পাবলো নেরুদার জিবনের একটি পর্যায় নিয়ে তৈরি মাইকেল ব্রাডফোর্ডের ছবি "ইল পোস্তিনো"তে ছোট বড় অনেক কবিতা ব্যবহার করা হলেও; ধমনি, যকৃত, ফুশফুশের কাজ করেছে নিচের তিনটি কবিতা।বড় পর্দায় ১৯৯৪ তে নেরুদার বন্ধু স্থানিয় ডাক হর্করার ভুমিকায় মাসিমো ত্রোয়াসির মুখে কবিতাগুলোর পাঠ শোনা পুনর্জন্ম নেবার বোধ সঞ্চার করে!কবিতাগুলোর অনুবাদ শুরু করি ১৯৯৭তে; এখনো কি শেষ করতে পেরেছি!
তোমাকে পছন্দ করি স্থিরঃ
তোমাকে পছন্দ করি এক্কেবারে স্থির
এমনটা য্যনো তুমি আসলে নেই
আমাকে শুনতে পাচ্ছ দুর থেকে,
কিন্তু আমার গলার স্বর তোমাকে ছুচ্ছে না
তোমার চোখগুলো কোথায় য্যনো উড়ে গেছে
তোমার মুখ তালামারা চুমুর সিলগালায়
সবকিছুতেই আমার আত্মা
তুমি আবার আমার সবকিছুতেই
আমার আত্মার স্বপ্নের প্রজাপতি
এবং তুমি “বিশন্নতা” নামক
শব্দটার ধারক ও বাহক
আমি তোমাকে পছন্দ করি এক্কেবারে স্থির
মনে হতে পারে তুমি শোকাহত
প্রজাপতি কাতরাচ্ছে ঘুঘু পাখির মত
দুর থেকে ঠিকই তুমি আমাকে শুনতে পাচ্ছ
কিন্তু আমার গলা তোমার কাছে পৌছোচ্ছে না
আমাকে তোমার নিরবতায় সুস্থির হতে দাও
তোমার নিরবতার সাথে আমাকে কথা বলতে দাও
সে-কথাগুলো পিদিমে জ্বলজ্বলে
আংটিতে সাধারন , তারাদের ভিড়ে তুমি রাত
তোমার নিরবতা অনেক দুরের তারাদের সিথানে কাত
আমি তোমাকে চাই এক্কেবারে স্থির
কিন্তু তুমি নেই, দুরে অনেক দুরে দুঃক্ষিত
আর হবে হয়ত মরেই গিয়েছ
একটু কথা, একটু হাসি-তাই যথেস্ট
তাতেই আমি খুশি,খুশি যে এসবের কোনটাই সত্যি না
কবিতাঃ
এবং ঐ বয়সটাতে...কবিতা এসেছিল
আমার খোজে।আমি জানতাম না,
জানতাম না কোথ্যেকে,
শিতকাল না কি নদি থেকে,
কিভাবে কখন জানতে পারি নি,
না, কোনরকম শব্দও শুনিনি,
নিশব্দও না,
কিন্তু রাস্তা থেকে ও আমাকে ডেকেছিল,
পুড়তে পুড়তে,
ভয়ঙ্কর আগুনের হলকায় হুটোপুটি করতে করতে,
রাতের ডালপালারা ডেকেছিল ইশারায়ঃ
ভিড় থেকে দুরে সরে যেতে বলেছিল
আমার তখন কোন চেহারাই ছিলনা
কিন্তু কবিতা ঠিক ঠিক আমার
চেহারাকেই ছুয়েছিল
জানতাম না ঠিক কি বলতে হবে,
আমার মুখে নাম ধাম তেমন আসেনা,
চোখ তখন অন্ধ,
ভেতরে কেমন একটা তোলপাড়,
জ়্বর জ্বর ভাব য্যনো পথ হারানো ডানা-ভাঙ্গা পাখি,
কিন্তু ঠিকই পথ বের করে ফেলেছিলাম
ঐ ভয়ঙ্কর আগুনের গোপন সংকেতের পাঠ শিখে নিয়েছিলাম,
প্রথম অস্পষ্ট লাইনটি হুট করেই চলে এসেছিল,
অস্পষ্ট , বড় কোন অর্থ নেই, কিন্তু খাটি,
