Friday 5 April 2013

কামুর 'প্লেগ' : কতটুকু অচিকিৎস বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতা


অনেক মানষিক রোগি আছে যারা রোগলক্ষন বোঝে না, আবার তাদের আসেপাসে অনেকে আছে রোগলক্ষন বুঝবার পর সেটা লুকাতে চায়, অস্বিকার করে  এবং রোগটিকে অচিকিৎস পর্জায়ে নিয়ে যায়!সাম্প্রদায়িকতা মনস্তাত্বিক রোগ নয়, এটা সামাজিক কায়েমি এঞ্জিনিয়ারিং-এর ফসল!এই এঞ্জিনিয়ারিং বিমুর্ত বা চেহারাবিহিন নয়!শুধুমাত্র স্বার্থান্বেষি মহলের ইন্ধনে হচ্ছে বলে এর দায় থেকে বাংলাদেশের বুদ্ধিজিবিরা আর নিজেদের গা বাচাতে পারেন না!


সাম্প্রদায়িকতা এবং তার ইন্ধনে জড়িত বাংলাদেশের সাংবাদিকতা রুপান্তরিত কলম-বেশ্যামিতে, যাদের লালসার পরিনতিতে প্রেসক্লাবগুলো আজকে বেশ্যাপাড়ায় পর্জবসিত!যে মুহুর্তে একজন  সাংবাদিক বলে যে আদিবাসি বা সঙ্খ্যালঘুদের প্রতি আক্রমন ধর্মিয় নয় বরং রাজনিতিক; সে-মুহুর্তে সে সাম্প্রদায়িকতার রসদ জোগায় এবং একই সাথে রাজনিতির ভেতর সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ আড়ালের প্রয়াস চালায়!এই সাংবাদিকরুপি, গন যোগাযোগ কর্মিরুপি কলমবেশ্যাদের বোনাস-মুনাফার গুজানি হয়েই খাবি খাচ্ছে বাংলাদেশের সাহিত্য, মঞ্চনাটক এবং সামগ্রিক সংস্কৃতি!বন্ধুকৃত্য করে আমরা আড়াল করছি দানবদের!


ব্রতকথাঃ

মরিয়ম মুর্মুর এপিটাফ :
শব্দের
সম্ভ্রম
না
ভেঙ্গে
শব্দের সম্ভ্রম পুরাপুরি চুরমার.....

যে কোন সংগবদ্ধ অপরাধ থেকেই এক পক্ষ্য মুনাফা লোটে, আর সামাজিকভাবে দুর্বলতমো পক্ষ্য তার শিকার হয়!ফতোয়ার দায়ে
নিহত কিশোরি হেনা, দলবদ্ধ ধর্শনের শিকার মরিয়ম মর্মু, রামুতে বৌদ্ধ্ব মন্দির পুড়িয়ে দেয়ার সাথে ২০১৩র মার্চ, এপ্রিলে সাম্প্রদায়িক নিধনযজ্ঞ্ব; মৌলবাদিদের হাতে ব্লগার রাজীব হায়দারের হত্যা; আবার মৌলবাদিদের হুমকির মুখে ব্লগার  গ্রেফতার(এবং পরবর্তিতে ব্লগার অভিজিত রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টপাধ্যায় নীলয়,নাজিমুদ্দিন সামাদ, সম্পাদক জুলহাস মান্নান, প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দিপন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যা...)***; ইত্যকার ঘটনাবলিকে সুত্রবদ্ধ করা হলে দেখা যাবে সাম্প্রদায়িক-ধর্ম-ব্যাবসার মুল পুজি হচ্ছে হেইট-ক্রাইমঃ ঘৃনা বা বিদ্বেষজনিত সহিংশ অপরাধ; সামাজিক ক্ষ্মতায়ন এবং আর্থিক মুনাফা যার প্রনোদনা হিসেবে কাজ!এ-ক্ষ্মতায়নের এবং মুনাফার পথ বন্ধ করে দিলে সাম্প্রদায়িকতা যদিও পুরাপুরি উতপাটিত হয় না, তবে একটা চেক এন্ড ব্যালেন্স পরিস্থিতি তৈরি হয়!

