Wednesday 21 April 2010

ভাষাচিন্তাঃ পোকায় কাটা কয়েকটা দাত ফেলে দিলেই দুখিনি বর্নমালার দাত ব্যাথা সেরে যাবেঃ

*সম্প্রতি অভ্র ইউনিকোড ফন্টের ডেভলাপার এবং চর্চাকারিদের  সাথে,  বিজয়-পন্য-সামগ্রির যে বিরোধ তাতে সঙ্গত কারনেই আমার অভ্র দলের দিকে পক্ষ্যপাত করা দরকার।আমি অভ্র ব্যবহার করি। আনফ্রেন্ডলি সফটওয়্যার হওয়াতে বিজয়, সোলায়মানি এসব কখনোই ব্যবহার করা হয়ে ওঠেনি।

সখ্যতার সহজিয়ায় অভ্র ইউনিকোড, বিজয়-পন্য-সামগ্রি থেকে অনেক এগিয়ে থাকলেও; ভাষার পেছনে ভাব প্রকাশ'কে অর্গলমুক্ত করবার এবং আবার ভাষাকেই শ্রেনি শাষনের মুল হাতিয়ারে পরিনত করবার যে-কায়েমি প্রয়াস  সেই দার্শনিক বিরোধে; অভ্র এবং বিজয়ের দ্বন্দকে আমার শুধু skill বা প্রায়োগিক মনে হয়েছে; মনে হয়েছে সামগ্রিকভাবে  যে-জিঞ্জিরা কালচার চলছে তারই বিস্তার; এর পেছনে সনাতনের অচলায়তন ভাংবার কোন ইশারা এখনো পাই নি!

আমি লম্বা ঈকার, লম্বা ঊকার, চাদবিন্দু ব্যাবহার করতে চাই না।অভ্রে 'দাঁড়িয়ে' লিখতে গিয়ে, আমি নিজের ভঙ্গিতে দাড়িয়ে পড়ি এখনো;  জীবন লিখতে গিয়ে কবিতা-বাসরে শুরু করি নিজের ভঙ্গিতে জিবনযাপন! কেন জানি মনে হতে থাকে অভ্রের চিন্তাপধ্বতি প্রাতিষ্ঠানিক নিক্তি পাল্লার সেদিকেই ঝুকে পড়া যেদিকে বাংলাভাষাভাষি সমাজ ক্রমশই তলিয়ে যাচ্ছে আরো আরো সংস্কারের জগদ্দল আড়ালে!

ইংরেজি ভাষাতে যেরকম বিট প্রজন্মের গ্রেগরি কর্সো; আজকের বেঞ্জামিন জেফনায়ার মত  কবিরা প্রাতিষ্ঠানিক সাহিত্য চর্চার বাইরে নিজেদের লালনের পরেও মুলধারাতে আদৃত হয়েছেন মেজর কবি হিশেবে পোয়েটিক লাইসেন্সের গুনে; সেই কাব্যিক সুষমার পত্তনি আমি বাংলা সফটয়্যার ডেভলপারদের মধ্যে দেখি না।বাংলাভাষা ঘিরে যে-প্রানের মেলা, সেখানে ফন্টের পর ফন্ট এলেও স্পেল চেকারের অভাবে প্রুফ রিডারে্রা হয়ে গেছে সে-প্রানস্পন্দনের সম্পাদক, প্রকাশক, ব্যাবস্থাপক!এই প্রুফ রিডার শ্রেনির ছড়ি ঘোরানোকেই আমরা মোটাদাগে মেনে নিচ্ছি পাষবিকতা ও পেলবতার সিমা-সরহদ্দ বলে!

কবিতার অন্তস্থ ভাবনাকে যে নির্মেদ, নিরলঙ্কার, সংস্কারবিহিনতার জায়গা থেকে দেখি; স্পেলচেকারের শুন্যতার সুজোগে উড়ে এসে জুড়ে বসা  অর্থনিতিবিদ থেকে অভিধান রচনাকারি বনে যাওয়া কলিম খানের অতি উতসাহি অনুসারিরা যখন আমার সেই coreকে আক্রমনের লক্ষ্য বানিয়ে ফেলে; তখন বুঝি যে  লম্বা ঈকার, লম্বা ঊকার, চাদ বিন্দুর বিরুধ্বে আমার সংগ্রাম'টা অযথার্থ নয়।৮ বছর বয়সিদের গড়পরতা মেধার সমান মেধাবি একটা স্পেলচেকারই হাজারো কলিমের মামদোবাজি বন্ধের জন্য যথেস্টবাই ডিফল্ট খান সেনানিদের ছড়ি ঘোরানো,   আমার বানান ভাবনাকে একেবারেই বিড়ম্বিত করে নাঃ

কারন, আমার স্বরবর্ন ৮টা!ব্যাঞ্জনবর্নও একই অনুপাতে কম!

