Wednesday 6 July 2016

সিরিয়ান কবি এডোনিসের সাম্প্রতিক সাক্ষাতকার


''শিল্পের ক্ষেত্রে কোন পুর্ব-পশ্চিম নাই।''
 প্যারিসে বসবাসকারি ৮৬বছর বয়সি সিরিয়ান কবি এডোনিসের সাম্প্রতিক সাক্ষাতকার বাংলাতে অনুবাদ করছিলাম, টেলিভিশানে শুনলাম, ঢাকার গুলশানে বনেদি কাফেতে ইসলামি সন্ত্রাসিদের নারকিয় হত্যাযজ্ঞ্বের খবর; তারপর কদিন ধরে সে-ঘটনাপ্রবাহের বিভিন্নমুখি ঝাকুনির বিমর্ষ দোলাচলের ভেতর বার বার ফিরে আসছিলাম এডোনিসের সাক্ষাতকারে, একটু একটু করে অনুবাদটা এগিয়ে নেবার সময় ভাবছিলাম কি বলতে পারতো বর্ষিয়ান এ-কবি গুলশান-হত্যাকান্ডের প্রতিক্রিয়াতে!

A Time Between Ashes and Roses
A child stammers, the face of Jaffa is a child / How can withered trees blossom ?
A time between ashes and roses is coming
When everything shall be extinguished
When everything shall begin
Adonis, 1972
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের শুরুতে এডোনিস পক্ষ্যে, বিপক্ষ্যে কিছু কথা বলেছিলেন; নিজের আলাউইত গোত্রের জ্ঞ্বাতিভাই বাসার আসাদের কাছে খোলা চিঠিতে নির্বাচনও দাবি করেছিলেন।পরে সিরিয়াতে লাগামহিন বিভিন্নমুখি বর্বরতায় হতভম্ভ এডোনিস নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন!কিন্তু কলম থামান নাই; প্যারিসের বাটাক্লান ক্লাবে যখন ইসলামি জঙ্গিরা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ্ব চালালো, তার ঠিক আগে এডোনিস প্রকাশ করলেন, 'Violence Et Islam' বা 'সহিংষতা এবং ইসলাম' গ্রন্থটি; একই সময় প্যান-আরব পত্রিকা আল-হায়াতে নিয়মিত কলামে টানা গদ্যের পদ্যে 'আরব বসন্তের' ব্যার্থতার দিকগুলো কারনসহ তুলে ধরেন।New York Review Of Booksএ(১৬এপ্রিল, ২০১৬) সম্প্রতি প্রকাশিত শারাফ আল হুরানি ও জোনাথান গাইয়ারের নেয়া সাক্ষাতকারটির আংশিক অনুবাদঃ
প্রঃ সিরিয়া যুদ্ধের শুরুতে আপনি প্রেসিডেন্ট আসাদের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন।এখন তার কাছে কি বলতেন!
এডোনিসঃ কিছুইতো বদলায় নাই।বরং সমস্যাটা আরো বিস্তৃত হয়েছে।কিভাবে চল্লিশটা দেশ আইসিসের বিরুদ্ধ্বে একজোট হয়েও কিচ্ছু করতে পারেনা!রাস্ট্র কাঠামো থেকে ধর্মকে আলাদা না করা হলে কিছুই বদলাবে না।ধর্ম কি এবং রাজনিতি, সংস্কৃতি ও সমাজ কি তা নির্দিষ্টভাবে আলাদা না করতে পারলে কিছুই বদলাবে না এবং আরব বিশ্ব আরো পতনের দিকে যাবে।অনেক সমস্যা আছে, ধর্ম যার সমাধান হতে পারে না।ধর্ম নিজেই যেখানে সমস্যার কারন হয়ে পড়ছে!মুক্ত একজন মানুষ জানে সে কি চায় এবং আমদের তাতে শ্রদ্ধা দেখানো উচিত।কিন্তু ধর্মকে সমাজের ভিত্তি হিসেবে মানা যায় না।
প্রঃ কবে শেষবার সিরিয়া গিয়েছিলেন?
এডোনিসঃ ২০১০এ।

প্রঃ সে-সময়কার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলতে পারেন?