জনগোষ্ঠিকে যত পর্জায়ে বাকরুদ্ধ্ব অচলায়তনের নিগড়ে বন্দি করা যায়, তত তার স্বাভাবিক ইতিবাচক পারস্পরিকতা বর্ন, ধর্ম, লিংগ,জাত-পাতের অজুহাতে নেতিবাচক ঘৃনাজনিত অপরাধের দিকে এগোতে, এগোতে নাশকতায় বিস্ফোরিত হয়!২০১৩, মার্চ মাসে বাংলাদেশে সঙ্খ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিবাসিদের ওপর যে নির্জাতন, নিধনযজ্ঞ চালানো হয়েছে যুদ্ধাপরাধি বিচারকে কেন্দ্র করে তা বলে দেয় যে অনেকদিন ধরে ধর্মিও অনুভুতি, আবেগের নামে এখানে আসলে হেইট ক্রাইমকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার প্রক্রিয়া থেকে এই ঘটনাগুলো ঘটছে!


অনুভুতি বনাম অনুশাষনঃ
অনুভুতি এবং আবেগ নির্ভর একজন লোকের স্পর্শকাতর হবার কথা!নৃষংষতা, সহিংষতা, হত্যা, ধর্শন, পরস্বহরন স্পর্শকাতরের অলঙ্কার নয়।ধর্মের অনুশাষন মাত্রেই কিন্তু আবেগজাত নয়; ধর্মের অনুশাষন এমন কি অনেক সময়ে অধ্যাত্ম নির্ভরও নয়!ধর্মকে যারা ক্ষ্মতায়নের হাতিয়ার বানাতে চায় সুফি , বৈশ্নব, সহজিয়া, মরমিয়া অধ্যাত্মবাদিদের সাথে তাদের দুরত্ব এক্ষেত্রে লক্ষ্যনিয়।

ইব্রাহিমের আমল থেকে, মনুর আমল থেকে সাধারনের সাধারন জ্ঞ্বান যাকে অধর্ম বলে জেনেছে, ধর্মের অনুশাষনকে রাস্ট্র ক্ষ্মতায় রুপান্তরের সমর্থকেরা সেসব অধর্মকে রাজনিতির হাতিয়ার করে তুলেছে!আবেগ অনুভুতির নামে যা তৈরি করা হয়েছে তা হচ্ছে আবেগ, অনুভুতিহিন একরৈখিক উন্মত্ততাঃ সুফি কবি রুমির আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরনাদায়ি শামসকে গুমখুন করে নিখোজ বলে রটিয়েছিল রুমির সম্পদশালি মৌলবাদি ছেলেরা; চার্চ, স্বৈরতন্ত্র, ফ্যাসিবাদের উন্মত্ত খুনেদের হাতে স্পেনের গৃহযুদ্ধ্বে নিহত হয়েছিল গার্সিয়া লোরকার মত অনেক শিল্পি, সাহিত্যিক!তাসলিমারা, হুমায়ুন আজাদেরা বার বার আক্রান্ত হচ্ছে বাংলাদেশে তাদের হাতে যারা যে কোন আবেগের বিনাশ চায় অঙ্কুরে!

প্রতিক্রিয়াজাত ক্লোনের-কারখানা ও গা-সওয়া অপশক্তির ককটেলঃ
দির্ঘদিন ধরে নিজের এপিকধর্মি কাজ, 'ঘাতকেরা এবং banality of evil''এ ধর্মনির্ভর, সংঘবধ্, বর্নবাদি অপরাধের মন্স্তাত্বিক, সামাজিক, প্রতিকি পটভুমি খতিয়ে দেখতে চাচ্ছিলাম!২০১৩'র জানুয়ারিতে এ-কাজটার প্রাথমিক খসড়া যখন ফেসবুকে সুহৃদ-দের সাথে শেয়ার করলাম তখন কি আমার মনের গহিনে ফেব্রুয়ারি-মার্চ-এপ্রিলের মর্মঘাতি ঘটনাযজ্ঞ্ব পরোক্ষসঙ্কেতে আগাম খেলা করেছিল?'

