Sunday 26 February 2017

শাওন রাতে যদি সেন্সরের নিরবধি



সন্তানের সাথে হুমায়ূন আহমেদ, মেহের আফরোজ শাওন
''শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে
বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝরে।।

ভুলিও স্মৃতি মম নিশিথ স্বপন সম।
আঁচলের গাথা মালা ফেলিও পথ পরে
বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝরে।।
ঝরিবে পূবালী বায় গহন দূর বনে
রহিবে চাহি তুমি একেলা বাতায়নরে...''

উপরের গানটা লিখেছিল কাজী নজরুল ইসলাম।জগন্ময় মিত্র বা মান্না দে বা ফিরোজা বেগমের প্লেব্যাকে গানটি বাজিয়ে যদি তার ভিডিওতে দেখাই, ঢাকাই স্বচ্ছ মসলিনের রাত পোষাকে এক নারি বিশাল মঞ্জিলের ছড়ানো ব্যাল্কনিতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজছে।আর ফিশফিশ করে ছায়ারুপি এক মুর্তি ডাকছে শাওন, শাওন...শাওন!প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতিয় স্ত্রি অভিনেত্রি মেহের আফরোজ শাওন আকা শাওন আহমেদ সিদ্ধান্ত নিলেন যে আমি ঐ ভিডিও ক্লিপ বানিয়েছি ওনাকে অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখাতে।আমি তখন ওনাকে কি করে বোঝাবো, আবহমান কাল ধরে সৃজনশিল শাখাগুলোর অন্যতমো কাজই তো দৃষ্টিভঙ্গির নবায়ন।

একজন আগে থেকে নির্ধারিত একটি সিদ্ধান্তে চলে গেলে সেখানে বোঝাবোঝিটা কঠিন এবং কোন, কোন ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে।'ডুব' চলচ্চিত্র নিয়ে  যা ঘটেছে তাকে মেহের শাওনের জায়গা থেকে দেখলে, তার 'আগে থেকে ঠিক করা সিদ্ধান্ত' মনে হয় না, বরং 'ডুব' এর নির্মাতাদের আগে থেকে ঠিক করা বেশ কিছু কৌশলের আবেগি প্রতিক্রিয়া মনে হয়, যে আবেগকে স্পর্শকাতরতার সাথে বিবেচনা না করলে, আমরা সৃজনশিলতার ন্যুনতমো যত্নবোধের জায়গাটি হারিয়ে ফেলতে পারি।

রবার্ট ম্যাপেলথর্প
গত কয়েক সপ্তাহে সম্রাট নামধারি দুজন সামাজিক বিচারালয়ের সামনে উপস্থিত হলেন।একজন হচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান, যার নামই হচ্ছে সম্রাট, যার বিরুদ্ধে তার একজন ছাত্রি যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন।অপরজন হচ্ছেন বাংলা ভাষার সমকালিন সাহিত্যের মুকুটহিন সম্রাট প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ, যাকে মুঘল বাদশাহ হুমায়ূনের নামে নাম দেয়া হয়েছিল।অনলাইন বিডিনিউজ.২৪কে দেয়া সাক্ষাতকারে, হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রি শাওন অভিযোগ করে, মুস্তফা সারোয়ার ফারুকী সম্প্রতি যে 'ডুব' ছবিটি বানিয়েছে, তা তার প্রয়াত স্বামির জিবনকে বিকৃত করে দেখাচ্ছে এবং ছবিটি মুক্তি পেলে তা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে।

শাওন 'ডুব' ছবিটির কেন্দ্রিয় নারি অভিনেত্রির সাক্ষাতকার উল্লেখ করে বলেছেন, ঐ নারি অভিনেত্রি প্রকাশ্যে বলেছে যে ছবিটি লেখক হুমায়ূন আহমেদকে ঘিরে নির্মিত।শাওন এও বলছেন, সারোয়ার ফারুকী ছবিতে কোন নাম ব্যাবহার না করলেও, যে কেউ ছবিটি দেখলে বুঝবে এটা তার স্বামিকে নিয়ে নির্মিত।সেন্সর বোর্ডের কাছে চিঠিতে শাওন এও উল্লেখ  করেছেন যে তিনি দুটি শিশু সন্তানের মা, বাবা সম্পর্কে বিকৃত তথ্য তাদের কাছে আসা ঠিক হবে না।সেন্সর বোর্ড এবং তথ্য মন্ত্রনালয় শাওনের আপত্তি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে এবং 'ডুব' এর মুক্তি আটকে দিয়েছে।শাওন আরো কিছু প্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন, যার সাথে একমত বা দ্বিমতের ব্যাপারে পরে আসছি।

