Wednesday 12 May 2010

এটিচ্যুড ব্র্যান্ডিং..শামসুর, গুণ, মোমতাজ ও অধ্যাপক ইউনুস

নামের বানান ছাড়া ঈ, ঊ, ণ, চাদবিন্দু ব্যাবহার করা হয় নাই।চখাহা।

স্মৃতিপাঠ ১

মনে হয় সেটাই ছিল বাংলা একাডেমিতে স্বাধিনতার পর প্রথম বই মেলা!খুব সম্ভবত বোনদের হাত ধরে সেখানে গিয়েছিলাম!অনেকেই চাদর বিছিয়ে নিজেদের বই বিক্রি করছিল!তাদের ভেতর ছিল চোয়াল গর্তে ঢোকা, পিঠে পেট ঠেকা, ইয়া লম্বা নির্মলেন্দু গুণ!ওর প্রকাশক ছিল খান ব্রাদার্স!এখনো নির্গুনকে লোকে এদেশে, ওদেশে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে!খান ব্রাদার্সও নিশ্চিত কলেবরে অনেক বেড়েছে!কিন্তু সত্তরের তরুন কবিদের যেভাবে বরন করেছিল, শুধু খান ব্রাদার্স কেন অন্য কোন প্রকাশনিই তরুন কবিতার প্রতি আর তেমন মমতা দেখায় নি!নির্গুণ নিজেই একটা ব্র্যান্ড, হাটাবাবা ব্র্যান্ড!ওর সেই বাংলা একাডেমির মাঠে ছড়ানো চাদরেই চাদোয়া বানিয়েছে লিভার ব্রাদার্স, মেরিলসহ আরো গ্রুপেরা!কিন্তু চাদোয়াটা আসলে আরো বড়!কল্পনাতে যার শেষ, রুপকথাতেই পরিচয়!
নির্মলেন্দু গুণ আকছে

স্মৃতিপাঠ ২

ঢাকার আজিম্পুরে বড় হয়ে উঠবার সময় লিটেল এঞ্জেলসস, ওয়েস্ট এন্ডে পড়বার সুবাদে   আমার বন্ধু বান্ধব ছড়ানো ছিল লালবাগ, পলাশি, নওয়াব গঞ্জ, হাজারি বাগ, ঝিগাতলাতে!পুরান ঢাকার অনেক বাসাই ধা করে উঠে গেছে সটান রাস্তা থেকে!চৌকাঠ পেরোলেই উঠান বা এলোমেলো গলিপথ!কয়েকজন বন্ধুর বাবা ছিল ঝিগাতলার ট্যানারি মালিক!ট্যানারির পাশেই এদের আলিশান বাড়ি!ট্যানারি মালিকদের ভিতর দুই অঞ্চলের লোকেরাই প্রধান; ঢাকার কুট্টি এবং নোয়াখালির!আমার বন্ধুরা ছিল কুট্টি!এদের ভালো লাগত মুখের বুলি এবং গালাগালের কারনে!ইস্কুলে এরা আসত সাধারন পোষাকেই, কিন্তু এখন বুঝি সেগুলো ছিল ইজিপশিয়ান কটন!জন্ম থেকে এরা বাসাতে ইটালিয়ান, ফরাসিদের দেখছে!গোরারা আসত  ব্যাগ, জুতা বানাবার প্রসেস চামড়া কিনতে!এসব  ট্যানারির কল্যানেই চলে আরমানি, ইভ স্য লোরেন, ডলচে গাব্বানা, শ্যানেল! বিশ্বজুড়ে এসব ট্যানারি মালিকের বিনিয়োগ!কিন্তু নিজেদের কোন  ব্র্যান্ড এরা কখনো দাড় করাতে চেয়েছে বলে শুনিনি!


ব্র্যান্ড কি?

এটা একটা নাম হতে পারে, কিম্বা একটা প্রতিক অথবা স্লোগান!আইনগতভাবে যখন একটা ব্র্যান্ড সংরক্ষন করা হয়, তাকে বলা হয় ট্রেডমার্ক!স্ববিশেষে ব্র্যান্ড হচ্ছে নির্দিষ্ট সেবাসামগ্রি বা ব্যাবসায়!বিবর্তিত হতে হতে এটা মুল পরিচয় ছাড়িয়ে অন্য সেবাসমগ্রিতেও সংহত হতে পারে!

ব্র্যান্ড কেন?

