ফুলিঙ্গ ছাড়া বিবর্তনের পরিসর ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে।১৯৭২ থেকে ৯০ দশকের শুরু অব্দি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকা থেকে পুরান ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর আশেপাশের হাঁটাপথে দ্রষ্টব্য হয়ে উঠেছিল তোষকের মোটা কাপড়ের আলখাল্লা গায়ে, তারের ফ্রেমের গোল চশমা চোখে, কখনো খালি পায়ে কখনো বা খড়ম পরা, হালকা ফুদ্দি দাড়ি, মোচ, ঘাড় ছোঁয়া বাবরি চুলের, ভাঙ্গা চোয়ালের ছোট্ট একহারা গড়নের সাবদার সিদ্দিকি!


মৃত্যু পরবর্তি সাবদার সংগ্রহের পেছনের প্রচ্ছদ

শামসুর রাহমান,শহীদ কাদরী,আহসান হাবীব,সাইয়িদ আতিকুল্লাহ, সৈয়দ হকদের নাগরিক প্রবর্তনার কবিতা;আল মাহমুদ,ওমর আলিদের ফোকলোর ঘেঁষা উচাটনের পর পর আবুল হাসানের আত্মবিলোপী দোলাচলে যোগ হতে পারে সাবদারের নৈরাজ্যিক বিবৃতি !সমকালীন সমীকরণে যা নৈরাজ্য তাই আবার হয়ে ওঠে ভবিষ্যতবোধক মূলধারার ধ্রুপদ পত্তনি; অবশ্য মূলধারা যদি সেই নৈরাজ্যের ধক ধারণের মত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় সামাজিক এলিটিজম এবং গোত্রানুগত্যের সেন্সরশিপ এড়ায়ে।


সাবদার সিদ্দিকি ক্যালিগ্রামস

শামসুর রাহমান,শহীদ কাদরী,আহসান হাবীব,সাইয়িদ আতিকুল্লাহ, সৈয়দ হকদের নাগরিক প্রবর্তনার কবিতা;আল মাহমুদ,ওমর আলিদের ফোকলোর ঘেঁষা উচাটনের পর পর আবুল হাসানের আত্মবিলোপী দোলাচলে যোগ হতে পারে সাবদারের নৈরাজ্যিক বিবৃতি !সমকালীন সমীকরণে যা নৈরাজ্য তাই আবার হয়ে ওঠে ভবিষ্যতবোধক মূলধারার ধ্রুপদ পত্তনি; অবশ্য মূলধারা যদি সেই নৈরাজ্যের ধক ধারণের মত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় সামাজিক এলিটিজম এবং গোত্রানুগত্যের সেন্সরশিপ এড়ায়ে।

বিবৃত নৈরাজ্যঃ
সাবদারের ব্যক্তিত্ব পুরাপুরি বুঝতে অনেকগুলা সমীকরণের ক্রমানুবর্তিতা দরকারি হয়ে পড়ে:

১)হাঁটু অব্দি চামড়ার বুট, জিনসে শার্ট গোজা ভাস্কর শামিম শিকদার, কবিতার সাবদার য্যানো ফররুখ আহমেদ, সৈয়দ আলি আহসানদের বিরোধার্থক এন্টি থিসিস!আবার শামীম যেখানে চারুকলার শিক্ষক, সাবদার সেখানে ছাত্র, শিক্ষকের আনুষ্ঠানিকতার বাইরে তৃতীয় মাত্রিক অস্তিত্ব-জ্ঞাপক!

২)জাতিয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক “the crisis of rising expectations” after radical changes in society (such as the independence of Bangladesh)'' প্রবর্তনার কথা বলে যেখানে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরদের দৃষ্টান্ত-পুরুষ হিসাবে তুলে ধরছেন; আহমেদ শরিফ বাংলা ভাষা, বাঙ্গালির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের কথা বলতে যেখানে অপরাপর আদিবাসী-নৃগোষ্ঠীর প্রতীকগুলোর বর্ণনা করছেন; তখন তত্বিয় 'rising expectation' এবং নৃতাত্ত্বিক-বিবর্তনের ব্যাবহারিক নান্দনিক-এম্পাওয়ারমেন্ট হিসাবে আমরা পাই সাবদার সিদ্দিকীদের!প্রতীকের পরোক্ষতা, বিমূর্ততার সীমানা ভেঙ্গে পড়ছে যাপনের প্রত্যক্ষ পরিক্রমায়।

