Wednesday 30 September 2015

ফ্রেঞ্চদের নিয়ে বাংগালির কিছু অপধারনা


এক ফেসবুক তারকা প্যারিস ইত্যাদি ঘুরে মন্তব্য করেছে যে ফ্রেঞ্চরা কিছুতেই ইংরেজি বলতে চায় না এবং ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে উত্তর দি্তে চায় না।এখন প্রথমত যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে ইংরেজি জানে কি না, তা ছাড়াও যে বাঙালি 'ইংরেজি' বলেছে সেটা ইংলিশ হয়েছে কি না!ধরুন একজন ইউরোপিয় কাকরাইলের মোড়ে দাড়ায় একজন বাংগালিকে সুধালো 'কাকরাইলের মোড় কতদুর?'!এখন সেই বাংগালি কাকরাইলের মোড় না চিনতে পারে, আবার বিদেশির উচ্চারনে কাকরাইল, কাকরোল হয়ে আরো ঝামেলা বাধাতে পারে।

আমার ছেলের মা কয়েক পুরুষ ধরে ফরাশিনি, সেতো পরিচয় তক আজ অব্দি বিশ বছর আমার সাথে ইংরেজিতেই বাতচিত চালালো।আবার প্যারিস পর্যটনে প্রতিদ্বন্দিতা করছে নিউইয়র্ক, লন্ডনের সাথে।প্রায়ই পর্যটকের শুমারিতে প্যারিস লন্ডন, নিউইয়র্ক থেকে আগায় থাকে এবং এটা সম্ভব হয়েছে ইউসার ফ্রেন্ডলিনেসের কারনে!গরিমাতো থাকবেই শ্যাম্পেইন, ওয়াইন, কোকো শ্যােনেল, আইফেল, জিনেদিন জিদান, মোটরযান, কঙ্কর্ড বিমান, কান ফিাল্ম উতদসব, টেনিস, ফুটবল, স্যুররিয়ালিজম, এক্সিস্টেনশিয়ালিজম, ব্রিজিত বার্দো, সবচেয়ে বেশি নোবেল বিজে্তার দেশ ইত্যাদি নিয়ে।আবার ঘোষিত বর্নবাদির সঙ্খ্যাও অনেক।আবার সমাজতন্ত্রি সরকার মুলধারাতে।

যাক, কথা হচ্ছিলো ফ্রেঞ্চরা ইংরেজিতে কথা বলতে চায় কি চায় না তা নিয়ে!এক যুগের ওপর বিলাতে কাটিয়ে গত আট বছর যাবত আমি থাকি ফরাসি মফস্বলে, ফরাসি প্রায় জানিই না, শিখে নে্যাটাও হয়ে উঠে না, মগজে বাংলা ঠেসে থাকার কারনে।প্যারিসে মাঝেসাঝে যাই, লন্ডন থেকে ইংরেজ বলনেওয়ালি মেয়ে এলিস এবার এক্সচেঞ্জ স্টুডেন্ট হিসাবে সাংবাদিকতা শিক্ষার থার্ড ইয়ার শেষ করতে এসেছে প্যারিসের বিশ্ববিদ্যালয়ে।এলিস ফ্রেঞ্চ তেমন জানে না, খোদ প্যারিসে কোর্সগুলো করছে ইংরেজিতে এবং তা নিচ্ছে ফ্রেঞ্চ শিক্ষকেরা।

ঢাকা যাদুঘর ঘুরে যেরকম বাংলাদেশকে বোঝা যাবে না, সেরকম ট্যুরিস্ট পাড়ার আর্ট, প্রত্নতাত্বিক যাদুঘর ঘুরে ফ্রান্সকে বোঝা সম্ভব না।সুনীল গাঙ্গুলিতো সপ্তাহ খানেক প্যারিসে থেকে বিশ্বকোষ থেকে টুকে লিখে ফেলেছিল, 'ছবির দেশে, কবিতার দেশে'।মাইকেল পুরো এক বছর ভার্সাইতে কাটিয়েও হয়ত ফরসি সংস্কৃতির প্রতি সম্ভ্রমবশতই হুট করে কিছু লিখে বসে নাই।আবার মাইকেল মধুসুদন ও তার ইংরেজ স্ত্রি হেনরিয়েটা তেমন ফরাসিও জানতো না।

ছবি, কবিতা ফরাসি সংস্কৃতির সব কিছু নয়া।এর বাইরেও এদের বিভিন্ন অঞ্চলের খাওয়া দাওয়া, পানিয়, পনির, নাচ, গান এবং যৌন উদার দৃষ্টিভংগি্র ব্যাপারতো আছেই।যৌন উদারতাকে যথেচ্ছাচারের সাথে ঘুলিয়ে ফেলি অনেকে।সেটার আবার আরেক শিল্প সমর্থিত ধারা সাাদিজম।সম্পর্ককে এরা খুব গুরুত্ব দেয়, সম্পর্কের ইগালেটারিয়ানিজমে প্রায়োগিকভাবে ততপর।বড়্ ব্যাপার অপর সংস্কৃতি নিয়ে এদের উতসাহ!প্যারিসে, মফস্বলে চিনা খাবার, তুর্কি কেবাবের কিয়স্কের ছড়াছড়িতে তার প্রমান মেলে।এসব চলছে ফরাসি ভাষার তোয়াক্কা না করেই।

তবে ফরাসি ভাষাটা গেরোস্থালির ঘরামিতে খোলে ভাল।ছেলে যখন ওর মায়ের সাথে ফরাসিতে কথা বলে তখন ভাষাটার লালিত্য ধরতে পারি, পিয়ানোর চড়াই, উতরাই ক্রিসেন্ডোতে ভরপুর।সুনীলের মত জাদরেল কথাশিল্পি এক সপ্তাহে যা ধরতে পারে নাই, ট্যুরিস্ট পাড়াতে সেলফি তোলার ভিড়ে উলটাপালটা সিংসং ইংলিশ উচ্চারনে তা ধরে ফেলা যাবে তাতো ভাবাই যায় না।তার ওপর আছে ফরাসিরা ব্যাং খায় ইত্যাদি।ওহ, ব্যাঙ্গের পা পাওয়া যায় এখানের সুপারমার্কেটে, লোকে খায়ও নিশ্চয়, তবে আমার পরিচিতদের খেতে দেখি নাই।আমার ছেলেমেয়েতো কোনরকম মাংসের স্বাদই জন্মাবধি জানে নাই, খায় নাই।সে আরেক ব্যাপার।

কথা হচ্ছিলো ফরাসিদের বিদেশি ভাষা জানা নিয়ে।নিজেদের ভাষাকে বড় করেছে নিশ্চয় আরো অনেক ভাষা থেেকে নি্যেথুয়ে।সে লেন্দেনের কাহিনি অনেক লম্বা, চওড়া।আপাতত বিদায় জানাই!আবিয়ান্তো!


চয়ন খায়রুল হাবিব
২৯/০৯/১৫
ব্রিটানি