গরুছাগলের হাটে একজনেরটার সাথে আরেকজনেরটা মিশে গেলেও যাতে আলাদা করা যায়, তার জন্যই শুরু হয়েছিল লোহা পুড়িয়ে গবাদি পশুর গায়ে মালিকানা প্রমানের সিলগালা বা ব্র্যান্ডিং! !মনে আছে কি স্মৃতিপাঠ ২ এ আমি ঝিগাতলার ট্যানারি শিল্পের উল্লেখ করেছিলাম!এখানে এই শিল্পে লোহা পুড়িয়ে মালিকানার বিবর্তিত ব্র্যান্ডিঙ্গের  সিলগালা পরাচ্ছে কারা তা আগেই উল্লেখ করেছি!এতে যে ট্যানারি শিল্পের কোন ক্ষতি হচ্ছে তা নয়!কিন্তু আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি'টা বোঝা যাচ্ছে!

কাঠাল, শাপলা, দোয়েলের হাত ধরে ধরে...NGOদের বাইরে...

বিশ্বায়িত ব্র্যান্ড হিশাবে আমরা কোকাকোলা, IBM, টয়োটা ইত্যকার আরো, আরো অনেক কিছু জানি!বর্তমান পরিসরে আমি মুলত বাংলা ভাষার, বাংলাদেশের স্থানিক বাস্তবতাতে ব্র্যান্ড বিবর্তনের সুত্র এবং বাধাগুলোর ইঙ্গিতগুলো ধরতে চাইব!

প্রথমেই মনে পড়ছে বেইলি রোডে মহিলা সমিতি নাট্য মঞ্চের সামনে টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির নামের কর্মযজ্ঞটির কথা!স্বত্বাধিকারি মনিরা এমদাদ ছোট্ট একটা দোকান দাড় করিয়েছিলেন এখানে ৭০ দশকের প্রথম দিকে!তখনো মধ্যবিত্তের চল ভারতিয় শাড়ি কেনা!নিউ মার্কেট্সহ যে কোন বিপনি বিতানেই এই সেই কথার পর পেছনে রাখা ভারতিয় শাড়িগুলো পরে পরে দেখাতো একহারা চেহারার পুরুষ মডেলরা!

মনিরা এসেছিলেন কুমিল্লা থেকে!স্বামি প্রকৌশলি!প্রকৌশলিদের লাখেরাজ দুর্নিতির কথা ধরেও আমরা জানি এদের বৌরা সেই জমি কেনা, সেটের পর সেট জড়োয়া বানানো আর একঘেয়ে লাগলে ইস্কাটন লেডিস ক্লাবে গিয়ে হরেদমে জুয়া খেলার নামে ঘুষ চালাচালি!মনিরা'কে টাঙ্গাইলে গিয়ে শাড়ি বিল্পবের বুধ্বি কে দিয়েছিল তা জানিনা!!ওনার নিজের শাড়ি পড়ার ভঙ্গিও, সে এক গল্প করবার মতো!'গ্রামিনের'; বিবি রাসেলদের অনেক অনেক আগে কুমিল্লার চকবাজার এলাকা থেকে আসা সদ্য বিবাহিত সেই যুবতি মনিরাকে যদি বাংলাদেশের কোকো শ্যানেল বলি তাহলে কি অতিরঞ্জন হবে?

সংস্কৃতি অপসংস্কৃতির দোলাচলঃযাত্রাপালার যাত্রাভংগ

স্বাধিনতা পরবর্তি বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক পত্তনি তৈরি করে দিয়েছিল 'বিচিত্রা', বি, টি, ভি, মহিলা সমিতি এবং সেবা প্রকাশনি!বিচিত্রাতে সেই ছোটবেলা থেকে দেখতাম 'অপসংস্কৃতি' শব্দটা!বিচিত্রার  সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরি, আর বি, টি, ভি'র মুস্তফা মনোয়ারের নির্দেশনাতে যখন সবাই জহির রায়হানসহ অন্যদের ঘাটতি পুশিয়ে পরিচিত হচ্ছে হুমায়ুন আহমেদ, সেলিম আল দিন, ক্যামেলিয়া মুস্তাফা, সুবর্না মুস্তাফাদের সাথে, একই সময় খলনায়কের আঙ্গুলি ওচানো শুরু হ'লো যাত্রার দিকে, যাত্রার রানিদের দিকে!

যাত্রা দেখে ফাত্রা লোক, সেত ছিলই বাংলা বোলচালে শত বছর ধরেই!তাতে জোড়াসাকোর ঠাকুর বাড়িতে বা ঢাকার বনেদি বাড়িগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় যাত্রা প্যান্ডেলগুলোতে তেমন বিঘ্ন ঘটেনি।কিন্তু ঐ 'অপসংস্কৃতি'র সিলগালা, যাত্রা  ব্র্যান্ডটার বিবর্তন থামিয়ে দিল হঠাত!একই সাথে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন বলে যেটা শুরু হ'লো সেটাও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পুরো সমর্থন নিয়েও উল্লম্ফিত একটা  স্লোগান-ব্র্যান্ড হিশেবে ধুকে, ধুকে পরিচর্জার জন্য মুখ থুবড়ে পড়লো NGO বাতাবরনে!

