Friday 28 December 2018

নির্বাচনি নিউ ইয়ার্স ইভ ও ট্যাবুগুলো

''ঝুরঝুর ঘুঙ্গুর পতনের শব্দে
সিকি আধুলি খুচরার ব্যাক্তিগত বিজ্ঞাপন
নাগরিক নিওনে ঝলশানো নির্বাচনী দাবাগ্নি ছেড়ে
হাত পা মুখ থুবড়ে ঝাকঝাক ৃহহারাদের দিগ্বিদিক
মেশিনগানের ব্রাশফায়ার :  ৃহযুদ্ধের বিজন সঙ্কেত
হিরার ৌচাক থেকে মধুলোভি শত শত তীর
ভিতরকে টেনে হিচড়ে করেছে বাহির ''** 


এস, এম, সুলতানের একটা কিম্বদন্তিতুল্য তেলচিত্রের বিষয় হচ্ছে  মাথায় ফেট্টি বাধা, ল্যাংগট পরা পেষল পুরুষেরা সড়কি, লাঠি, বল্লম হাতে চর দখলের লড়াইতে মাতোয়ারা!ছবিটা দেখলে মনে হয় 
এক তান্ডবি  গিতিনাট্যের প্যাশনেট কোরিওগ্রাফি।

চরদখলি সংস্ৃতির দেশে ধাওয়া, পালটা ধাওয়া, মাথা ফাটাফাটি ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন হলে, তাতে যে বাংগাল ৌকিকতার সমুহ বদনাম, বটেশ্বওয়ার থেকে মহাস্থান অব্দি মুরিদ, মস্তানেরা সে ব্যাপারে সমুহ সচেতন।চিল্কা থেকে বরব্বোই, মহল্লায় মহল্লায় যে যা হাতের কাছে পাচ্ছে তা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে স্বাধিনতার চেতনাবিরোধিদের সাথে গাটছড়া পাকানো পান্ডাদের বিরুদ্ধে।আবার পান্ডব ও ৌরব উভয় শিবিরেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধিরা অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে  বিভিন্ন ধুর্ত ৌশলে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের একদিন পরেই বিশ্বায়িত রোমান নববর্ষ ২০১৯ এর শুরু!একেবারে সাজ সাজ রব।বাগানবাড়ির মালিকপক্ষ্যগনের পিছুপিছু ইভেন্টস কোম্পানিগুলো হাজির নির্বাচনি এলাকাগুলোতে ।দেশি, বিদেশি মদের আড়ত সব খালি।নির্বাচন হবে ৩০শে ডিসেম্বর ।দফারফা হতে হতে নিউ ইয়ার্স ইভ।জেতা পার্টির সাথে কোলাকোলি করে হুল্লোড়, চিয়ার্স করবে হারু পার্টির মোড়লেরা।জেতা পার্টি, হারু পার্টি সবই চাচাতো, মামাতো ভাই, বোন বা বেয়াই, বেয়াইন।যে নিউ ইয়ার্স ইভ ছিলো রাজধানির কিছু বিশেষ এলাকায় সিমাবদ্ধ, এবার কাকতলিওভাবে নির্বাচন ঘিরে তা ছড়িয়ে পড়ার সমুহ সম্ভাবনা সারা বাংলাদশে।ঘুর পথে বিশ্বায়িত মাত্রায় ৌছানোটা মন্দের ভালো ৈ কি। 