৩)প্রাগ্রসর ঈশ্বরচন্দ্রদের স্বস্তিপতন যেখানে ঘটছে মুধুসুদনের শ্রেণীচ্যুত, ধর্মান্তরিত মতিচ্ছন্নতায়; সেখান থেকেও সাবদার তার পথক্রম সংগ্রহ করে নিচ্ছে: খেয়াল করুন যে মাইকেলের বাবা'র জন্ম যশোরে এবং জিবিকাসুত্রে স্থায়িবাস কোলকাতায়।সাবদারের জন্ম আইনব্যবসায়ী মুসলমান বাবার ঘরে কোলকাতায়; রায়টসুত্রে ষাটের দশকে পরিবারের সাথে অষ্টম শ্রেণীতে পড়বার সময় বাংলাদেশের সাতক্ষিরায় আগমন; সংখ্যালঘুর অস্তিত্বজাত হুমকির মুখোমুখি হয়েও স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যাগুরুদের কথিত তত্বিয় জাত্যভিমানে আক্রান্ত না হওয়া!১৯৪৭এর পর পশ্চিম বংগ থেকে
পরিবারের সাথে কিশোর বয়সে বাংলাদেশে আসা শহিদ কাদরী ও মাহমুদুল হকেরও এই একই নান্দনিক, রাজনৈতিক পরিক্রমনঃ যা পলিটিকাল তাই পার্সোনাল।


সাবদার সিদ্দিকি, ক্যালিগ্রামস

২০১০এ যখন আমি বেশ কয়েক মাসের জন্য বাংলাদেশ-এ অবস্থান করি তখন নিজ উৎসাহেই দেখা করি বুলবুল ললিত কলার আড্ডাতে সাবদারের  ঘনিষ্ঠ সংগ পাওয়া ভাস্কর রাশার সাথে। আগেই আমার হাতে এসেছে পুলক হাসান, মাহবুব কামরান, সমুদ্র গুপ্তের সহায়তায় প্রয়াত আব্দুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত, 'সাবদার সিদ্দিকী কবিতাসংগ্রহ'!নামের বানানে একই সংগ্রহে বিভিন্ন বানান, শব্দবন্ধনির কিছু মুদ্রণ প্রমাদ থাকলেও;সাবদারের জীবিত কালে কোন সংগ্রহ না প্রকাশ হওয়াতে এ-সংগ্রহটার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।সম্পাদকের প্রয়াণের ফলে এই সংগ্রহটার নবায়িত, পরিমার্জিত সংস্করণের আর অবকাশ নেই।ভ্রান্তি অন্বেষণ নয় বরং একটা সময়ের তুলনামূলক আলোচনাকে গড়িয়ে সম্পূরক একটা পটভূমির আয়োজন এবং আশি থেকে পরের তিরিশ বছরের কবিতাভুমার নিশানা নিরিখই 'নৈকট্যধামের' লক্ষ্য।

মান্নান সৈয়দের অর্থোডক্স সাংস্কৃতিক মনোভঙ্গির সাথে সাবদারের সহজাত নৈরাজ্যের দূরত্ব লক্ষণীয়।নিজের যাত্রাপথের সাথে সাযুজ্য খোজার ইতিবাচক প্রবণতা থেকেই হয়ত মান্নান সাবদার সংগ্রহের ভূমিকাতে লিখেছেন, ''ক্যালিগ্রাফির দিকে সাবদার সিদ্দিকীর প্রবণতা তো স্পষ্টত আপোলিনায়ারের স্মারক''।এখানে না বলে পারিনা যে স্যুরিয়ালিজমের জনক ফরাসি কবি শব্দ দীয়ে ছবি তৈরির যে খেলাতে মেতেছিলেন, তাকে অভিহিত করেছিলেন, 'ক্যালিগ্রামস'' বলে,'ক্যালিগ্রাফি' নয়।আবার সাবদারের আপোলিনায়ারের 'ক্যালিগ্রামস'' দেখা থাকলেও, ক্যালিগ্রাফির ইতিহাস
আরো পেছনের।আরবের, পারস্যের, তুরস্কের মুদ্রকেরা ধর্মগ্রন্থ ছাড়াও অনেক বইতেই আরবি, ফারসি, তুর্কি বর্ণমালাকে ছবির আদলে সাজিয়েছে, এসব বই মুসলিম পরিবারের কোলকাতার মান্নান সৈয়দের মতই সাবদার নিশ্চয় অনেক আগে থেকেই দেখেছে।আবার আরবদের আগে থেকেই গির্জার অলঙ্করণে খ্রিস্টানেরা যে ক্যালিগ্রাফি করে আসছিলো তাও মিশরীয়রা, ব্যাবিলনিয়রা পিরামিডের আগের আমল থেকেই করে আসছিলো।এখানে অবশ্য সাবদারকে পশ্চিমের নান্দনিক নিরীক্ষা,বিশেষ করে আপোলিনেয়ারের সাথে তুলনা করবার জন্য মান্নানকে আমি ধন্যবাদ না জানিয়ে পারি না।

