Tuesday 10 April 2018

পিলখানা হত্যাকান্ড থেকে ঢাবি উপাচার্য ভবন হামলা

এবং হালুয়া রুটি মামলাবাজির লুটেরা ব্যাবস্থাপনা।

আক্রান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ভবন, এপ্রিল, ২০১৮

অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী সংসদে যথার্থভাবে ঢাবি উপাচার্য ভবনে মুখোশধারি হামলাকারিদের ইতর বলেছেন।মুখোশ না থাকলেও এটা ইতরতা।অগ্নিকন্যা যদি আক্রমনকারিদেরকে বলা ইতরতার  গভিরে যেতে চান, তাহলে দেখা যাবে রাস্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এবং তাতে আসিন সামরিক, বেসামরিক সরকার এই ইতরতার  দায় এড়াতে পারে না।

বিদ্রোহি সিমান্তরক্ষি সদস্যগন, পিলখানা, ঢাকা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯
কয়েক বছর আগে সিমান্তরক্ষি বাহিনির অবর্ননিয় হিংস্র বিদ্রোহের সাথে জড়িত সিপাহিদের বর্তমান সরকার যেভাবে আইনি বিচারের আওতায় এনেছিল, তার প্রক্রিয়া প্রশ্নসাপেক্ষ হলেও, আমরা আশাবাদি হয়েছিলাম যে রাস্ট্রের সাথে নাগরিকের সম্পর্কের দিক থেকে, নাগরিকের সুরক্ষার দিকে শাষক গোষ্ঠি মনযোগি হতে চাচ্ছে।বংগবন্ধু হত্যাকারিদের বিচারের আওতায় আনা, যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের আওতায় আনা এবং শাস্তি বিধানও আমাদের আশাবাদি করেছিল।কিন্তু আশির দশক পুরোটা জুড়ে যে সামরিক বাহিনি ও পুলিশ ছাত্রদের ওপর ধারাবাহিক দমন, পিড়ন ও হত্যাকান্ড চালায় তার শাস্তিবিধান করা হয় নাই, বরং এসবের সংগঠকদের রাজনিতিকভাবে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।কল্পনা চাকমা, চলেশ রিসিল ও তনু হত্যাকান্ডে রাস্ট্র নিরব থেকেছে।জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ডক্টর আনোয়ার হোসেনকে অপর শিক্ষকেরা শরিরিভাবে হ্যানস্তা করার ব্যাপারেও রাস্ট্র নিরব থেকেছে।প্রতেকটা নিরবতা বড় মাছ ছোট মাছকে খাবে ধরনের  প্রবনতাকে আরেক ধাপ শক্তিশালি করেছে।

তনু হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে প্রতিবাদ
রাস্ট্রযন্ত্র একটি বিমুর্ত প্রতিক যা মুর্ত অবয়ব পায় তার সাথে সংশ্লিষ্টদের আচরনে।বাংলাদেশ নামক রাস্ট্রযন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্টদের আচরন বলছে যে এখানে রাস্ট্রের দৃশ্যমান প্রতিনিধিদের আড়ালে ধরাছোয়ার বাইরে গোপন একটি আমলাতান্ত্রিক রাস্ট্র দিনে দিনে শক্তিমান হয়েছে, যা স্বত্তাগতভাবে নিজেকে জবাবাদিহিতার বাইরে নিয়ে গেছে।পুলিশি হেফাজতে কারো মৃত্যু হলে, কেউ গুম, অপহরন হলে আইনরক্ষাকারি সংস্থাগুলো আড়াল ও মুখোশ হিশেবে ব্যাবহার করছে এই গোপন আমলাতান্ত্রিক রাস্ট্রকে।যে কোন সরলরৈখিকতায় বিবেচনা করলে এই গোপনিয়তাকে স্বচ্ছতা যা প্রকারান্তরে জবাবদিহিতা, তার আওতায় না আনলে সিপাহিদের হাতে অফিসারদের এবং কথিত ছাত্র বা শিক্ষকের হাতে উপাচার্যের লাঞ্ছনা, কিম্বা প্রাননাশের হুমকি থেকেই যাবে।যখন যাকে খুশি হত্যা, গুম করে রাস্ট্র এক ধরনের জোর যার মুল্লুক তার বা মব আইনের ধারাবাহিকতা কায়েম করেছে।নাগরিকের জান কবচের ব্যাপারে সেনাবাহিনিসহ বিভিন্ন আইনরক্ষাকারি সংস্থাকে ইম্পিউনিটি দেয়া হয়েছে।এমেরিকান সেনাবাহিনি ইরাকে, আফগানিস্তানে অনাচার করলে আমরা তা জানতে পারি, তার বিচারের কাহিনিও জানতে পারি, কিন্তু আমাদের সেনাবাহিনির কোন আচরনের প্রতি প্রশ্ন তোলাকে সামাজিক ট্যাবুতে নিয়ে আসা হয়েছে।আয়রনি যে একটি প্রবল সেনাবাহিনির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বাংলাদেশি বাঙ্গালিকে পরিচয় সংহত করতে হয়েছে, যার অন্যতমো মেরুদন্ড হিসেবে কাজ করেছিল ছাত্রদের পরিচালিত ধারাবাহিক বিভিন্ন আন্দোলন।