এখন আমরা যেরকম লেখক হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে অনেক কিছু জানি আবার অনেক কিছু জানিনা, সেরকম রবীন্দ্রনাথের বেলায়ও।রবীন্দ্রনাথ যে কিশোরি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোতে বিভোর হয়ে তাকে বিজয়া নাম দিয়ে তুমুল সব কবিতা লিখেছিল, তার জোরে রবীন্দ্রভক্তরা বিশ্বাস করে বসে আছে যে ওকাম্পো  শান্তিনিকেতনে এসেছিল।আদতে ওকাম্পো কখনো ভারতে আসে নাই, তাদের দেখা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের আর্জেন্টিনা সফরের সময়রবীন্দ্রনাথ বা হুমায়ূন আহমেদের মত জগন্নাথ কলেজের নাট্যকলার চেয়ারম্যান  সম্রাটেরও পরিবার, পরিজন থাকতে পারে, নাও পারে।জগন্নাথের যে ছাত্রিটি তার শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, তাকে বা যে সাংবাদিকেরা খবরটি প্রচার করেছে, তাদেরকে যদি এখন পরিবারের দোহাই পেড়ে বলা হয়, খবরটার প্রচার অসংগত, তাহলে কি তা সমাজকে ব্যাক্তিক অধিকারের দিক থেকে এগিয়ে নেবে?প্রচারনার ফলে ছাত্রিটির অভিযোগ তদন্তের চাপ যে বেড়ে গেল তা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।

জগন্নাথ কলেজের ছাত্রিটির অভিযোগ এবং শাওনের অভিযোগ, দুটোই সম্ভ্রম বিষয়ক।একটিতে অভিযোগ যে সম্ভ্রম হানি হয়েছে, আরেকটিতে অভিযোগ যে সম্ভ্রম হানির আশঙ্কা আছে।একটিতে অভিযুক্ত নাট্যকলার একজন শিক্ষক, আরেকটিতে অভিযুক্ত একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা।শাওনের অভিযোগ যত তাড়াতাড়ি ডিল করা হয়েছে, জগন্নাথের ছাত্রিটির অভিযোগ তার ধারে কাছের গতিতেও ডিল করা হচ্ছে না।অথচ সারোয়ার ফারুকী শুধু একটি ছবি বানিয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে কেউ কোন যৌন হয়রানির অভিযোগ আনে নাই।ফারুকীর ছবিটিতে আপত্তিকর অনেক দৃষ্টিকোন থাকতে পারে, হয়ত আছেও, কিন্তু তার মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ আমাদের মতামতের এবং শিল্পের স্বাধিনতার ওপর খড়্গের সামিল।এই খড়্গটি আমাদের আসতেও কাটবে, যেতেও কাটবে।
শাওন তার প্রয়াত স্বামিকে সংগতভাবেই লিজেন্ডারি বলেছেন, তবে অসংগতভাবে বংগবন্ধুর সাথে তুলনা করেছেন।আমরা যদি বংগবন্ধুর জিবনি, আত্মজিবনি, তার জিবন অবম্বনে বা ছায়া অবলম্বনে লেখা বেশুমার বইপত্রের দিকে তাকাই, তাহলে সেখানে বিচিত্র দৃষ্টিকোন পাব, যার অনেকগুলাই হয়ত বংগবন্ধুর পরিবারের মনোপুত হবে নাবংগবন্ধুকে একজন আব্দুল গাফফার চৌধুরী, একজন হুমায়ূন আহমেদ, একজন চয়ন খায়রুল হাবিব ভিন্ন জায়গা থেকে দেখতে পারে এবং এখানেই বংগবন্ধু লিজেন্ডের উপরে মিথে পরিনত হন, কেবলমাত্র প্রামান্য চিত্রের ফ্রেমে বন্দি থাকেন না।ফারুকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে শাওন হুমায়ুন আহমেদকে লিজেন্ডের থেকে নামিয়ে শুধুমাত্র পরিবার সত্যায়িত প্রামান্যতার বাক্সে বন্দি করলেন আপাতত।খেয়াল রাখা দরকার যে হুমায়ূন আহমেদ তার সর্বশেষ অসমাপ্ত উপন্যাস 'দেয়াল' নিয়ে সরকারি সেন্সরের আপত্তি স্বত্তেও লেখার একটি অক্ষরও বদলান নাই।