আমার লেখ্য বাংলা'কে আমি বলি লজবাং বা লজিকাল বাংলা!তবে দন্ত, মুর্ধা, তালব্যের উচ্চারনে আমি আপনাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম! চ্যালেঞ্জ করলাম প, ফ এর উচ্চারন নিয়েও! শোনা যাক কে কত নাকামি করতে পারে! আমি নাকামি পারিনা।নাকামি লিখিও না!চ্যালেঞ্জ নেবার আগে একটু ভাববেন! গোলাম মুর্শিদও এখনো shepherdকে শেপহার্ড না লিখে, লিখছেন শেফার্ড!একজন স্টেশান'কে বানিয়ে ফেলেছেন 'স্টেশণ', আর ডিক্রি জারি করছেন যে বিদেশি সব শব্দের বানানে 'ন' এর বদলে 'ণ' বসাতে হবে!নাক বা নরুন যে বিদেশি শব্দ না, তা আমরা নিশ্চিত হবো কিভাবে! একাডেমি না আকাদমি?ফৃ না ফ্রি?ওপরচালাকি না কি উপরচালাকি?

সবাই খেয়ে বাচুক!বাজে ঢেকুরের গন্ধ ভালো পান, জর্দাতে ঢাকা দিলেও তাতে পেটের ব্যামো সারে কি?বানান নিয়ে নানা পরামর্শগুলোর যেটুকু বুঝেছি, নন্দনের বিচ্চারে তা আমার কাছে গ্রহনযোগ্যও মনে হয়নি, দরকারিও বোধ হয় নি!তবে মনে হয় এ-নিয়ে অনেকের বানান-বিশ্বাস-কেন্দ্রিক-ধর্মবোধ আছে!থাকতেই পারে।তবে একই ধর্মের ভেতর য্যামন ভিন্ন ধরনের চর্চা থাকতে পারে, বাংলা ব্যাবহারকারিদের পখ্যে সেরকম কি বাংলার চর্চাতেও বিচিত্রতা মেনে নেয়া সম্ভব?

কে এক বরেন্য রাস্ট্রনেতা বলেছিলঃ In victory magnanimity:

চাকমা, গারো, সাওতাল, বিহারিদের কি বাংলাভাষাভাষি আমলাতন্রের ভাগিদার হতে বাংগালির চেয়েও ভালো বাংলা শিখতে হবে?৫২'র ভাষা আন্দোলনের একটা দিক য্যামন মাতৃভাষার স্বিকৃতি, তেমনি রাস্ট্রের চাপানো সিধ্বান্তের বিরোধিতা।ভাষা আন্দোলনের আধা শতাব্দি পর বিদেশি শব্দ খুজে বের করা, অনলাইনে 'বানান পাঠশালা' খোলা জয়ের গৌরবের বদলে, জয়-মদমত্ত- হিনমন্যতার পরিচায়ক।

যেখানে, বাংলাভাষি জনগোষ্ঠির চেয়ে অনেক, অনেক কম সংখ্যার এবং একটাও নোবেল পুরস্কার না পাওয়া ভাষাগুলোর প্রচুর 'স্পেলচেকার' সফটওয়্যার আছে, সেখানে দু, দুটো একাডেমি থাকা স্বত্ত্বেও কোনরকম ডাউনলোডেবল স্পেলচেকার না থাকা ঘড়ির কাটাকে ভামিয়ান ধ্বংশের জিরো আওয়ারে ফেরানোর সামিল।দ্রস্টব্য যে ব্রিটেনে বাচ্চাদের এখন আর বানানের ওপর মার্কিং করা হয়না।যা স্পেলচেকা্রের বাইনারি সিস্টেম করে দিচ্ছে, তা নিয়ে বাচ্চাদের প্রাথমিক মেধার অপচয় করতেও ব্রিটেন রাজি নয়।

প্রাইভেট শিক্ষকের কাধে ভর দিয়ে , ভালো 'বানান' শিখে-পড়ে, উচ্চবিত্তের বা মধ্যবিত্তের ছানাপোনারা যেভাবে ধেই ধেই করে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল এবং তার ফলস্রুতিতে খমতাকাঠামোতে ওপরের সিড়িতে চলে যেতে পারে, শ্রমজিবি সাধারনের পখ্যে তা সম্ভব নয়।উচ্চারন ও বানান-বিকারের সিমা-সরহদ্দ ঘটিয়ে খমতাকাঠামোতে; বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সঙ্গিতিনিকেতনে, চারুকলা ভবনে নন্দন উপভোগের অধিকারে যে শিব্যলেথ ঘটানো হচ্ছে তাও ৫২'র উত্তরাধিকার নয়।

