Sunday, 15 October 2017

জীবনানন্দ এবং বিনয় : পরোক্ষ অর্গাসমের ভ্রান্তিবিলাস

জীবনানন্দ দাশ

প্রাককথন   
'পরোক্ষ অর্গাসম' শব্দ বন্ধনিটির ব্যাখ্যা দেয়া যাক সোজা অর্থে প্রত্যক্ষ অর্গাসম নয়।
এ-পরোক্ষতা আসছে যৌন-পরোক্ষতা থেকে, যা যৌন-নিরপেক্ষতা বা অযৌন নয়।অর্গাসম কি বা তা কিভাবে হয় সেটার গ্রাফিক্স এ-রচনার লক্ষ্য নয়, এটাকে এখানে ধরা হচ্ছে  প্রতিকি মেটাফোর হিশেবে।একজনের অভিজ্ঞতা বা অভিব্যাক্তি অনেক সময় প্রত্যক্ষ না হলেও নিবিড় বা গভির হতে পারে।মগ্ন চেতনা প্রবাহের যে স্তরেই আমরা চিন্তামিথুনে লিপ্ত হই না কেন, তা আরেকটা চিন্তা বা আরেকটা অভিজ্ঞতার দেয়ালে বাড়ি খেয়ে আমাদের দিকে ফিরে আসে।যেরকম অর্গাসমও একজন নারি বা পুরুষ  নিজে নিজে ঘটাতে পারে, আবার অন্যের সাথে মিলেও ঘটাতে পারে।


বিনয় মজুমদার

পরোক্ষতা কারো বিচারবোধে অশ্লিল হলেও সেটা পরোক্ষ অশ্লিলতা।যৌন বিদ্বেষ থেকেও যৌন পরোক্ষতা আসছে না।এখানে যৌন শব্দটিকে যৌনায়ন বা সেকসুয়াল অরিয়েন্টেশান/জেন্ডার অরিয়েন্টেশান জায়গা মিলিয়ে দেখা যেতে পারে।যেসব সামাজিক, সাংস্কৃতিক কারনে নারি ও পুরুষ উভয় লিঙ্গে পারস্পরিক বিদ্বেষ ঘটে থাকে, এ-পরোক্ষতা তার সাথে সম্পর্কিত নয়।বরং জেন্ডারগত পারস্পরিক সম্ভ্রম এবং সাংস্কৃতিক সিমা সরহদ্দের মিশেল এ-পরোক্ষতার উদ্গাতা চলক।আমরা যখন সম্পর্ক, সম্বোধন, যৌনায়নে ব্যাক্তির নাম যোগ করি তখন এ-পরোক্ষতাকে প্রাথমিকভাবে সর্বনামমুক্ত করে যৌন-প্রত্যক্ষতা বা পার্সোনিফিকেশানে আসা হয়।যৌনায়নের বা জেন্ডার অরিয়েন্টেশানের প্রত্যক্ষতার ক্ষেত্রে বৈবাহিক সম্পর্ক যে যথেষ্ট নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি অন্তরায়, তা আমরা যাপনে এবং নান্দনিক রুপায়নে বিভিন্নভাবে শুনেছি, পড়েছি, দেখেছি।আবার প্রতিক, উপমাগুলোকে নির্ভর করে এই পরোক্ষতাকে নান্দনিক রসায়নে, প্রায়োগিক যাপনে বিস্তার ঘটানো হয়।

উৎসব দেবতা ব্যাকুসের মন্দির, মার্ক শাগাল









ইমাকুলেট কন্সেপশান

দুর দেশে থেকেও মননের ঐকতানে যে একটি সময়খন্ডের সতির্থরা তাদের গোড়ার প্রবর্তনাগুলো ধরে রাখে, সতির্থদের ক্রমবিবর্তিত লেখালেখিতে তার প্রমান মেলে।য্যানো ঘুরেঘুরে আমরা  উৎস জলপ্রপাতে ফিরে যাচ্ছে।একই জলপ্রপাতে, একই জীবনানন্দে, একই বিনয়ে আমিও অবগাহন করি, ভিন্ন ম্যানারিজমে।তবে লক্ষ্যতো সেই একই!আমরা সকলে মিলে একটা লেখাতেই বিচিত্র দৃষ্টিকোন যোগ করছি।

