Monday 1 October 2012

রামুতে বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংশঃ কারা দায়ি?

''তারাদের বাস্তব রূপকথায় ত্রিপিটকের ভেলা
ভেলাগুলো কালবেলার কুমার কুমারীদের বাহন
লেজ আঁশ কানকো দাঁড়াসহ ওরা কখনো মাছ কখনো মানুষ
আর ওদের পূর্বপুরুষ পূর্বরমণীরা
ইতিহাসের ডুবসাতারে ভাসবার আগে অস্ফূটে বলে
শরণাং গচ্ছামি : গৌতমই এখন সর্বহারাদের ঘরামি''

সাম্প্রদায়িকতাকে যদি কক্সবাজারের রামুতে সাম্প্রতিক বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংশের কারন হিশাবে ধরা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে কথিত পরিশিলিত, বিত্তবান বুদ্ধিজিবিদের একাংশই ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে এই সাম্প্রদায়িকতার ইন্ধন ও পুষ্টিসাধন করছে!
হাজার বছর আগে বিক্রমপুরের বাঙালি অতিশ দিপঙ্কর বর্নাশ্রম বিরোধি বুদ্ধ্ববানি ছড়িয়ে দিয়েছিল সে-সময়কার ৯৫% ভাগ বৌদ্ধিক বাংলাদেশ থেকে সুদুর তিব্বতে! অতিশের দেহভস্ম আজকের বাংলাদেশের রাজধানিতে রক্ষিত হলেও, সেই বানির অনুসারিরা নিগৃহিত হয় বিভিন্ন অজুহাতে; তাদের উপাসনালয় পুড়িয়ে দেয়া হয় পৈশাচিক তান্ডবে!তান্ডবের নাটের গুরুদের বিজাতিও  ভেদবুদ্ধিকে বাংলা একাডেমি, একুশে পদক দেয়া ছাড়াও জাতিয় অধ্যাপকের মর্জাদায় ভুষিত করা হয়!

রামুতে ধ্বংশযজ্ঞ্ব থেকে রক্ষা পাওয়া কয়েকটা বুদ্ধমুর্তিকে পুড়ে যাওয়া মেঝেতে বসেই অর্চনা করছে একজন পুজারি।ওয়ারি বটেশ্বর থেকে মহাস্থান গড়ে, ময়নামতিতে এরকম খাটো ধুতিতেই হাজার বছর ধরে অর্চনা, আরাধনা করেছে বাঙ্গালি!এই নিশাত, কিরাত, অস্ট্রিক এবং মংগোলয়েডরাই আমাদের জ্ঞ্বাতি-শিকড়।এদের যোগ, সাঙ্খ্য ধর্মের পথ ধরেই চর্যার রচনা এবং বর্নাশ্রম বিরোধি বৌদ্ধিক প্রবর্তনা; এ-পথ ধরেই এসেছে লালন, চৈতন্য, সুফিবাদের সহজিয়া।এই পথবন্ধনকে ভ্রস্ট করতেই 'আলোকিত মানুষ', 'সাচ্চা ইমানদার' খোজের নামে জারি করা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা!


ইসলামি ছাত্র শিবিরের সাচ্চা ইমানদারদের সত্যায়ন করছে  আল মাহমুদ


উপরে মাহমুদ বলছে যে 'বুর্জোয়া' সমাজে মেধার বেচাকেনাই মুল বিবেচ্য।এক সময়ে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসি এই আল মাহমুদের জানা উচিত যে কোন, কোন বুর্জোয়া পুজিবাদি সমাজেই পরবর্তি ধাপে কল্যানমুলক রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে; আর ঐ কল্যানমুলক রাস্ট্রেই এ-অব্দি শ্রমিক আন্দোলন বা ট্রেড ইউনিয়নের বিকাশ সবচেয়ে বেশি বেশি হয়েছে এবং এই সমাজগুলাতেই শ্রমিকের মজুরি সবচেয়ে বেশি।আবার মেধার তারতম্য হলেও মানষিক, দৈহিক বিকলাংগকেও কল্যানমুলক সমাজ ন্যাজ্য সামজিক নিরাপত্তা বিধান করছে।আল মাহমুদ বা তার পৃষ্ঠপোষকেরা অনেক কিছুই জানে; কিন্তু তাদের লক্ষ্য হচ্ছে জানাটাকে বিভিন্নভাবে কেটেছেটে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানো!এরা কখনোই বলবেনা যে কল্যানমুলক রাস্ট্র কাঠামোতে প্রশাসনের সাথে ধর্মানুষঙ্গের বিচ্ছেদ ঘটিয়েও ধর্মাচারের স্বাধিনতা বিধান করা হয়েছে!দ্রস্টব্য যে সামন্ত অবক্ষয়ের তলানি থেকে যে উগ্র ধর্মবাদি বিষ বাস্প উঠে আসে তাকে মাহমুদ সর্বরোগহর মধু বলে দাবি করছে এবং কথিত জেহাদ বা ইমানি জোশের আড়ালে নিজের সামন্তবাদি নান্দনিকতা লুকাতে চাইছে।