ইস্কুল খুইলাছেরে মওলা, ইস্কুল খুইলাছে

ব্র্যান্ড বিবর্তনের যে কোন আলোচনায় হারানো যোগসুত্র হিশেবে যাত্রাপালা ধ্রুপদ দৃষ্টান্ত হিশেবে গন্য হতে পারে!এই হারানো যোগসুত্রেই নিহিত কেন বাংলাদেশের মিডিয়া এত শত মুখি হয়েও সারাতসার বিহিন এবং যতটুকু সারাতাসার আছে তার কেন যথাযোগ্য স্বিকৃতি দিতে পারে না!আর স্বিকৃতি যদিও বা দিল তখন কেন  তা বিষয়নিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলে!এক্ষেত্রে মনে পড়ে যাচ্ছে, 'এই দিন, দিন নয় আরো দিন আছে, এই দিনেরে নিতে হবে সেই দিনেরো কাছে...'

সেই দিনেরো কাছে যাবার আগে অবস্যই আমাদের মনে রাখা দরকার যে হ্যাপি আখন্দ, ফিরোজ় শাই, আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ'দের নিয়ে যে কিংবদন্তিতুল্য ব্যান্ড 'স্পন্দন শিল্পিগোষ্ঠি' বাংলদেশের মগ্ন চৈতন্যে হাজার বছরের একটা রুট ম্যাপ তৈরি করে দিয়েছিল তা আমরা কত তাড়াতাড়ি হারিয়ে ফেলেছি!আজকে ওয়ারি বটেশ্বর খননের সময় আমরা অনলাইনে 'স্পন্দনের' একটা গানও আর পাইনা!আমরা জানতেই পারিনা কেন ফিরোজ 'সাই' হয়েছিলেন!

অঞ্জু ঘোষ থেকে গিনেস বুকের মোমতাজ

মোমতাজ
বি, টি, ভির হিরামনের প্রডাকশান এসিস্ট্যান্ট ছিলেন তোজাম্মেল হক বকুল!'বেদের মেয়ে জোতস্না'র স্ক্রিপ্ট লিখে ধরনা দিতে দিতে কামিয়াব এই লোক ঠিকই পেয়ে গেলেন প্রযোজক!কথিত আছে যে বক্স অফিস ফেল মারবার ভয়ে মুল পরিচালক নিজের নাম না দিয়ে স্ক্রিপ্ট রাইটারের নাম পরিচালক হিশাবে দিয়েছিলেন!তার পর একের পর এক বাম্পার!কোলকাতার উত্তম, সুচিত্রা পরবর্তি চলচ্চিত্র শিল্প তখন ফেলের চেয়েও ফেল! মধ্যবিত্ত টেকো ভিক্টর ব্যানার্জিকে যাও নেয় তাতে মালিকদের হলের ভাড়াও পোষায় না।অঞ্জুসহ 'বেদের মেয়ে জোতস্না' রিমেক হ'লো ওখানে।কোলকাতাতেও বাম্পার!কিন্তু অপর্না সেনের চামুন্ডারা টনে টনে টঙ্কা বানানো অঞ্জু ঘোষ'কে না দিল সম্মান, না দিল স্বিকৃতি!কিন্তু কৌশল'টা ছাড়লনা! 

সেই 'হিরামন' কৌশল ধরে, ধরেই আজকের মোমতাজ ব্র্যান্ড!তার পাশে বিকট পরচুলা পরে দাত কেলাচ্ছে হুমায়ুন ফরিদি!এই ইন্ডাস্ট্রি টাকা বানাচ্ছে!কিন্তু যে এফ, ডি, সি এর পৃষ্ঠপোষক তার কর্নধার হচ্ছে আবার সেই ভিক্টর ব্যানার্জি, অপর্না গেলা স্নব সালাউদ্দিন জাকি!যে নেতৃত্ব দেয় আবার বনুয়েল দেখা, ফেলিনি মারানো 'বাংলাদেশ চলচ্চিত্র আন্দোলনের'!যে আন্দোলনের কথা উঠলেই আমার মনে পড়ে যায় ঢাকা ক্যন্টনমেন্টের গ্যারিসন সিনেমা হলের কথা; যেখানে সাইনবোর্ডে বড় বড় করে লেখাঃ লুঙ্গি পরিয়া প্রবেশ নিশেধ!অন্তত গ্রুপ থিয়েটারের লোকজন এধরনের সাইনবোর্ড তাদের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে এখনো টাঙ্গান নি!