জীবনানন্দ দাশের অন্যতমো পাঠক ও অনুশিলক বিনয় মজুমদার বনলতা সেন  উদযাপন করেন এক প্রত্যক্ষ নারি অবয়বে!এ-নারির নাম গায়ত্রী চক্রবর্তি স্পিভাক।গায়ত্রী বিনয়ের কাছে চাকা।'নামে কি বা এসে যায়'' জাতিয় নিরপেক্ষতায় বিনয় যে আশ্বস্ত নয়, তা তার সর্বনামমুক্ত চাকা  নামকরনে বোঝা যায়।আবার ভুট্টাকে যৌন প্রতিকে লক্ষ্যভেদিভাবে ব্যাবহার করেও বিনয় দেখিয়েছে, যৌনায়নে সে জীবনানন্দিয়ভাবে পরোক্ষ বা আড়ালচারি নয়, আবার পুরোপুরি প্রত্যক্ষও নয়।

আমি নিজে দির্ঘ কবিতা লিখবার আগে অনেকদিন ধরে ভাবনার সুতো পাকাই, ভাবনাটার ওপরে তা দিতে থাকি, ইঙ্কিউবেটার চিন্তাপদ্ধতি এড়িয়ে।'খুলিতত্ব সিরিজে'' শামসুর রাহমান, আবুল হাসান, সুরাইয়া খানম, সিলভিয়া প্লাথ, টেড হিউজের  পাশে যখন বিনয়কেও নির্বাচন করি, তখন 'পরোক্ষ বা আড়ালচারি   নয়, আবার পুরোপুরি প্রত্যক্ষও নয় ' এই টুয়েলাইট রহস্যময়তা ধরতে মাথাতে প্রথম ঝলক দিয়ে উঠে 'ইমাকুলেট কনশেপশান ' অর্থাৎ যেখানে যৌন সহবাস ছাড়াও গর্ভধারন হচ্ছে, সন্তানের জন্ম হচ্ছে, আমাদের ধারনায় যিশু যেভাবে জন্ম নিয়েছে।বিনয়ের যাপন, প্রনয়, নিবেদন, ধারন, প্রতিক নির্বাচন, প্রকাশন সবকিছুতে এই 'ইমাকুলেট কন্সেপশন ' পেয়েছি। নিজস্ব রসায়নে জারনের বা পার্সোনিফিকেশানের জন্য আমার কবিতায় গায়ত্রি, বিনয় ও জীবনানন্দের একটি ত্রিভুজ মানষিক আবর্তন কল্পনা করে নেই, আর চেষ্টা করতে থাকি শব্দের সাথে অর্থের দাঙ্গা না বাধিয়ে এই ত্রিভুজকে কবিতায় নিয়ে আসতে।

রংগিন জানালার কাচ, মার্ক শাগাল

দুজন মহৎ কবির পারম্পর্য যখন তৃতিয় আরেকজন কবি  কাটাছেড়া করে, তখন সজ্ঞা ও সঙ্গার সঙ্ঘাত অনিবার্য।এ-সঙ্ঘাতে কৃত্রিমতায়  না  গিয়ে, সজ্ঞার  অন্তরংগতায় বিশ্বস্ত থেকে বিনয় যেখানে ওর জীবনানন্দকে ধারন করেন, তা এক অর্থে পাঠ সমাপ্তি, সেখানে বিনয়  বলছে, এখান থেকে নুতন কবিতার শুরু হতে পারে, হওয়া দরকারি।বিনয় যেখানে জীবনানন্দে বিলিন,  সেখানে ও নিজেকে নিজের পেছনে ফেলে আসতে দ্বিধাগ্রস্থ নয়, এটা বড় কবিতার দার্ঢ্যতাসুচক  স্মারক। 

জীবনানন্দের বিষয়, লোকন, পারম্পর্য নিয়ে আলোচনা করলে আমরা দেখবো কাঠামোগতভাবে অক্ষরবৃত্ত থেকে ও সরছে না।নিজেকে নবায়িত করেছে বিষয় বৈচিত্রে এবং দেখবার বা দেখাবার অভিনবত্বে।কবিতার সমকালিন চর্চাকারি হিশেবে আমাদের জন্য জরুরি যেটা, তা হচ্ছে জীবনানন্দের পর বিনয় মজুমাদার তার গানিতিক পাতনের অভিনবত্ব দিয়ে অক্ষরবৃত্ত ছন্দের প্রয়োগকে প্রায় অভেদ্য নান্দনিক প্রবর্তনায় দাড় করিয়ে ফেলেছিলো, যার মোটা পাচিলে প্রথম, সফল ও প্রবর্তনাগত ফাটল ধরিয়ে দেয়  বাংলাদেশে আশির দশকের ফৃ জেনারেশান।


