Tuesday 23 March 2010

অমিনাস পয়েন্টঃ উনিশ বছরের কবিতাগুলোঃ মৌল রুমালঃ


আমার সতেরো থেকে উনিশ বছরে লেখা কবিতাগুলো'র দিকে তাকালেই মনের গহিনতমো কোন থেকে প্রয়াত কবি আবিদ আজাদের প্রতি এক তিব্র ধুশ শালার গালাগাল উঠে আসে।কবিতাগুলো আমার বড়ধরনের সম্পন্ন ফেরার জায়গা হওয়াতে ধুশ শালাটাও প্রতিধ্বনিত হতে থাকে চাপা গোমরানো হতাশ হাহাকারে! আমার উনিশ বছর বয়সে কবিতাগুলো প্রথমে ছাপেন আবিআ ওনার 'কবি' পত্রিকায়।তারপর সেগুলো জায়গা করে নেয় আমার 'মৌল রুমাল' গ্রন্থিকায়।গ্রন্থকাটির প্রচ্ছদ পরিকল্পনা, ফন্ট সেটাপ করে প্রয়াত কবিবন্ধু আহমেদ মুজিব, প্রচ্ছদ পোট্রেট তুলেছিল প্রয়াত বন্ধু  কাফি বিল্লাহ।

'কবি' পত্রিকাতে আমার প্রথম ছাপানো কবিতার সবগুলোই ৫ থেকে ১২ লাইনের।তারপর সেই একই পত্রিকাতে সেই উনিশেই ১০০ পংতি'রও বেশি  'মৌল জন্তুর ভাষা' কবিতা'টা প্রকাশের সময় আবিআ  লেখেনঃ

"আশির দশকের কবি খায়রুল হাবিবের অতি ছোট্ট এবং টুকরো টুকরো সুন্দর অসংলগ্নতা-স্নাত আত্ম-উন্মিলনী কিছু কবিতার সংগে ইতিমধ্যে যারা পরিচিত হয়েছেন- দীর্ঘ কবিতায় তারা নিশ্চয় এই তরুন কবিকে আস্টেপৃষ্ঠে অবলোকনের সুযোগ পাবেন।"

ধুশ শালার!আবিআ জান্তা আয়োজিত কবিতাকেন্দ্রে যোগ না দিলেত একজন মেজর কবির সত্যায়নের জোরে আমিও মেজর কবি হয়ে  যেতে পারতাম!ধুশ শালার!যাক, আমার কবিতা উনি যখন লিখে দেন নি তখন ওনার কর্মফলের দায়ভার নেয়াও অনর্থক!মেজর, টেজরের চিরস্থায়ি বন্দোবস্তের ধুশ, ধুশ, শালার, শালার!

প্রথম কবিতাগুলোকে আমি পরিনত অমিনাস পয়েন্ট হিশেবেই দেখি!নিত্যকার ব্যবহারিক সামগ্রির সাথে আত্মিক সংলগ্নতার ভারসাম্যই ছিল সেই অমিনাস পয়েন্টঃ সেখান থেকে দির্ঘ কবিতার বিস্তারে আমাকে কখনোই ছন্দ, উতপ্রেক্ষা, ভাষা, শব্দের ওপর ভর করতে হয় নি! সেই অমিনাস পয়েন্টেরই বিস্তার আমার ব্যক্তিগত 'দেহছন্দ' এবং 'ভাঙ্গা লিরিকের মোজাইক'।এখানে তুলে দিলাম সেই প্রথম প্রহরের কয়েকটি কবিতাঃ


মৌল রুমালঃ

ঘরে কেউ নেই।জানালা দরোজা সব বন্ধ করে
পূর্ণিমা আয়নার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়...

সিধ্বান্ত বদলালাম।আমার এখনকার বানানরিতিতেই টাইপ করি আর এই কবিতাটা দেই একেবারে শেষে!