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনে আক্রমন ঘটেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের  সুত্র ধরে।এই আন্দোলনে জড়িতরা এর সাথে জড়িত থাকতে পারে, নাও পারে।তবে কেউ না কেউ জড়িত এবং তারা উপাচার্যের শোবার ঘরে ঢুকেও রাতের বেলা বিপুল ভাংচুর করেছে।উপাচার্যকে বা তার স্ত্রি, সন্তানদের খুজে পেলে এরা কি করতো, তা ভাবলে আমাদের অস্বস্তি ছাড়িয়ে রক্ত হিম হয়ে আসে।পিলখানার নারকিও হত্যাকান্ডের সময়ে; জাবিতে ডক্টর আনোয়ার হোসেনের ওপর আক্রমনের সময়ে; বর্তমানে ঢাবিতে উপাচার্য ভবন আক্রমনের সময় বার বার মনে হয়েছে, বাংলাদেশতো এখন আর উপনিবেশ নয়, বিদেশি সেনাবাহিনির মারনযজ্ঞের মুখোমুখি নয়, বাংলাদেশকে চালাচ্ছে বাংলাভাষি শাষকেরা, তাহলে মোরাল এত নিচু কেন!পহেলা বৈশাখ, বই মেলার মত সার্বজনিন উৎসবে এখানে দেশের সর্বোচ্চ ক্যাম্পাসে নারিদের ওপর যেসব লাঞ্ছনা ঘটে, তাতে সাংস্কৃতিক চলিষ্ণুতার এক বিকৃত, বিচুর্ন আয়না প্রতিয়মান হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্র সংগঠনগুলো এফিলিয়েশান বিরোধি আন্দলোন শুরু করেছিল, সেখানেও তারা উপাচার্যের দফতরে চড়াও হয় এবং সরকারি ছাত্র সংগঠনের কর্মিরা আন্দোলনরত ছাত্রদের ব্যাপকভাবে মারধোর করে, সরকারি সংগঠনের মেয়েরা শরিরিভাবে হেনস্তা করে আন্দোলনরত মেয়েদের।এফিলিয়েশান বিরোধি বাম ছাত্র সংস্থাগুলোর সাথে যেসব পরিচিত বাম শিক্ষকদের থাকবার কথা তাদেরকে দেখা গেলো বিভিন্ন প্রাইভেট এফিলিয়েশানের ব্যাবস্থাপনা পর্ষদে যোগ দিতে।পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বাসস্থান, খাবার, গ্রন্থাগার, বিনোদন সবকিছুরই বেহাল অবস্থা, অথচ এরা আসে মেধা তালিকায় জোর প্রতিদ্বন্দিতামুলক পরিক্ষায় উত্তির্ন হয়ে।এসে দেখতে পায় যে সরকার সেনাবাহিনির পেছনে যত ব্যায় করে, তা তার মেধাবি ছাত্রদের পেছনে করে না।চোখে আঙ্গুল দিয়ে বৈষম্যতা দেখানো হয় এবং হিনমন্যতা তৈরি করা হয়।তার ওপর আছে ক্যাডেট কলেজ, মাদ্রাসা ইত্যকার বৈশম্যমুলক শিক্ষা ব্যাবস্থার কুফল।