এডোনিসঃ তেমন কিছু বলতে পারবো না- আমি এদিক ওদিক থেকে খবর পাই, আপনারা যেরকমটা পান।আমি জানি যে সিরিয়াকে ধ্বংশ করে ফেলা হয়েছে।কিন্তু কিসের জন্য?প্রকল্পটাই বা কি?দেখুন, একজন বিপ্লবিকে অবস্যই তার দেশকে রক্ষা করতে হবে।সে শাষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, আবার সে প্রতিষ্ঠানকেও রক্ষা করে!শুনতে পেয়েছিলাম, আলেপ্পোর ঐতিহাসিক বাজারকে সম্পুর্ন গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।এই সম্পদতো অতুলনিয়, এ-ধ্বংশতো ক্ষতিপুরন করেও পোষানো যায় না, কিভাবে তারা এ-বাজারটিকে ধ্বংশ করলো?একজন বিপ্লবি যাদুঘরে লুটপাট চালায় না।একজন বিপ্লবি খ্রিস্টান, আলাউইত, ড্রুজ হবার কারনে মানুষ হত্যা করে না।বিপ্লবিরা একটা জনগোষ্ঠিকে সমুলে উচ্ছেদ করতে পারে না, যা তারা করেছে ইয়াজিদিদের সাথে!এটাকে কি বিপ্লব বলে?পশ্চিমা দেশগুলো কেন একে সমর্থন যোগাচ্ছে? 
প্রঃ সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আরব বিশ্বে বেশ সমালোচিত!
এডোনিসঃ বহু আরব সাংবাদিক, লেখক কথিত বিপ্লবিদের বেতনভুক এবং তারা সবসময় আমার সমালোচনা করেছে।ওরা বলে যে আমি বিপ্লবের সাথে নাই, মানে যেই বিপ্লব যাদুঘরগুলোকে ধ্বংশ করেছে!
প্রঃ সিরিয়ার বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিপ্লবটা কি এবং কারা এর সাথে আছে?
এডোনিসঃ কারা যে কার সাথে তা নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারছে না...একজন লেখক কখনো হত্যাযজ্ঞ্বকে সমর্থন করতে পারে না।আপনি জানেন, এটা সম্ভব না।কিছু লোক আছে যারা সহিংষতা, খুনাখুনি ভালবাসে।একজন কবি বা একজন পেইন্টার কোমরে বারুদের বেল্ট পরা আত্মঘাতি বোমাবাজের পাশে থাকতে পারে না, যে-বোমাবাজ বাচ্চাদের স্কুল উড়িয়ে দিতে নিজেকে বলি দিচ্ছে।কিভাবে একজন বাচ্চাদেরকে খুন করতে পারে?বন্ধু্রা, শাষকগোষ্ঠি স্বৈরাচারি হলে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো; কিন্তু বাচ্চাদের স্কুলের সাথে কিসের লড়াই!দেশটাকে ধ্বংশ কোরো না।নিরিহ মানুষকে খুন কোরো না।শাষকের বিরুদ্ধ্বে লড়াই করো।এটা অপমানকর।এ-পৃথিবিতে নিশ্বাস নেয়া অপমানকর।এরকমটা কখনো শুনি নাই, একজন উন্মত্ত লোককে রাস্ট্রপতি পদে আসিন রাখবার জবরদস্তিতে ইয়েমেনকে পুরো ধ্বংশ করে দেয়া হলো।

আর কিছু বুদ্ধিজিবি এসবকে সমর্থন দিচ্ছে।এদের বিরুদ্ধ্বে কিভাবে লড়াই করবেন।তাদের সাথে না থাকার জন্য, তাদের মত না হবার জন্য তারা অন্যদের সমালোচনা করে।আপনাকে তাদের মত দানব হতে হবে।জিহাদি-দানব...