স্বপ্ন, মার্ক শাগাল
অক্ষরবৃত্তের অচলায়তন : জীবনানন্দ, বিনয়ের সনেট

বিনয়ের একটি সনেট আছে, ধূসর জীবনানন্দ ,
 

''...গণনাতীত পারাবত মেঘের স্বরুপ
দর্শনে বিফল বলে ভেবেছিল, অক্ষমের গান।
......জিজ্ঞাসায় জীর্ণ হয়ে তুমি অবশেষে
একদিন সচেতন হরিতকী ফলের মতন
ঝরে গেলে অকস্মাত, রক্তাপ্লুত ট্রাম থেমে গেল।
এখন সকলে বোঝে......
তোমার কবিতা, কাব্য;সংশয়ে সন্দেহে দুলে দুলে
তুমি নিজে ঝরে গেছ হরীতকি ফলের মতন। ''


মাইকেল থেকে আজ তক বাংলা ভাষাতে সনেট লিখেছে রবীন্দ্রনাথসহ অনেকে, তবে কম্বিনেশান বা ছন্দ প্রবর্তনা তেমন অদলবদল না করে।'রেঙ্গুন সনেটগুচ্ছে'  নিজের সনেট কম্বিনেশানে পৌছানোর প্রস্তুতি পর্বে বিশ্বায়িত সনেটের আলোকে বাংলা ভাষাভাষি কবিদের আরো অনেকের পাশাপাশি জীবনানন্দের 'রুপসী বাংলার ' পর বিনয়ের সনেট প্রকরন আমি খুটিয়ে পড়ার চেয়েও বেশি করে দেখতে থাকি।ঐ দেখার সময় বুঝে পাই কেন বিনয় তার নান্দনিক আনুগত্য প্রকাশের সময় কম্বিনেশানগত জায়গাতে অক্ষরবৃত্তের গন্ডিতে অর্গলবদ্ধ থাকে।
 

একই প্রস্তুতির সময় অন্য যাদের সনেটের প্রতি মনযোগি হয়েছিলাম, তাদের সাথে তুলনিয় এবং অতুলনিয় দুটি পিঠ বোঝাতে লিখিত আলোচনাতে 'ধূসর জীবনানন্দ' অন্তর্ভুক্ত করি।বাংলা কাব্যধারায় এ-ধরনের আটো মাপের সনেট দুর্লভ।যেহেতু   মাপামাপিতে আরো অনেকের আলোচনা করেছিলাম, বিনয়ের সনেট ভিত্তিক জীবনানন্দ অবলোকন অংশে ছন্দের আলোচনায় না গিয়ে দর্শনগত প্রবর্তনার জায়গাটি শুধু আলোচনা করেছিলাম।শুধু আমার নিজের সনেটের শিথিল প্রকরন, যাকে 'ভাঙ্গা লিরিক, ভাঙ্গা বয়ান  বলেছি' তার কারনে নয়, বরং বিস্তারিত কাব্যিক যাত্রাপথ কিভাবে  স্বচ্ছতা প্রয়াসি হয়েছে তা বুঝতে, কোথায় বিনয় নিজে, জীবনানন্দে উচ্ছলভাবে ঘুরে এসে ছল ছল ভাবে নিজেকে পেরিয়ে যায় তারও পারস্পরিক চিহ্নফলকগুলো বুঝে নিয়ে পেরিয়ে যেতে।

'রুপসী বাংলা'তে যে অক্ষরবৃত্ত, বিনয়েও সে অক্ষরবৃত্ত, আবার দুই বাংলার পঞ্চাশের কবিদের অনেকে হেচকা টানে তিরিশের ঘরানা থেকে বেরিয়ে এলেও ছদ্ম গদ্যছন্দেও সেই অক্ষরবৃত্তের কম্বিনেশানে থেকে যায়।এটা অনেকটা ফর্মুলা ওয়ানের ট্র্যাকে পুরানো ফোর্ড এঞ্জিনের গাড়ি চালানোর মত।এই নস্টালজিয়া সত্তর দশকেও অবশিষ্ট ছিলো এবং ক্রল করে করে আশিতেও, আশির পরেও অনেকের অবচেতনায় বা চেতনাগত সিমাবদ্ধতায় থেকে যায়।রিফাত চৌধুরী, কাজল শাহনেওয়াজ, আহমেদ মুজিবসহ আশির হাতে গোনা কয়েকজন এই ছদ্ম বা প্রিটেনশানের জায়গাটি পেরিয়ে আসে, যার অনুসরন যে শুধু আজকে চলছে তা নয়, আগামি বছরগুলোতেও চলবে শুধু এর আন্তরিক অপরুপতার কারনে।

