Friday 28 November 2014

বেশ্যাবৃত্তি প্রাচিনতম বৃত্তি, কারা রটালো?

টাইটেল ও নিচাংশের বানান হেরফেরের কারন,উদ্ধৃত নিচাংশ এসেছে ইতিমধ্যে প্রকাশিত আমারচিত 'বাংলা ক্রিয়াপদের বিবর্তন' শিরোনামে বিষদ এক প্রবন্ধ থেকে।মুদ্রিতভাবে পুরো প্রবন্ধটা পাওয়া যাবে প্রকাশিতব্য 'ভাষাপ্রমিতের সম্প্রদান  : ভাঙ্গা-লিরিক, ভাঙ্গা-বয়ান' ' নামক আমার প্রবন্ধ সংগ্রহে।চখাহা। 

''ক্রিয়াপদ: মাতৃতান্ত্রিকতা বনাম পিতৃতান্ত্রিকতাঃ
বেশ্যাবৃত্তি কি আদপেই সবচেয়ে প্রাচীন বৃত্তি?সবচেয়ে প্রাচীন বৃত্তিতো শিকারির বৃত্তি!দেখা যাবে যে মৃগয়ানির্ভর বা যাযাবর সমাজের কৃষিজীবী সমাজে বদলের সময় তার দৈব নিয়ন্ত্রকের লিঙ্গান্তর হয়েছে এবং প্রাক মাতৃতান্ত্রিক ঈশ্বরীর অবমূল্যায়ন হয়েছে, কোন কোন ক্ষেত্রে পুরোপুরি মর্জাদালোপ হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের ইব্রাহিমি দর্শন থেকে আসা ইহুদীবাদ, খ্রিস্টধর্ম এবং,ইসলামে যেভাবে প্রাচীন সুমেরীয়, ব্যাবিলনিও দেবীদের উচ্ছেদ করে পুরুষের আদলে দেব-নাম জারি করেছে; বৈদিকেরাও লুটেরা ইন্দ্রকে দেবাদিদেব বানাতে স্থানীয় মনসা, বাসুলী’র অবমূল্যায়ন করেছে আর রাধা, পার্বতী’দের অবস্থান নামিয়ে এনেছে বিষ্ণুর বিভিন্ন অবতারের প্রেমিকা হিশেবে।বাংলাতে শাকম্ভরী বা দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, তারা, বাসুলী, মনসার জনপ্রিয়তাই বলে দেয় যে এ-অঞ্চল ছিল মাতৃতান্ত্রিক।আর এই দেবীরা বাঙ্গালি মানসে শেকড় গাড়া সেই অনার্য মহেঞ্জোদারো, হরপ্যা, ওয়ারী বটেশ্বওয়ার আমল থেকে!

বৈদিকেরা চাষাবাদ শিখেছে অনার্যদের থেকে, তারপর এই সামাজিক পালাবদলের রূপক এঁকেছে রামায়ণ, মহাভারতে: রাম যে সীতাকে গ্রহণ করছে তা লাঙ্গলের ফালের প্রতীক, যে অহল্যাকে প্রাণ দিচ্ছে সে হচ্ছে হল না পড়া জমি!ইরান থেকে আমদানিজাত আহোর বা অসুর ক্রমান্বয়ে অরি, মিত্র, দেব, ইন্দ্র এবং বিষ্ণুর বিভিন্ন অবতারের নাম পরিগ্রহ করলেও প্রাচীন বাঙ্গালি তার প্রাচীনতমও ক্রিয়া ‘চাষবাস’কে কেন্দ্র করেই তার পূজা, পার্বণ, ক্রিয়াপদের দ্বন্দ্বগুলো সম্পন্ন করেছে! এই ক্রিয়াগুলোতে হাটে, মাঠে, ক্ষেতে, খামারে নারী-পুরুষ যোগ দিয়েছে একই কাতারে। দেখা যাবে যে পিতৃতান্ত্রিক সমস্ত ধর্মই সেবাদাসী এবং আরো উসিলায় নারীর প্রাচীনতমও বৃত্তি পতিতাবৃত্তি এহেনো প্রবচনগুলো আরোপ করেছে!

খ্রিস্ট ধর্মে দেখা যাবে সন্ত পল বার বার পতিতা ম্যাগডালেনের যিশুর পা ধুয়ে দিয়ে শুদ্ধতাপ্রপ্তির খবর দিচ্ছে; ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলিম তিন কিতাবেই নারীকে প্রাচীনতমও পাপের উৎস হিশাবে দেখানো হচ্ছে; সালমান রুশদি যখন তার ”শয়তানের পদাবলি” গ্রন্থে পরোক্ষে উল্লেখ করলো যে মক্কী, মাদানি সুরাগুলোর কোন, কোনটাতে প্রাক-ইসলামিক-আরব-নারী-দেবীদের বর্ণনা ছিল এবং তাতে পরে অদলবদল ঘটানো হয়েছে পৃথিবী ভেঙ্গে পড়লো তাতে!মানে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে সন্ত, সাধু, ঋষি, নবী, পয়গম্বর পুরুষদের পাশে নারী-নাম নেয়া হারাম!খোমেনি যেই ফতোয়া রুশদির উপর জারি করেছিল, ভারতের ইন্দ্র, বিষ্ণু পূজারী পণ্ডিতেরা সেই একই ধরনের ফতোয়ার জোরে হাজার বছর ধরে কোটি, কোটি নারীকে হত্যা করেছে সতীদাহ প্রথার নামে!''

চয়ন খায়রুল হাবিব
২০১০
ব্রিটানি