সামাজিক সহনশিলতার মুলে যে ''বাচো এবং বাচিতে দাও...' সে বিজমন্ত্রের প্রতিমা গড়ে ওঠে বিভিন্ন অধিকারমুলক সংগ্রামের ভেতর দিয়ে; যে সংগ্রামগুলো ধাপে, ধাপে একটা মিশ্র জনগোষ্ঠির ভিতর স্বাধর্মের ভারসাম্য আনে, সাংস্কৃতিক বহুমাত্রিকতার বিকাশ অব্যাহত রাখে!বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ-স্বাধর্মের ধারাবাহিকতা তৈরি হয়েছিল '৫২র ভাষা আন্দোলন, '৭১এর মুক্তি সংগ্রাম এবং '৭২এর সংবিধানের মাধ্যমে; এ-স্বাধর্মের প্রমিত-প্রতিমা এবং শহিদ বুদ্ধিজিবিদের জাতিস্মর হিশেবেই আমরা পেয়েছি শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী, মাহমুদুল হক, জাহানারা ইমাম, আহমদ শরীফদের!অন্য ধর্মের প্রতিমা ভাংগার আগে, অন্য ধর্মের পুজারিদের নিধনের আগে আততায়ি নিজধর্মের স্বাধর্ম, সাজুজ্যে গড়া প্রতিমাগুলোকে হয় নিশ্চিন্ন করে দেয় নিরবতার আচ্ছাদনে কিম্বা প্রতিমাগুলোকে বিকৃত, বিভ্রান্ত করতে থাকে নির্বাচিত শব্দের আড়ালে!

যে লোভ, যে প্রতিক্রিয়া, যে রুপরেখা, যে অপরাজনিতি থেকে আশির দশকে সৈয়দ আলি আহসান, আল মাহমুদ, আব্দুল মান্নান সৈয়দেরা স্বৈরতন্ত্রের শিবিরে যোগ দিয়েছিল সে লোভ, সে প্রতিক্রিয়ার, সে-রুপরেখা, সে-অপরাজনিতির লক্ষ্য ছিল '৫২, '৭১, '৭২ এর অর্জিত প্রতিমাগুলোর বিকৃতি ও বিনাশ!নব্বই, শুন্য দশক ধরে তৈরি হয়েছে সে লোভের, সে প্রতিক্রিয়ার, সে রুপরেখার, সে অপরাজনিতির বিভিন্ন আকৃতি, প্রকৃতির ক্লোন!এই ক্লোনদের সম্মিলিত টার্গেট লালের ছদ্মবেশে সাম্যবাদি আন্দোলনে বিভ্রান্তি আনা; লালের ছদ্মবেশে অপশক্তি, অশুভ শক্তিগুলোর প্রতি banal বা গা-সওয়া-গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে আসা সামাজিক পর্জায়ে; নান্দনিক-শুদ্ধ্বতাবাদের নামে নিস্বর্গতাবাদি আচ্ছন্নতা তৈরি করা; যাত্রাকে যেভাবে জলসা দিয়ে হটানো হয়েছে সেভাবে কেরিকেচার, স্যাটায়ার দিয়ে বাংলাদেশের প্রমিতের পত্তনি ও প্রাগ্রসরতাকে রুদ্ধ্ব করা!

এই ক্লোনেরা আশ্রয় নিয়েছে যুগপত কালচার এবং কাউন্টার কালচারের!শামসুর রাহমানকে ছোট করতে এরা ব্যাবহার করেছে শহীদ কাদরীর নাম; যখন তা ধোপে টেকে নাই টেনে এনেছে লালন, হাসনের নাম।যখন লালন, হাসন, মাইজভান্ডার গোলানো  ফেরেব্বাজি লোকে ধরে ফেলেছে, তখন বাংলা একাডেমিতে এদের বসিয়ে দেয়া গবেষকেরা, এদের এটো কুড়ানো  কবি, গল্পকারেরা একজন আরেকজনকে টেক্সট করেছেঃ ভাববাদের বাজার খারাপ, লোকজিবনের নামে কল্কি সাজানো যাক...লালনটা, রবীন্দ্রনাথটা ধরে রাখতে হবে...নতুন কয়েকজনকে লালন সাধক বলে পরিচয় করায়ে দিতে হবে...বলতে হবে মাইকেল,ইকবাল,লালন, হাসন,ফররুখ, আল মাহমুদ, মান্নান সৈয়দ, আব্দুল্লাহ আবু সাইয়িদ...শামসুর রাহমান বলা যাবে না, বল্লেও তাকে সাম্রাজ্যবাদি ব্লা ব্লা বলা হবে!...কেউ যখন আপত্তি করলো যে ইকবালতো বাংলাতে লিখে নাই;তখন তারা উত্তর দিলো যেঃ বাংগালি-মুসলিম পরিচয়-সঙ্কটের বিবাদভঞ্জনে ইকবাল অতিব দরকারি!... যখন লোকজন আপত্তি করলো যে , সে 'বিবাদভঞ্জন'তো '৫২, '৭১এ আমরা ঘটায়ে ফেলছি!তখন লোকজিবনবাদি-ক্লোনসকল রায় দিলঃ আগে '৪৭এর মানভঞ্জন, পরে অন্যকথা!লোকজন যখন জানালো যে আহমদ শরীফের আউট অব প্রিন্ট 'নিউক্লিয়াস' আমলের লেখাগুলা আমরা পড়ে ফেলেছি, সেখানেইতো '৪৭এর মানভঞ্জন সারা!তখন ক্লোনসকল বল্লোঃ আর আলোচনা চলে না মুর্তাদ-দের সাথে, এবার সহি-বিপ্লবের ওয়াক্ত!



