Monday 7 November 2022

নাগালিঙ্গম অনুভূতিমালা

এখানে জংগল ছিলো, অনেক জীবজন্তু ছিলো। 
বড়রা ছোটদের খেতো।ছোটোরা বড়দের ভয় পেতো। 
ভয়-তরাশে জংগল কেটে আবাদ হলো।
জঙ্গিলিদের মুখোশ নাচ কৃষি-খামার-ল্যান্ডস্কেপে হারালো। 
একের পর এক শিল্প বিপ্লবে
আলোর সাথে ছায়ার, সুন্দরের সাথে নন্দনের সম্পর্ক বদলালো।
জংগলের নাগালিঙ্গম নগর স্থাপত্যে ভ্রান্তিবিলাস ছড়ালো
মুখোশ ঢাকা ঘাসের সন্ত্রাসে, মুখের আহ্লাদে, মননের আর্তনাদে। 

ফিকা রঙের কুহেলিকা থেকে 
রংধনুর সাত রঙে হাজারো লাল, কালো পিপীলিকা
বাতাসে ভাসা আলোর রেখার ওপর ধূলিকণার বর্ণালি, 
কে তুই হাসিলি, কে তুই কাঁদিলি পাহাড়ে গড়ানো ঝর্নায়।

নাগালিঙ্গম ফলের পশরায় হস্তি ও হস্তিনীদের সঙ্গম মত্ততায়
হাতি ও পিপীলিকা উভয়ে নাগালিঙ্গম ফল খেতে  খুব ভালোবাসে!
সেন নদী ধরে সার্কাসি মালসামানার জাহাজ চড়ে
হাতির পাল শুঁড় উঁচায়ে বিহ্বল নটরডেম গির্জায়।

সে গির্জার দরজায় স্টেইনগ্লাস নক্সার দিকে তাকায়
হাতি, হাতিনি ও তাদের শিশুরা ভাবে, 
আমরা তো কোনো নদীর নাম জানতাম না। 
কর্ণফুলী নদী তীরের হাতি যে কিভাবে সেন পাড়ে এলো!

পুরো গির্জাটাকে ওদের কাছে নাগালিঙ্গম গাছ মনে হচ্ছিলো।
অবশেষে আগুন লেগে যখন গির্জাটি পুড়ে ছাই, 
রঙ্গিন গলন্ত কাচগুলো নাগালিঙ্গম পেপারওয়েট আদলে
আশেপাশের রাস্তায় ইতস্তত ছড়ালো।

আগোছালো বেহদ্দ বেয়াড়া এক ছন্নছাড়া
অনেক দিন ধরে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে
ভাবছিলো, ভিক্টর হুগোমত কালো-রোমান্টিসিজমে 
ধরে রাখবে সেনের বুকে নটরডেমের শীতকালীন ছায়া।

ভাষা জানলে বুঝতো কাছের কারি-হাউসে বাজছিলো
হেমন্ত মুখার্জির গাওয়া সিদ্ধার্থ ছবির বাংলা গান, 
যার আবহে সিমি গারেওয়ালের নাভিতে 
পথক্লান্ত গৌতম বেশি শশী কাপুরের ঠোট ছোঁয়া।

বোধি-বৃক্ষতলে একের পর এক নাভি ঝরে।
নাভিগুলো নাগালিঙ্গমের লালাভ ফণা তুলে
মন ভুলে ছড়ায় বলধা বাগানে, রমনায়, শেরেবাংলা নগরে।
হাতিদের, পিপীলিকাদের সুশৃঙ্খল কিন্তু হুমকিতে পড়া সংসারে।

প্রাচীন দেবদূত দেবদূতি নাগা ও নাগিনী।
শেকড়ের শঙ্খচূড়ায় বাজায় নাগালিঙ্গম রাগিণী।
সেই ফুল ছোঁয়ামাত্র পিপড়া ও পিপড়ি বদলায় বর্ষার বৃষ্টিধোয়া মাদলে।
শ্রীমঙ্গলের হাতির পাল যুগলবন্দী বেহাগের সুবাসিত যৌনতায় দোলে।

একবার ফেসবুকে পাপিয়া বন্ধু একটা ছবি দিলো, 
নাগালিঙ্গম ম্যাচিং শাড়ি পরে নাগালিঙ্গম কুড়াচ্ছে 
ঢাকার চারুকলার উঠানে।ছবিটা কভার হলো, 
জুলেখা সিরাপ মেটাভার্স তীর্থঙ্কর গ্রুপে!

দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর শ্রমণ মূর্তিদের মাথার ওপর দ্যাখো, 
জৈন মন্দিরে হাজার বছর আগে শুরু হয়েছিল প্রকৃত নাগালিঙ্গম মন্থন।
না দেবতা, না মানুষ, নাগরিক ও নাগা য্যামন না ঘরকা, না ঘাটকা।
কুম্ভমেলা আসলেই ভাবে প্রয়াগ তাদের ইনবক্স আর কারো নাই অধিকার।

এই আধা দেবদেবী, আধা মানুষ, মানুষী স্বরূপে 
পরিচিত কবিমুখগুলো ভাবি : রিফাতের ছেলের নাম মৌলিক, 
মেয়ের নাম তিস্তা, কাজলের মেয়ের নাম বনতুলসী।
সংসার থেকে দূরে, ঘোরতর সংসারে অমিত ছিলো নিসন্তান। 

অর্ক'র মা সাথীর কানের পাশে দোলা দক্ষিণের নাগালিঙ্গম
তুলে দিলাম এলিস ও মাতিস-জ্যোতির উত্তুরে চ্যানেল আবহাওয়ায়।
ভাবতে অবাক লাগে সারা বাংলাদেশে মাত্র ৫০টা নাগালিঙ্গম গাছ!
শুধু কি শওকত আলী জানে 'প্রদোষে প্রাকৃতজন' হারালো কোথায়?
বাবলীর অটিস্টিক স্কুলের পাঠাগার নক্সার সময়, 
বিদ্যার্থী শিশুদের পা'গুলো কি ছিলো অর্ধেক মাটিতে, অর্ধেক পাতালে?
আমিন, রেজা, জেবা, প্রিন্সের প্রচ্ছদ, পোস্টারের শেকড়ে ও ফুলে,
নগ্ন মেঘের অবয়বে বসতি গাড়া সন্যাসব্রত যাযাবর মেঘদলে?  

সুন্দরে আরাম থাকে।
সেন্সরে সুন্দর নাই।
ব্রক্ষপুত্র থেকে বুড়িগঙ্গায় 
নাগালিঙ্গম ভেসে যায়
চয়নেস্ক-গল্প-কথকতায়। 


চয়ন খায়রুল হাবিব
৭/১১/২২
ব্রিটানি, ফ্রান্স


Photo : Photoshop of Shahnaz Pervin's portrait.


   


/