সরকারি ছাত্র সংগঠনগুলো চরিত্রগতভাবে হয়ে ওঠে সরকারের ঢাল এবং ঠিকাদারদের পেষল মুখপত্র।ছাত্ররা প্রতিনিধিত্বহিন হতে হতে, অস্তিত্ববিহিন হয়ে পড়েছে।যারা আজকের প্রশাষনে নিতিমালা বাস্তবায়ন করছে, তারা গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র ছিলো, তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেহাল অবস্থা জানে, কিন্তু কিছুই করে না।যে নিচু মোরাল থেকে উপাচার্য ভবনে হামলা হয়, উপাচার্য স্বয়ং আক্রান্ত হয়, সেই একই নিচু মোরাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা প্লাজিয়ারিজমকে অনুশিলন বানিয়ে ফেলে, বিরদর্পে প্রাইভেট এফিলিয়েশান ব্যাবস্থাপনা পর্ষদে যোগ দেয়।এরা সবাই হালুয়া রুটির ভাগ চাচ্ছে, শিক্ষিত বা এনলাইটেনমেন্টটা লক্ষ্য না, লক্ষ্য হচ্ছে যেনতেন প্রকারে হালুয়া রুটির ভাগ পাওয়া।এই হালুয়া রুটির পথে সামরিক স্বৈরতন্ত্রি এরশাদ সরকারের পতনের পর, গত কয়েক দশকের কথিত গনতন্ত্রি আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন হয় নাই।প্রতিনিধিত্বহিন ছাত্রদের মুলধারার রাজনিতিকেরা ইচ্ছামত নিজের স্বার্থে ব্যাবহার করছে, ব্যাবহারের মুল্য হিশেবে ধরিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন ঠিকাদারি।আবার কথিত প্রাগ্রসর ছাত্র সংগঠনগুলো এফিলিয়েশান বিরোধিতা, কোটা সংস্কার জাতিয় যেসব আন্দোলন করছে, তার কোন কোনটা সরকারি আনুকুল্য পেলেও রাস্ট্রযন্ত্রে স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে কোন গুনগত পরিবর্তন ঘটাবেনা।


গুনগত পরিবর্তনের একটা বড় শর্ত ব্যাবস্থাপনার গুনগত নির্দেশনার পরিবর্তন।পিলখানা হত্যাকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্থানিয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে সিমান্তরক্ষিদের ব্যাবস্থাপক হিশেবে সেনাবাহিনির গা জওয়ারি, অসচ্ছ, জবাবদিহিতাহিনতা, রাস্ট্রক্ষমতা ও ব্যাবসায়িক মুনাফাবাজিতে অংশগ্রহনের প্রবনতাকে পরোক্ষভাবে দায়ি করা হয়।কিছুদিন পর সিমান্তরক্ষিদের আনুষ্ঠানিক নাম বদলে ব্যাবস্থাপনা সেই সেনাবাহিনির হাতেই রেখে দেয়া হয়।বিভিন্ন হাসপাতাল, এমন কি জেলখানার ব্যাবস্থাপনাও দেয়া আছে সেনাবাহিনির হাতে, কিন্তু সেগুলোর গুনগত পরিবর্তনের কোন লক্ষন নেই।শিক্ষাক্ষেত্রেও এরকম বেশ কিছু সিমান্তরক্ষি বাহিনি টাইপ অব্যাবস্থাপনা যুক্ত হয়েছে।সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে নিজেদের বিপুল ছাত্রের ব্যাবস্থাপনাতে হিমশিম, সেখানে তাদের ওপর চাপানো হয়েছে বেসরকারি শিক্ষার ব্যাবস্থাপনা।


