Saturday 23 July 2016

এরদোগানের ছোট-নুনু-সমাচার!


তুর্কি হুজ্জতির ধুন্দুমারে অনেকে হয়ত ভুলে গেছে, কিছুদিন আগে মার্চের শেষদিকে জার্মানির প্রখ্যাত কৌতুকাভিনেতা ইয়ান বোহমারমান  তুর্কি রাস্ট্রপতি এরদোগানকে নিয়ে প্রচন্ড বিদ্রুপাত্মক ভাষাতে এক স্যাটায়ার গান হিশেবে প্রচার করেছিল জার্মান টেলিভিশানে, যার মুল প্রতিপাদ্য হচ্ছে,'নুনুর সাইজ ছোট হওয়াতে এরদোগান এতসব জঘন্য দমন, পিড়ন, ধড়পাকড় চালাচ্ছে।' সবাই ভুলে গেলেও এরদোগান ও তার অ্তি-উতসাহি সহচরেরা ভুলে নাই; তারা জার্মান সরকারের কাছে বোহমারমানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছে। স্যাটায়ারটার ইংরেজি, বাংলা তর্জমা দেখা যাক; আরো দেখা যাক এ-ব্যাপারে জার্মান সরকারের প্রতিক্রিয়া!'বাক-স্বাধিনতা' ও 'শিল্পের স্বাধিনতার' আপেক্ষিকতার পটভুমিতেও এই স্যাটায়ার আলোচনা জরুরি!




বোহমারমান স্যাটায়ারের প্রাথমিক বাংলা অনুবাদ

''রামভোদাই, কাপুরুষ এবং আড়ষ্ঠ
এরদোগান হলেন রাস্ট্রপতি।
তার নুনু্টা দেখতে কুশ্রি আর তাতে কেবাবের গন্ধ,
শুয়োরের পাদের গন্ধও তার চেয়ে ভাল।
সে একজন পুরুষ,
সে মেয়েদের পিটায়,
এবং তা করবার সময়
পরে থাকে গাম্মি-মুখোশ!
তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছাগল-চোদন,
আর সঙ্খ্যালঘুদের দমন, পিড়ন,
কুর্দিদের লাথানো, খ্রিস্টানদের বেতানো,
রাত জেগে সে দেখে বাচ্চাদের পর্নো।
একশ ভেড়ার সাথে চলে তার মুখমেহন,
জি হা, একজন রাস্ট্রপতি এরদোগান
যার নুনু ছোট হলেও সদম্ভে দন্ডায়মান!''

''Dumb, cowardly and inhibited
is Erdogan the president
His dicks ugly smells like donner,
even pigs farts are better.
He is the man,
who punishes women,
and wears while doing,
a mask of Gummy.
His favourite is to fuck goats.
as well as supress minorities.
Kick Kurds, beat up Christs,
while watching porn of the kids
In the evening instead of sleep,
Fellatio with hundread sheep.
Yes, Erdogan stout and rout,
is a president with a small dick.''

জার্মান সংসদে এক সাংসদ বোহমারমানকে বিচারিক আওতায় আনবার এঞ্জেলা মার্কেলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংসদে সম্প্রতি পুরো স্যাটায়ারটা হুবহু পাঠ করে!

ছোট নুনু, বড় গাড়ি

প্রাচ্য, প্রতিচ্য সবখানে পুরুষের নুনুর সাইজ নিয়ে বিভিন্ন হক, নাহক চাপাবাজি আছে।পরিসঙ্খ্যানে দেখা গেছে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে মেয়েরা তাদের প্রিয় পুরুষের নুনুর আকার বান্ধবিদের কাছে কমবেশি ফুলায়ে, ফাপায়ে বলে।শিবলিংগ পুজাতে এ-মনস্তত্বের আবহমানতাকে ধারন করা হয়।তসলিমা নাসরিন তার তিন স্বামির কার সিফিলিস ছিলো, কে পির-ফকিরি-কুসংস্কারাচ্ছন্ন এসব বল্লেও তাদের নুনুর সাইজের ব্যাপারটা এড়ায়ে গেছে; তবে ওনার তিন স্বামিরত্নই বাংলাদেশের গড় উচ্চতার চেয়ে খাটো; আবার কন্ডম কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বরাবর বিশ্বায়িত গড় সাইজের কন্ডম সর্বরাহ করার ফলেও না কি জন্মহার নিয়ন্ত্রন সিমার বাইরে চলে গেছে, মানে কন্ডম পিছলায়ে যায়।