ফিদা হুসেনের আকা লক্ষি ও সরস্বতি
লিজেন্ড, মিথের ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের যিশু তথা খ্রিস্টান ধর্মকে নিয়ে কার্টুন, স্যাটায়ার, বিচিত্র লেখালেখির দৃষ্টান্ত এখানে আসতে পারে।ব্রিটেনের কিম্বদন্তিতুল্য কমেডি এন্সাম্বেল 'মন্টি পাইথন' যিশুকে নিয়ে রংতামাশা করেছিল 'লাইফ অফ ব্রায়ান' ছবিতে, যা পরে একটি ব্যবসা সফল দৃষ্টান্তমুলক চলচ্চিত্র হিশেবে গৃহিত হয়।যে কাউন্ট ড্রাকুলাকে কমিক্সে, চলচ্চিত্রে রক্তচোষা বাদুড় বা ভ্যাম্পায়ার হিশেবে দেখানো হয়, সে ড্রাকুলা ঐতিহাসিকভাবে প্রাচিন রোমানিয়ার দক্ষিন কার্পেথিয়ান অঞ্চলের একজন খ্যাতিমান রাজন, অটোমানদের বিরুদ্ধে বিরত্বের জন্য যেরকম তার সুখ্যাতি ছিল, সেরকম প্রজাদের শুলে চড়ানোর জন্য তার কুখ্যাতি ছিল।সেই কাউন্টকে ঘিরে ভ্যাম্পায়ার জন্রের যে ব্যাপক সৃজনশিল শিল্প গড়ে উঠেছে, তার বিরুদ্ধে রোমানিয়ার জনগন আদালতের স্মরনাপন্ন হচ্ছে না।

লিজেন্ড, মিথকে নিয়ে আপেক্ষিক স্পর্শকাতরতার ব্যপারে আমরা ইসলামি মৌলবাদিদের হাতে ফ্রান্সের 'চার্লি হেবডো' কার্টুন পত্রিকার শিল্পিদের ঘৃন্য হত্যাযজ্ঞকে স্মরন করতে পারি।লিজেন্ড, মিথকে নিজের জায়গা থেকে দেখার ক্ষেত্রে আমরা ভারতিয় শিল্পি মকবুল ফিদা হোসেনের নগ্ন লক্ষি, সরস্বতি অঙ্কনের কথা স্মরন করতে পারি, যার পর কট্টরপন্থি হিন্দু মৌলবাদিরা ফিদাকে ভারত ছাড়তে বাধ্য করেছিল।
লেখক, শিল্পিদের লিগেসি বা খ্যাতির ব্যাপারে স্বামি, স্ত্রি এবং পরিবারের অপর সদস্যদের স্পর্শকাতর আচরন নতুন কিছু নয়।টি, এস এলিয়টের স্ত্রি স্বামির মৃত্যু পরবর্তি প্রত্যেক ধরনের প্রকাশনাতে নাক গলাতে পছন্দ করতেন, আত্মঘাতে প্রয়াত সিল্ভিয়া প্লাথের কবি স্বামি টেড হিউও সিল্ভিয়ার মৃত্য পরবর্তি প্রকাশনার ব্যাপারে এলিয়টের স্ত্রির মতই আচরন করেছেন।সিগমান্ড ফ্রয়েডের নাতির ঘরের পুতিরা তাদের বড় দাদার শত নির্বাসনের ঝক্কির পরে এখনো স্টেট করে ঠিক করে দিচ্ছে, কোন বইর কোন সংস্করন কিভাবে প্রকাশিত হবে।দুনিয়া কাপানো 'লা মিজারেবলের' লেখক ভিক্টর হুগোর নাতির ঘরের পুতিরা এই সেদিন 'লা মিজারেবল' অবম্বনে তৈরি একটি মিউজিকাল শো আটকে দিতে চেয়েছিল আদালতের স্মরনাপন্ন হয়ে, কিন্তু আদালত তা গ্রাহ্য করে নাই।আবার পিকাসোর মেয়ে বাবার সাক্ষর মিলিয়ন ডলারে বেচেছে মোটর গাড়ি নির্মাতাদের।বিশ্বখ্যাত কমেডিয়ান বোরাত, ব্রিটেনের রক ব্যান্ড  'কুইনে'র প্রয়াত ফ্রেডি মার্কারির ভুমিকাতে অভিনয় করার স্বত্ব কিনতে চাইলে, ফ্রেডির সহ ব্যান্ড সদস্য ব্রায়ান মে আদালতের স্মরনাপন্ন হয়ে তা আটকে দেন।