মান্নান সৈয়দের সাবদার সম্পাদনা নিয়ে প্রবর্তনাগত কিছু প্রশ্নও তোলা যেতে পারে!ভূমিকাতে মান্নান দাবি করছেন, ''সাবদার কখনোই স্লোগানধর্মী বা ইজম-তাড়িত কবি ছিলেন না- বরং নিষ্ঠ ছিলেন কবিতার আঙ্গিকের প্রতি।''(পৃঃ ১৫, সাবদার সিদ্দিকী কবিতাসংগ্রহ)।যারা মান্নানের জীবনানন্দকে নিয়ে লেখা 'শুদ্ধ্বতমো কবি' এবং অন্যান্য রচনার সাথে পরিচিত, তারা জানবেন যে কলাকৈবল্যবাদের প্রতি যেমন মান্নানের ঐকান্তিক আনুগত্য ছিলো, সেরকম কেন্দ্রনিবিড় ধর্মবোধের প্রতি তার পক্ষপাত ছিল।এই পক্ষপাতই জীবনানন্দ পর্যবেক্ষণে রাজনৈতিক প্রাগ্রসরতা এবং অস্তিত্ববাদী ব্যক্তিক স্বাধীনতাকে গৌণ করে 'শুধ্বতমো...' অভিধার জন্ম দিয়েছে।'স্লোগানধর্মী''বা 'ইজমতাড়িত'না হয়েও যে একজন অঙ্গীকারবদ্ধ বা কমিটেড থাকতে পারে,তা প্রথম জীবনে 'স্যুরিয়ালিজমে', মধ্য ও শেষ জীবনে 'পিউরিটানিজমে'' আক্রান্ত মান্নান অবশ্যই জ্ঞাত ছিলেন।

বাম থেকে সাবদার সিদ্দিকি, আবুল হাসান, 
মোহাম্মদ নুরুল হুদা।সত্তর দশকের গোড়ার দিকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার চত্বর।
সৌজন্য : মুস্তাফা মহিউদ্দিন।
এখানে একটা যোগসূত্র উল্লেখ না করলেই নয়।সময়সুচক মেলালে দেখা যাবে, 'দৈনিক গনবাংলাতে' যখন সাবদারের নেরুদা বিষয়ক গদ্য এবং আরো কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়, তখন(১৯৭২/৭৩)কবি আবুল হাসান সেখানে বার্তা বিভাগে সহ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছিলেন।নির্মলেন্দু গুণের এক স্মৃতিমুলক রচনায়ও পদ্মা পারাপারের এক অভিযানে সাবদারকে আবুল হাসান, নির্গুণের সহচর হিসাবে পাওয়া যাচ্ছে।সাবদার যখন কবিতা দেয়া শুরু করেছে তার বছর তিনেকের ভেতরেই আবুল হাসান ১৯৭৫এ ২৮ বছর বয়সে বাংলা ভাষার কবিতাসভায় কয়েকটা অজরামর সংগ্রহ রেখে চিরতরে প্রয়াত!৭০এর দশকেই নির্গুণের দ্রষ্টব্য সংগ্রহগুলো প্রকাশিত এবং তার পরেও অজস্র প্রকাশনা।এখানে সাবদারকে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুভব করতে দেখা যাচ্ছে না;ঘনিষ্ঠজনদের কাছে তেমনটা শোনাও যাচ্ছে না।জীবন নিয়ে সৃষ্টিছাড়া পরীক্ষা করতে গিয়ে কি পরীক্ষার রসায়নেই ভস্মীভূত হয়েছিলেন?মাছের সওয়ারিদের মতই ফেরার নৌকা পুড়িয়ে ফেলে পারে নেমেছিলেন?যাত্রাতেই ছিলেন আনন্দিত লক্ষ্যভেদের চেয়েও?নির্দেশনাহিন এই আত্মনির্দেশনা কি নৈরাজ্যের চেয়েও প্রবল এক আত্মবিলোপী ব্ল্যাকহোল?১৯৭৫এর পর থেকে যেভাবে বাংলাদেশ নিজেকে সাংস্কৃতিকভাবে প্রতিক্রিয়াশীল অবরুধ্বতায় ক্রমশ গড়িয়ে নিয়েছে, সেখানে স্পর্শকাতরমাত্রেই পলায়নবাদি সংক্ষুব্ধটায় নিজের চারপাশে নিজেরই অলঙ্ঘ্য দেয়াল গড়ে তুলতে পারে!