এভাবেই  শুধু মধ্যবিত্ত শুধু না, তাদের অনুকরনে নিম্নবিত্তরাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে নৌকা বাইচ, লাঠি খেলা এসব থেকে!ক্রিকেটের ধক্কর, মক্কর, চক্করে যত বিনিয়োগ হয়, তার কিয়দংশও ব্যায় হয়না নৌকা বাইচের পেছনে!এখানে ক্রিকেট অনুরাগিরা যখন চাপানো ব্র্যান্ডগুলোতে অভ্যস্থ হবার অপরাধবোধি নস্টালজিয়াকে ভারসাম্যে আনতে 'সাব অল্টার্ন' জাতিয় শব্দ সম্ভারের আমদানি ঘটায়, তাও হয়ে পড়ে কর্পোরেট লিভার ব্রাদার্সের বিজ্ঞাপন!এই শব্দ সম্ভারগুলো আনা যাবেনা তা বলছিনা! কিন্তু এগুলো ঠিক মনিরা এমদাদ, অঞ্জু ঘোষ, মোমতাজ'কে ব্যাখ্যা করছে না! চাইলেও পারছে না!

ব্র্যান্ড বুঝতে 'সাবল্টার্ন' শুভঙ্করের ফাকি বই নয়

অনেক NGO কর্মি, মার্ক্সবাদের অনুসারি Subaltern শব্দটা ব্যাবহার করে!বুঝেই করে হয়ত!কিন্তু আমার ব্র্যান্ড প্রস্তাবনাতে তা একেবারেই দরকার নেই!তা সে ফুকো থেকে আসুক, আর চোমস্কি থেকে আসুক!অবস্য এরা এই শব্দের উদ্গাতাও নয়!কেন এই সাবল্টার্ন ব্রান্ড-মেনেজমেন্টের ক্ষেত্রে দরকারি নয় তা একটু দেখা যাকঃ

ল্যাটিন ব্যুতপত্তি অনুযায়ি subaltern হচ্ছে অধস্থন!ব্রিটিশ সেনাবাহিনিতে এই শব্দের ব্যাবহারও
প্রায়োগিক ভাবে  কাপ্তেনের নিচের সারির অধস্থন কমিশন অফিসারদের বোঝাতে ব্যাবহার করা হয়।হতে পারে যে ১৯৭৫এর বংগবন্ধু হত্যার পর থেকে অভ্যুথ্যান, পালটা অভ্যুথ্যানে সেনাবাহিনির বিভিন্ন পদবিধারি যে সৈনিকেরা জড়িত ছিল তাদের বোঝাতে এবং তাদের প্রতি সহানুভুতিশিল বেসামরিক রাজনিতিক তাত্বিকেরা ক্যাম্পাসগুলোতে এই শব্দটা ছড়িয়ে দেয়!

এখন মনিরা, অঞ্জু ঘোষ, মোমতাজ বিভিন্ন শ্রেনি থেকে আসলেও এরা শুরু থেকেই empowered!সাবল্টার্ন দৃষ্টিকোন থেকে এদের empowerment বিমুর্ত হয়ে পড়ে!এদেরকে স্বিকৃতি দেবার আর দরকারই পড়েনা!এখানেই কি মৌলবাদি NGO এবং বাম NGO দু'পক্ষ্যই এই সেই আন্দোলনের নামে যা করেছে, তা ব্যাক্তির অবদান'কে গৌন করতে, করতেই অনিবার্জভাবেই ব্যক্তির সাথে কর্পোরেটের দর কষাকষিকে দুর্বল করে ফেলছে না? মৌলবাদ এটা করছে বুঝে শুনে!আর অতি বামেরা করছে পানি ঘোলা করে যট্টুকু যা আদায় করা যায় তার স্বার্থ সামনে রেখে!

ব্যাক্তি ও  ব্র্যান্ড এগিয়ে গেছে!কিন্তু তত্ত্ব এগোয় নি!যাকে বলা হচ্ছে তত্ত্বের বিবর্তন, তা যে একের পর এক বিমুর্তের স্তর বদল, তাও হয়ত ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে!এখন Attitude Brandingএ যাবার আগে এই মনিরা, অঞ্জু, মোমতাজের সাথে তত্ত্বের বিমুর্ত বিবর্তনের দুরত্ত্বটা দেখার জন্য এদের বিপরিতে বসিয়ে দেয়া যাক কাদের সিদ্দিকি, আওরংগ এবং গোলাম ফারুক অভিকে!