অভিনেত্রি শাওন অভিযোগ তুলে এবং সে অনুযায়ি সরকারি আইনি ব্যাবস্থা আদায় করে কোন অপরাধ করেন নাই।কিন্তু এর ভেতর দিয়ে আমরা শুধু একজন মমতাময়ি মা কে দেখতে চাচ্ছি না, একজন সংরক্ষককেও পেতে চাচ্ছি, যিনি হয়তো বাংলাদেশের প্রথম লেখক স্টেটটি যাতে গঠনমুলক সমালোচনার ভিত্তিতে, ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টির সংরক্ষক হিশাবে গড়ে উঠতে পারে, সে ভুমিকায় আসবেন।আর চলচ্চিত্রকার ফারুকীও হয়ত এই ইস্যু ধরে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি কিভাবে অপরাপর জন্রেতে ব্যাবহার করতে হয় তা শেখার চেষ্টা করতে পারেন।
ফারুকীর ছবির পক্ষে কথা বলেছেন নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন।তসলিমা তার জিবন অবলম্বনে ভারতে তৈরি একটি ছবির দৃষ্টান্ত দিয়েছেন,  যেখানে তার নাম ব্যাবহার করা হয় নাই।তসলিমার ভাষ্যমতে সে ছবিতে ২০ ভাগ তসলিমা, বাকি ৮০ ভাগ নির্মাতার কাল্পনিক, তারপরেও তিনি সেই ছবির মুক্তিলাভের বিরুদ্ধে বলেন নাই।তসলিমা বলেন নাই বলে শাওন বলতে পারবেন না, তা ঠিক না।কিন্তু বলাবলি এক কথা, তা যত মত তত পথ খুলে দেয়, আবার আদালতে গিয়ে ব্যাবস্থা আদায় আরেক কথা।তসলিমা না মনে করালেও আমাদের স্মরনে থাকে যে বাংলাদেশের প্রয়াত সৈয়দ শামসুল হক এবং পশ্চিম বঙ্গের প্রয়াত সুনীল গাঙ্গুলী যথাক্রমে ঢাকা, কোলকাতার হাইকোর্টে গিয়ে তসলিমার আত্মজিবনির উপরে তড়িত নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়েছিলেন, যা নিয়ে তাদের দেহ ত্যাগের পরেও পরিবারের অধস্তনেরা মুখ খুলছেন না।
আদালতগুলো, সংশ্লিষ্ট পদস্থদের কথিত  মানহানিতে যত তাড়াতাড়ি নিষেধাজ্ঞা  জারি করে, তার ধারে কাছের গতিতেও মেয়েদের বেইজ্জতির তদন্ত করে না।