ব্যাবস্থাপনার একটা দিক হচ্ছে সম্পদ রক্ষা, তার নবায়ন, সম্প্রসারন।সিমান্তরক্ষি বাহিনি, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারন হয়েছে, কিন্তু সম্পদ বেড়েছে কি?সেনাবিহিনির একজন অফিসার সিমান্তরক্ষি বাহিনিতে ডেপুটেশানে এসে অগাধ সম্পদের মালিক হওয়া, সিমান্তরক্ষি বাহিনির সম্পদ বৃদ্ধি করে না।আবার ডেপুটেশান বন্ধ করলে বর্তমান কাঠামোতে সিমান্তরক্ষি বাহিনির নিজস্ব অফিসারেরা যে সিমাহিন দুর্নিতি করবে না, তার কোন গ্যারান্টি নেই।পুলিশ দুর্নিতি এখন প্রাতিষ্ঠানিক পারস্পরিকতায় রুপান্তরিত হয়েছে, পুলিশ রক্ষা করে দুর্নিবাজ রাজনিতিককে, রাজনিতিক রক্ষা করে দুর্নিতিবাজ পুলিশকে।


দুর্নিতির বিরুদ্ধে সুরক্ষার গ্যারান্টিটা আসে চেক এন্ড ব্যালেন্স বা জবাবাদিহিতা থেকে।নারায়নগঞ্জের সাত হত্যা মামলাতে অভিযুক্ত সেনাকর্তাদের আলামত বলে যে সেনাবিহিনিসহ বাংলাদেশের প্রাইভেট মালিকি সংস্থাগুলো, বাংলাদেশকে একটা বল্গাহিন লুটপাটের উর্বর ক্ষেত্র হিশেবে ধরে নিয়েছে, আর লুটপাট চলছে যারা সংস্থাগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার কথা, সে জনপ্রতিনিধিরা সেবার বদলে ক্ষ্মতায়নকে লক্ষ্য হিশাবে নির্ধারন করায়।আবার যারা জনপ্রতিনিধি হতে পারছে না, কিন্তু ক্ষ্মতায়িত দর কষাকষির বিভিন্ন স্তরে তারা জনতাকে খাওয়াতে চাচ্ছে জিয়ার চেয়ে খালেদ মোশাররফ ভালো, খালেদ মোশাররফের চেয়ে তাহের ভালো, সবার চেয়ে চেয়ারম্যান মাও ভালো,  সাইদির হাতে মুক্তির আলো  ইত্যাদি মন্ত্র, ঘুরেফিরে যার মুলে রয়েছে জোর যার মুল্লুক তার বা বন্দুকের আগাতে ক্ষ্মতার উতসপথ এবং মুনাফাবাজির মিশ্রন।মুনাফা খারাপ না, কিন্তু তার বিতরনটা কোথায় কিভাবে হচ্ছে তার সাথে চড়াদাগি সাদা কালো কল্যানবোধকতা জড়িত।ব্যাবস্থাপনার গুনগত পরিবর্তন আনতে হলে মন্ত্রকেও দিক বদলে ঘোরাতে হবে জনতার ক্ষ্মতায়নের দিকে।রাস্ট্রের বা পার্টি লাইনের জন্য জনগন নয়, জনগনের জন্য রাষ্ট্র বা পার্টি লাইন।


ছাত্র আন্দোলনের অধিকারগত মুল প্রনোদনা এখন আসছে নিজে বাচলে বাপের নাম থেকে।কোটা সংস্কার আন্দোলনের লক্ষ্য ক্ষ্মতায়নের অংশিদার হওয়া, তার গুনগত পরিবর্তন নয়।কোটা সংস্কারের পর আরো বেশি মেধাবিরা প্রশাষনে জায়গা করে নিলেও তারা কারো কাছে জনসেবাকে মুল প্রনোদনা করবার মুচলেকা দেবে না।এই প্রবনতার মুলেও রয়েছে প্রতিনিধিত্বহিনতা।গনজাগরন মঞ্চের প্রতি সামগ্রিক শ্রদ্ধা রেখেও বলা যেতে পারে যে এই মঞ্চ বা ইমরান এইচ সরকার কোন ছাত্র আন্দোলনের বিকল্প হতে পারে না।সম্প্রতি ইমরান এইচ সরকার ভিত্তিহিনভাবে একজনের মৃত্যু সংবাদ প্রচার করে যে আচরনটা করছে, তা তার সার্বিক উথ্যানের সাথে মেলালে  দায়িত্বহিনতার বদলে উদ্যেশ্যপ্রনোদিতা প্রকট হয়।ডাকসুর অবর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভর করা এরকম মঞ্চগুলো ছাত্র আন্দোলনসহ আরো আন্দোলনকে যে বিভ্রান্ত করবে, তা লেখা বাহুল্য।

রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকির হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ

বর্তমান সরকার তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিমত যুদ্ধাপরাধ বিরোধি ট্রাইবুনাল গঠন করে, যুদ্ধাপরাধিদের সনাক্ত করে বিচার শুরু করে দেয়।ব্লগাররা তার পক্ষে ব্যাপক জনমত গঠনে সহায়তা করে।গন জাগরন মঞ্চের ডাকে শুধু নয়, যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের আন্তরিক দাবি থেকে ঢাকাতে ঐতিহাসিক জনতার ঢল নামে।হেফাজত ঢাকাতে চড়াও হলে সরকার কঠোরভাবে তাদের রাজধানি থেকে উচ্ছেদ করে।আমরা ইমরান এইচ সরকারের কোন মেধাবি ব্লগ পোস্ট আজতক দেখি নাই, কিন্তু মাঠে সে গন জাগরনমঞ্চের আহবায়ক।আবার সে শিক্ষামন্ত্রির মেয়ের জামাই।কে কার জামাই, বৌ সেটা তাদের ব্যাপার, কিন্তু নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ায়ে যখন ছাত্র আন্দোলনসহ, অন্যান্য আন্দোলনকে নিজেকে হাইলাইট করতে অপব্যাবহার করা হয়, তখন আমাদের প্রশ্ন তোলা দরকার।অন্তর্ঘাতি অংশগ্রহনকারি কি আমাদের বহির্মুখি প্রবনতাগুলোকে দির্ঘ পরিক্রমনে অন্তর্মুখি ব্যার্থতার দিকে নিয়ে যেতে চাইছে?একের পর এক ব্লগার হত্যা আমাদেরকে অনেক রকম অপছায়াদের প্রতি সাবধান হতে বলে।ছাত্ররা যেখানে প্রতিনিধিত্বহিন, সরকারি সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাবস্থাপনাকে সেখানে যদি অদক্ষ, ব্যার্থ হিশেবে দেখিয়ে ৬০০ একরের ওপর রাজধানির প্রানকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যদি প্রাইভেটদের কাছে ভাগাভাগি করে দিয়ে দেয়া হয়, তাহলে আখেরে কাদের লাভ হচ্ছে তা বোঝার জন্য জিনিয়াস হবার দরকার নাই।তত্বের লাল লাঠিয়াল, ধর্মের জিহাদিস্ট, সম্পদ ভাগাভাগির বরকন্দাজ সবই সেই স্পঞ্জের মত কচি কিশোরেরা, আন্দোলনের নামে যাদের মাঠে নামিয়ে রাতের আধারে স্বার্থের ফয়সালা সেরে নেয়া হয়।

একদিকে সরকার সলিডারিটি দেখিয়ে বলছে যে কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে তারা ছাত্রদের দাবিদাওয়া বিবেচনা করবে, আরেক দিকে আশির দশকের ছাত্র আন্দোলন যে মাজিদ খান শিক্ষা নিতির বিরুদ্ধ্বে শুরু হয়েছিল, তাই বাস্তবায়ন হচ্ছে কখনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।মাজিদ খানের শিক্ষানিতির মুলে ছিলো শিক্ষার পন্যকরন।এই পন্যকরনের পথে বিভিন্ন আই ওয়াশ সংস্কার করে ছাত্রদের একাংশকে সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দিলেও তা ব্যাপক অংশের ভেতরকার বৈষম্য দুর করে না।বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারি ছেলেমেয়েরা হচ্ছে গার্মেন্টস শ্রমিকেরা, উচ্চতরো শিক্ষায় তাদের প্রবেশাধিকার সবচেয়ে কম।সিমান্তরক্ষি বাহিনির যেরকম নিজেদের ব্যাবস্থাপনার অধিকার নাই, সেরকম গার্মেন্টেসের ছেলেমেয়েরাও নিজেদের শিল্প বা বাংলাদেশের ব্যাবস্থাপনায় অংশগ্রহন থেকে বঞ্ছিত।বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা এহেনো বৈশম্য মেনে নেয়াকে প্রকারান্তরে সামাজিক বর্নাশ্রমকে প্রশ্রয়ের সামিল।এসব মাথায় রেখে ফেসবুকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াতে লিখেছিলাম, কোটা বিরোধিদের নিন্দা জানাই নিন্দাবাদ হয়তো পরিস্থিতির সবচেয়ে ভালো বিশ্লেষন নয়, তবে যে প্রনোদনা থেকে ভুপেন হাজারিকার গানের কলিটি ব্যাবহার করেছিলাম, তা এ লেখাতেও ধারন করছি :

