Sunday 18 December 2016

মৌল জন্তুর ভাষা


মৌল জন্তুর ভাষা  প্রথম প্রকাশ, প্রয়াত কবি আবিদ আজাদের 'শীল্পতরু' প্রকাশনী থেকে আমার মৌল রুমাল  গ্রন্থিকায়, ১৯৯১। গ্রন্থিকাটির পরিকল্পনা করেছিল কবিবন্ধু প্রয়াত আহমেদ মুজিব,  আকা কচি।ও তখন শীল্পতরুতে ম্যানেজার পদে বহাল।পোট্রেট ফটো তুলেছিল প্রয়াত বন্ধু আব্দুল্লাহ কাফি।তখন ব্যবহার করতাম শুধু খায়রুল হাবিব।
মৌল রুমাল কে বলা যায় ২০০৭ এ প্রকাশিত আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ, জুলেখা সিরাপের আকর গ্রন্থিকা।২০০৭ থেকে আমার ডাকনামসহ  চয়ন খায়রুল হাবিব ব্যাবহার করতে শুরু করি।গ্রন্থবদ্ধ বানান অনুসৃত।
কালো নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারী জন লুইসের       মৃত্যুদিবসের সম্মানে সতেরোই জুলাই,(17/07/20)'ধবল' শব্দটি বদলে 'কালো' করেছি.
চখাহা।



মৌল জন্তুর ভাষা

'সত্যের সূচনা হয় দুজনের মধ্য দিয়ে' - নীৎসে

ওঠো উঠে দাঁড়াও সম্মান জানাও সার্বজনীন সকল কালো*
উদোম কালো পদযুগলবন্দী উন্মাদিনী উন্মাদ

মুন্ডহীন ঘোড়ার সওয়ার গোলন্দাজদের হেলমেটগুলো
পঙ্খিরাজ ধড়ের ওপর শূন্য থেকে ঝুলছে
অগ্নীশ্রাবী একনাগাড় হ্রেস্বারব-বর্ষায়
ভেষে যাচ্ছে গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত
                                     যাবতীয় শহর রক্ষা বাঁধ
ভবিষ্যতের দিকে তাক করা
                                      অতীত উন্মোচনের মাদুলি কবচ :
মন্ত্রোচ্চারনের ভঙ্গিতে চন্দ্রাক্রান্ত বেশ্যা এক বিড়বিড়িয়ে বলছে :
              দুর্ঘটনা চাই দুর্ঘটনা চাই
              চোখের বদলে চোখ প্রশ্নবোধক তবু দুর্ঘটনা চাই
              যদি কোনদিন খদ্দের না জোটে
              সন্তানঘাতী ঠোঁটে ভাত তুলে দিস তোর মরা হাতে
বিছানার নিচে গর্ত খুড়ে সে ধামাচাপ দিয়েছে
শরীরের সংলগ্ন জারজ।গর্তে পোরার আগে
সদ্যজাত শিশুটির ডান হাতের থাবায়
তুলে দিয়েছে এক লোকমা প্রথাবিদ্ধ ভাত

ওগো পৌরপ্রাচীর কোথায় তোমার অভিজাত শববাহকেরা

ঝড় ও জলোচ্ছাসের পর
উড়ে যাওয়া কুড়েঘরের ক্লান্ত খড়কুটোগুলো
উপশিরায় শিরায় প্রবাহিত
ঘাসের ক্ষুর গালে ছোঁয়ানোর
লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার সময় সেলুনের ঝাপসা আয়নায়
আটকে যায় উদ্বাস্তুর আত্মপ্রতিকৃতি :
শিলাবৃষ্টির আঘাতে থ্যাঁতলানো আমের মুকুল ঝরার মতো
রক্তের ফিনকি তুলে টিনের মেনামেলের মাটির ভিক্ষাপাত্রে
ঝুরঝুর ঘুঙ্ঘুর পতনের শব্দে
সিকি আধুলি খুচরার ব্যাক্তিগত বিজ্ঞাপন
নাগরিক নিওনে ঝলসানো নির্বাচনী দাবাগ্নি ছেড়ে
হাত পা মুখ থুবড়ে ঝাঁকঝাঁক গৃহহারাদের দিগ্বিদিক
মেশিনগানের ব্রাশফায়ার
গৃহযুদ্ধের বিজন সঙ্কেত :
হিরার মৌচাক থেকে মধুলোভী শত শত তীর
ভিতরকে টেনে হিচড়ে করেছে বাহির