জিহাদিরা সমাজেরই অংশ।যারা এটা চায় না, তাদেরকে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে এটা প্রত্যাখ্যান করতে হবে।আপনি এর বি্রুদ্ধ্বে কোন সরকারি আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেখেছেন?কেউ কেউ ব্যাক্তিগতভাবে আমরা যা বলছি  তার সাথে একমত।কিন্তু একটা আরব দেশ, একটা বড় রাজনিতিক দলও এখনো জিহাদিরা যা করছে তার বিরুদ্ধ্বে সরব হয় নাই।এটা এক ধরনের আপোষ!এর অর্থ কি?এরা মানুষ খুন করছে এবং বাজারে মেয়েদের বিক্রি করছে।
A Grave for New York
Picture the earth as a pear
or breast.
Between such fruits and death
survives an engineering trick:
New York,
Call it a city on four legs
heading for murder
while the drowned already moan
in the distance.
Adonis, 1971
প্রঃ পরিবর্তনের জন্য পুর্ব ও পশ্চিমের কি নতুন ধরনের সম্পর্ক হওয়া উচিত?আমি আপনার কবিতায় পড়েছি, 'বস্তুর মানচিত্রের ভেতর দিয়ে বাসনার আসা যাওয়া...''(১৯৮৭), একটা কবিতায় আইফেল টাওয়ার ভুমধ্য সাগরে ভাসছে , আরেকটা কবিতায় আবু নাওয়াস কথা বলছে ভিক্টর হুগোর সাথে।পশ্চিম ও আরবের একটা সেতুবন্ধন---

এডোনিসঃ পুর্ব এবং পশ্চিম হচ্ছে সামরিক ও অর্থনৈতিক ধারনা, যা এসেছে উপনিবেশবাদ থেকে।ভৌগলিকভাবে বলা যাবে, এটা পুর্ব, ওটা পশ্চিম এবং উপনিবেশবাদ তা ব্যাবহার করেছে। 
শিল্পের ক্ষেত্রে কোন পুর্ব-পশ্চিম নাই।পল ক্লি তিউনিসিয়া এবং পুর্ব আরব থেকে অনুপ্রানিত হয়েছে।মরক্কোর লোকশিল্প থেকে প্রানিত হয়েছে দেলাক্রোয়া। র‍্যাবো জন্মেছে পশ্চিমে, কিন্তু বরাবর পশ্চিম বিরোধি।আবু নাওয়াস, আবু আল-মারিকে পুর্বের বা পশ্চিমের বলা যাবে না।সৃজনশিলেরা সবাই একই বিশ্বের, তারা একটা মানবিক বিশ্বে একত্রে বসবাস করে।হুইটম্যান এবং আবু তাম্মান আমার জন্য একই বিশ্বের লোক!
প্রঃ পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটিয়েছে, যা আরব বিশ্বে নাই।
এডোনিসঃ ইউরোপ তার যেসব সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশ ঘটিয়েছে  তা করেছে ধর্ম এবং চার্চ থেকে সরে গিয়ে।মধ্যযুগের ইউরোপিয় ধর্মিয় আদালতগুলো আজকের জিহাদিদের মতোই।চার্চের এখতিয়ারভুক্ত আদালতগুলোর রায়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা হতো।আমরা এখনো সে-পর্জায়ে আছি।পশ্চিম যদি চার্চ থেকে সফলতার সাথে সরে আসতে পারে, আরব বিশ্বও তা পারবে।মুল সংগ্রামটা সেখানেই।যা যা ঘটছে সেসব এবং পশ্চিমের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও এই বিযুক্তি ঘটবে।দুর্ভাগ্যের যে পশ্চিমা রাজনিতিবিদেরা আরব রাজনিতিবিদদের, আরব শাষকদের ঘৃনা করে, আবার সে-শাষকদের ব্যাবহার করে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে।
প্রঃ রাস্ট্রকাঠামো থেকে ধর্মের বিভাজন কিভাবে কার্জকরভাবে অর্জিত হবে?