সতির্থদের বিনয় ও জীবনানন্দ আলোচনা আমাদের যাত্রাপথের অনুষাংগিক আলোচনা, কিন্তু আমাদের নির্দেশনা ছিলো স্বপ্রনোদিত, স্বকৃত, বাংলাদেশের প্রমিতকে নবায়িত করবার প্রনোদনা।এই আলোচনাটি বিস্বস্ত, আন্তরিক হতে পারছে নিজেরা কেন্দ্রছুট হয়েও কেন্দ্রনিবিড় প্রবনতাগুলো বুঝে উঠবার কারনে।

 যৌন পরোক্ষতার গহিন উদ্বোধনে

আরব্য রজনি, মার্ক শাগাল

বসার পরে
বিনয় মজুমদার, বাল্মীকির কবিতা

বসা শেষ হয়ে গেলে দেখা যায় ভুট্টা অতি সামান্যই নরম হয়েছে ।
নদী সোজা উঠে পড়ে, তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি গ্লাসের বাহিরে
রস লেগে আছে কিনা, নদী তার হাত দিয়ে আমার ভুট্টাটি
তখন -- বসার শেষে কখনো ধরে না, ভুট্টা রসে ভেজা থাকে ।
আমি কিন্তু হাত দিই, ঘাসের উপরে হাত বোলাতেই থাকি,
ঘাস টেনে টেনে দেখি, অনেক অশ্লীল কথা অনায়াসে বলি ।
নদীর গ্লাসের দৃশ্য -- গ্লাসের বাহিরটিকে প্রাণ ভরে দেখি
( গ্লাসের ভিতরে দেখি বসার সময় শুধু ) বসা শেষ হলে
গ্লাস খুলে দেখতে সে এখনো দেয়নি আমি বহির্ভাগ দেখি ।
হঠাৎ বেলের দিকে চোখ পড়ে, মুগ্ধ হয়ে যাই ।
বেল দুটি এ বয়সে অল্পপরিমাণ ঝুলে পড়েছে, সে দুটি
মনোমুগ্ধকর তবু চোখ ফের নেমে আসে নিচের গ্লাসের দিকে, সেই
গ্লাসের উপরিভাগ বসার সময়ে যতো দেখেছি
এখন এতটা নয়, সরু হয়ে পড়েছে, তা ঘাসগুলি ঘন হয়ে পড়েছে এখন । 

একটা সময় হয়তো পরিবেশবাদি নৃবিজ্ঞানের দিক থেকে আমাদের জানা জরুরি  হয়ে উঠবে  অনির্নিত অবসাদে আক্রান্ত জীবনানন্দের ক্ষেত্রে তার মফস্বলি ব্রাক্ষন পটভুমি এবং নির্নিত স্কিতজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত বিনয় মজুমদারের প্রতি আচরনের ক্ষেত্রে তার নমশুদ্র পটভুমি কোন ভুমিকা রেখেছিল কি না? আবার বিনয় যার ডাক নাম ছিলো মংটু, খ্যাতিমান গনিতজ্ঞ হবার পরও নমশুদ্র হবার কারনে কি গায়ত্রী তার নামোচ্চারন করে নাই?ইংরেজি ও বিশ্ব অভিধানকে সাবল্টার্ন  শব্দপ্রনেতা গায়ত্রী অবস্য মহাস্বেতা দেবী ছাড়া অপরাপর আর কোন বাংগালি লেখকের নামোচ্চারন করে নাই।আবার প্রবল পুরুষ শাষিত বাংলা শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি মন্ডল সমস্ত যোগ্যতা স্বত্বেও গায়ত্রীকে বাংলাভাষি কোনো একাডেমির পরিচালনা পদে আমন্ত্রন জানায় নাই।পদ্যকর্তার নির্ধারিত আলাঙ্কারিক দেবি আসনে যে গায়ত্রী সন্তুষ্ট নয়, বাংলা তথা ভারতিয় পুরুষ লেখকদের নিয়ে নিরবতায় ও তা বলে দিয়েছে।নৃবিজ্ঞানিদের আঙ্গুলি সঙ্কেত ছাড়াও আমরা দেখতে পাবো যে লিংগ, ধর্ম, সাংস্কৃতিক বৈষম্যজাত অসৌচ, হালাল, হারাম ইত্যাদি আমাদের সাহিত্যে উকিঝুকি মারছে, ল্যাং মারতে চাইছে, সাহিত্যিককে খুন করতে চাইছে, নির্বাসনে পাঠাচ্ছে।এসব উকিঝুকি, ল্যাং লাথি, ছুড়ি, চাপাট পার হয়ে জীবনানন্দকে যেরকম দুই বাংলার ভিন্ন ধর্মিয় মুলধারার কবিরা আলোচনা করেছে, আবার একেবারে ভিন্ন ভাষিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মিও পটভুমি থেকে আসা ক্লিন্টন বুথ সিলিও আলোচনা করেছে।