নির্বাচনি মুদ্রাস্ফিতি থেকে মাদকের রমরমা চলছে অর্থনিতির চাহিদা, যোগান সুচক মেনে।কারো দরকার ঝিমানো, কারো দরকার উত্তেজনা।কালো টাকার পাহাড়ের পাশে জাল টাকার তরতরানো স্রো্ত।মোড়লেরা তার প্রতি চোখ, কান  তালা মেরে রাখবে।নির্বাচনের পরপর কালো টাকা, জাল টাকার ছড়াছড়ি থেকে যে মর্মান্তিক মুদ্রাস্ফিতি ও ভোগ্যপন্য, সেবাপন্যের মুল্যৃৃদ্ধি তার সুদাসলও সুদতে হবে কোমরভাঙ্গা জনতাকে।নির্বাচনি মোড়লেরাই নিয়ন্ত্রন করে ভোগ্যপন্যের মজুত।গোপনে কেন্দ্রিয় ব্যাঙ্ক কমিয়ে দেবে সঞ্চয়ের সুদ।বেড়ে যাবে ইয়াবা, হেরোইন, ভিয়াগ্রা, সোনাদানার অনানুষ্ঠানিক ব্যাবসা।সেগুলোও মোড়লদের হাতে।

একটা বড়সড় খরচ হবে সেনাবাহিনিকে দেশের সবখানে ব্যারাকের বাইরে নিয়ে এসে।এতে করে অপরাপর আই্নৃঙ্খলারক্ষক বাহিনিগুলোর ক্রম অধপতন এবং তাদের প্রতি জনগনের অনাস্থা স্পষ্ট বোঝা যায়।সেনাবাহিনির ব্যাপক মোতায়েন স্বাগত জানিয়ে সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে প্রচুর পাতা খোলা হয়েছে।সেখানে কথিত দেশপ্রেমিকদের শাব্যাশি, পিঠ চাপড়াচাপড়ির ভিড়ে একটা সমালোচনা চোখে পড়েছে, যাতে লেখা, যে সেনাবাহিনি পিলখানাতে তাদের নিজস্ব অফিসারদের নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারে নাই, তারা কিভাবে সারা দেশের নিরাপত্তা বিধান করবে।তার ওপর আছে  বিচারবহির্ভুত গুমের অশনিসঙ্কেত।

মদ, মাদক, মাগিবাজি, মাস্তানবাজি, সেনালালন সব মিলে এই মাঘ মাস যে  প্রবল আর্থিক চোরাগোপ্তা মুদ্রাস্ফিতির ৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আসবে তার প্রকাশ্য মাশুল গুনতে হবে প্রজন্মান্তরকে।বাংলাদেশের একাদশ সংসদ নির্বাচনের তত্বাবধায়ক কবিতা খানম।কবিতাদি আইন ৃঙ্খলা নিয়ে, সেনাবাহিনি মোতায়েন নিয়ে অনেক লিপ সার্ভিস দিয়েছেন, কিন্তু নির্বাচনি ব্যায় সঙ্কুলানের স্বচ্ছতা নিয়ে টু শব্দ করেন নাই।করলে খবর আছে।কারা তখন গোস্যা করবে ?

ধরা যাক ডাকাতিয়া বা রুপসা তিরবর্তি একটা নির্বাচনি এলাকা।এখানকার ৈধ,  অবৈধ সব ধরনের ব্যাবসায়িরা ধাপে, ধাপে নির্বাচনে টাকা লগ্নি করবে।সম্ভাব্য জেতা পার্টিকে দেবে বেশি, হারু পার্টিকেও অল্পস্বল্প দেবে।নির্বাচনের পর এই লগ্নির টাকাটা ওঠাবে সুদাসলে।কিভাবে?বসুন্ধরার শাহ আলম যেরকম ঢাকঢোল পিটিয়ে ঢাকার পাশের পুরো তুরাগ খেয়ে ফেলেছে, সেরকম ডাকাতিয়া, রুপসাসহ আরো নদি, বিল খেয়ে ফেলবে নির্বাচনে লগ্নি করা ছোটবড় আড়তদার, ইন্ডেন্টর্, রিয়েল এস্টেট ব্যাবসায়িরা।এরকমভাবে প্রতি নির্বাচনে নদি ভরাট হতে থাকবে এবং একসময় বাংলাদেশিরা হেটে হেটে বিশ্বের সবখানে চলে যেতে পারবে।এটা মহাশ্চর্জের বিষয়, বিশ্ব পরিবেশ দুষনে বাংলাদেশের মত দেশ সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখোমুখি,  অথচ কারো নির্বাচনি ইস্তেহারে পরিবেশ এক রত্তি প্রাধান্য পায় না।তার বদলে নগদানগদি উন্নয়ন, মুক্তিযোদ্ধা ও আদিবাসিদের অবজ্ঞা করা কোটা সংহারিদের প্রতি পক্ষ্যপাতের বাহাদুরি।