এডোনিসঃ গোড়া থেকে শুরু করতে হবে।এর জন্য সংগ্রাম দরকার, উঠে দাড়াও, লড়াই চালিয়ে যাও, লেখো এবং কারবরন করো।আরব কারগারগুলো কেন বন্দি লেখকে ভরা না, তা আমাকে অবাক করে।তার মানে, লেখকেরা তাদের কাজ ঠিকমতো করছে না।তারা সমালোচনা করছে না।তারা আসল সঙ্কট নিয়ে কথা বলছে না।আমি লেখকদের সমালোচনা করি, রাস্ট্রের সমালোচনা করি না।লেখকের সবসময়ে জেলখানাতে থাকা দরকার, তার মানে সে সত্য কথা বলছে।সে যদি জেলখানার বাইরে থাকে, তার মানে দাড়ালো সে সত্য বলছে না।যতক্ষন তাদের বইপত্র নিশিদ্ধ হচ্ছে, আমরা জানছি যে সংস্কৃতি সচল আছে এবং এগোচ্ছে!
In the City of the Partisans
More than an olive tree, more
than a river, more than
a breeze
bounding and reboundingmore than an island,more than a forest,
a cloud
that skims across his leisurely path
all and more
in their solitude
are reading his book.
Adonis, 1961
প্রঃ সিরিয়ার মর্মন্তদ, বর্বর সহিংষতা নিয়ে কি কবিতা লেখা যেতে পারে?এডোর্নো(adorno) অসউইজ নিয়ে কবিতা দাবি করেছিল!
এডোনিসঃ এগুলো বাকোয়াজি।অসউইজ মানবসভ্যতার জন্য ভিশনতমো বিপর্জয়, আবার সভ্যতা এরকম বিপর্জয় অনেক বার পার হয়ে এসেছে।আমি বিশ্বাস করি লেখার শুরু হয় প্রশ্ন দিয়ে এবং অশুভের সুত্র উদ্ঘাটনের মধ্য দিয়ে, তা যেখান থেকেই আসুক।এডোর্নো প্রশ্ন করতে না বলে আমাদেরকে বিবৃতিকার হতে বলছে এবং সেটা এক অর্থে গ্রহন করে নেয়া।আমি তার সাথে  একমত নই।এখন লেখা শুরু হবে অসউইজের পর।
প্রঃ সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ্ব চলাকালে কবিতা লেখা যেতে পারে না?
এডোনিসঃ বোমার সাথে কবিতার তুলনা হতে পারে না।এধরনের তুলনাতে আসা ঠিক না।একটা মুর্খ-কার্তুজ একটা কাঠামো বদলে দিতে পারে, একটা ঘৃনিত-কার্তুজ একজন মহৎ প্রানের বিনাশ ঘটাতে পারে।এধরনের তুলনা মৌলিকভাবে ভুল।কবিতা লেখা হচ্ছে বাতাস বানাবার মত, আতর বানাবার মত, শাস-প্রশ্বাসের ব্যাবস্থা করবার মত, বস্তগত বিচ্চারের তুলনা এর সাথে চলে না।এ-কারনে কবিতা কখনো যুদ্ধকে ধারন করে না।যুদ্ধ শেষ হবার পর লাশগুলো নিয়ে, ধ্বংশযজ্ঞ্ব নিয়ে, ধ্বংশস্তুপ নিয়ে ভাবা যায়, কিন্তু সে-ভাবনাও যুদ্ধের পার্স্বপ্রিতিক্রিয়া।
প্রঃ আমরা শুনতে পাই, আইসিস সদস্যরা কবিতা লিখেছে, বিন লাদেন কবিতা লিখেছে!
এডোনিসঃ এগুলো কবিতা না।এগুলোকে কবিতা বলে গন্য করা ঠিক না।কবিতা সামজিক বিকাশের অংশ।সংস্কৃতি যখন দৈনন্দিন যাপনের অংশ হয়ে ওঠে, সবাই তখন কবি, সবাই তখন উপন্যাসিক।কিন্তু এসব ভিড়ের ভেতর যদি পাচ জন ভাল কবিকে খুজে পান, তাহলে একটা ভালো জায়গাতে আসলেন।এমেরিকাতে হাজার, হাজার উপন্যাসিক, পাচ কি ছটা পাতে দেবার উপযুক্ত।একই অবস্থা আরব বিশ্বে, আরবিভাষি সবাই কবি এবং তার ভেতর ৯৫ভাগ হচ্ছে রাবিশ।
প্রঃ সম্প্রতি আপনি অভিবাসনের ওপর লিখেছেন এবং বলেছেন, এটা আরব সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপুর্ন অংশ।আমরা এখন মধ্যপ্রাচ্যে এবং ইউরোপে অভিবাসন সঙ্ক্রান্ত প্রবল সঙ্কটের মুখোমুখি।এ নিয়ে কিছু বলবেন কি?