মিথের বিকৃতি এবং ব্র্যান্ডের অবমুল্যায়ন

একজন বাউলের কাছে তার কেন্দ্র হচ্ছে গুরু!মু্রিদের কাছে পির!মাইজভন্ডার থেকে মহাস্থান গড়ের সুলতান শাহ বলখির মাজারে যাত্রা ফিরতি যাত্রার মুখে সহজিয়া বাউলদের দেখা হয়েছে সহজিয়া সুফিদের।সহজিয়া মরমিয়া ব্র্যান্ড'টাকে উতখাত না করেই শ্যামাসঙ্গিত জায়গা করে নিয়েছে সুফি দর্শনের ভজন সাধনে!ব্র্যান্ড এখানে বিভেদের চলক নয় বরং পথবন্ধন!

১৯৫২, ১৯৭১এর প্রতিরোধগুলো দিয়ে বাঙ্গালির মানষে যে পটভুমি তৈরি হয়েছে এবং ১৯৭৫ এ বংগবন্ধুকে হত্যা করবার পর যে বিভিন্নমুখি তত্ত্বের উপস্থাপনা তাতে মিথগুলো অবমুল্যায়িত হতে হতে এরকম পর্জায়ে এসেছে যে আমরা যোগসুত্রকে মনে করছি দেয়াল আর কুলাঙ্গারদের মনে করছি কিংবদন্তি!একটা বড় মিথ দাড়িয়ে থাকে অনেকগুলো ছোট ছোট মিথের ওপর ভর করে!রিলে রেসে যেমন পরের দৌড়বিদের কাছে হাতের খাটো ছড়ি পৌছে দেয় দৌড়বিদ ছুটতে, ছুটতেই; সাধকেরা তির্থে তির্থে সেরকম এ ওর কানে নতুন শব্দ, নতুন সুর তুলে দেয়!

প্রতিকের ছদ্মনামজারিঃ হাজার বছরের টেলিমেকাসঃ

ঢাকা বিউটি বোর্ডিং এ শামসুর রাহমানের ছবির পাশে চয়ন খায়রুল হাবিব


'রৌদ্র করোটি' পর্বের পর   কবি শামসুর রাহমান তার কাব্যকৃতিতে ৩০শিয় প্রভাব ঝেড়ে ফেলেছিলেন হেচকা টানে!'স্বাধিনতা তুমি' র লেখক বাংলা ভাষার বাংলাদেশি প্রমিতের পত্তনি ঘটানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রত্যেকটা বাক' কে করে তুলেছিলেন তার কবিতার আত্মিকৃত ব্র্যান্ড! প্রমিতের পত্তনি ঘটানো স্বত্তেও আয়ুবি স্বৈরতন্ত্রের পাকিস্তানি আমলে শামসুরকে গ্রিক পুরানের প্রচ্ছন্নতায় আড়াল করতে হয়েছিল
একটা জাতির প্রানভোমরা! 'আসাদের শার্ট' এর কবি স্যাম্পসন, টেলেমেকাসে তার ভাষাভাষি সম্প্রদায়ের কাছে জানিয়ে দেন, আগরতলা ষড়যনন্ত্র মামলাতে যাদের খলনায়ক হিশেবে দেখানো হচ্ছে তারাই আসলে নায়ক!'ইকারুসের আকাস' এর যে স্বপ্নচারিতা, তাসহ স্যাম্পসন, টেলিমেকাস কবিতাগুলো  যে বংগবন্ধু ব্র্যান্ডের স্বাগত সঙ্কেত তা শামসুর জানিয়ে গেছেন তার আত্মজিবনিতে!তবে পর্ব থেকে বিচিত্র পর্বান্তরে শামসুরের যে বিচরন  তার স্বচ্ছন্দতার মুল শর্ত কালিক বাস্তবতার নান্দনিক আত্তিকরন; প্রস্তুতি ছাড়া এই আত্তিকরনের অনুকরনের অবকাশ নেই; কারন ব্র্যান্ড কখনোই বিমুর্ত নয়!ব্র্যান্ড এক অর্থে সময়েরই ব্যাক্তিক অভিপ্রায়!

