Wednesday 27 February 2019

পাঠদারিদ্র, ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক দর্পন।

প্রকাশক, জাগৃতি।২০১৯ একুশে বইমেলাতে প্রকাশ।প্রাপ্তিস্থান, জাগৃতি/দিপনপুর, এলিফ্যান্ট রোড
মঞ্চ, টেলি নাটকের শিল্পি ও কর্মিদের পাঠদারিদ্র দুক্ষজনক।অভিনয়ের ডাইমেনশান না বাড়ার কারন এ পাঠদারিদ্র।যট্টুকু পড়ে তাও হুমায়ুন আহমেদ ও প্রাথমিক সাউফাইতে সিমিত।অবস্য এরা বৃহত্তরো সমাজেরই অংশ, যার নিজের ডাইমেনশান ফ্ল্যাট, ফার্নিচার, জায়নামাজ, মিলাদ, মৌজ, মাস্তি, লে হালুয়া, ছ্যাবলামি, ইতরামি, রক্তবমি, কফ সিরাপে  সিমিত।সিমিত মানুষ সিমিত দর্পনই দেবে, দর্পন ভাংতে পারবে না।

মেট্রো লাইনের খোড়াখোড়ির পাশাপাশি মননের খোড়াখোড়িটাও জরুরি।মেট্রো লাইন এলো।সে লাইনে চড়ে কোথায় যাবো?বিপনিবিতানগুলোতে তখন কি এখনকার মতই বইয়ের দোকান আরো কমে যাবে?যেরকম হয়েছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড নামের হাসপাতাল রাষ্ট্রগুলোতে!বইপত্র বলতে কি আমরা শুধু পাশের বই, ধর্মের বই, নেতার ভাষনের বই বুঝবো?যে পথ ধরে  ইমাম বোখারি আকা মোহাজাতকের কোয়ান্টাম কোরান ও আবদুল্লাহ আবু সাইয়িদের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র সমার্থক হয়ে গেছে!

যারা অনেক, অনেক বইপত্র কিনতে পারে, পড়েও হয়তো, ঐশ্বর্যবান ও চোখ ধাধানো স্টাডিও বানায়, এটা অবস্যই ভালো।কাপড়, চোপড়ের দামি আলমারি থাকলে, বই পত্রের দামি তাক থাকবে না কেনো?বইয়ের তাক ব্যাপারটা আমাদের শহর, গ্রামে মধ্যবিত্তের সাংসারিক অনুষংগে রুপান্তরিত হয়েছিলো।প্রাইভেটাইজেশানের গলাকাটা হুড়াহুড়িতে সে অগ্রাধিকার বদলে গেছে।

অবস্য অনেক জমিদার স্টাডিতে পড়াশোনা না করে মদ, হুকা, বাইজিতে ব্যাস্ত থাকতো।এখনকার নয়া টাকার লোকজন মিলাদে, মদে, মাংসে সেই আগের জমিদারের মতোই ব্যায় করে, মননের পরিশিলনে সে ব্যায়টুকু করে না।আর মিলাদের মৌলবিকে যত দিতে রাজি, মননের কারিগরকে তত দিতে রাজি না।সাহিত্যের, শিল্পের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রিরাই আর তেমন বইপত্র কেনে না।অথচ এতশত গেজেট, অ্যাপ্সের পরেও ফ্রান্স, জার্মানি, পাশের জাপানে সুপার ও হাইপার মার্কেটে  পুজাতে, পার্বনে সাজসজ্জ্যা, প্রসাধনি, পার্ফিউম, ওয়াইনের পাশে সমান তালে পাল্লা দিচ্ছে বইয়ের পাহাড়।সে পাহাড় কেটে মননের মার্কেটে এগিয়ে যাচ্ছে সেসব দেশের ছেলেমেয়েরা।আমাদের মননের বিকাশ থামিয়ে দিয়েছে মৌলবাদের চাপানো তর্ক।এ তর্ক আমাদের মিমাংশিত বাংগালি পরিচয়কেও সংকটাপন্ন করে তুলেছে।

এসবের ভেতর মারিয়া একজন চারুকলার ছাত্রি এবং ধার করে হলেও নতুন বই কেনে, ঢাকাতে ব্যায়বহুল আবাসের সংস্থানের পর।মারিয়ার জন্য বই কেনাটা শুধু শখ নয়, এটা ওর দরকারি খোরাক।এই খোরাকের পরম্পরা তৈরি হয়েছে হাসন, লালন, জোড়াসাকো, জয়নুল, কামরুল, শামসুর রাহমান, জাহানারা ইমাম, তসলিমা নাসরিনের পথ ধরে।এ পথ ধরেই এসেছে অভিজিত, দিপন, রাজিবেরা।মারিয়া জানে পাঠ ও মননের ব্যাপারটা চোখ ধাধানোর জন্য নয়, এটা ধারনের ও বিকাশের পথে প্রথম প্রতিরোধ।

বইয়ের দাম আসলেও বেশি।পুরাটাই পাচ্ছে প্রকাশকেরা।লেখকদের থেকেই তা আদায় হচ্ছে।মৌসুমি লেখকদের চাপে প্রকাশকেরা অভিজ্ঞ লেখকদের বইকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না।তার ওপর আছে রিভিউকারদের, সাহিত্য সম্পাদকদের, সাহিত্যিকদের গোষ্ঠিবদ্ধ ছোট, ছোট পলিটিক্স।কথিত মুলধারার অসুস্থ, অসৎ পলিটিক্সকে  এসব ছোট পলিটিক্সের বিজাধার হিসেবে ধরলে, অপক্ষমতায়নের শির্শ দৃষ্টান্ত হিসেবে পাই জেনারেল এরশাদ জাতিয় লোকদের।এই এরশাদ এ দেশের ক্ষমতায়নে আমৃত্যু কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।ইনি প্রচুর পড়াশোনা করেছেন, জনগনের অর্থায়নে লেখকদের ভেতর বিভক্তি এনে দিয়েছেন, আটরশি জাতিয় বুজরকিকে নিয়ে এসেছেন সামাজিক পরিশিলনের কেন্দ্রে।একজন ছাত্রি মারিয়া যতবার একটি বই কেনে, ততবার সে একজন এরশাদ ও তার ক্ষমতায়নি গোষ্ঠির নিল নক্সাজাত আটরশি ও হেফাজতকে প্রতিরোধ করে।

আট বছর ধরে জুলেখা ট্রিলজি শেষ করেছি।চন্দ্রাবতি, ক্ষনা, কল্পনা চাকমা কোথায় যেতে চেয়েছিলো, কোথায় যেতে পারে তা্দের স্বপ্নের সাইকাডেলিয়াতে ভর করে, তা বলেছি স্বপ্নের ভাষাতে।আপনাদের বাস্তবতাকে, আমার বাস্তবতাকে ঝাকুনি দিতে।

ঝাকুনির পরের নতুন সকালে সুপ্রভাত।

চয়ন খায়রুল হাবিব
২৭/২/২০১৯
বনানি, ঢাকা