''বলো কি তোমার ক্ষতি?
জীবনের অথৈ নদী-
পার হয় তোমাকে ধরে,
দুর্বল মানুষ যদি''


বাংলাদেশে কার্জকর কোন কল্যানমুলক ব্যাবস্থা নাই।করগ্রহনের, কর বিতরনের স্বচ্ছতা নাই।এখানে প্রতিদ্বন্দিতাগুলো সামন্তবাদি ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফসল, যার বেশি আছে, সে আরো বেশি পাবে।নারিদের প্রতি, আদিবাসিদের প্রতি, ধর্মিয় সঙ্খ্যালঘুদের প্রতি, দরিদ্রের প্রতি সামগ্রিক অনাচারগুলো বলে যে কোটা হচ্ছে সুজোগ বঞ্চিতদের সর্বশেষ সামাজিক সেফটি নেট।কোটা নিয়ে দুর্নিতি আছে, কোটায় চাকুরি পাওয়ারাও চাকুরি জিবনে দুর্নিতি করে।কিন্তু সে দুর্নিতি কোটা থেকে আসে নাই, এসেছে আবারো বলি, সেটাও আরোপিত সামাজিক ইঞ্জিনিয়ারিং।বিলাতে অভিবাসন নিয়ে দুর্নিতি গ্যাং এ ধরা খেয়েছে যে তিন জন, তারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের, ভালো বেতন পাওয়া , দাড়িওয়ালা, কপালে বিপুল নামাজের দাগ।আবার শোনা যায় আমাদের আদরের বাম নেতাগন ঢাকার বিভিন্ন স্কুল কমিটি মেম্বার হবার সুবাদে লাখেরাজ হাতিয়ে নিয়েছে, বি, এন, পির সময় যা হাতিয়ে নেয় জামাত।এক সময় তৃতিয় বিশ্বের কমিউনিস্ট পার্টিগুলো ওয়ারশভুক্ত দেশগুলো থেকে পাওয়া কোটাওয়ারি বৃত্তির ব্যাপক দুর্নিতি করেছিল।এসব লোক যখন ক্ষ্মতায় যায়, কোটায় ভর করে যে নিজের স্বার্থ হাসিল করে বোঝা যায়।

রবীন্দ্রনাথ, জগন্নাথ হল, ১৯২৬
বাংলাদেশে তৃতিয় লিঙ্গদের জন্য মনে হয় কোটা আছে, নিশ্চিত না।কোটার একটা কম চালু বাংলা সংরক্ষিত সুবিধা১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম যে দুটি ছাত্রাবাস নিয়ে যাত্রা শুরু করে তার একটি হচ্ছে ঢাকা হল, বর্তমানে শহিদুল্লাহ হল, আরেকটি হচ্ছে জগন্নাথ হল যা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ আদিবাসি ছাত্রদের জন্য সংরক্ষিত হল।ইংরেজ, আরমেনিও, গ্রিক, চাইনিজ, মগ, মনিপুরি, বাঙালি, অবাঙ্গালি, খ্রিস্টান, হিন্দু, মুসলিম মিলায়ে তখনকার ঢাকার পরিবেশ কস্মোপলিটান হলেও বিশ্ববিদ্যালয় পত্তনিদার সংস্কারকেরা অবাঙ্গালি, অমুসলিমদের শুরু থেকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছিল সম্প্রদায়গত সহাবস্থানকে উৎসাহ দিতে।এর পরও অটোমান তুরস্কে আরমেনিয়দের নিধন স্মরন করে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পর বিপুল আরমেনিও সম্প্রদায় ঢাকা ত্যাগ করে প্রায় রাতারাতি।কোটা যে শুধু আর্থিক কারনে তা নয়, সাম্প্রদায়িক ভারসাম্যও এ বিবেচনার পেছনে কাজ করে।আজকে যে কোটা সংস্কারের দাবি, তাতে শোনা গেছে যে কিছু কিছু আদিবাসি ছাত্রও যোগ দিয়েছে।সামগ্রিক বিবেচনায় কোটা সংস্কারের পেছনে গোষ্ঠিস্বার্থ কাজ করলে তা হবে আত্মঘাতি।  