আল মাহমুদ এবং তদিয় গংদের আরেকটা প্রিয় শব্দ হচ্ছে 'অপসংস্কৃতি'!যার সাথেই নিজেদের ক্ষ্মতায়নের মিলবেনা সেটাই 'অপসসংস্কৃতি'!এর মাধ্যমে ভিন্নমত, ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন যাপনভংগির প্রতি অসহনশিলতার বিজ আরোপ করা হয় এবং তা করা হয় অঙ্কুরেই।শুধুমাত্র ইসলামি ছাত্র শিবিরের পৃষ্ঠপোষক জামাতের ছত্রচ্ছায়ায় এটা করা হলে সাম্প্রদায়িক অসহনশিলতা এত ব্যাপক হতে পারতো না।১৯৭১-এ পাকিস্তান প্রবর্তনাকে প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশিরা ইতিমধ্যেই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধ্বে যে ম্যান্ডেট তৈরি করেছিল; আল মাহমুদের পৃষ্ঠপোষকেরা সেই ম্যান্ডেট নস্যাতে মুল লক্ষ্য হিশাবে নির্ধারন করেছে যাদের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের পর তাদেরকে।এদেরকে লক্ষ্য করেই গড়া হয়েছে শত, শত কোচিং সেন্টার।'পুজিবাদ'কে ধিক্কার জানালেও ঘুরপথে সৌদি পেট্র ডলারেই গড়া হয়েছে প্রাইভেটে ব্যাঙ্ক, বিদ্যালয়।আনুপাতিক হার করলে দেখা যাবে বাংলাদেশে যে পরিমান বৌদ্ধিক জনসংখ্যা, সেই তুলনায় শত কোটি ডলার বেশি বাংলাদেশ প্রতি বছর আয় করে মহাস্থান গড়, ময়নামতি বিহারের ধ্বংশস্তুপ দেখিয়ে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তহবিল থেকে।কিন্তু বৌদ্ধধর্ম প্রত্নতত্বের বিষয় নয়, বরং ক্রম বিবর্তনশিল এবং চলিষ্ণু একটি প্রক্রিয়া!এই প্রক্রিয়া এবং অপরাপর চলিষ্ণূ ভিন্নমত, ধর্মাচারের সাথে বিভিন্ন উপায়ে সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে!

সংস্কৃতির ক্ষেত্রে রবিন্দ্রনাথ, নজরুলদের হাইজ্যাক করে  আব্দুল্লাহ আবু সায়িদের 'বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে' কিশোর, কিশোরিদের কাছে বার বার 'আলোকিত মানুষ' হিশাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে আল মাহমুদ এবং জামাতমুখি বুদ্ধিজিবিদে্র।শুধু যে সাম্প্রদায়িকতাকেই এগিয়ে দিয়েছে আল মাহমুদ তার যাপনে তাই নয়, নান্দনিক পরিশিলনের অর্জিত মানদন্ডকেও পিছিয়ে দেবার প্রয়াস পেয়েছে।উপরের ভিডিও ক্লিপে মাহমুদ যা পড়ছে তা নান্দনিক মাপে প্রাথমিক ছড়া বৈ নয়!এভাবে ছড়াকে কবিতা বলে বার বার উপস্থিত করে কবিতা পাঠকের ইতিমধ্য বিকশিত ভুমাকেও পেছনে ঠেলে দেয়া হয়েছে।একে আমি, বাজে মানুষ কিন্তু ভাল কবি'র আক্ষ্যা না দিয়ে বাজে মানুষ এবং বাজে কবিই বলতে চাই।

