Saturday, 5 April 2025

বিলীনা।।প্রেমের কবিতা।।


প্রিয় বিলীনা,
তোমাকে কখনো নাম ধরে ডাকি না,
অথচ ডাকার মত কেবল তুমিই একমাত্র নাম,
শব্দ না করেও নীরবতাকে হাজার শব্দে দোলাও।
বিভোর আবেশে সেলফি তোলাও,
কিংবা কারো ক্যামেরার লেন্সে,
মনে হয় সমস্ত পৃথিবীর চোখ
তোমার দিকে তাকায়ে নিমেষে।

সে মুহূর্তে, হাজার হাজার চোখের ভিড়ে
তুমি কোনো এক বিশেষ চোখের কাছে
নিজের ইচ্ছাগুলা রঙিন করে তুলতে চাও।
অনেক পদ্মের ভিড়ে, তুমি একটা একাকী পদ্ম,
গৌতমের ছদ্ম কৃচ্ছতায় কমলা নর্তকীর মেঘমল্লার।

শোকের কালো, বিপ্লবের রক্তলাল সব উড়ায়ে,
আকাশ থেকে রঙধনু রঙ শাড়ি নামায়ে,
মাটিতে ঘাসের সবুজে নিজেকে ছড়ায়ে,
বিলীনা, তোমার চলন তখন আমাদের উড়ন।
প্রতিটি রঙ তখন নতুন, মূর্ত এক গল্পকার।

তোমার চশমার কাঁচে জমে থাকা
কুয়াশা মোছার মুহূর্তে আমি দেখতে পাই,
রাতের আকাশে একটা এরোপ্লেন হচ্ছে অপার।
সে এরোপ্লেনের সামনে হঠাৎ কাতর পাখিকুল—
গাঙচিল, সোনালি ঈগল, বুনোহাঁসেরা উন্মূল।
চারপাশে উড়ে উড়ে, তোমার শরীরের বাঁকে
বাসা বাঁধার জায়গা খুঁজে বেড়ায় আকুলতায় পুড়ে।

গাঙচিলেরা ওদের ডানায় ভর
বাতাসে এক শিল্পীত স্বনির্ভর নাচে,
যেনো আলাদা আলাদা সমস্বর উড়ান,
বিলীনার দিকে আমাকে সহ মিলনের আহ্বান।
সোনালি ঈগল ঐ উঁচু থেকেও উঁচু আকাশ থেকে
তীক্ষ্ণ, তুমুল দৃষ্টিতে তোমাকে দেখে।

ওদের দাম্ভিক উপস্থিতি তোমার ভেতরে জমাট
ঋত্বিক আড়ালকে মাতালের উল্লাসে ভেঙ্গে দেয়।
আর বুনোহাঁসের দল,
গলায় মৃদু বিধুরতার রেওয়াজে,
একে অন্যের অডানার ছোঁয়ায়,
বিলীনা, তোমাকে পরায় মেদুর গোধূলির টিপ।

ওদের ভালোবাসার ভাষা
আমাকে বারবার শেখায়,
কিভাবে তোমার তুমি হয়ে ওঠা
আমাদের সবার একমাত্র আশ্রয়।

তুমি কি জানো,
পিকাসো কেনো নারীদের ভেঙ্গে দিতো কিউবিজমে?
হয়তো দেখতে চেয়েছিলো, ভাঙনের ভেতর
কীভাবে নারী হয়ে ওঠে, তার নিজস্ব অস্তিত্বের উপমা।

বিলীনা,
তোমার ক্ষেত্রে সে ভাঙন লাগে না।
কোনো ইজমে নয়,
তুমি হয়ে ওঠো তোমার বর্ণিল প্রিজম।
তুলিতে, বাটালিতে
দা'ভিঞ্চির ভিত্রুভিয়ান মোনালিসার চেয়ে আশ্চর্য
বাস্তবের ভাস্কর্য : তোমার মুখ ঠিক তোমার মতো,
তোমার বুক, কোমর, উরু ঠিক তোমার দেহের আয়না।

এতোটা বাস্তব যে ল্যুভএ পকেটমারদের
তোমার ব্যাগ থেকে সব কিছু নিয়ে যেতে
একটুও বেগ পেতে হয় না।
তুমি যে রক্ত-মাংসের মানুষ,
তা তোমার প্রতীকে, প্রতিটি চিহ্নে সুস্পষ্ট।
তোমার শরীরের ভাষা একটা জীবন্ত চিত্রকর্ম
যা প্রতিটা মুহূর্তে নতুন হয়ে ওঠে।

বিলীনা, তুমি জানো,
ব্যালে নাচের একটা দৃশ্য
কতটা গভীরতায় যেতে পারে।
যখন একজন ব্যালেরিনা
তার দেহছন্দ ধীরে ধীরে প্রসারিত করে
এবং নাচের সঙ্গী তাকে শূন্যে তুলে ধরে,
সে মুহূর্তটি প্রেম আর কামনার তীব্রতায় ঝরে।

প্রতিটি লৌকিক নড়াচড়ায়
তখন অলৌকিক, অদ্ভুত মাধুর্য,
যেখানে প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি মোচড়
এক গভীর বেদনার ভাষা প্রকাশ করে।
সে নাচের ছন্দে ওরা একে অপরকে জড়ায়ে,
অমোঘ আকর্ষণে একে অপরকে ছাড়ায়ে যায়।

বিলীনা
তুমি সেই ব্যালেরিনা,
যার প্রতিটি পদক্ষেপে,
হাজার ম্যাগপাইয়ের ভেতর
একটা ম্যাগপাই ঠোট বসায়,
হাজার চেস্টনাটের ভেতর
একটা মাত্র চেস্টনাটের খোসায়।

উড়ু উড়ু চুল, মুখ ছুঁয়ে ছুঁয়ে,
ঘ্রাণের ডুব সাতারে হারায়ে,
তোমার গালের তুমুল শ্যামলিমা,
সূর্যমুখীতে ধরে কম্পাসে হারানো দ্রাঘিমা।
সে মুহূর্তটা চঞ্চলের চেয়েও চঞ্চলতর চিরকাল।

আমি জানি না,
তুমি এ চিঠি পড়ে কি ভাববে।
যদি মনে করো, এ চিঠি তোমার জন্য—
তাহলে জানো,
বিলীনা, তোমার স্বাধীনতায় আমি বিলীন!

চয়ন খায়রুল হাবিব
১৮/১২/২৪
ব্রিটানি, ফ্রান্স

 Painting : Flaming June, by Frederic Lord Leighton (1830-1896)