জীবনানন্দসহ তিরিশিও কবিকুল যে এলান পো, বোদলেয়ারের ভক্ত তারাও এক অর্থে ক্যাথলিক অবদমনের শিকার এবং আধিদৈবিকতায় আচ্ছন্ন।এই ক্যাথলিক অবদমন পেরিয়ে একের পর এক সাহিত্যিক আন্দোলনের সুত্রপাত হয়েছে যাতে যৌন অবসাদ ও অবদমনমুক্তি জোরালো ভুমিকা রেখেছে।বোদলেয়ারের লে ফ্লোহ দু মাল  কাব্য সংগ্রহের প্রতিপাদ্য অবক্ষয় এবং যৌনতা।১৮৫৭ সালে প্রকাশনার পর পর ফ্লোহ দু মাল  অশালিনতার দায়ে সেন্সরের নিশেধাজ্ঞায় পড়ে, ছয়টি কবিতা সংগ্রহ থেকে বাদ দেবার আদেশ দেয়া হয় এবং বোদলেয়ারকে ৩০০ ফ্র্যাঙ্ক জরিমানা করা হয়।১৯৪৯এ এসে ফ্লোহ দু মালে ওপর আরোপিত নিশেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।

নির্নিত স্কিতজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত মার্কিন কবি আন সেক্সটন তার মনস্তত্ববিদের পরামর্শে কবিতা লিখতে শুরু করে এবং যৌনজড়তাকে পুরোপুরি ছুড়ে ফেলে স্বিকারোক্তিমুলক কবিতার উদ্বোধন ঘটায়।গতকালকে বা আজকে আমাদের অনেকে যাকে জীবনানন্দের বিপন্ন বিস্ময়, সংশয়  ইত্যাদি বলছি, হয়ত তা যৌনজড়তা থেকে উদ্ভুত নৈস্বর্গিক বিমুর্ততা।কিন্তু যেহেতু জীবনানন্দ জিনিয়াসেরও জিনিয়াস, সেহেতু এই জড়তার প্যাচ শব্দের, চিত্রকল্পের, উপমার, উতপ্রেক্ষার মাস্টার চাবি দিয়ে বার বার খুলেছে এবং বার বার আবার সেই জড়তার ঘোরপ্যাচে বন্দি হয়েছে।এখানে বিনয়ের হাতে একাধারে চিত্রকল্পের মুনশিয়ানা এবং জন ন্যাশের মত স্কিতজোফ্রেনিক হয়েও অঙ্ককে খেলানোর পারংগমতা।যেখানে জীবনানন্দ যৌনজড়তার ঘোরপ্যাচ খুলে আবারো অবসাদে আক্রান্ত হচ্ছে, সেখানে 'অঘ্রাণের অনুভূতিমালা`র  কবি যৌন জড়তামুক্তির চুড়ায় ভুট্টা সিরিজ  হাতে ইউরেকা বলে হাস্যচ্ছলে নিস্ক্রান্ত হচ্ছে।যৌন পরোক্ষতার গহিন উদ্বোধনে এই দুই কবি যে অপরাপর কবিদের, অপরাপর স্তন্যপায়িদের প্রজন্মান্তরে বার বার ভ্রান্তিবিলাসি করে তুলবে তা লেখা বাহুল্য।


চয়ন খায়রুল হাবিব
১৪/১০/১৭
ব্রিটানি, ফ্রান্স

পরিমার্জনা
১৭/০২/২০
চয়ন খায়রুল হাবিব

লেখাটিতে লেখকের নাম, আগে লেখা রচনার শিরোনাম ছাড়া ঈ, ঊ, ণ, চাঁদবিন্দু ব্যাবহার করা হয় নাই।

খুলিতত্ব ৪ঃ বিনয় মজুমদারের জন্মদিনে