ব্র্যান্ডের সঙ্কেতসুত্র হেয়ালি নয়

মিথ, প্রতিক, ভাষার পরোক্ষতা ছাড়িয়ে ব্যাক্তি তখনই ব্র্যান্ড যখন তার মুল্যমান দাঁড়িয়ে যায়; বিভিন্ন বিষয়ের সংগ-নৈপুন্যে বা সংগ ব্যবচ্ছেদে এবং গ্রহনযোগ্যতার প্রসার বা সঙ্কোচনে যখন তার মুল্য বাড়ানো বা কমানো যায়!আগেই বলেছি বিবর্তনের সুত্রে মুল ব্র্যান্ডের বিকাশ ঘটতে পারে, ঘটতে পারে বিকৃতিও!যে 'জাতিয় কবিতা' পরিষদের অন্যতমো স্থপতি ছিলেন শামসুর রাহমান, নব্বইয়ের দশকে সেই মঞ্চেই দাড়িয়ে শামসুরের স্যাম্পসন কবিতার সুত্রে তাকে বলা হয় ইহুদি তোষনকারি!বিকৃতি এবং মিথ্যাচার ঘটিয়ে সংস্লিষ্ট অন্যান্য সমস্ত ব্র্যান্ডের অবমুল্যায়নের যে প্রয়াস নেয়া হয়েছিল সুনির্দিষ্ট একটা জাতিয় কবিতা পরিষদ সেমিনারে তার প্রতিবাদ করেছিলেন তাতক্ষনিকভাবে জাতিয় সাহিত্য প্রকাশনির মফিদুল হক!

বাংলা ভাষার, বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংএর চলমানতায় কায়েমি স্বার্থ যেমন বার বার অন্তরায় হয়েছে; সেরকম সেই কায়েমি স্বার্থকে নিজেদের  অবস্থানগত কারনে ধারন করেছে বাংলাদেশের আপাত বিরোধি রাজনৈতিক দলগুলো!এখানে ব্র্যান্ডিং হিশেবে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে প্রায় একটা অলিক শব্দ!আর যেসব শব্দ হবার কথা আধি দৈবিক এবং অলিক সেগুলো হয়ে গেছে বাস্তবিক!আর তা হয়েছে সেনাশ্রয়ি মৌলবাদি এবং কথিত মার্ক্সবাদিদের কল্যানেই!মনিরা এমদাদ, অঞ্জু ঘোষ, মোমতাজ যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের পড়া না পড়েই বিশ্বায়িত বেশুমার  ব্র্যান্ডিংযে নিজেদেরকে যোগ করে নিয়েছে; সেরকম সাধারন মানুষের সাধারন জ্ঞ্বান থেকেই কাদের সিদ্দিকি, আওরংগ, অভিরা নিজেদের অবমুল্যায়িত করে তুলে দিয়েছে বেচাকেনার হাটে!

আর এই সাধারন্যের হাটে আমরা জেনে গেছি যে যাদের subaltern বলে ভুজুং দেয়া হচ্ছিল তারা কেউ ডঃ কামাল হোসেন, রাশেদ খান মেননদের বিশ্বাস করে না!কিন্তু বিশ্বাসহিনতার শুন্যতায় ব্র্যান্ড কি ব্যাক্তি পর্জন্ত দাড়াতে পারে না!বরিশালে তেমন একটা আয়াস না দিয়েই সন্ত্রাসি অভি হারিয়ে দিয়েছিল মেনন'কে!

যারা কামাল, মেননদের চিনে ফেলেছিল, তারা তা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়েই! এই রিলে রেসের  সহজিয়ারা আবার কিন্তু গোয়ার গোবিন্দও নয়!সারা দুনিয়ার সহজ মানুষের মতই স্বস্তার'টা ছাড়বে না!আবার উদ্যগ নেয়াতেও থামছে না!আবার উদ্যগের ক্ষেত্রে এরা যা শুনল তাই বিশ্বাস করে বসে থাকলে মসিজিদের ইমামদেরই বার বার নির্বাচিত করতো! ইমামদের এরা নির্বাচিত করছে, কিন্তু বার বার নয়!কারন এরাও স্বস্তার জিবনের ভেতরেই ব্র্যান্ডের বদল চায়!সে ইন্দিরা এসে করে দিক আর টেলিনোর করুক!এবার  ব্র্যাক এবং গ্রামিনের আলাপে আসা যাক!

বিনিয়োগ এবং ব্র্যান্ড


অধ্যাপক ইউনুস, তার দফতরে

বাংলাদেশের যে সেবা শিল্পখাত তার বৃহদাংশ NGO এবং বেসরকারি খাত নিজেদের ভেতর ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে!সঙ্খাগুরু জনগন কোন না কোন ভাবে এই কর্মযজ্ঞ্বে যোগানদার হলেও তার মুনাফা থেকে বঞ্চিত।যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক ভারসাম্যের কথা বলে তারা চলক হিশাবে কেউ সেনাবাহিনিকে , কেউ NGOদের, কেউ ব্যাবসায়ি শ্রেনিকে গুরুত্ত্ব দেন।যারা জনগনের সাথে  যোগাযোগ রাখেন তারা আবার এই চলকগুলোর হয়েই প্রতিনিধিত্ব করেন!