পরাবাস্তবের আড়ালে মান্নানের দৈববাস্তবতা যে দূরান্বয়ী পরোক্ষ প্রতীতির উদ্ভাস ঘটায়, সেখানে সাবদারের প্রতীক এবং অনুষঙ্গ রাজনৈতিক সমাজ বাস্তবতার বিবৃতিধর্মিতায় না গিয়েও প্রত্যক্ষ সামাজিক অভিজ্ঞতায় জারিত!অনুষঙ্গের দিক থেকে এটা অবশ্য সাবদারের সীমাবদ্ধতাও।ব্যক্তিক সামাজিক, রাজনৈতিক অনুষঙ্গকে মনস্তাত্ত্বিক বহুস্তরে নেবার একটা প্রয়াস একই সময় দেখা যাবে
৬০এর আরেক অল্প পরিচিত কিন্তু শক্তিধর সাহিত্যিক মুস্তফা আনোয়ারের কাজে!গীতলতা বা লিরিক কবিতার আলঙ্কারিকতা থেকে সরে কবিতানাটক, গল্পে, কবিতায় মুস্তফা যে এবসার্ড প্রবর্তনার কাজ করে আসছিল সেগুলাও অবশ্য প্রতীকের ব্যবহারে পরোক্ষ এবং প্রবর্তনায় আত্মবিলোপী।

ষাটের প্রধান কবিদের সবার কবিতাতেই কি বিভিন্ন মাত্রায় এই আত্মবিলোপী, বিস্মরিত বিবরণের আভাস মেলে না?আবুল হাসানকে আত্মবিলোপী অবলোকনের অর্ধনারীশ্বর বলা হলে, সেই একই প্রাতিস্বিকতায় সাবদারকে বলা চলে আত্মবিলোপের ক্ষুদ্র সংস্করণ কিন্তু সম্পন্ন, সম্পূর্ণ।অন্য অনেকের বিস্তৃত কাজে যেটুকু, সাবদারের সংক্ষিপ্ত আয়াসেও সেটুকুই!একটা জরুরি পারদাঙ্ক।

আরেকটু খোলা যাক!আত্মহনন একটা স্বেচ্ছাকৃত ছেদ।কিন্তু বিলোপনের ফলাফলটা আকস্মিকও নয়, হটকারিও নয়।এর গড়ানিটা সম্পন্নতায় যাবার পথেই রবিকরোজ্জ্বল।চড়াদাগে আত্মদহন, আত্মহনন, আত্মবিলোপনকে এক সামাজিক সরলরেখায় যুক্ত করা গেলেও, সুক্ষদাগে ব্যাক্তিত্ববিশেষে এই প্রবনতাগুলোই কখনো রোগ, কখনো বা আয়ুধ!

একদিকে য্যামন হিসাব মিলছেনা মান্নান সৈয়দদের অর্থোডক্সি এবং ইন্টেলেকচুয়াল এরিস্টোক্রেসির সাথে; অন্যদিকে নির্গুণ যেভাবে হেডোনিজমের ভিতরে  মার্ক্সিয় ঈক্ষণের টানাপোড়েনের ভারসাম্য এনেছে, সেখানেও সাবদার নিতে পারছে না তাত্ত্বিক- যুক্তি-পাল্লার হিসাব!দহনাক্রান্ত ভ্রমণ?আত্মহনন কিছুতেই নয়!কবিতাগুলো সেখানে এক ধরনের পরম নোঙ্গর!

ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে পাকিস্তানি উপনিবেশের পর্বান্তর এবং ১৯৭১এ বাংলাদেশ প্রাপ্তি, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের সাথে সিমান্তছেদ একজন ব্যক্তি সাবদারের, যে নাকি আবার সহজাতভাবেই বোহেমিয়ান, কাছে প্রচণ্ড যাতনার বিষয়! সাবদারের বাবা কোলকাতা ছেড়ে সাতক্ষিরা নামের মফস্বলে এসেছে ১৯৬৪তে, আবার ১৯৭১এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার প্রাক্কালে বাংলাদেশ ত্যাগ করছে স্থায়িভাবে,যে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর, সাবদার সেখানে রাজধানীতে থেকে যেতে চাইছে এবং থাকছে! বাংলাদেশের কবিতা যতটা না তার ব্রিটিশ উপনিবেশিক ধারাবাহিকতার সাথে যুক্ত; তার চেয়েও বেশি সাধর্ম, সাযুজ্যে লাতিন কবিতার সমকালীন চড়াই, উত্রাইর সাথে সমান্তরাল।পাকিস্তানে যোগ দেবার ভ্রান্তি থেকে ১৯৭১ অব্দি বাংলাদেশিদের সংগ্রামকে স্পেনের গৃহযুদ্ধ্বের সাথে অনেকভাবেই তুলনা করা যেতে পারে।স্পেনের ক্ষেত্রে অবশ্য বিজয়ী শক্তি হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীলেরা, সেখানে বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াশীলেরা পরাজিত শক্তি এবং পরে বিভিন্ন পর্যায়ে পুনর্বাসিত।নেরুদার বিশ্বায়ন এবং লোরকার লোকগাথাজাত মিথস্ক্রিয়ায় যেভাবে লাতিন কবিতার আধুনিকায়ন; একইভাবে নাগরিক প্রবর্তনা এবং ফোকলোরের সমান্তরাল পথবন্ধন তৈরি হয়েছে ৬০এর , ৭০এর দশকের বাংলাদেশেও।

আবুল হাসানের 'রাজা যায় রাজা আসে' স্কেপ্টিসিজমের পাশে নির্মলেন্দু গুণের দার্ঢ্য প্রোটাগনিস্টকে 'হুলিয়া' মাথায় শহর ছেড়ে গ্রামে পালিয়ে যেতে দেখছি শহরে ফেরবার প্রত্যয় নিয়েই; এরা নাগরিকের দৃষ্টি থেকেই গড়ে তুলছে গ্রাম ও নগরের পর্বান্তরিত মেলাঙ্কলিয়া; একই মনস্তত্বের সিমাসন্ধিতে অবচেতন ঘোর থেকেই আসছে মুহাম্মদ রফিকের, ''কপিলা'' এই পর্বান্তর, এই মনস্তাত্ত্বিক সিমাসন্ধির পত্তনিতে দাড়ায়েই সাবদার সিদ্দিকী'র উচ্চারনঃ ''হে শহর, তোমার রাস্তার জ্যামিতি/যখন কাপতে কাপতে/খানখান হয়ে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে/পিকাসোর গের্নিকা হয়ে যায়।'

সাবদার সিদ্দি্কির জন্ম ১৯৫০এর কোলকাতায়।১৯৬৪তে ধর্মীয় দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে সাবদারের বাবা আইন ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা সিদ্দিকি স্বপরিবারে সাতক্ষিরায় চলে আসে।পাঁচ ভাই বোনের সংসারে সাবদার একমাত্র ছেলে।১৯৭১এ সাবদারের বাবা সাতক্ষিরার আইন ব্যাবসায় চুকায়ে দিয়ে আবার কোলকাতায় স্বপরিবারে স্থায়িভাবে ফিরে যান।সাবদার তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।পরিবারের সাথে কোলকাতায় না ফিরে সাবদার মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে আট নম্বর সেক্টরে যুধ্ব করেন।পরে কোলকাতায় ফিরে প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক 'স্বদেশ'।১৯৭২এ কোলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরে 'স্বদেশ'এর আরো ৪টা সংখ্যা প্রকাশ করেন।এই ফেরার পর আর বসবাসের জন্য কোলকাতায় ফিরে যান নাই।নিজের ধরনে, নিজের ঈক্ষণে ঢাকাতে এক বোহেমিয়ান-বাউলের যাপন ।দু' একটা বিজ্ঞাপন সংস্থায় এবং দৈনিক 'আজাদে' অত্যল্প সময় কাজ ছাড়া বাদবাকিটা স্বাধীন জীবন।