পিলখানার গনহত্যায় লোকজিবনবাদি-ক্লোনসকল বলে উঠেছিলঃ ইশ, অল্পের জন্য ফস্কে গেলো!

উত্তর আধুনিকদের  ক্লোনেরা মুলধারায় নিজেদের বেচলো লোকজিবনবাদি বলে!আর নিজেদের ক্লোন পরিচয় লুকাতে আড়াল নিলো খেউড়, কেরিকেচার, স্যাটায়ারের; সম্ভাব্য বিরোধিদের আখ্যা দিল জারজ বলে!ঠিক যে কৌশলে হেফাজতে ইসলামের আড়ালে বৈতরনি পার হয় তাদের হাই কমান্ড!এসব করে ক্লোনেরা কেউ বুদ্ধিজিবি, কেউ গবেষক, কেউ কবি, কেউ গল্পকার পরিচিতি দিয়ে সাক্ষাতকার দিয়ে বেড়াতে থাকলো! জামাতি 'বাশের কেল্লা' রুপান্তরিত হলো 'পরিবর্তন ডট কমে'!সামাজিক নেটওয়ার্কে স্মার্ট ললনা হিশেবে পরিচিত অবসাদগ্রস্থ জীবনানন্দ আবৃতিকারিনি, চৌধুরানি, সাইয়েদারা প্রথমে 'রগড়' হিশেবে 'লাইক' করতে থাকলো  জামাতের সাফাই গাওয়া বিভিন্ন পোস্ট!অবসাদের পাশবালিশ রুপান্তরিত হলো রাক্ষসে!

নান্দনিক-প্রতিক্রিয়াজাত-ক্লোন কি, কে, কেন তা নির্নয়ও আমাদের আবেগ, অনুভুতির সুস্থতার জন্য দরকারি!আমাদের জানা দরকার ক্লোনেরা কেন শামসুর রাহমানকে পছন্দ করতে পারে না; আমাদের জানা দরকার মান্নান সৈয়দ কেন কিছু নাম ঘুরিয়ে, ফিরিয়ে তার আত্মজিবনিতে উল্লেখ করে; আমাদের জানা দরকার  আবিদ আজাদের 'শিল্পতরু' প্রেস, প্রকাশনি কিভাবে মৌলবাদিদের খপ্যরে পড়েছিল; আমাদের জানা দরকার এখনকার প্রকাশকদের কিভাবে প্রতিক্রিয়া-জাত-ক্লোনেরা কুক্ষিগত করছে; আমাদের জানা দরকার জহির রায়হান, মাহমুদুল হক, হুমায়ুন আহমেদ, জাহানারা ইমামদের মুক্তিযুদ্ধ্বসহ বাঙ্গালির চেতনা-অবচেতনার  পর্বান্তরের উত্তির্ন বহু কাজ থাকা সত্বেও কারা বলছে, 'মুক্তিযুদ্ধ্ব নিয়ে কি আসলেই তেমন কোন বিশ্বস্ত লেখা আছে?''আমাদের জানা দরকার কানাডা, লন্ডনে কারা কথিত সংস্কৃতিসচেতন নারিদের লাল, সবুজের শাড়ি পরিয়ে ব্যাবহার করছে ইসলামিজমের বিপননে!আমাদের জানা দরকার কেন, কথিত মার্ক্সবাদিরা, পাব্লিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকেরা, কতিপয় নাট্যজন, মিডিয়াকর্মি জামাতিদের হয়ে সাফাই গাইছে!এসব কিছুর পেছনেই কাজ করছে আর্থিক পৃষ্টপোষোকতা!মার্কামারা জামাতিদের আমরা চিনি, কিন্তু মার্কাছাড়া জামাতি-মার্ক্সিস্টদের আমাদের কে চিনিয়ে দেবে?