সুদ  যাই নিক, টেলিনরকে যাই দিয়ে দিক; 'গ্রামিন' তার আয়ের একটা বিশাল অংশ বাংলাদেশে ব্যায় করছে!অধ্যাপক ইউনুস'কে বামেরা যেভাবেই দেখুক, জেনারেল মইনের সময় তাকে যেভাবেই আরোপ করা হোক, শেষতক মোদ্দায় দাড়াচ্ছে যে এ-ভদ্রলোক বাংলাদেশ ছেড়েও চলে যান নি, গোয়ারের মত ব্যার্থ রাজনিতির দলও ধরে রাখেন নি! যেটা পারেন ভালো করে, তাই করছেন!অর্থাৎ টাকা দিয়ে টাকা বানাচ্ছেন!আমি পারলে আমিও বানাতাম!এখানে কিন্তু আরেকটু কথা থেকেই যাচ্ছে!এই ভদ্রলোক শিবির করা লোকদেরও 'আলোকপ্রাপ্ত' বলে বেড়াচ্ছে না!অর্থাত নিজের  ব্র্যান্ডের দির্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের স্বার্থেই ব্র্যান্ড বিনাশি চলকগুলোকে তার চিন্নিত করতে হচ্ছে!আর এই চিন্নিত করনের জায়গাতেই চলে আসছে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যাপারটা!

একটি কুড়ির চারিটি পাতা

বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ভারত এবং পশ্চিম বঙ্গের সাথে সম্পর্কের ঐতিহাসিক দিকগুলোও দেখা দরকার!এখানে নিজেদের ব্র্যান্ডিংযের প্রতি জোর দেয়াটা যেমন জাতিয়তাবাদি মোড়কে করা ঠিক না, তেমনি পশ্চিম বঙ্গের প্রকাশনাসহ অন্যান্য সেবাসামগ্রির প্রতি নিস্পৃহতাও সাম্প্রদায়িকতা বলে গন্য হওয়া ঠিক নয়!ভারতের আসাম অঞ্চলের চা আসাম টি, শ্রিলঙ্কার চা সিলোন টি হিশেবে পরিচিত হলেও, পশ্চিম বঙ্গের দার্জিলিংইয়ের চা কিন্তু বেঙ্গল টি বলে পরিচিত নয়!

দার্জিলিংযের চা যেমন সেখানের স্থানিও নামেই পরিচিত, সেরকম সেখানকার স্থানিওরাও এই  ব্র্যান্ডিংইয়ের সুত্র ধরেই আরো স্বায়ত্বশাষন দাবি করছে!বাংলাদেশ এক্ষেত্রে সিলেট অঞ্চলের চা'কে বেংগল টি হিশেবে অনায়াসেই বাজার জাত করতে পারে!পন্যটা এরি মধ্যে বাজারে!শুধু  ব্র্যান্ডিংযের অপেক্ষা! নিজেদের ব্র্যান্ডিংগুলোকে সংহত করবার স্বার্থেই বাংলাদেশের খেয়াল করা উচিত কেন পশ্চিম বঙ্গের আমলাতন্ত্রের সাথে দার্জিলিঙ্গের স্থানিও গুর্খাদের সম্পর্ক ক্রমাবনতিশিল!এই শিক্ষা থেকেই বাংলাদেশের দরকার চাকমাদের, মনিপুরিদের, গারোদের, বিহারিদের নিজস্ব ব্র্যান্ড বিকাশে উতসাহিত করা!

ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে বানিজ্যিক ঘাটতি, সেটা পশ্চিম বঙ্গকে কোন ছাড় দিয়ে মেটানো যাবে না!বলিউডকে না কি পশ্চিম বঙ্গকে ছাড় দেয়া দরকার, সেটা দেখলে বলিউড'কে ছাড় দেয়াটাই সঙ্গত!তবে এর সাথে যদি এটা আদায় করা যায় ভারতের বাজারে বাংলাদেশের ছেলে, মেয়েরা যেতে পারে তাহলে তোফা।প্রতি ছবির বদলে ১০ টা বৃত্তি! মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশ, নেপাল'কে বেড়া দিয়ে ঘেরার সবচেয়ে জোরালো লবি পশ্চিম বংগ থেকে আসছে!পশ্চিম বঙ্গের ওরা সদিচ্ছা দেখাক তারপর আনন্দবাজার পড়া যাবে।ঐ সদিচ্ছার আগে আমাদের দরকার প্রবল attitude branding, attitude marketing!