বাংলাদেশের মেয়েদের সম্পর্কে অপবাদ আছে, বুক ফাটেতো মুখ ফাটে না!তসলিমা সেখানে ব্যাতিক্রম।ইদানিং তারকা স্থপতি এনামুল নির্ঝর, অপি করিম তৃতিয়বারের মত বিয়ে করলেন।নির্ঝরের নুনু ছোট হবার কারনে তার আগের বৌরা চলে গেছে কি না, সেটা তারা বলতে পারবে।আবার অপি করিমও তার আত্মজিবনিতে লিখতে পারবে, কারটা কার চেয়ে বড় বা ছোট এবং শিক্ষাগুনে মাপের ব্যাপারে উনি কারসাজি করবেন না বলে ধরে নেয়া যায়।আবার রাজউকের সাথে মিলে স্থপতিরা যেসব কদাচার করছে তাতে নুনুর জাতিয় গড় সাইজ নির্নয়ে তাদের উপর কতটুকু নির্ভর করা যায়, সেটাও বিবেচ্য।শেষ কান চলচ্চিত্র উতসবের অনুল্লেখযোগ্য ফালতু ক্যাটাগরিতে সুযোগ পাওয়া কথিত বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকারও একজন বিত্যবান স্থপতি এবং খাটো পুরুষ।তার নুনু ছোট না বড় সেটা তার স্ত্রি বলতে পারবে।তসলিমা, অপি, হুমায়ুন আহমেদের প্রথম, দ্বিতিয় স্ত্রি এবং বাংলাদেশের অপরাপর স্ত্রিরা তাদের স্বামিদের নুনু-সাইজ নিয়ে খোলামেলাভাবে বললে আমরা বুঝতে পারবো বাংগাল-সংস্কৃতি, সাহিত্য, সাংবাদিকতায়, সংবিধানে পুরুষের ক্ষ্মতার প্রয়োগ, অপপ্রয়োগের সাথে নুনু-সাইজের সম্পর্ক আছে কি নাই; এসব নিয়ে জার্মানদের রগড় হক না নাহক? ফ্রান্সে একটা সমকালিন প্রবাদ হলো, যে-পুরুষের নুনু যত ছোট, সে তত বড় গাড়ি চালায়।

এবিউসিভ ক্রিটিসিজমের ধারাঃ চার্লি থেকে বোহমারমান

বারো হাত নুনুর তেরো হাত বিচির সাত কাহনের অবসরে এবার দেখা যাক এরদোগানের নুনু নিয়ে বিদ্রুপ করায় বোহমারমানের ভাগ্যের শিকা খুলেছে না কি ছিড়েছে!জার্মানির বাক-স্বাধিনতা আইনে স্যাটায়ার, প্যারোডিতে যে কোন ভাষা, যে কোন ভাবে ব্যাবহার করা যাবে, তবে একটা গোদ হচ্ছে  ১০৩ ধারা, যাতে বিদেশি রাস্ট্রপ্রধানদের অপমানকে ফৌজদারি অপরাধ বলে গন্য করা হয়েছে।বোহমারমান তার স্বপক্ষে যুক্তি দেয় যে মানবাধিকার বিষয়ে এরদোগানের বিচ্যুতিগুলা তুলে ধরতে ইচ্ছে করে সে কদর্জ ভাষা ব্যাবহার করেছে, এটাকে সে বলছে, 'abusive criticism' বা 'মর্জাদাহানিকর সমালোচনা'!  

ফরাসি কার্টুন পত্রিকা 'চার্লি হেবডোর' কার্জকলাপকেও 'এবিউসিভ ক্রিটিক' ধারার কাজ বলা যায়।এ-ধারার কাজ যে কি পরিমান সামাজিক উস্কানি তৈরি করতে পারে, তার মর্মন্তদ প্রমান মুসলিম জঙ্গিদের হাতে চার্লি-পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও কার্টুন শিল্পিদের হত্যাকান্ডে।পরে আন্তর্জাতিক লেখক সঙ্ঘ PEN যখন চার্লি-পত্রিকার নিহত ও জিবিত সাংবাদিকদের শ্রেষ্ঠ লেখক পুরস্কারে ভুষিত করে, তা নিয়েও PEN সদস্যদের ভেতর প্রকাশ্য বিতন্ডা তৈরি হয়!  

বাংলাভাষি কালচারে যেখানে সমালোচনা সহ্য করা হয় না; সমালোচনার  আগে অগ্রাধিকার পায় বয়স, পদ, পদবি, সামাজিক, রাজনিতিক মামদোবাজি; সেখানে জার্মান-সংস্কৃতিতে 'abusive critique' বা 'মর্জাদাহানিকর সমালোচনার' গ্রহনযোগ্যতা সম্যক বোঝা আমাদের জন্য কঠিন বটে!খেয়াল রাখা দরকার যে বাংলাদেশের মঞ্চে জার্মান নাট্যকার ব্রেখটের বিপুল অনুশিলন হয়েছে।ব্রেখটের পাশাপাশি অপরাপর ইউরোপিয় সমকালিন নাট্যধারায় 'সমালোচনা', 'আত্মসমালোচনা', 'মানবাধিকার', 'রগড়' কিভাবে এসেছে তার তুলনামুলক প্রায়োগিক আলোচনা আমরা অবস্য তেমন করি নাই।সে-লক্ষ্যে, বিশদভাবে আলোচনা করেছিলাম,'ব্রেখট বনাম সার্ত্রেঃ মঞ্চনাটকের দায়মুক্তি' সন্দর্ভে!

