পরের কথন : প্রয়াত তারেক মাসুদ, মিশুক মুনির, ঢালি আল মামুনদের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখেও আমরা তাদের পরিবারের পাশাপাশি সামাজিক উত্তমর্নদের জিজ্ঞাসা করতে পারি, তারা তাদের সন্তানদের বাংগালি বাস, ট্রাক ড্রাইভারের সন্তানদের সাথে সামাজিক সম্পর্ক করতে দেবে কি না?
যাদের থেকে আমরা সেবা নেই তাদেরকে আমাদের সাথে আমরা এক টেবিলে খাই না, সেটা যেরকম পরিবহন শ্রমিকের সাথে, সেরকম গার্মেন্টস শ্রমিকের সাথে।শ্রমিকেরা যে দুর্নিতিগুলো করে, তারা আমাদের উচ্চ ও মধ্যবিত্তের শয়তানি থেকে উতসারিত।আমাদের বামপন্থি দলগুলোর নেতৃত্বেও এদের প্রতিনিধিত্ব অপাংতেও।আকবর রনো, মেনন, মুজাহিদ সেলিম, ইনু আদ্দির পাঞ্জাবি পরে ঘেমো বাস, ট্রাক ড্রাইভারদের পাশে দাড়াতে চাইলেও ওরা এদের বিশ্বাস করবে না, করে নাই। ফলে নির্বাচনের সময় এরা বড় দলগুলোর টিকেট নেয়, আর নির্বাচিত হয়েও যাদের প্রতিনিধিত্বের কথা বলে রাজনিতি করেছে, তাদের ভাগ্যন্নোয়নে কিছু করে না।অনলাইন, অফলাইন কথিত বিপ্লবি, ভাবালোন্দনবাদি ইত্যাদিগন উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত যাই হোন না কেন, কমন এই বৈশম্যমুলক প্রবনতা এড়াতে পারেন না।বলছেন লালনের কথা, মার্ক্সের কথা কিন্তু রাস্তার চাখানা থেকে নিজের মেসবাড়িতে বজায় রাখছে এই দুরত্বের মনোগত সিমান্ত।নিম্নমধ্যবিত্ত কেবল সামাজিক সোপানের উচুতলায় যাবার বেলাতে সে সিমান্ত পার হতে চাইছে, একবার পার হতে পারলে নিজের জায়গাটিও ভুলে যাচ্ছে বা ভুলে যাবার ভান করছে।শিক্ষামন্ত্রি কমিউনিস্ট ছিলো, তার মেয়ের জামাই গনজাগরনের ডাক্টার ইমরান।প্রেম, ভালবাসা অবস্যই সহি।কিন্তু এই সহি সামাজিক মিল, মহব্বতে ছোটলোকি, বড়লোকির ফারাকটা সেবাদেনেওয়ালা শ্রমিকদের পায়ে পিশে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।তারাও বেপরোয়া, কেয়ার করে না।আপনি কেয়ার করেন?