এক হিশেবে বিস্বব্যাঙ্ক, EECর মতো পালোয়ানদের বাংলাদেশের সাথে লেন দেন না করলেও কিচ্ছু যায় আসবে না!এই পক্ষ্যগুলো চিন, ভারতের সাথে যোগাযোগ সেরেই বার্মার থেকে যা তেল নেবার তা সবার সামনে দিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং যাচ্ছেও!তাহলে বাংলাদেশের সাথে এরা যোগাযোগ রাখছে কেন?ভারত, চিন বড় অবস্যই; আবার এ-শতকের ইতিবাচক প্রবৃধ্বির চলকে যে ১১ টা অঞ্চলে 'আসিতেছে' তকমা ঝোলানো হয়েছে তাতে বাংলাদেশও আছে!ঐ প্রবৃদ্ধির লাভের গুড় খেতে সব ইদুরের দাতই কাটুস কুটুস করছে!

এখানে সব পক্ষ্যকেই benifit of doubt  দেয়াটাই কি সঙ্গত নয়? যে রকমই পিং পং রাজনিতি এক সময় হয়েছে; যেভাবেই উপনিবেশিক আমলকে বিভিন্ন তাত্বিক সব নস্টের গোড়া হিশাবে দেখিয়ে থাকুক; পরিস্থিতি বার্লিনের দেয়াল ভাঙ্গার পর বদলেছে অনেক দ্রুত; বাজারে এসেছে ইয়াহু, aol, google!বাজার বাড়তে, বাড়তেই খোদ EEC 'র ভেতর পুরো ফেল মেরে বসে আছে গ্রিস!এই ফেল মারাটা কিন্তু জুজুর ভয় নয়!
সদিচ্ছার সাথে attitude থাকলেই এই বাস্তবিক জুজুটাকে এড়ানো যেতে পারে!এখানে attitudeটাই ব্র্যান্ডিং!

এই attitude থেকেই যে coammand তৈরি হয় তার কারনেই শেখ হাসিনাকে এত চক্করে ফেলেও কমান্ডার মইন গদ্দিনশিন হতে পারে নি!এই attitude branding এর দাবিদার খালেদা জিয়াও।কিন্তু তাও আবার বিবর্তিত এবং আরোপিত ব্র্যান্ডিংযের অবমুল্যায়নের ফলশ্রুতি!রিয়েল ব্র্যান্ডিং নয়!

শব্দদুষন এড়াতে নতুন ব্র্যান্ডের শব্দকোষঃ

মনে আছে কি সেই ঘর পালানো বাহাদুরদের...

attitude brandingএর বাংলা হচ্ছে আলাউদ্দিন খান!

attitude marketingএর বাংলা হচ্ছে অতিষ দিপঙ্কর!

আর attitude এর বাংলা গোয়ার্তুমি না কি ওকি গাড়িয়াল ভাই?

ব্র্যান্ডের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে চলে আসে সংরক্ষন, বিবর্তন!নাবালকের আবদার, সাবালকের দাবি দু'টাকেই যোগানের, চাহিদার ভারসাম্যে আনার আগে স্বস্তিকা ওলটানো সেই বিদ্ধংশি ব্র্যান্ডটার কথা মনে রাখা ঃ ধরে নিতে হবে উলটো করে দিলেই যদি স্বস্তিকা অস্বস্তিকর হয়ে পড়ে; ভাবডা উপস্থাপনাতেও তা মানবিক উচাটনগুলোর উপশপম ঘটাবেনা! উপশমের স্মরন হ'লো আমরা যে অস্টশিলা ব্র্যান্ডটা চোখের আড়ালে নিয়ে যাই; চোখের মনিতে তা ধারন এবং লালন!সনাতনের হরন করে রামকিঙ্কর!অন্তর ব্র্যান্ডের ব্যান্ডপার্টি ঝমঝমায় বাজে সুলতানের ক্যানভাসে!

আমাদের হাতে মনিরা, অঞ্জু ঘোষ, মোমতাজ আছে!ইউনুস সাহেব টাকা বানাতে জানেন!নির্মলেন্দু গু্ণের সেই মাঠে পাতা চাদরই আমাদের চাদোয়া! কোন দেয়াল আমাদের আটকাতে পারবে না!


চয়ন খায়রুল হাবিব
১৩/০৫/২০১০
ব্রিটানি

ছবি,
বিউটি বোর্ডিং, মোমতাজ, অধ্যাপক ইউনুস, সাদা কালো ছবি তুলেছে নাসির আলি মামুন
অন্যান্য ছবি, গুগোল