বিজন সঙ্কেতঃ

বিষয়ান্তর যন্ত্রকাতরতায়
পেরিয়ে যাচ্ছে ট্রেন ধিরে ধিরে ধিরাশ্রম
সংস্থাপনের ভয়ে তিব্র ছোটাছুটি
স্পর্শ-সুখের ভিতর বালু হয়ে যাওয়া
মগজে গুমরে কাদে প্রবল নেকড়ে নখ
নেকড়ে নেই জলপ্রপাত নেই
বেচে থাকা সুলভ কাগজের মতো নির্জন
প্রতিদিন নৌকা বাইচের মতো নিহত হয়ে যাব


ব্যক্তিত্বঃ

সকাল আটটার বাসস্ট্যান্ড-
অফিসগামি লোকজনের ভিড়ে দাড়িয়ে আছে
ক্ষয়াটে চেহারার পাগলাটে লোকটা
জট পাকানো চুল দাড়ি মোচ
গর্তে বসা চোয়াড়ে চোখ ভাটার আগুনে জ্বলছে
খালি গা হাটু গোটানো তেল-চিটচিটে-প্যান্ট
খোলা পোস্টাফিসের ফাক দিয়ে উকি দিচ্ছে
ভেজা-ভাদ্র-কুকুরের-জিহবার মতো তেড়ে ওঠা নুনুটা-
অপেক্ষা করছে কখন প্রেমিকা এসে
দাত জিব থুতু বুলিয়ে বেমালুম ভুলিয়ে দেবে
নিজের বাহির থেকে নিজের ভিতরকে স্মরন


পাতাল সংলাপঃ

মাছ নয় মাংস, মাংসময় মাছ
দ্রুত উচ্চারন কর- জগতজননি প্রসিদ
যাহারা দিক্ষা লাভ করে তাহাদের দক্ষ বলা হয়
ভদ্রতা নির্নিত হবে
সুকৌশলে না এড়িয়ে মুন্ডুকাটা খাও
চেহারাচর্চা ঘর-সারিবধ্ব চেয়ার
মাঝখানে মঞ্চ শুধু জোড়ানো আর খোলা
কৌতুহল পরিব্রাজিত অনাবিস্কৃত প্রত্যন্ততায়
তড়িত প্রবহমান আঙ্গুল থেকে আঙ্গুল
পতংগ কিট।সংগায় করেছি ধারন অপহরনের এন্টেনা
শেষমেষ একই শহরে এখন অনেক সুদুর
মানসের সন্ত্রাস মানসিকে খোজে
খুজে পেলে মন খারাপ, হারালেও মন খারাপ


মধ্যবিত্ত ম্যাডোনাঃ

বাচ্চা কোলে বসে আছো মধ্যবিত্ত ম্যাডোনা
দুধ শুকিয়ে বিরান বুক, ভেবেছ কি তুমি?
টাকা আসবে স্বর্গ থেকে? কত শুক্কুরবার এলো গেলো।
থলি থেকে সাদা-কালো কোন বিড়ালই বের হ'লোনা।
মরা উকুন খেতে-খেতে
বাচ্চা তোমার হাটা শিখলো এক্কেবারে আপ্না-আপনি

চাকর হ'লো তোমার বাচ্চা, শুলো গিয়ে মনিব-ফ্ল্যাটের বারান্দায়
বাতিল আসবাবপত্রের জঞ্জালে দেখতে পেল-
চোখ না ফোটা কয়েকটা বিড়ালছানা।
মা-বিড়ালটা একদিন কোথায় যেন গিয়েছে।
ভারি একটা ভাঙ্গা খাটের পায়া দিয়ে
বাচ্চা তোমার ছেচে দিল সবকটা বিড়ালছানার মাথা


মৌল রুমালঃ


ঘরে কেউ নেই।জানালা দরোজা সব বন্ধ করে
পুর্নিমা আয়নার সামনে যেয়ে দাড়ায়
পোষাকগুলো খুলে রেখে কাপা-কাপা আলতো আঙ্গুলে
কুমির-বিস্ময় নিয়ে পুর্নিমা ছুয়ে-ছুয়ে দেখে
যোনিগাত্রে গজানো প্রথম নরম লোম



প্রথম প্রকাশিত হয়  'কবি'তে ১৯৮৬/৮৭তে
'মৌল রুমাল' গ্রন্থিকাতে স্থান পায় ১৯৯১তে
সবগুলো লেখা ঢাকাতে

চয়ন খায়রুল হাবিব