মানহানির কবলে, বেইজ্জতির কবলে,  গরিবও পড়তে পারে, বড়লোকও পড়তে পারে।তবে বড়লোকের যেরকম আদালতের রায় বের করে নিয়ে আসার ক্ষ্মতা, সে অনুপাতে গরিব একেবারেই ক্ষ্মতাহিন তার ইজ্জত, সম্ভ্রমের ব্যাপারে।আইনি প্রয়োগে গরিবকে ক্ষ্মতাহিন করে বড়লোকও যে সুখে থাকে না, তার বড় প্রমান ১৯৯৮ সালে ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি লতিফুর রহমানের মেয়ে স্কলাস্টিকা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রি শাজনিন তাসনিম রহমান (১৫) এর ধর্ষন ও হত্যাকান্ড।
এ মামলার তদন্ত, রায় হতে হতে গড়িয়ে যায় প্রায় দেড় যুগ। 
অনেকে অভিযোগ করেছে,  ফারুকী তার ভাষাতে, তার রাজনৈতিক পক্ষ্যপাতে যাদের দিকে ঝুকে থাকেন, সেখান থেকেও হুমায়ূন আহমেদকে হেয় করাটা নান্দনিক না বলে অপনান্দনিক কৌশল বলাটাই শ্রেয়তরো।

ফেসবুকে 'জুলেখা সিরাপ' গ্রুপে লুবনা ইয়াসমিন লিখেছেন, 
''হুমায়ূন আহমেদ পরিবারকে কেন ফারুকি গং নাজেহাল করতে চাইতে পারে?
প্রথমে আমাদের দেখতে হবে হুমায়ূন আহমেদ তার চিন্তা, চেতনায়, যাপনে কিসের পক্ষ্যে দাড়িয়েছেন, আর ফারুকি কোথায় দাঁড়িয়ে ছবি, টেলি নাটক নির্মান করেন, কি ভাষা ব্যাবহার করেন।....ভাষার প্রাগ্রসরতার বিরুদ্ধে সক্রিয়তা ফারুকি গংদের প্রধান প্রকল্পের পর্যায়ে গেছে।সমকালীন কবিদের ভেতর অন্যতম, রিফাত চৌধুরী ফারুকীর প্রচুর ছবি, নাটকে গত দুই যুগ ধরে অভিনয় করলেও, সাহিত্যে এই গুষ্টির খেউড় রিফাত প্রত্যাখ্যান করে এসেছে বরাবর। উপস্থাপনাগত ভাবে ভাষাকে প্রতিক্রিয়াশীল হইছে, খাইছে স্তরে নিতে অস্বিকৃতী জ্ঞাপন করায়, রিফাতের কাজকে ফারুকী গং অপরিচয়ের সীমানায় আটকে রাখতে চাইলেও আজকের কবিতার মূল প্রবর্তনা হয়ে প্রচুর অনুসারীর অনুশীলনে টিকে আছে রিফাত চৌধুরীর কবিতা।আবার যারা ফারুকী্কে জিন্দাবাদ দেয়, তারা ঝাকবেধে জিন্দাবাদ দেয় মানভাষা বিরোধীদের।''

অভিযোগটি গুরুতরো।কবি রিফাত চৌধুরী আমার একজন প্রিয় কবি এবং ঘনিষ্ঠ মানুষ।
এ প্রসঙ্গে দুর প্রবাসে মনে পড়লো সমকালিন সাহিত্যের প্রবর্তনাগত মাত্রায় রিফাতের বিপুল অবদানের কথা।লুবনা ফারুকীকে এটা মনে করিয়ে দিয়ে আমাদের ধন্যবাদার্হ হয়েছেন যে খুব কাছাকাছি থাকা একজন বড় কবির আনুপুঙ্খ দির্ঘদিন ধরে চেপে যাওয়াটা সন্দেহের বিষয় বৈ কি!হতে পারে, কথিত নিম্নবর্গিয় বা সাব অল্টার্নদের চ্যাম্পিয়ানশিপের যে ভান করেন গামছা গলার ফারুকী, আনুষাঙ্গিক যাপনে রিফাত চৌ তাদের প্রতিনিধি হয়েও যেহেতু মানভাষাতে সেই শ্রেনিটির উত্তরনকে উদযাপন করেন এবং তা পৌছে দেন সার্বজনিনতায়, সেখানে যাবার সক্ষ্মতা ফারুকীর নেই।সে কারনে তাকে পাকিয়ে তুলতে হয়, আশ্রয় নিতে হয় উচ্চবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্তের সেলুলয়েড কেলেঙ্কারি, যাকে আমরা কখনো বলি ট্যাব্লয়েডের পাপারাজ্জি-সাংবাদিকতা, কখনো বলি পাল্প-ফিকশান।   