বাস, ট্রাক ড্রাইভার, হেল্পারদের মৃত্যুদন্ড চাচ্ছেন, আপনি কিন্তু সেই বাঙ্গালির উত্তরাধিকার, যার পুর্ব পুরুষ মার খেতে খেতে চিবুক তুলে বলেছে, বাবু পেটে খেলে পিঠে সয়।কতটুকু দিয়েছেন, কতটুকু পাশে দাড়িয়েছেন সেবাশ্রমিকের সন্তানের কল্যানে?তাকে বলছেন, পরোয়া করতে, কিন্তু সম্পদের দানপাশা সব আপনার হাতে, কিম্বা দানপাশার সুজোগ পাওয়া মাত্র তার ফিকির সব আপনার সন্তানের জন্য।আপনি বলছেন ধর্মের ভাতৃত্ববোধ, কিন্তু সেখানেও এই ছোটলোকি, বড়লোকির আশরাফি, আতরাফি।
সেবাশ্রমিকের ওপর আপনি কঠোর নিয়মনিতি চাপাবেন, কিন্তু তাকে তার অর্জিত সম্পদের ভাগ দেবেন না।আইন, কানুনতো আগেও ছিলো।যে কারনে সেসব আইনকানুনগুলোর তোয়াক্কা সেবাশ্রমিকেরা করে নাই, সেই একই কারনে তারা সামনেও আরো ফাকফোকর বের করবে।কারন, আপনাদের সামাজিক প্রনোদনায় গলতি আছে।ভদ্রলোকের সন্তানেরা রাস্তায় নামলে আপনি একরকম কাদুনি গাইবেন, আর সেবাশ্রমিকের সন্তানেরা রাস্তায় নামলে আরেকরকম বলবেন, পেট্রনাইজ করবেন।প্রতিনিধিত্বের ব্যপারটাতে আন্তরিক হতে হলে, বৈঠকখানার চৌকাঠ আগলে দাঁড়িয়ে থাকার প্রবনতাও বাদ দিতে হবে ভাই।
সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে ঢাকার রাজপথে স্কুল
ছাত্রছাত্রিদের সপ্তাহ ব্যাপি ব্যাপক আন্দোলনের সাথে পুরোপুরি সংহতি সত্ত্বেও ওপরের প্রশ্নগুলো মনে এলো।চখাহা। ০৬/০৮/২০১৮।
এবার এবসার্ডে।
ঢাকাতে রোজ কেয়ামতের আগের দিনে গনভালবাসাবাসি
ফার্মগেটের নমুহুনিতে বাচ্চাকোলে এক মহিলার সাথে সংঘর্ষ এড়াতে বাসটা যখন প্রচন্ড হেচকায় ব্রেক কষলো অন্য পাশে বসা হিজাবি স্টাইল আটোসাটো শাড়ি পরা দোহারা চেহারার আবেদনময়ি অপরুপা আমার বুকে আছড়ে পড়লো
হিজাবের পিনের খোচায় আমার বুক থেকে বেরোনো রক্ত গড়িয়ে আবার ওনার ঠোটে গিয়ে লিপস্টিকালো আমাকে শক্ত করে আকড়ে ধরে উনি আমার দিকে অপরাধি চোখে তাকালো
রক্তমাখা ঠোট দাত ও মাড়িতে মায়াময় হাসিতে ফিকফিক সেই হাসিমাখা রক্তে রক্তমাখা হাসিতে উত্তরা থেকে ফার্মগেট অব্ধি এবং তা ছাড়ায়ে দেখাদেখি মাপামাপি ইঙ্গিত এবং সলজ্জ সঙ্কেত মওকা বুঝে আমি ওনাকে ভালবাসতে থাকলাম
উনি বল্লো, 'এত সকালেতো আমি কাউকে ভালবাসি নাই!' বুঝায়ে বললাম, 'আনবিক যুগে সকাল বিকাল বলে কিছু নাই, শুধু ভালবাসাকাল। তার উপরে অনলাইন অফলাইন সবখানে জানায়েছে, কালকে রোজ কেয়ামত, ভালবাসাবাসি যা বাসবার তা এই বেলাতেই সেরে নিলে ভালো।' বলে, সাত তাড়াতাড়ি একেবারে উদোম হয়ে ভালবাসতে থাকলাম 'সত্যিইইই রোজ কেয়ামত!', ফিসফিসায়ে ভদ্রমহিলা শাড়িব্লাউজঅন্তর্বাস বড় কাধব্যাগে ঢুকায়ে আমার তুমুল ভালবাসায় মুহুর্মুহু চুমুফুল ফুটায়ে ফাটায়ে পত্রপুস্পমঞ্জরিসহ প্রেম পুস্পহারের মালা গাথতে থাকলো
সিটিং সার্ভিসের বাসটা ছিলো যাত্রিতে ঠাসা জ্যাম থেকে সদ্যমুক্ত কারোই এরকম প্রচন্ড ব্রেকের প্রস্তুতি ছিলো না আচম্বিত ধাক্কাধাক্কির চিল্লাচিল্লি হট্টগোল আর চারকোনা আর্ত ভয়ার্ততা বিস্ময় আশ্চর্য অবাক সবাক শক ট্রিটমেন্ট ধোয়াধুলাসহ গিলে ফেলে কেউ কেউ বাচ্চাকোলে মহিলার সাথে সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য ড্রাইভারকে ধন্যবাদ জানালো তবে আমাদের উদোম ভালবাসাবাসিতে যত্রিরা যারপরনাই আমোদিত আহ্লাদিত আবার পরের দিন রোজ কেয়ামতের অনিবার্যতায় কিছুটা বিরক্তিমিশানো শঙ্কিত
ড্রাইভারের গায়ে তখন আরেক মহিলা লেপ্টে মলিন স্যান্ডেল যুবক হেল্পারের গায়ে আরেক ধোপদুরস্ত যুবক মাঝবয়সি বোর্কাওয়ালি মুখ ঘশছে ধবল গার্লসগাইড পোষাকির গালে রোজ কেয়ামতের আগের দিনের গনভালবাসাবাসির জোয়ারে ভেসে গেছে লিংগ বর্ন বয়স ধর্ম পোষাকের ভেদাভেদ প্রচন্ড ব্রেকে স্কিড করা বাসের পাশে এসে দাড়ানো দানবিয় কালো র্যাবকার পুলিশের টহলকারে পাশ দিয়ে ধিরগতিতে চলে যাওয়া পাব্লিক প্রাইভেট সমস্ত বাহনে ফুটপাতে সংসদে মার্কেটে পার্কেটে ঘাটে অঘাটে কারখানায় জেলখানায় সংক্রমালো পরের দিন রোজ কেয়ামতের ঘোষনা এবং গনভালবাসাবাসির উদোম প্রনোদনা দেহতত্বে দেহছন্দে ঘুচে গেল পদ পদবি ইউনিফর্মের রকমভেদ
সেই রাতে ঘরে ফিরে আমরা সবাই একটু বিব্রত কারন অফলাইনে অনলাইনে আবার জানালো 'আগামিকাল রোজ কেয়ামত হবে না' পাশে শোয়া বান্ধবি হঠাত হো হো হাসির হেচকিতে ডুবে গেল ফোনের ঐ পাশ থেকে এমারেল্ড হিজাবি জানালো তার পাশে শায়িত পরহেজগার স্বামিও হাসির ছররায় ভাসাচ্ছে হাসর এমারেল্ড হিজাবি ও আমি চ্যাটবক্সে পরস্পরকে সুধাচ্ছিলাম, 'এটা কি বোকামি হলো?' 'এটা কি হটকারি হয়ে গেল না?'
তারপর শজ্জাসঙ্গিগনসহ আমরা একমত হলাম 'মাসে অন্তত একদিন এইরকম গনভালবাসাবাসি দিবস দেশ ও জাতির জন্য ভাল' 'এবং রোজ কেয়ামত হবে পরের দিন এইরকম একটা ভয় ভয় ভান ভনিতাভাব থাকাও মন্দ না। ' 'কিন্তু গনভালবাসাবাসি স্বভাবটা হবে আন্তরিক স্বহজাত!' প্রত্যেক বাসে প্রত্যেক ট্রেনে প্রত্যেক প্লেনে প্রত্যেক রাস্তায় প্রত্যেক দেশে প্রত্যেক ক্লিকে দেহগুলা আরামসে ওড়াওড়ি করে দুষ্টামির স্বকাশে প্রত্যেক রজনিতে প্রত্যেক দিবসে প্রত্যেক দেশে
চয়ন খায়রুল হাবিব
১৫/০৮/১৭
ব্রিটানি
রজার ম্যাকগফের At lunchtime – A story of love এর অনুবাদ।