নির্বাচনটা আসলে কি?নির্বাচন হচ্ছে প্রতিনিধিত্ব।বাংলাদেশের ৈমিত্তিকতা বলেন, ফুটানি বলেন সবই চলে বস্র শ্রমিক ও প্রবাসি শ্রমিকের হাড় কালো করা পয়সায়।এই দুই খাতের শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব বাংলাদেশের রাজনিতিতে নাই  বল্লেই চলে।যে ছাত্ররা বিভিন্ন সময় ঐতিহাসিক আন্দোলনগুলোর পুরোভাগে ছিলো, তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিনিধি নির্বাচন আটকে দেয়া হয়েছে কয়েক যুগ।বিভিন্ন উতপাদনশিল খাত ও প্রজন্মবোধক খাতের প্রতিনিধিত্ব আটকে দেয়ার পরেও ব্যাপক তোড়জোড় করে যে নির্বাচন হচ্ছে, তাতে বিজেতারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছে?নিজেদের পকেটের।

তাহলে কি বিপ্লব করে এর নিস্পত্তি হবে?তা যে হয় না, তার প্রমান সোভিয়েতের পতন, ভেনিজুয়েলার পতন।প্রতিনিধিত্ব বদলের স্বচ্ছতা বিধানে নির্বাচনই এখনো অব্ধি অপেক্ষাৃত কম ক্ষতিকর উপায়।এর জন্য দরকার সব পর্জায়ের পেশাজিবিদিদের, বুদ্ধিজিবিদের দর কষাকষির ট্রেড ইউনিওন।ভাওতাবাজির, তেলবাজির ট্রেড ইউনিওন নয়, কুলির পাশাপাশি ৈমানিকের ট্রেড ইউনিওন,  চিকিৎসকের পাশাপাশি সেবিকার ট্রেড ইউনিওন, ৃহবধুর পাশাপাশি ৌন শ্রমিকের ট্রেড ইউনিওন।নির্বাচনকে সামন্তবাদের বাইরে এনে গনতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের পর্জায়ে আনতে হলে ট্রেড ইউনিওনের বিকল্প নাই।ট্রেড ইউনিওনের দর কষাকষি এক পর্জায়ে ৈর্ব্যাক্তিক হয়ে ব্যাক্তিকে ৌন করে দিতে পারে।এখানেই আসে ব্যাক্তির অধিকার, বিচিত্রতার অধিকার বিষয়ে স্পর্শকাতরতার শিক্ষা।যে শিক্ষা আমাদেরকে শুধুমাত্র মুনাফামুখি করে, ধর্মমুখি করে তা আমাদের ব্যাক্তির অধিকারের ব্যাপারেও উদাসিন করে তোলে।

গোলেমালে বাংলাদেশে নির্বাচন  কম হয় নাই।কিন্তু ৈষম্য ও প্রতিনিধিত্বের জায়গাটা আমরা বুঝেও না বোঝার ভান করছি।ফলে স্ৈরতন্ত্র আসছে বিচিত্র কলেবরে, বিচারবহির্ভুত প্রান সংহার বা ক্রসফায়ার হয়ে পড়ছে গা সওয়া, তসলিমা নাসরিনের গনতান্ত্রিক অধিকার হচ্ছে চোখের সামনে ধামাচাপা বিষয়।আশির  সামরিক স্বৈরতন্ত্র  বিরোধি  আন্দোলন, জাহানারা ইমামের  নেৃৃত্বে ঘাতক দালাল  নির্মু ল আন্দোলন, শাহবাগ আন্দোলনের মুল সুর হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধিনতা।এই স্বাধিনতাকে দলন করে ৌলবাদিরা ও  ডগমার জোতদারেরা বারবার প্রতিনিধিত্বের নির্বাচনগুলোকেও করে তুলেছে অসচ্ছ, বিভ্রান্ত।