প্রবাসি নৃবিজ্ঞান গবেষক নাসরিন সিরাজ তার ফেসবুক প্রতিক্রিয়াতে লিখেছেন, ''একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা/দর্শক হিসেবে আমি নিজে মনে করি যে কোন সেন্সর বোর্ডের অস্তিত্বই অগণতান্ত্রিক। আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম যখন দেখেছি দেশে সেন্সর বোর্ড " ঠিক" করতেই চলচ্চিত্র আন্দোলনের কর্মীরা কাজ করেছে, সেন্সর বোর্ড বাতিল করতে একাট্টা হয়নি। এখন পারটিকুলারলি ডুব নিয়ে আলাপ সালাপে আমি ছবি নির্মাতাদের এথিকস নিয়েই ভাবছি। এবং সেটা শাওন-এর প্রসঙ্গ বলেই। ছবি মুক্তি পাবার আগেই আবারও শাওন কত খারাপ এই বিষয়টি প্রাধাণ্য় পাচ্ছে "সাধারণ" আলাপে, আমি যতটুকু দেখছি। ছবি মুক্তি পেলে শাওন সামাজিকভাবে হেনস্তা হবার যে আশংকা করছে সেটা যে সত্য় হবে না সেই দায় আমি কীভাবে নেবো! আমি মনে করি ফারুকীর উচিত শাওনের আশংকা সিরিয়াসলি, সমবেদনা সহ ডীল করা। এন্টারটেইনমেন্ট ল নামক ছেঁদো কথা ফেঁদে একটা পরিবারকে নাজেহাল করা শিল্পী/শিল্প থেকে আমি অন্তত দূরত্ব বজায় রাখতে চাই।''

কৌশল হোক, অপকৌশল হোক, একজন তসলিমা পক্ষ্যে থাকুক বা না থাকুক, কিম্বা সব হুমায়ূন ভক্ত বিপক্ষে যাক বা না যাক, শিল্পের দৃষ্টিকোনের বিস্তার, নবায়ন, উদ্ভাবন জরুরি।সে দৃষ্টিকোন একেবারে বানোয়াট হলেও জরুরি।কিন্তু তা প্রতিক্রিয়াশিল হলে, 'দুরত্ব' বজায় রাখবার সময়ে সমান্তরাল সৃজনশিলতার ডাইনামিক চলিষ্ণুতা এগিয়ে নিচ্ছি কি না তার প্রায়োগিক অবস্থান নেয়াটাও দরকারি। 

১০ সেন্সর বিভিন্ন রকমের মৌলবাদকে তাদের অর্গলবদ্ধ চিন্তা আরোপের সুজোগ করে দেয়।যৌন হয়রানি,  মানহানির ব্যাপারটা বিভিন্ন স্তরে ঘটতে পারে।সাংবাদিকতাকে ও শিল্পকে মানহানির বিধানের বাইরে না রাখলে কথিত মানসম্পন্ন লোকজন কথায় কথায় অন্যের শিল্পের ভাষাতে, অভিব্যাক্তিতে হস্তক্ষেপ করতে থাকবে, যার ফলশ্রুতিতে ব্যাক্তির অভিব্যাক্তির পার্স্পেক্টিভ কমতে, কমতে সমাজ আছড়ে পড়বে একের পর এক মানসিক কানাগলিতে।

চয়ন খায়রুল হাবিব
২৬/০২/১৭
ব্রিটানি 

লেখক, শিল্পিদের নাম বাদে ঈ, ঊ, ণ, চাদবিন্দু ব্যাবহার করি নাই।মার্জনা।চখাহা।