তুর্কি সুন্দরির বিড়ম্বনা

 মিস তুরস্ক ২০০৬, মার্ভ বাইউক্সারাচ Merve Büyüksaraç
এটাও খেয়াল রাখা দরকার যে-তুর্কি সমাজ এরদোগানের মত স্বৈরাচারি পাষন্ডকে গনতন্ত্রের উসিলাতে ক্ষ্মতাসিন রাখছে; সে-একই সমাজের প্রাগ্রসর ফসল কবি নাজিম হিকমেত এবং উপন্যাসিক ওরহান পামুক।একই সমাজে কয়েক বছর আগে ঘটেছিল গনতান্ত্রিক মানবাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সাড়া জাগানো তাকসিম আন্দোলন; সেই তাকসিম প্রজন্মের ফসল তুরস্কের ২০০৬ সালের শ্রেষ্ঠ সুন্দরির পদকে ভুশিত মার্ভ বাইউক্সারাচ'কে ২০১৬'তে তুর্কি এক আদালত এরদোগানের মানহানির অপরাধে ১৪মাসের খারিজি-কারাদান্ড দিয়েছে।রায়ে বলা হয়েছে যে আগামি পাচ বছর আদালতের প্রতিনিধিরা মার্ভের সামাজিক গতিবিধি নজরে রাখবে, এর ভেতর সে যদি কোন দন্ডনিয় অপরাধ করে তাহলে তাকে ঐ নতুন শাস্তির সাথে ১৪ মাস কারাগারে দন্ডভোগ করতে হবে।সুন্দরি মার্ভের অপরাধ কি?এরদোগানের ব্যাক্তিগত উকিলের আনা অভিযোগে বলা হয়েছিল, ২০১৪ সালে মার্ভ সামাজিক মাধ্যমে এমন একটা স্যাটায়ার শেয়ার করে, যাতে তখনকার প্রধানমন্ত্রি এরদোগানের 'ব্যাক্তিক মানবাধিকার' লংঘিত হয়েছে।মার্ভ আদালতকে বলেছে, এরদোগানের মানহানির জন্য সে ঐ স্যাটায়ার শেয়ার করে নাই, 'masters poem' স্যাটায়ারটা মজা লাগাতে তা শেয়ার করেছিল!শুধু তুরস্কের সাবেক শ্রেষ্ঠ সুন্দরি নয়, ২০০০এর মত তুর্কি নাগরিক এরদোগানের মানহানি ঘটানোর অভিযোগে আদালতের মুখোমুখি যাদের ভেতর শিশুরাও আছে!

ফিরে আসি বোহমারমানের অভিযুক্ত স্যাটায়ারে!জার্মান টেলিভিশানে প্রচারের পরপর সাত তাড়াতাড়ি তুর্কি সরকার জার্মান রাস্ট্রদুতকে ডেকে মর্জাদাহানির অভিযোগ জানায়।এরদোগানকে তুষ্ট করতে এঞ্জেলা মার্কেল বোহমারমানের বিরুদ্ধ্বে মান্ধাতা আমলের ১০৩ ধারা ব্যাবহারের সিদ্ধান্ত নেয় এবং স্যাটায়ারটির বড় অংশ ছেটে ফেলার বিচার বিভাগিয় নির্দেশ দেয়।এ নিয়ে জার্মানিতে তিব্র বিতন্ডার মুখে অবস্য মার্কেল জানিয়েছে যে ২০১৮ নাগাদ ১০৩ ধারাকে বাতিল করা হবে!কেন এখন নয়?কা্রন, ইউরোপে আসা বিপুল সঙ্খ্যক সিরিয়ান শরনার্থিকে তুরস্কে ফিরিয়ে দেবার যে আলাপ চলছে, তাতে এরদোগানকে এঞ্জেলার বড়ই দরকার, তার নুনু ছোট না কি বড় সে-ভাবনা এখানে বাতুলতা!আশার বিষয়, 'বাক-স্বাধিনতা এবং শিল্পে ভাব প্রকাশের স্বাধিনতা' যে বাতুলতা না হয়ে জার্মান সামাজিক চলিশ্নুতার আবশ্যকিয় শর্ত তার সমর্থনে, এঞ্জেলা মার্কেলের সিদ্ধ্বান্তের সাথে ভিন্নমত পোষন করেছে তার পুরো মন্ত্রিসভা এবং তার নিজের সংসদিয় দল!

চয়ন খায়রুল হাবিব
২২/০৭/১৬
ব্রিটানি