মদবাজি, মাগিবাজি শুনতে বিশ্রি লাগে।কিন্তু এগুলোও অধিকারের ভেতরে পড়ে।কে কার দেহ নিয়ে কি করবে, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক কিভাবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে তাদের ৌনসম্পর্ক, মনোগত সম্পর্ক করবে তাও অধিকারের ভেতর পড়ে।মদ্যপান, মাদক সেবনও অধিকারের ভেতর পড়ে।কারো ক্ষতি না করে, অন্যের অধিকার খর্ব না করে নিজের চয়েস থেকে না কি সামাজিক কায়েমি ইঞ্জিনিয়ারিংএর শিকার হয়ে একজন অবদমনের বিভিন্ন ধাপে মাদকসেবি বা এল্কহলিক হচ্ছে তার গভিরে আমরা কখনো যেতে চাই নাই।মতপ্রকাশের বিচিত্রতা রুদ্ধ করার ফলে যে আমাদের একের পর এক প্রজন্ম ৌলবাদ ও মাদকগ্রস্থতার চোরাবালিতে আটকে গেছে তাও আমরা আয়নাতে নিজেদের চেহারা দেখে আতকে ওঠার ভয়ে নির্নয় করি নাই।ভুর্তুকি দিয়ে সারা বাংলাদেশে মাদক ব্যাবসায়িদের ছড়িয়ে দেয়া জেনারেলকে আমরা সংসদে জনপ্রতিনিধি বানিয়ে ছেড়েছি।আর সেবা ও সংস্কার বলতে বুঝেছি ব্যাংএর ছাতার মত গজিয়ে ওঠা মাদক নিরাময় কেন্দ্র।যে সমাজে মসজিদ ও কথিত মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে উঠছে চক্ররৃদ্ধি  হারে, সেখানে ধর্শন ও নারিবিদ্বেষ যে একই  অবদমিত সরলরেখার সমাজগ্রাজ্য স্বরুপ তা লেখা বাহুল্য।

আবারো বলি, আবারো লিখি, নির্বাচন হচ্ছে প্রতিনিধিত্ব।ব্যাক্তিকে তার  সত্বার, তার নি্জস্বতার, তার অনুভুতির প্রতিনিধিত্ব করতে দেয়াটা জরুরি।দল বা দেশ নয়, সবার আগে ব্যাক্তি।ব্যাক্তির প্রান সংরক্ষনে, ব্যাক্তির প্রানের বিকাশে যে নির্বাচন, তার দর্পনেই আর্থিক উন্নয়ন ও নান্দনিক উদযাপন!হ্যাপি নিউ ইয়ার্স।শুভ ২০১৯।চিয়ার্স।


চয়ন খায়রুল হাবিব
২৮/১২/২০১৮
ব্রিটানি 


**আমার 'ৌল জন্তুর ভাষা ' দির্ঘ কবিতার অংশ।পুরো কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় মাঝ আশিতে আবিদ আজাদ সম্পাদিত 'কবি ' সাহিত্যপত্রের একটি কবিতা, একটি সংখ্যায়।পরে  ১৯৯১তে স্থান দেই আমার গ্রন্থিকা 'ৌল রুমালে'.২০০৭ এ প্রকাশিত আমার প্রথম কবিতা সংগ্রহ 'জুলেখা  সিরাপ 'এ কবিতাটি গ্রন্থবদ্ধ। অংশটুকুতে আগের মুদ্রনের প্রচলিত বানান অনুসরন করা হয়েছে।চখাহা।