শিকারী ও শিকার এখন দুজন দুজনের ফাদবন্দী
গার্হস্থ্যের রঙ্গিন ফ্রেমে আঁটা আলোগুলো অন্ধকারে অন্তর্লীন
চেহারাবিহীন ভিড়ের বাসস্টপেজে
সাঁরবেঁধে থমকে দাঁড়িয়ে নিয়তির নিয়মিত ভোক্তারা
চৈত্রের নিদাঘ অথবা মাঘের কাঁপনে
মৃতদেহের উচ্ছিষ্ট গন্ধকে পাশ কাটিয়ে
হেঁটে যাচ্ছে তাও কয়েকজন মৃতলোক

রায় ঘোষনা করেছে দৈবজ্ঞ কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দ :
জন্ম মুহূর্তে নবজাতকের মুখে সেঁটে দিতে হবে নৈর্ব্যাক্তিক কাগজের মুখোশ

নিশিডাক পূর্নিমার ঘোর
রাত নিজেও কি জানে ভোর না হবার আগে তার নিজের পরিনতি

লক্ষীসারসের ওমে নাচঘর নিরলে নিঝ্যুম
কি দুক্ষিত ঐ নৃত্যরত নারীপাখিটির ঘুম
নক্ষত্রনক্সিতে পালকে পালক গাঁথা পাথরের পালক
একটি হৃদয়ে তার অনেকগুলো হৃৎপিন্ড
যন্ত্রনাকাতর পাথর কুচিকুচি মরনঝাপির ভেতর
মেলাতে পারেনি চোখের দেখার সাথে মনপবনের উচাটন

কার হাত ঘুরে কার হাতে পড়বো
নাকি হাতাহাতিতে ছিঁড়েখুঁড়ে একসার

বিশ্বকর্মা দিবসের কেটে যাওয়া ঘুড়ির অপেক্ষায়
অপেক্ষমান আয় আয় শীতরাত্রীর বাঁশঝাড়
সরু সরু পাতার সনসনে কেঁপে কেঁপে গোঙ্গায়
কালির জিহ্বা : দুর্ঘটনা চাই দুর্ঘটনা চাই
কিভাবে ভালবাসা আশ্রয় পাবে বিষয়ের কৌশলে
চোখ ছলছল অথচ অশ্রুপাতহীন অথচ রক্তপাতহীন
সবচেয়ে কাছের মানুষ থেকে সবচেয়ে দূরে
বানভাসি চৈতন্যের হাহাকার নদীমাতৃক অমরার সংহার

ওগো রক্ততৃষিত চিতাকাঠ
ওগো পুনর্বিবাহিত শ্মশানঘাট
কুয়াশা ঢাকা চিতাভস্মের শূন্যতায় অথবা পূর্নতায়
ওগো দীর্ঘশ্বস ওগো দিব্যদৃষ্টি ওগো দর্শনার্থী শব্দ
ভুলে যাওয়া আর মনে পড়ার মাঝখানে
কে যেন কোথায় খুব রাতের গোপনে
বাজায় মোহনবাঁশির সুরে উদ্বোধনের ডাক :
প্রথম জন্মদিনের নরম মোমের আলোয় জ্বলেপুড়ে গলে যাক
সার্বজনীন সকল কালো*
উদোম কালো পদযুগলবন্দী উন্মাদিনী উন্মাদ


চয়ন খায়রুল হাবিব
আজিম্পুর
ঢাকা ১৯৯১

''ওঠো উঠে দাঁড়াও সম্মান জানাও সার্বজনীন সকল ধবল*
উদোম ধবল* পদযুগলবন্দী উন্মাদিনী উন্মাদ'' 1991/2007

''ওঠো উঠে দাঁড়াও সম্মান জানাও সার্বজনীন সকল কালো
উদোম কালো পদযুগলবন্দী উন্মাদিনী উন্মাদ'' 17/07/20


আমার জন্ম ১৯৬৫ সালে, যে-বছরের মার্চ মাসে জন লুইস মার্কিন কালো মানুষদের সমানাধিকারের দাবিতে সেলমাতে মিছিল করেছিলেন, যা পরে ব্লাডি সানডে/রক্তাক্ত রোববার নামে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়।আমার জন্মের বছর     সেলমার সে-মিছিলে একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশের লাঠির আঘাতে তরুণ জন লুইসের মাথা  ফেটে গিয়েছিল। শ্বেতাঙ্গ সে-পুলিশ অফিসার অনেক বছর পর জন লুইসের কাছে ক্ষমা চেয়েছিল।জন তাকে ক্ষমা করেছিল।জন লুইসের মৃত্যুদিবসের সম্মানে সতেরোই জুলাই, 'ধবল' শব্দটি বদলে 'কালো' করেছি।
চখাহা।(17/07/20)'