এডোনিসঃ অভিবাসন ঘটছে দুটো কারনে, হয় কর্মসংস্থান নেই অথবা স্বাধিনতা নেই।ফলে নাগরিকেরা কাজ করতে এবং তুলনামুলকভাবে মুক্ত বোধ করতে নতুন জায়গাতে যাচ্ছে।আরব দেশগুলো অত্যন্ত গরিব।দুইশো বছর ধরে এখানে কোন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়, ভালো গবেষনাগার গড়ে উঠে নাই।অথচ আমাদের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে।আমরা সেগুলো সমরাস্ত্র কিনতে, যুদ্ধ্ব বিমান কিনতে ব্যায় করি, আমরা এমন কি বৈমানিকও কিনে আনি আমাদের হয়ে যুদ্ধবিমান ওড়াতে এবং যুদ্ধ করতে, যেমনটা সৌদিরা করছে ইয়েমেনে।
দুনিয়াটা কাদাময় এবং আমরা প্রাগৈতিহাসিক পর্জায়ে আছি এখনো।আমরা এখনো মধ্যযুগে আটকে আছি, আর আপনার প্রশ্ন আসছে আধুনিক জায়গা থেকে।কায়রোতে এমেরিকান ইউনিভার্সিটি বা রাস্তাঘাটে বিদেশি গাড়ি দেখে বিভ্রান্ত হবেন না।আমরা কফির কাপটাও বানাতে পারি না।তাহলে আমরা আধুনিক হলাম কি করে?পশ্চিমা রাজনিতিবিদেরা আমাদের বিভ্রান্ত করছে।আপনারা বুদ্ধিমান, আপনাদের সত্যটুকু বের করে আনতে হবে।

The Static and the Dynamic
What we must criticize firstly is how we define heritage itself.
In addition to the vagueness of the concept, prevalent conformist thought defines
heritage as an essence or an origin to all subsequent cultural productions.
In my opinion, we must view heritage from the prism of cultural and
social struggles that formed the Arabs' history and, when we do, it
becomes erroneous to state that there is one Arabic heritage. Rather, there
is a specific cultural product related to a specific order in a specific period
of history. What we call heritage is nothing but a myriad of cultural and
historical products that are at times even antithetical
Adonis,

প্রঃ সাম্প্রতিক লেখাতে আপনি 'আরব-পরিচয়' নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন!য্যামন, 'আমি কে, আমরা কারা...' এধরনের।(আল-হায়াত,১০ডিসেম্বার, ২০১৫)।
এডোনিসঃ এটা শুধু একজন আরবের জন্য নয়, এটা সমগ্র মানুষের জন্যই একটা চড়াদাগের সমস্যা।ধর্ম অনেক প্রশ্নের নিস্পত্তি করে আসছিলো, খ্রিস্টান হচ্ছে খ্রিস্টান, ইহুদি হচ্ছে ইহুদি,মুসলিম হচ্ছে মুসলিম।প্রত্যেক 'অন্যপক্ষ্যের' পরিচয় সেখানে প্রশ্নের মুখোমুখি।সে যদি আমার মত বিশ্বাস করে, তাহলে তাকে স্বিকৃতি দেব, আমার মত না করলে স্বিকৃতি দেব না।এর একটা কারন হচ্ছে একেশ্বরবাদি ধর্মগুলোতে 'অন্যপক্ষ্য'কে হয় সংগায়িত করা হয় নাই, কিম্বা শত্রু হিশাবে দেখানো হয়েছে।সুতরাং ব্যাক্তি যখন ধর্মের কাঠামোর বাইরে আসতে চাচ্ছে, সে পরিচয় জটিলতায় পড়ে যাচ্ছে। 