আগামাথা নেই, বকুনি,
কিন্তু নির্ভেজাল জ্বান,
অগ্বানের গ্বান আর কি
হঠাত স্বর্গ দেখে ফেলেছিলাম,
স্বর্গের দুয়ার খুলছে
আর বন্ধ হচ্ছে
তারারা পিট পিট করছে
ছায়ারা ছিড়ছে খুড়ছে
ছায়াতে, তারাতে
তির ধনুকে, আগুন এবং ফুলদের ধাধা,
রাত আর পৃথিবি এলানো বিশ্রামে।
এবং আমার অস্তিত্বের শেষ নেই,
মহান তারাদের শুন্যতায়
মাতাল,রহস্যের ছবি ও ছায়ায়
নিখোজ নিজের ভেতরের গোলক ধাধায়
কিন্তু খাটি
বাদলা বাতাসে তারাদের মেলায়
নেংটো সুন্দরির বন্দনায়ঃ
খাস কলিজায়
পাক সাফ চোখে
আমি তোমার সৌন্দর্জ উদজাপন করি
অঝরে ঝরা রক্তপাত ধরে রাখি
যাতে তা লাগাম পরাতে পারে
আমার কবিতায় শোয়া
তোমার শরিরের বাকে
জংগল ঘেরা জমিতে
অথবা সমুদ্রে সার্ফিংঃ
সুগন্ধি ফেনায়
সাগরের বাজনায়।
ও নেংটো সুন্দরিঃ
সমান তালে তালে সুন্দর
তোমার পায়ের পাতা
প্রাচিন বাতাস আর শব্দের
কারুকাজ আঙ্গুলের ভাজেঃ
কানের লতি
আমেরিকান সাগর সেচা
ছোট ছোট শামুকের খোল;
পুরুষ্ঠ বুক জোড়ায়
জ্যন্ত জ্যন্ত আলোর কলরোল
উড়ন্ত
পাপড়িরা
খুলছে
আর ঢাকছে
চোখের দুই গভির মহাদেশ
তোমার ঘাড়ের বাক
যেখানে দু’ভাগে হারিয়েছে
ধুসর পায়ের চামড়ায়
সেখানেই গলেছে
মাঝখানে সমান করে কাটা
আপেলের জমকালো দুটি টুকরো,
তোমার সৌন্দর্জ দু’ভাগে নেমে যায়
সোনায় মোড়ানো দুটি থাম্বায়-
আমরা যাদের বলি রান বা উরু
ধিরে ধিরে ডূবে যায়
আঙ্গুরের থোকায় ঢাকা
পায়ের পাতায়,
ওখানে তোমার জমজ গাছ
আবার পোড়ে এবং আবারো ওড়েঃ
আগুন ঝরায়, ঝাড়বাতি দোলায়,
গাছপাকা ফল
সাগরের সাথে পৃথিবির
মিতালি পাতায়
কি খনিজে, কি ভেষজে
তৈরি তোমার দেহা-
মনকা পাথরে, সোলেমানি আকিকে,
সিলিকা বালুকনায়, গমের একহারা দানায়,
তান্দুরিতে ফুলে ওঠা পাউরুটি
সংকেত পাঠাচ্ছে
রুপালি
পাহাড়কে,
মিষ্টি ফলের ভেতর
নরম মখমল,
ততক্ষন হাশফাশ
যতক্ষন আশ
তুলতুলে আর পেটোয়া
নারির গড়ন?
শুধুমাত্র আলোই
পৃথিবিতে ঝরে না,
তোমার দেহের ভেতর ছড়াচ্ছে
দম আটকানো তুষার
ধরেই নিয়েছে ওরা
ভিতর বাড়িতে তুমি পুড়ে খাক
বাহির বাড়িতে চামড়ার ভাজে ভাজে চাদের সর্বনাশ
চয়ন খায়রুল হাবিব
১৯৯৭-২০০৮
লন্ডন/ব্রিটানি
আবৃতি বা আবার ছাপতে অনবাদকের অনুমোদন বাঞ্ছনিয়।চখাহা।
"বাংলাভাষি সামাজিক নান্দনিকতায় দির্ঘ ইকার আর দির্ঘ উকারের আর প্রয়োজন নেই।ঐ রকম উচ্চারনের জন্য যে আয়াস, চোয়াল, নাক দরকার বাংলাভাষিরা আর সে জায়গাতে নেই।"চখাহা।