মুক্তিযুধ্ব তার সাথে তার কবিতাকেও বদলে দিয়েছিল।নিজস্ব ধরনের চটের আলখাল্লা, ক্যানভাসের প্যান্ট, গোল চশমা, কখনো খালি পা, কখনো খড়ম পায়ে তাকে দেখা যেত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে, পুরান ঢাকার বুলবুল ললিতকলায়।কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে কবিতা, ক্যালিগ্রাফি, বিভিন্ন রকম পত্রিকার পরিকল্পনা এবং মাটির একটা থালাবাটি।তুমুল আড্ডাবাজ এবং ন্যুনতমো সরঞ্জামে প্রচণ্ড ভ্রমনপ্রিয় এক সন্ন্যাসী।কারো সাথে নীড় পাতার কোন আকাঙ্ক্ষার আভাষ কখনো পাওয়া যায় নাই।

সাবদার সিদ্দিকি, ক্যালিগ্রামস

১৯৮৫তে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর, সামরিক স্বৈরশাসনের দৌরাত্মে ক্লাস শুরু হতে, হতে পুরো প্রায় এক বছরের অনির্দিষ্টকালিন ছুটির ধাক্কা।সময় কাটাতাম তখন গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের ব্যস্ততায়, টি,এস, সি'তে, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কাছাকাছি কবি আবিদ আজাদের 'শিল্পতরু'প্রেসে, চারুকলা ইন্সটিউটে।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার আগেই অবশ্য যমজ বোন কঙ্কণের(নাতাশা হাবিব) চারুকলাতে ছাত্রী হবার সুবাদে ৮২'থেকেই চারুকলার সামনের মোল্লার চায়ের দোকানে আনাগোনা শুরু হয়েছিল।এসবের মধ্যে সাবদারের সাথে প্রথম দেখা টি, এস, সি'র টেবিল টেনিস কক্ষে!উনি রাতে ঘুমাতেন ঐ পিং পং টেবিলে।আবিদ আজাদের প্রেসে দেখা হয়েছে কয়েকবার।দেখা হ'লো, আমি বল্লামঃ আবিদ ভাই'র ড্রয়ারে আপনার ক্যালিগ্রাম দেখলাম।উত্তরে উনি বল্লেনঃ 'হ্যা আবিদ তোমার কথা বলছিলো।'আশিতে আবিদ আজাদ স্বৈরতন্ত্র সমর্থক কবিতাকেন্দ্রে যোগ দেবার কিছুদিন পর 'শিল্পতরু'র ছাপাখানা ঢাকেশ্বরী থেকে সরে কাঠালবাগানে চলে যায়।এ-পর্বে আমরা অনেকেই যেমন, তেমনি সাবদারও আবিদ আজাদের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেন।একবার বললাম যে পিং পং টেবিলে ঘুমান, খেলতে পারেন?ভাঙ্গা চোয়ালে, হালকা দাড়ি আর তৈমুরি মোচের নিচে একটা মুচকি হাসি এসব রসঘন সময়ে দেখা যেত।

পুরান ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে ভাস্কর রাশার কাছে সাবদারের নিয়মিত যাতায়াত নিয়ে পুলক হাসান লিখেছিল,''তরুণ ভাস্কর রাশার সাথে সাবদারের সম্পর্ক ছিলো অভ্যাসগত।আর মরহুম ওস্তাদ ফজলুল হকের সাথে গুণীর সম্পর্ক...।ফজলুল হক তখন বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিক্ষক আর রাশা তখন এ-একাডেমীর পশ্চিম পাশের একটা কক্ষে নিয়মিত কাঠের বাটালি ছেনে ভাস্কর্য তৈরি করেন। আর প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত নটা-দশটা অব্ধি এক ঝাঁক তরুণের উপস্থিতিতে আড্ডা জমাতেন।এ-আডায় শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা থেকে রাজনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়েও মত বিনিময় হতো।''এই পুলকই সাবদারের মৃত্যুর পর 'দৈনিক ইনকিলাব'এর ১০ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৫ সংখ্যায়, ''সাবদার সিদ্দিকীর মৃত্যু: এক নগর বাউলের প্রস্থান'' শীর্ষক স্মৃতিকথায় এক চমৎকার লেখচিত্র এঁকেছিল, ''দেখতে অবিকল তরুণ সাধু কি সন্তের মতো।লম্বাটে মুখ, ভাঙ্গা চোয়াল, ঈগল ঠোটের ন্যায় নাক আর কোন তরুণের মতই ঘাড় অবধি নেমে যাওয়া এক মাথা চুল।মুখে এক গোছা পাতলা দাড়ি...ক্লান্ত চোখ জোড়া কোটরাগত, কিন্তু দূর স্থির লক্ষ্যে আগুনের মত প্রজ্বলিত।কাঁধে ঝোলা সে তো নিমিত্ত।হালকা-পাতলা ছিপছিপে গড়নের সাদামাটা এ মানুষটি এতো তেজ ধরেছিলেন বুকে-মনে।ভাবাই যায় না, যেন তার নির্মোহ আদর্শের কাছে হিমালয় পর্বত পর্যন্ত অবনত।''