আরব সুফিরা অবস্য এ-জটিলতার নিস্পত্তি করতে চেয়েছে।ফরাসি কবি র‍্যাবো বলেছিলো, 'আমি হচ্ছি অপর'!ইসলাম ধর্মে মুসলমান তার পরিচয় লাভ করে উত্তরাধিকার সুত্রে, যেভাবে সে তার বাবার অর্থ, সম্পদ, খামার উত্তরাধিকার সুত্রে পায়।সুফিরা বলছে, পরিচয় উত্তরাধিকার নয়, বরং একে সৃষ্টি করতে হয় এবং অর্জন করতে হয়।মানুষ তার কর্মদর্শনের ভেতর দিয়ে পরিচয় নির্মান করে!সুতরাং, পরিচয় যদি সৃজনশিল নির্মিতি হয়, তাহলে আর 'আমি' থাকে না, সে অপরে বিনির্মিত হয়।আমাকে নিজত্বে উপনিত হতে হলে, আমাকে অপরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে হবে!সুফিবাদে, পরিচয়ের সম্ভাবনা অসিমভাবে খোলা।  
যতক্ষন একজন বেচে আছে ততক্ষন সে তার পরিচয়কে নবায়িত করতে পারে।একজন যদি উত্তির্ন কবিতা লিখে যায়, তার ্রমৃত্যুতে তার পরিচয় শেষ হচ্ছে না, কারন তার কবিতা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে পড়া হবে।এভাবেও কবিতার পরিচয় নির্মিতি, বিনির্মিতি, নবায়ন ধর্মের সাথে মিলছে না।আরবি কবিতার ক্ষেত্রে একজন বড় কবিকেও পাওয়া যাবে না যাকে ধার্মিক বলা যাবে।যাদের ভেতর ধর্মভাব দেখা গেছে, তাদেরকে সুফিদের দিকে ঝুকে থাকতে দেখা গেছে, যেখানে সৃষ্টিকর্তা আল্লার সাথে সৃজিতের সম্পর্ক, আনুষ্ঠানিক ইসলাম বা অর্থোডক্স ইসলামের আইন কানুন থেকে ভিন্ন।একজন মানুষের সত্যিকারের ক্ষ্মতা তার উত্তর দেবার সাফল্যে সিমিত নয়, সত্যিকারের ক্ষ্মতা সে অর্জন করছে প্রশ্নের অবারিত সম্ভাবনাতে! 
প্রঃ সত্তর বছর আগে নাম বদলে এডোনিস নাম গ্রহন করেছিলেন কেন? 
এডোনিসঃ নাম বদলের জন্য নয়, নতুন নামটি গ্রহন করি ধর্মের জগত থেকে বেরিয়ে  আসতে !কিন্তু ঐ নামটি এখন কারো কারো চোখে অপরাধ বলে গন্য হচ্ছে! 
প্রঃ কেন?
এডোনিসঃ রটানো হচ্ছে যে নামটা আরব অথবা মুসলিম নাম না।দুর্ভাগ্যবশত, ধর্মিয়-সংস্কৃতি অপরাপর সব সংস্কৃতির বুনিয়াদকে হটিয়ে দিতে চাইছে!
প্রঃ তাহলে আরব-সংস্কৃতির ভবিষ্যত কি?
এডোনিসঃ যতদিন মৃত্যু ও প্রেম থাকবে, ততদিন শিল্প থাকবে।ভয়ের কিছু নাই।আরব বিশ্বে গভিরতরো লেখাগুলোর পাঠক হয়ত কম, তাতে কিছু যায়  আসে না!যে-নিতসে আজকের আধুনিক চিন্তাকে উস্কেছিলো, কেউ তাকে চিন্তো না, একটা রচনাও প্রকাশ হয় নাই তার জিবতকালে!এটাই শিল্পের নিয়তি, সবসময়।অনেকে প্রকাশিত হয়, বাজারে তাদের কাটতিও হয়, কিন্তু তাদের বইগুলো নিক্ষেপিত হয় ইতিহাসের আস্তাকুড়ে। 
চয়ন খায়রুল হাবিব
৬/০৭/১৬
ব্রিটানি

এডোনিস* আলি আহমেদ সাইদ এসবার।জন্ম, ১জানুয়ারি, ১৯৩০, আল কাসাবিন, সিরিয়া।