কোটাকে দলিয়করন থেকে বের করাটা জরুরি।পুরো বাংলাদেশকে দলিয়করন থেকে বের করাটাওতো জরুরি।কোটা পদ্ধতির ইতিবাচক সংস্কার করে, তাকে নির্দলিয় জবাবদিহিতামুলক কাঠামোর আওতায় আনা দলিয় স্বৈরতন্ত্রের চাপানো গুমোট কাটাতে সহায়ক হবে তা লেখা বাহুল্য।

বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ডের সিদ্ধান্ত যে ব্যাক্তি নেয়, যে ব্যাক্তি ট্রিগারে চাপ দিয়ে বুলেট ছুড়ে দেয় শিকারের দিকে, এদেরকে প্রচুর টাকা ব্যায় করে, প্রচুর শ্রম, ও দক্ষতা নিয়োগ করে প্রশিক্ষন দেয়া হয়।সে প্রশিক্ষনের মুলে আছে ঠান্ডা মাথার আততায়ি নির্মান।এর পেছনে সামাজিক অধৈর্জও দায়ি।বিপ্লবি, অবিপ্লবি, স্বৈরতন্ত্রি, গনতন্ত্রি যে কারো এককভাবে এই অধৈর্জ আসতে পারে এবং তা সম্মিলিত অধৈর্জে বা হিস্টিরিয়াতে রুপ নিতে পারে।পলপটের কম্বোডিয়াতে তা ঘটেছিল।কথিত গনতন্ত্রের আড়ালে শ্রিলঙ্কার সেনাবাহিনি ও পুলিশ এই কালো হিস্টিরিয়া দিয়ে ৩০ বছর ধরে এক নারকিয় নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল সে দেশের তামিলদের বিরুদ্ধ্বে।আজকের শ্রিলঙ্কায় স্বাক্ষরতার হার উচুতে, ব্যাবস্থাপনা ভাল, ক্রিকেটও ভাল কিন্তু সংস্কৃতি পিছিয়ে গেছে  সেই কালো কুয়াশার আড়ালে, যা লেখা আছে মাইকেল অন্দাতজের অনিলা স্মরনে  গ্রন্থে।র‍্যাবকে যে আয়োজন দিয়ে, বিনিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশিদের ভয় দেখাতে মাঠে নামানো হয়েছে,  বিপরিত ধারায়   আইনি  সুরক্ষার প্রতি, পারস্পরিক মতামতের প্রতি সহনশিলতার শিক্ষায় ধৈর্জবান মনযোগ দেয়া হয় নাই।

সময় ফুরায়ে যায় নাই।কালো পোষাকের তান্ডব দিয়ে বা ধর্মের প্রতি এক তরফা পক্ষাপাত করে যে সামাজিক বৈষম্য দুর করা যাবে না তার লক্ষন প্রকট হচ্ছে দিনের পর দিন।রাস্ট্র নগদানগদি নিস্পত্তির দিকে গেলে, নাগরিকও আত্মঘাতিভাবে রাস্ট্রের বিরোধিতা করবে।সেখানে কোটা সংস্কার করেও লাভ হবে না।কারন, সংস্কার তখনই অর্থবহ, যখন তাকে ধারনের স্পর্শকাতরতা আগাম তৈরি হয়।সেই স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা আছে বলেই বাংগালি প্রতিবাদ করে এবং পরিচয়কে সংহত করবার সংগ্রাম  এগিয়ে নেয়।    



চয়ন খায়রুল হাবিব
১০/০৪/১৮
ব্রিটানি