''লো ভাষা, পীড়িতে তোমা গড়িল যে আগে
বাংলাভাষি ব্যাপক খবিশেরা উচ্চারন করে, মহলানবিশ।ইংরেজি বানানে তা কি জাতে উঠে হয় মাহালানবিশ?একাত্তর মিডিয়া লিমিটেডের জনৈক কর্তা, যার ডাকনাম শিল্পি ইংরেজিতে তার পদবির বানান লেখেন মাহালানবিশ।ব্রিটিশ রাজকিয় বিমান বাহিনিতে চাকুরিরত আমার বাবা, আমার নামের ইংরেজি যে বানান নির্ধারন করেছিলেন তাতে আমার নাম দাড়িয়েছিল চায়ান, যার ইংরেজি আকারান্ত বাতিল করে আমি আবার খবিশ শ্রেনির ওকারান্ত যোগে হয়ে যাই চয়ন।আমার সবেচেয়ে বড় বোনের নাম ছবি, বাবাকৃত ইংরেজি বানান তরিকায় তা বেহালে দাড়ায়, চাবি!ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজিতে স্নাতোকোত্তর বড় বোন সেই চাবিকে চিরস্থায়ি বন্দবোস্তে হাসেল রেখেছেন।
ভাববেন না, না বুঝে খবিশ, খবিশ করছি।বাংলা ওকারান্তের প্রাবল্য এসেছিল প্রাকৃত উচ্চারন থেকে।বাংলা উচ্চারনের ভিত্তি যে সংস্কৃত নয়, প্রাকৃত, তার যোগসুত্রও এই ওকারান্তে!দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের কালেও বাংগালি লিখেছে, পোড়বো, কোরবো!এক জাতের বাংগালি যেরকম তার বিদেশি ঠিকুজি দেখিয়ে আরাম পায়, সেই একই জাতের বাংগালি সংস্কৃত বানানসুত্রের পরিক্ষা দিয়ে প্রবোধ লাভ করে।রবিন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘’প্রাচীন বাঙালি, বানান সম্বন্ধে নির্ভীক ছিলেন, পুরানো বাংলা পুঁথি দেখিলেই তাহা বুঝা যায়। আমরা হঠাৎ ভাষার উপর পুরাতত্ত্বের শাসন চালাইবার জন্য ব্যস্ত হইয়াছি। এই শাসন ম্যালেরিয়া প্রভৃতি অন্যান্য নানা উপসর্গের মতো চিরদিনের মতো বাঙালির ছেলের আয়ুক্ষয় করিতে থাকিবে।’’ (রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর/বাংলা শব্দতত্ব/বাংলা বানান )
ম্যালেরিয়া থেকে বাচতে আমি রবঈন্দ্রনাথের ঈকার বাদ দিলাম রবিন্দ্রনাথেরই ভরসায়।যার যার বাপমায়ের দেয়া নাম, য্যামন খুশি স্বর, ব্যাঞ্জনে সাজাবে।এসব খটোমটো, বাদানুবাদের ভেতর মিডিয়া কর্তা মাহালানবিশকে টানাহেচড়া কেন?একখানে অপর গনমাধ্যম কর্তা উদিসা ইমনের প্রতি নিচের কথাবার্তা চোখে পড়লো বলে,
Shilpi Mahalanobish তোমার বাংলা বানান কি নিজের তৈরি??!!!!
Udisa Emon জ্বি। আমার প্রফাইলের সব আমার নিজের। আমি নিউজ লিখি যখন তখন বাংলা একাডেমির নিওম মানি। কোন সমস্যা?
Shilpi Mahalanobish সমস্যা কিছু নাই। ভাবলাম আমার কেথাও ভুল হচ্ছে কিনা। ফেসবুকওতো বড় একটা মাধ্যম। হয়তো এখান থেকেই কেউ ভুল বানানের ফলোয়ার হলো.....
Udisa Emon apa OMG, hello france (friend) esober motoi banglateo samaji jogajog er banan riti daraise... chinta koiren na..
সকলে হয়তো অবগত আছেন যে হরেক কিসিমের বাংলা ফন্টের জায়গিরদার মোস্তফা জাব্বার সাহেব এখন একজন পুরোদস্তর গজদন্তমিনারবাসি।মন্ত্রি হবার আগে যে মোস্তফা জাব্বারের নাগাল ধরতে পারি নাই, গজদন্তমিনারে আসিন হবার পর যে উনি নাগালের আরো বাইরে, তা লেখা বাহুল্য।এখানে আমাদের মত খবিশদের ভরসা শিল্পি মাহালানবিশদের মত বাংলা বানান সচেতন গনমাধ্যম বিরেশ্বরিগন।তারা নিশ্চয়, ইউনিকোড এবং সার্বজনিন বাংলা ফন্টের জন্য আপামর খবিশদের আহাজারি গজদন্ত মিনারে পৌছায়ে দেবেন!
পৌছায়ে দেবার আগে শিল্পি মাহালানবিশকে, মৌলবাদিদের হাতে নির্মমভাবে নিহত প্রয়াত বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের ব্লগ মুক্তমনাতে বানান বিষয়ক বিতন্ডা আমার বানান-বেআদবি ঘিরে ২০১০সালে কোন সপ্ত আসমানে পৌছেছিল তার নমুনা লিঙ্কও এখানে জুড়ে দিলাম :বানান নিয়ে আরো কিছু বকরবকর !
আমার যে লেখাটি ঘিরে মুক্তমনা ব্লগে গেলো, গেলো রব উঠেছিলো, তার হদিশ লিঙ্কও এখানে দেয়া হলো শিল্পি মাহালানবিশের সবিনয় বিবেচনার আগ্রহাতিশয্যে : ভাষাচিন্তাঃ পোকায় কাটা কয়েকটা দাত ফেলে দিলেই দুখিনি বর্নমালার দাত ব্যাথা সেরে যাবে!
সাত বছর আগে লিখেছিলাম,
‘’*সম্প্রতি অভ্র ইউনিকোড ফন্টের ডেভলাপার এবং চর্চাকারিদের সাথে, বিজয়-পন্য-সামগ্রির যে বিরোধ তাতে সঙ্গত কারনেই আমার অভ্র দলের দিকে পক্ষ্যপাত করা দরকার।আমি অভ্র ব্যবহার করি। আনফ্রেন্ডলি সফটওয়্যার হওয়াতে বিজয়, সোলায়মানি এসব কখনোই ব্যবহার করা হয়ে ওঠেনি।
সখ্যতার সহজিয়ায় অভ্র ইউনিকোড, বিজয়-পন্য-সামগ্রি থেকে অনেক এগিয়ে থাকলেও; ভাষার পেছনে ভাব প্রকাশ'কে অর্গলমুক্ত করবার এবং আবার ভাষাকেই শ্রেনি শাষনের মুল হাতিয়ারে পরিনত করবার যে-কায়েমি প্রয়াস সেই দার্শনিক বিরোধে; অভ্র এবং বিজয়ের দ্বন্দকে আমার শুধু skill বা প্রায়োগিক মনে হয়েছে; মনে হয়েছে সামগ্রিকভাবে যে-জিঞ্জিরা কালচার চলছে তারই বিস্তার; এর পেছনে সনাতনের অচলায়তন ভাংবার কোন ইশারা এখনো পাই নি!’’
সাত বছর পর শিল্পি মাহালানবিশকে দেয়া উদিসা ইমনের (না কি এমন?) উত্তরগুলো পড়ে ভরসা করতে লোভ হয় যে এক জিবনে হয়তো মাতৃস্বর, মাতৃব্যাঞ্জনের সার্বজনিন সরলিকৃত সংস্কার দেখে যেতে পারবো!
সাত বছর আগে যখন আদালতের রায় অবমাননা করে অভ্রের পক্ষ্যে কলম ধরেছিলাম, তখন তার নির্মাতা মেহেদি হাসানের নাম জানতাম না।আজকে মেহেদি সাহেবকে যে সালাম জানাচ্ছি তা ঈকার মুক্ত হলেও সম্মানের আন্তরিকতায় যে কোন ইলেকচিহ্ন থেকে দির্ঘতরো।ধন্যবাদ জানাই জুলেখা সিরাপের এডমিনদেরও এ বিষয়ে লাগাতার লিখে যাবার জন্য।
প্রনতি জানাই, বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক মানুষ দত্ত কুলোদ্ভব মাইকেল চরনে, যিনি লিখেছিলেন,
**মিত্রাক্ষরঃ
''বড়ই নিষ্ঠুর আমি ভাবি তারে মনে,
লো ভাষা, পীড়িতে তোমা গড়িল যে আগে
মিত্রাক্ষররূপ বেড়ি ! কত ব্যথা লাগে
পর' যবে এ নিগড় কোমল চরণে--
স্মরিলে হৃদয় মোর জ্বলি উঠে রাগে
ছিল না কি ভাবধন, কহ, লো ললনে,
মনের ভাণ্ডারে তার, যে মিথ্যা সোহাগে
ভুলাতে তোমারে দিল এ তুচ্ছ ভূষণে ?
কি কাজ রঞ্জনে রাঙি কমলের দলে ?
নিজরূপে শশিকলা উজ্জ্বল আকাশে !
কি কাজ পবিত্রি' মন্ত্রে জাহ্নবীর জলে ?
কি কাজ সুগন্ধ ঢালি পারিজাত-বাসে ?
প্রকৃত কবিতা রূপী কবিতার বলে,--
চীন-নারী-সম পদ কেন লৌহ ফাঁসে ?''
''বড়ই নিষ্ঠুর আমি ভাবি তারে মনে,
লো ভাষা, পীড়িতে তোমা গড়িল যে আগে
মিত্রাক্ষররূপ বেড়ি ! কত ব্যথা লাগে
পর' যবে এ নিগড় কোমল চরণে--
স্মরিলে হৃদয় মোর জ্বলি উঠে রাগে
ছিল না কি ভাবধন, কহ, লো ললনে,
মনের ভাণ্ডারে তার, যে মিথ্যা সোহাগে
ভুলাতে তোমারে দিল এ তুচ্ছ ভূষণে ?
কি কাজ রঞ্জনে রাঙি কমলের দলে ?
নিজরূপে শশিকলা উজ্জ্বল আকাশে !
কি কাজ পবিত্রি' মন্ত্রে জাহ্নবীর জলে ?
কি কাজ সুগন্ধ ঢালি পারিজাত-বাসে ?
প্রকৃত কবিতা রূপী কবিতার বলে,--
চীন-নারী-সম পদ কেন লৌহ ফাঁসে ?''
চয়ন খায়রুল হাবিব
৫/০১/১৮
ব্রিটানি