আমাদের জানা দরকার, কারন কথিত লোকজিবন ও সামন্তবাদের ককটেলে যে বিভিন্নরকম ধনবান এবং নির্ধন প্রতিক্রিয়াজাত-ক্লোন তৈরি হয়, তারাই মরিয়ম মর্মু, হেনা, রাজিব হায়দারের স্থানিয় ও বিশ্বায়িত নিরাবেগ আততায়ি নির্মানে, বিনির্মানে সহায়তা করে!ধর্ম এই ককটেলে যোগায় আত্মপ্রবোধ আর স্বৈরতন্ত্র যোগায় ক্ষ্মতায়নের মোক্ষম রসদ!জাতপাত, লোক ঐতিহ্যের নামে এই ককটেল বাজারজাত করা হলেও বিশ্ব ইতিহাসের বিভিন্ন পর্জায়ে এই ককটেলের প্রয়োগ ও পরিনাম একইঃ ঘৃনাজনিত অপরাধের প্রাতিষ্ঠানিক-প্লেগ এবং সম্পদ অর্জন!



ধর্ম ও স্বৈরতন্ত্র
সিসিলির মাফিয়া, মিসিসিপির কু ক্লুক্স ক্লান, ভারতের বজরং দল, সুদানের জাঞ্জাওয়িদ, ১৯৭১এর আল বদর, রাজাকার, স্বাধিন বাংলাদেশের ছাত্র শিবির ধরনের সংঘগুলোর পত্তনি, বিকাশ ততপরতার থেকে  পুরোহিতেরা বরাবর স্থাবর, অস্থাবর, সামাজিক, রাজনিতিকভাবে শক্তিশালি হয়েছে!

স্পেনের গৃহযুদ্ধে সাম্যবাদি রিপাবলিকান সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরতন্ত্রি জেনারেল ফ্রাঙ্কোকে স্পেনিশ চার্চ কতৃপক্ষ্য লোকবল, অর্থবল দিয়ে সহায়তা করে এবং তাকে যায়েজ করতে ঐতিহ্য, আবেগের যে অজুহাত দেখিয়েছিল, তার পেছনেও ছিল সেই শত শত বছর ধরে কুক্ষিগত সম্পদ না হারানোর হিসাব।সাম্যবাদি সরকার উচ্ছেদে ফ্রাঙ্কোকে একাধারে সহায়তা করেছে স্পেনিশ চার্চ এবং ফ্যাসিবাদি হিটলার!আবার জাতিগত আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকারের সংগ্রামে ধর্মের অনুশাষন যাতে কোন ভুমিকা না রাখতে পারে আয়ারল্যান্ডের মুক্তিসংগ্রামে জড়িত IRA বা প্যালেস্টাইনের মুক্তিসংগ্রামে জড়িত PLO, নেপালে রাজতন্ত্র থেকে গনতন্ত্রে উত্তরনের আন্দোলন তাতে সচেতন ছিল!

ফরাসি বিপ্লব
ফরাসি বিপ্লবকে নাকচ করে দিয়ে জেনারেল নেপোলিয়নের রাজতন্ত্র কায়েমের পেছনেও মদত এসেছিল চার্চ কর্তৃপক্ষ্যের কাছ থেকে!ফরাসি বিপ্লবের ধারাবাহিকতা থেকে জনগনের অধিকারের যে উত্তরন হবার কথা, সেগুলোকে পাশ কাটাতে নেপোলিয়ান ফরাসি জনগনকে জড়িয়ে ফেলে একের পর এক সাম্রাজ্যবাদি আত্মঘাতি যুদ্ধ্বে!নেপোলিয়ানের ছত্রছায়াতে প্রতিক্রিয়াশিল শক্তি এতটাই শক্তিশালি হয়েছিল ফ্রান্সে যে হিটলারের ফ্যাসিবাদি জার্মানি বিনা যুদ্ধেই ফ্রান্স দখল করে সেখানে কায়েম করে এমন এক সরকার যার মুল হাতিয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হেইট ক্রাইম!আজকে সোমালিয়ার, সুদানের, লিবিয়ার, সিরিয়ার, ইরাকের পরিস্থিতি দেখলেও বোঝা যায় যে জনগনের অধিকারভিত্তিক সংগ্রামকে পাশ কাটাতে এসব দেশের সরকার বার বার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হেইট ক্রাইমের স্বিকৃতি দিয়েছে এবং ভিন্নমতাবলম্বিদের সে হাতিয়ারে নিশ্চিন্ন করতে চেয়েছে!ভেতরে প্রতিক্রিয়াশিল নেপোলিয়ানেরা না থাকলে অধিকারভিত্তিক আন্দোলনে বাইরে থেকে ফাটল ধরানো কঠিন বৈ কি!