ভাষাকে কায়েমি স্বার্থে ব্যাবহারের প্রবনতাই য্যামন একদিকে সাধারনের সাথে এনার্কিস্ট লেখক সাবদার সিদ্দিকি, মুস্তফা আনোয়ারদের পরিচয় করিয়ে দেয় না; সেই একই প্রবনতা থেকেই আবার ফানডামেন্টালিস্ট শিবিরগুলো এই এনার্কিস্ট লেখকদের হাইজ্যাক করে, যাতে করে মনমতো অপব্যাখ্যা করা যায়!একই কারনে ডগমাটিক রাস্ট্রকাঠামোগুলো এবং মৌলবাদি প্রতিষ্ঠানগুলো লোক সংস্কৃতির ব্যাপারেও হয়ে ওঠে অতি উতসাহি।সোভিয়েতের ইতিহাস দেখা যাক; পাস্তেরনাক'কে বলছে বুরজোয়া, সোলঝেনিতসিন'কে পাঠাচ্ছে গুলাগে, প্রচার করছে রুপকথা, উপকথা!কিন্তু এসব যে শুভংকরের ফাকি তা কিন্ত সোভিয়েতের শাষনাধিন প্রজাতন্ত্রগুলো বুঝে ফেলেছিল।ঐ প্রজাতন্ত্রগুলো চাপানো রুশ ভাষাও কখনো মেনে নেয় নাই।

বাংলা ভাষাতে মুখের বুলি আর লেখার রুপ, বিরুপের সমকালিন বিবর্তনগুলো দেখা যাক! ব্র্যাকেটের পোকায় কাটা লম্বা ঈকার, লম্বা ঊকার, ণ' এর বিকার না থাকলেও নিচে লেখা সত্যগুলোর হেরফের হত'নাঃ

ক. বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষ(ণ)… আঞ্চলিক, কথ্য, শুদ্ধ, অশুদ্ধ তর্কের উর্ধ্বে মিথে পরি(ণ)ত হয়।

খ. র(বী))ন্দ্রনাথ কি কোলকাতার ভাষায় লিখতেন? সন্দেহা(তী)ভাবে না। অন্যান্য কোলকাতাবাসির মত ঠাকুরবাড়ির লোকদেরও দন্ত্য স, তালব্য শ, মূর্ধন্য ষ উচ্চার(ণে) সমস্যা ছিল। কবিগুরুকেও নিজের সাহিত্য ভাষাকে কথ্যভাষার অকথ্য উচ্চারন(ণ) রিতি থেকে সরিয়ে অন্য আরেকটি মান তৈরি করতে হয়েছিল। মাইকেলও কোলকাতার ভাষায় না লিখে মিশনারি বাংলায় মহাকাব্য লিখতে ব্র(তী) হন। তবে র(বী)ন্দ্রভাষাই মানভাষা হিশেবে চালু হয়ে যায়।

গ. মুজতবা আ(লী) সিলেটের ভাষায় বা (জী)বনানন্দ বরিশালের ভাষায় লিখলে ওদের সাহিত্যের (কী)
পরি(ণ)তি হতো বলা মুশকিল।

ঘ. ২০০৭-এর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় এক বন্ধুর বাসায় ঢাকা ও কোলকাতার কজন কবির সাথে পরিচয় হয়েছিল। বেশ ফাটাফাটি হাসাহাসির ভেতর কোলকাতার কবিদের নিজেদের কবিতার স, শ, ষ-গুলো উচ্চার(ণ) করতে বললে তিনজনই ফেল মারলেন।

ঙ. গোলাম মুরশিদ আক্ষেপ করছেন যে কোলকাতা কেন্দ্রিক স্ট্যান্ডার্ড বাংলা ও ঢাকা কেন্দ্রিক স্ট্যান্ডার্ড বাংলার দূরত্ব তৈরি হলে আমরা ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হব। যে কেন্দ্রিকতা কখনো তৈরি হয়নি তাকে নিয়ে নস্টালজিয়া অর্থ(হী)ন। আরেকটি নতুন কেন্দ্রিকতা হবে ওয়েব-কেন্দ্রিকতা।

চ. কিশোরগঞ্জ থেকে আসা (নী)রদ চৌধু(রী) থেকে আজকের ঢাকায় বসবাসরত কিশোরগঞ্জি সাহিত্যের যে বিবর্তন হয়েছে তা নিয়ে মজার লেখা হতে পারে।

শেষমেষ,আমাদের আগে বহু ভাষাই শুদ্ধতার যোয়ালে ধ্বংশ হয়েছে!শাষকের প্রবল সমর্থনেও সংস্কৃত, ল্যাটিন বা উর্দু টিকে নাই!ধন্যবাদ।


চয়ন খায়রুল হাবিব
৯/০৩/২০১০
ব্রিটানি না কি বৃটানী!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

ভারতিঃ বানান, ভ্রমন এবং প্রেম সংক্রান্ত দির্ঘ কবিতা

লেখাটা নিয়ে "মুক্তমনা" ব্লগ এডমিনের পাঠ-প্রতিক্রিয়া ও অন্যন্য সদস্যদের মন্তব্য পড়তে পাবেন এখানে ক্লিকালে!