শহীদ কাদরী, পিয়ারী বেগম, আবুল হাসান, সুরাইয়া খানমকে
কি করে য্যানো
শহীদ কাদরী বুঝতে পেরেছিলো,
আবুল হাসান এবং তার প্রেমিকা সুরাইয়াও,
পালিয়ে বেঁচেছিলো। কোথায় পালিয়েছিলো?
বাংলা অক্ষরকে কেউ বলছে লাল,
কেউ বলছে কালো। বাংলা অক্ষরেরও
ঝাঁঝালো নিজস্ব রঙ আছে, প্রহরে প্রহরে বদলে,
আবার নিজের রূপ, রসে ফিরে যায়।
পাথরে গড়াতে গড়াতে জলপ্রপাতে
শ্যাওলাগুলো আকাশ-প্রদীপের প্রত্যঙ্গে জড়ায়।
কোনো কোনো প্রজন্ম আছে, তাদের উত্তেজনা আছে,
রাজনীতি, দোলনা, খাটিয়া, জীবন যাপন, শহীদের রক্ত,
সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ, এমন কি ঠোটে ঠোটে চুমুও আছে,
নাই শুধু রক্তকণিকায় কবিতার ভ্রূণ।
২ পিয়ারী বেগম :
কেনো খালি প্রহরের জলপ্রপাতকে গিলে খেতে চায় সেনাবাহিনী।
হেই কাদরী, পদাতিক, নৌ, বিমান সেনারা তো
কই 'প্রিয়তমাকে অভিবাদন' জানিয়ে শহর ছেড়ে ব্যারাকে ফিরছে না।
তাহলে কি কবির সুমনের টিউনিংএ কোনো ভুল?
অতীতের ঐ 'গোলাপের গুচ্ছ' কি প্লাস্টিকের ফুল?
আলতা মাখা পায়ের পাতার দিকে তাকায়ে তাকায়ে,
ঝরা পাতাদের কল্যাণে বুঝে যাই এটা অন্য গ্রহের বসন্ত।
ঘুমন্ত প্রিমাভেরা জাগছে বত্তিচেলির ক্যানভাসে।
দুঃখকে চুমু দিতে সুখ ভেসে ওঠে ম্যাগপাই আবেশে।
আমাদের মন খারাপ মহাসাগরকে অগভীর করে ফেলে!
তবুও সমস্ত কবিদের সমস্ত প্রেমিকের,
সমস্ত বাংলা অক্ষরের কসম খেয়ে বলি,
''আমরা নই ক্রীতদাস, হৃদয়ের আমরাই তো সম্রাট,
এক লক্ষ রাজহাঁস ছেড়েছি পৃথিবীর বুকে, আমি জয়ী, আমরা জয়ী!''*
৩ আবুল হাসান :
আবুল হাসান এতো সহজ
সুনীল, শক্তি তাতে প্রভাবিত হয়ে
ফিরিয়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশের বাজারে।
নান্দনিক পাচারের মধ্য-স্বত্বভোগীগণ থেকে
মিরপুর বোটানিক্যাল, বলধা গার্ডেন সরে দূরের তেপান্তরে।
প্রকৃত প্রেমিক প্রেমিকা
ফাল্গুনের ছদ্মবেশ ধরতে পারে।
যারা বিপথগামী, তারা প্রেমের হন্তারক।
প্রেমপত্রগুলো তাদের শব্দে ডানা ম্যালে না।
আয়নাকে খেয়ে ফেলে উদাসীনতার আঞ্জুমান মফিদুল।
ছড়ানো বীর্য ছুঁয়ে ছুঁয়ে কাঁপা কাঁপা অর্গাজম।
বর্ষাও পশলা পশলা থেকে মুশলে ঝমঝম।
চারুকলার ছাত্রীরা আঁকছে বেহুলা,
লখিন্দরের বিষে বাজছে মনসার রঙ্গশালা।
৪ সুরাইয়া খানম :
অভিশাপ সবচেয়ে ভালো কবিতার সারাৎসার।
কবিতার বাইরে যে চোখের পাপড়ি,
আর ডিমের তরকারিতে
হাজারো পরিযায়ী পাখির ঝাঁক,
এতোটাই নিচে তাদের ছায়া,
সৈনিকদের, শিকারিদের প্রেমিক মনে করে ভ্রান্তিবিলাস।
তরুণী সুরাইয়ার চোখের জালে
উঠে এলো বুড়ি সুরাইয়ার চোখের
চার পাশে কোঁচকানো,
অভিজ্ঞতার ফুলেল কিমানো
পরে আছে কয়েকটা পেলিকেন দেখা
এক সোনালি হ্রদের জানালা।
রবীন্দ্রনাথের কৃষ্ণকলি, জীবনানন্দের বনলতা,
বাংলা কবিতার সবচেয়ে ভেতরের পাতায় খুব চুপচাপ!
চয়ন খায়রুল হাবিব
২০/৮/২৪,
ব্রিটানি, ফ্রান্স
*আবুল হাসানের 'দূরযাত্রা" কবিতার লাইন একটু বদলে। মূল :
''আমি নই ক্রীতদাস, হৃদয়ের আমি তো সম্রাট, আমি
এক লক্ষ রাজহাঁস ছেড়েছি শহরে, আমি জয়ী, আমি জয়ী!''
Painting : Bonheur de Vivre, Henri Matisse, 1906