কামু'র 'প্লেগ'
ধর্ম, স্বৈরতন্ত্র, ফ্যসিবাদের হাত ধরে যে ক্রমশ বর্নবাদ, লিংগবাদ, যৌন বৈশম্যবাদ ইত্যকার সামাজিক অসুস্থতার বিস্তার হয়, তার প্রতিকগুলোকে এক সুতায় বেধে দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের পর আলবেয়ার কামু লিখেছিল তার কালজয়ি উপন্যাস ''প্লেগ''!খেয়াল রাখা দরকার যে হিটলারের তাবেদার ফরাসি ফ্যসিবাদি সরকারের বিরুদ্ধ্বে কামু সক্রিয়ভাবে রেসিস্টেন্স বা প্রতিরোধ যুদ্ধ্বে অংশগ্রহন করেছিল!খেয়াল রাখা দরকার যে 'প্লেগ' এর লেখক, 'আউটসাইডার' উপন্যাসেরও লেখক, যেখানে কেন্দ্রিয় চরিত্র  আইনের অনুশাষন মেনে চলা একজন যান্ত্রিক নাগরিক যে  এমন কি মায়ের মৃত্যতেও দুক্ষবোধে ব্যার্থ, তারপর হুট করে সে একটা অপরাধ ঘটায় এবং তা নিয়েও তার কোন অনুশোচনা নেই!উপন্যাসিকের চোখ দিয়ে এই চরিত্রটা আবিস্কার করে যে তার অপরাধেরই শুধু বিচার হচ্ছে না, তার আবেগশুন্যতারও বিচার হচ্ছে উপন্যাসের প্রতিকি কাঠগড়ায়!

লক্ষ্যানিয় যে ধর্মের অনুশাষনকে যারা রাস্ট্রের ক্ষ্মতায়নের কেন্দ্রে রাখতে চায়, তাদের নিরাবেগ, অনুশোচনাবিহিন ততপরতাকে যতবার প্রশ্নবিদ্ধ্ব করা হয়, ততবার তারা বলে ওঠে যে যা যা তারা করছে সেসবই ধর্মিও আবেগ এবং অনুভুতিজাত!চিন্তার যে এই দায়শুন্য, তত্বজাত মুখোশ তার সাথে কিন্তু আর আলোচনা চলে না, তার জন্য দরকার সক্রিয় প্রতিরোধ!কামুর ''প্লেগ'' উপন্যাসের কেন্দ্রিয় চরিত্র ডাক্তার রিউ'র মারি-প্রতিরোধ সঙ্ক্রান্ত বিজ্ঞ্বানসম্মত পরামর্শে কান না দিয়ে যাযক পেনেলুক্স আক্রান্ত শহরবাসিদের বুঝাতে চেয়েছিল যে দৈব অভিশাপের কারনে, ধর্মাকর্ম ঠিকঠাক পালন না করাতে প্লেগ নেমে এসেছে!পরে অবস্য পেনেলুক্স ডাক্টার রিউ'র প্লেগ-প্রতিরোধ-দলে যোগ দিয়েছিল!

ধর্মের আবেগ, অনুভুতির নামে আমরা যেমন আবেগ-মুক্তির পথগুলোকে রুদ্ধ্ব করে দিতে পারি না, তেমনি হেইট ক্রাইমের প্রাতিষ্ঠানিক-প্লেগ আমরা চাইতে পারি না!

চয়ন খায়রুল হাবিব
৫/০৪/১৩
ব্রিটানি/ফ্রান্স

***পরে যুক্ত।
কামু কোলাজ, চয়ন খায়রুল হাবিব।