সাবদারকে নিয়ে অনুজদের আগ্রহের পেছনে কেবলই বোহেমিয়ান যাপন বা নৈরাজ্যিক প্রকাশভঙ্গী প্রণোদনা হিশাবে কাজ করে নাই!এর পেছনে রয়েছে ৫০শের দশক থেকে বাংলাদেশের সাহিত্যের প্রমিত পত্তনির যে কাজ হয়েছে তার পারম্পর্জের প্রতি উৎসাহ!'আসাদের শার্ট' লিখে শামসুর রাহমান বাংলাদেশের কবিতার বয়ান, চিত্রকল্প, উৎপ্রেক্ষা হেঁচকা টানে জীবনানন্দিয় আবহ থেকে সরিয়ে এনেছিলেন যে পত্তনিতে দাঁড়িয়ে তার বীজতলা তৈরি হয়েছিল আরো আগে।ঢাকার আজিমপুর ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলে 'জীবন আমার বোন' খ্যাত কিশোর মাহমুদুল হক'কে আবিষ্কারের পর খন্ডকালিন তরুণ শিক্ষক শহীদ সাবের তাকে নিয়ে যান, দৈনিক 'ইত্তেহাদের' সম্পাদক আহসান হাবীবের কাছে মাহমুদুল হকের প্রথম কাজটা ছাপানো ছাড়াও একের পর এক সম্পাদকীয়তে যে গদ্যভাষার বুনট আহসান হাবীবেরা ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন তার ভিতরেই লুকায়িত পঞ্চাশের ভূমার একটি অংশ।পিরোজপুরে জন্ম হলেও আহসান হাবীবের সাংবাদিক জীবনের শুরু কোলকাতায়।মাহমুদুল হক, শহীদ কাদরী, মান্নান সৈয়দ'দের পরিবার ভারত ভাগের পর যখন বাংলাদেশে এসেছে, তখন উল্লেখিতরা কিশোর অথবা বালক।

আহসান হাবীবদের শিক্ষানবিশি কোলকাতায় হলেও, তার সমান্তরালেই ঢাকাতে আরো ব্যাপকতর সার্বভৌম প্রমিত পত্তনির কাজ করে আসছিলো বেশ কয়েকজন যার পরিস্ফুটন দেখতে পাওয়া যায় পঞ্চাশের নাটকে, কবিতায়,উপন্যাসে,চলচ্চিত্রে।পূর্ব বাংলার জল, কাদায় পুস্টিসার গ্রহণ করা এই দ্বিতীয় দলটাকে নিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সবসময়ই সন্ত্রস্ত ছিল।পুরোপুরি বাংলাদেশের অনুষঙ্গে অথচ বিশ্বায়িত প্রবর্তনার ধারক শহিদুল্লাহ কায়সার, জহির রায়হান, মুনীর চৌধুরীদের বিচিত্রমুখি পরিশীলনে যে পশ্চিম বংগ থেকে আসা সাহিত্য, শিল্প প্রয়াসী কিশোর সাবদারেরা সংক্রমিত হয়েছিল তা বলাই বাহুল্য।অভিবাসীর বাস্তুহারা মনস্তাত্ত্বিক দর্পণ আবার বুদ্ধিবৃত্তিক বাস্তু খুঁজে পেয়েছিল এই স্বাগতিক দ্বিতীয় দলের প্রত্যয়পুর্ন সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ভেতর।

আমরা জানতে পাই ১৯৯৪ সালে সাবদার ঘুরতে, ঘুরতে দিল্লি চলে গিয়েছিলেন এবং সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন।অসুস্থতা নিয়েই বাংলাদেশে ফিরতি যাত্রা শুরু করেন।সীমান্তবর্তী সাতক্ষিরার কাছে ভারতীয় এলাকায় তার মৃত্যু ঘটে এবং নামহীন এক গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।'নামহীন গ্রাম'?Nomansland কি?দুইপারের সীমান্ত রক্ষীদের ধাওয়া পালটা ধাওয়ার শিকার হয়েছিলেন কি?

পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণ করতেন না সাবদার! কোলকাতার জীবিত স্বজনদের DNA বা রক্তলতা সংগ্রহ করে, সীমান্তবর্তী কবরগুলা খুড়ে সনাক্তকরণ নিশ্চিত না করা হলে বিস্তারিত আমরা কখনোই আর জানতে পারবো না!সেটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অসম্ভব হলেও, পরিস্থিতিজাত ভাষিক-বীজতলাগুলার রক্তলতা চিহ্নিত করতে পারলে আমরা হয়ত বাংলাদেশের বাংলা ভাষার মানপত্তনির হারানো ছোটবড় যোগসূত্রগুলা নির্ণয় করতে পারবো!

চয়ন খায়রুল হাবিব
জুলাই ২০১২
ব্রিটানি, ফ্রান্স

 *সাবদার সিদ্দিকি মৃত্যু পরবর্তি যে 'কবিতা সংগ্রহ'টি বেরোয় তার প্রচ্ছদে নামের বানান, সাবদার সিদ্দিকী।মান্নান সৈয়দ ওনার বিস্তারিত মুখবন্ধে নামের বানান করেছেন সাবদার সিদ্দিকি।সাবদার কেন্দ্রিক রিভাইভাল আলোচনাতে, আমার প্রথম প্রবন্ধ সংগ্রহ, 'ভাষাপ্রমিতের নোম্যান্সল্যান্ড 'এ আমি সাবদার সিদ্দিকী ব্যাবহার করলেও, মান্নান সৈয়দের  সিদ্দিকি বানানের সাথে সঙ্গতি রেখে যাবতিয় বাংলা নামের বানানে আমি ঈকারের বর্জনের পক্ষ্যে।বর্তমান ব্লগেও সিদ্দিকি গ্রহন করে নিলাম।অনলাইন লেখাতে নামের বানান ছাড়া ঈ, ঊ, ণ, চাঁদবিন্দু বর্জন করে আসছি বরাবর।ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবিন্দ্রনাথ, জিবনানন্দের নামের বানানেও ঈকার বর্জন জরুরি।সাবদারের বেলাতে মান্নান সৈয়দ যে সাহসটুকু দেখিয়েছিলেন, জিবনানন্দের বেলায় তা ধারন করেন নাই।চখাহা।২৪/০৬/২০১৮।


সংযোজন, মার্চ, ২০২৩।
শিল্পী রুহুল আমিন কাজলের স্কেচে সাবদার সিদ্দিকির জীবনকালীন একমাত্র পোট্রেটের সামনে আমার সেলফি।সেলফিটি তোলা হয়েছে রা, কাজলের ঢাকা বাসভবনে, যেখানে পোট্রেটটি সংরক্ষিত।চখাহা।


সাবদার ও ত্রিদিব দস্তিদারের সম্মানে ছোট্ট কবিতা 'ছায়াপিস্তল'

সাইকাডেলিক অর্ঘ্য 'টাইমলাইন সাবদার'

'ভাষাপ্রমিতের নোম্যান্সল্যান্ড: ভাঙ্গা লিরিকে ভাঙ্গা বয়ানে' প্রবন্ধ সংগ্রহে রচনাটা পরিমার্জনাসহ গ্রন্থবদ্ধ!প্রকাশকাল, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫!

লেখাটা প্রথম প্রকাশিত  রাদ আহমাদ সম্পাদিত 'বৈঠকখানা' সাহিত্যপত্রের দ্বিতিয় সঙ্খ্যাতে। 'বৈঠকখানা' প্রকাশনাটা কপি/পেস্ট করা হলো এখানে এবং একই কারনে ধুতুরাfm এর লজবাং বা লজিকাল বাংলা বানানরিতি অনুসরন না করে প্রচলিত বানানরিতি বহাল থাকলো।চখাহা।

সুত্র/
সাবদার সিদ্দিকির সাথে ব্যাক্তিগত পরিচয়
নির্মলেন্দু গুণের স্মৃতিমুলক রচনা
আব্দুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত 'সাবদার সিদ্দিকী কবিতা  সংগ্রহ'*/**
আবিদ আজাদ সম্পাদিত  কবি  শীল্পতরু  সাহিত্যপত্র
পুলক হাসানের স্মৃতিমুলক রচনা
ভাষ্কর রাশার সাথে কথপোকথন
**সাবদার সংগ্রহ পাওয়া গেছে তারিকুল আলম খানের সৌজন্যে  এবং ছবিটিও নেয়া হয়েছে তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে!