Tuesday 25 October 2016

টুটুলের 'পেন' পুরস্কারে বিলাতি বংগসমাজ নিরব!


‘শুদ্ধস্বর' প্রকাশনির আহমেদুর রশীদ টুটুলের পেন পুরস্কার প্রাপ্তি সংবাদের প্রাক কথনে ফেসবুক 'জুলেখা সিরাপ' পেইজে সদস্য কুদরত এলাহি লিখেছেন,

''বাংলাদেশের যে ব্যাক্তি সম্প্রতি সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেল,তাকে নিয়ে আমরা কতটুকু আলোচনা করেছি? কেন করতে চাই নাই? নিরাপত্তা না দেবার লজ্জা থেকে? এ পুরস্কারটি বাংলাদেশের জন্য তিরস্কারও বটে!টুটুলকে শুভেচ্ছা!''

ক্যানাডার জনপ্রিয় লেখিকা মার্গারেট অ্যাটউড পেন ইন্টারন্যাশনাল রাইটার অব কারেজ পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘শুদ্ধস্বর'-এর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ টুটুলকে মনোনয়ন দেন।মার্গারেট অ্যাটউড বলেছেন, ‘বাংলাদেশি একজন প্রকাশককে এই পুরস্কার দিতে পারায় সম্মানিত বোধ করছি। ভয়াবহ বিপদের মধ্যে টুটুল শুধু ব্যক্তিগত সাহসই দেখাননি, সহিংসতার কারণে যারা নিশ্চুপ হয়ে যাওয়ার হুমকির মধ্যে রয়েছেন, এমন অনেক বাংলাদেশির মুখে স্বর ফোটানোর ঝুঁকি নিতে সব কাজই করেছেন। এমন এক সময় টুটুলকে এই পুরস্কার দেওয়া হলো, যখন আমাদের কিছু বন্ধু কাগজে স্রেফ দু কথা লিখে প্রাণ খোয়ানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাঁদের এই চলমান দুর্দশা তুলে ধরতেই এই পুরস্কার প্রদানকে যৌক্তিক বলে মনে করি।’

২০১৫ সালের শেষ দিকে নিজের অফিসে ইসলামি সন্ত্রাসিদের আক্রমনে  মারাত্মকভাবে আহত হবার পর টুটুল দেশ ছাড়েন!বর্তমানে অবস্থান করছেন  নরওয়েতে।একই হামলাতে আহত হন লেখক রনদীপম বসু!অন্য আরেক হামলাতে একই দিনে ধর্মিয় সন্ত্রাসিরা ঢাকাতে নিজের অফিসে হত্যা করে জাগৃতী' প্রকাশনির কর্নধার ফয়সাল আরেফিন দিপনকে!বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক এবং 'মুক্তমনা' ব্লগের সংগঠক অভিজিৎ রায়কে এর আগে  ঢাকাতে ফেব্রুয়ারির বই মেলাতে প্রকাশ্যে হত্যা করেছিল  ধর্মিয় সন্ত্রাসিরা!দিপন ও টুটুলকে অভিজিতের লেখা প্রকাশের জন্য অভিযুক্ত করে হত্যার জন্য চিহ্নিত করে ধর্মিয় সন্ত্রাসিরা!

লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে পেন পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে টুটুল যে ভাষন দেন, তা ব্লগার হত্যাকান্ডের ফরেনসিকের পাশাপাশি   বাংলাদেশের টেস্টামেন্ট হিশেবে পরিগনিত হতে পারে!সদ্য প্রয়াত একজন শক্তিমান কবির সন্তানকে যখন আমরা দেশে বিবিধ বরমাল্য পরিয়ে দিচ্ছি, তখন কতজন স্মরন করেছি যে কিছুদিন আগে  ধর্মিয় সন্ত্রাসের শিকার কবি হুমায়ুন আজাদের সন্তানকে বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে তার চিন্তা নিজের মত করে প্রকাশের জন্য!

দেশে, ডায়াস্পোরাতে, বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, রাজধানি ও মফস্বলের যেসব বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, কথিত গবেষক, শিক্ষক, সাংবাদিক, শিল্পি ঝাকবেধে একে অপরের পিঠ চুল্কাচ্ছেন তাদের সম্মিলিত বাহবা ধ্বনিকে ম্লান করে দেয় টুটুলের ভাষন!সাহস কি যোগায়?

পুরস্কার পাওয়ার পর টুটুল তার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘বাস্তবতা হলো, আমাকে বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছে এবং বর্তমানে শুদ্ধস্বর তার কাজ চালিয়ে যেতে পারছে না। আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কীভাবে বিকল্প উপায়ে এটিকে চালিয়ে নেয়া যায়। তাই ই-বুক বের করার উপায় খুঁজছি। এছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে বাংলা বই প্রকাশ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে দিন দিন সন্ত্রাসবাদ বাড়ছে। তাই যেসব তরুণ এর বিরুদ্ধে নিজেদের মুক্ত চিন্তার বিকাশ ঘটাতে চান, তাদের লেখাগুলো ছাপানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ভাষায় অসাধারণ কিছু সাহিত্য লেখা হয়েছে এবং হচ্ছে।’
স্ট্যাটাসটিতে টুটুল আরো লিখেছেন,‘বাংলাদেশি লেখককরাও অসাধারণ কাজ করছেন। আমার মনে হয়, বাংলা সাহিত্য যদি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়, তবে বিশ্বব্যাপী পাঠকদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। তাই আমি বেশ কিছু লেখা ভাষান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি। বাংলাদেশি তরুণ লেখকদের ঈশ্বরে বিশ্বাসসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা বইগুলো অন্য ভাষায় অনুবাদ করার ইচ্ছে আছে আমার। প্রকাশনা আমার কাছে কেবল ব্যবসা নয়, বরং এটা আমার জন্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন। শুদ্ধস্বরের শ্লোগানই হলো, উৎসাহিত করা, ইমপ্রেস করা নয়। আমি আমার এই কাজ অব্যাহত রাখবো। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবার হাতে এসব লেখা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবো। আমার একার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। তাই আমার অনেক সমর্থন দরকার।’

সাহিত্যে নোবেলজয়ি প্রয়াত হ্যারল্ড পিন্টারের সম্মানে ২০০৯ সাল থেকে পেন ইন্টারন্যাশনাল রাইটার অব কারেজ পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। এটি ‘পেন পিন্টার প্রাইজ' নামেও পরিচিত। এর আগে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন সাহিত্যিক সালমান রুশদি, ক্যারল অ্যান ডাফি, সৌদি ব্লগার রাইফ বাদাওয়ি।

ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে দেয়া ভাষনে টুটুল যাদের দিকে ইঙ্গিত করেছে, তারা ছাড়াও বিভিন্ন স্তরে মেধাবিদের পিঠে ছুরি চালানো হচ্ছে, দল পাকিয়ে মেধাবিদের আড়াল করা হচ্ছে এবং প্রায়শ তা করা হচ্ছে প্রগতিবাদের নাম করে! এই বাংলাদেশে ভাষা, মানুষের বিরুদ্ধে, আততায়ির ঢাল হিশেবে কাজ করছে ধুরন্ধর জামাতি-মার্ক্সিস্টগন!সাহিত্যের, শিল্পের, প্রকাশের বিচিত্রতাকে করে দেয়া হচ্ছে হতদ্যম!কিন্তু আমরা উঠে দাড়াই এবং টুটুলের মাহেন্দ্র ভাষনকে আমাদের চলার পাথেয় করে তুলি! 


চয়ন খায়রুল হাবিব
২৫/১০/১৬
ব্রিটানি/ফ্রান্স

সুত্র : পেন ওয়েবসাইট, সংস্লিষ্টদের ফেসবুক পেইজ, ইউটিউব!উদ্ধৃতিতে মন্তব্যকারিদের বানান বজায় রাখা হয়েছে!