আবার কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দের জিবিতকালিন বিভিন্নরকম সুচি মিলালেই দেখা যাবে 'বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র' এবং সৈয়দ আলি আহসান, আল মাহমুদ গংদের সত্যায়িত অজ্ঞ্বেয়বাদি পাঠসুচি তামিল করাটাই তার মুখ্য কাজ হয়ে উঠেছিল!আর সে-পাঠক্রমের বাইরে যাই জ্ঞ্বেয়বাদি তাকে অবজ্ঞ্বা, একপেষে সমালোচনা এবং লোপাট করে দেয়াটাই ছিল কৌশল। জামাত-শিবিরিও কোচিং সেন্টার থেকে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্রে ঘুরিয়ে, ফিরিয়ে শামসুর রাহমান, হুমায়ুন আজাদ, ওয়াহিদুল হক, কলিম শরাফি, সুফিয়া কামাল, জাহানারা ইমামসহ অপরাপর প্রাগ্রসরদেরই করে তোলা হয়েছে খলনায়ক।এদের নায়ক তাহলে কারা?নিচের ছবিটার দিকে তাকানো যাকঃ


প্রয়াত জাতিয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সাথে আহমেদ সফা 
।বাংলাদেশে মৌলবাদি প্রতিক্রিয়াশিল গংদের একটা প্রিয় কিতাব হচ্ছে আহমেদ সফা রচিত এবং পছাত্তরের পট পরিবর্তনের পর পর প্রকাশিত 'বাঙালি মুসলমানের মন'।সফা প্রকাশিত, অপ্রকাশিত বেশুমার 'কবিতা' লিখেছিল, কিন্তু তার আগের, পরের বা সমকালিন কেউই সফার লেখা অখাদ্য প্রাথমিক পংতিমালাকে কবিতা পদবাচ্য বলতে রাজি হয় নাই।এতে কবিদের প্রতি সফার বেশ রাগও ছিল বোধ করি।আবার ঐতিহাসিকভাবেই বাঙ্গালির কাছে কবি হচ্ছে নাস্তিক!কবিদের উপর রাগ না কি অন্য কোন নিউরোলজি থেকে সফা 'বাঙালি মুসলমানের মন' লিখেছিল তা বলা দুস্কর।তবে বিভিন্ন দুতাবাসের হয়ে পেষাদারি অনুবাদে সফার বেশ সুনাম ছিল।স্বতপ্রবৃত না কি অনুরুদ্ধ্ব হয়ে সফা এই লেখাগুলা লিখেছিল কি না তাও আমার জানা নাই।তবে সে এই বইটা উতসর্গ করে জাতিও অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক'কে এবং রাজ্জাকের মৃত্যুর পর প্রকাশ করে 'যদ্যপি আমার গুরু'!

উপরের ছবির সাথে সফার উল্লেখিত প্রকাশনা দুটির শিরোনাম মিলালে মনে হতে পারে যে সফার মুখ দিয়ে রাজ্জাকই বলছে।কিন্তু অধ্যাপক রাজ্জাকের জিবতকালিন এই বইগুলোর ব্যাপারে তার কোন প্রামান্য সাড়া পাওয়া যায় নাই।বার বার রাজ্জাকের নাম নিয়ে এসব প্রকাশনাকে জায়েজ করাটাও সফার নিজস্ব ওজনকে প্রশ্নসাপেক্ষ করে!দেখা যাবে যে সফার কথিত অনুসারিরাও তাদের বক্তব্যে, সাক্ষাতকারে এর তার নাম বসিয়ে দিচ্ছে রেওয়াজ মাফিক!হতে পারে যে পরিচয় সঙ্কটের ব্যাক্তিগত নিউরোলজিকে সফা জাতিয় সঙ্কট মনে করেছে!
১৯৭১এর মুক্তিযুদ্ধে যে পরিচয় সঙ্কটের নিস্পত্তি হয়েছে; ১৯৭২এ সমাজতন্ত্রকে ভিত্তি করে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে যে পরিচয় সংহত করা হয়েছে; ১৯৭৬ এ এসে 'বাংগালি মুসলমানের মন' জাতিয় প্রকাশনা দিয়ে সেই নিস্পত্তি হওয়া, সংহত পরিচয়ের উপর সঙ্কট আরোপ করে, সে পরিচয়কে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়া এসব প্রকাশনার উদ্যেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ্ব করে।

সফা্র বইতে বিভিন্নরকম জাত্যাভিমানি পর্জবেক্ষন থেকে  জামাত, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র গংরা যেভাবে সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়াশিল ভেদবুদ্ধিজাত পোলেমিক্সের রসদ পেয়েছে; সেধরনের ধর্মজাত-জাতিয়তাবাদি-ফুটবল-ময়দানি লেখাতে ভরে গিয়েছিল ইটালি, জার্মানি মুসোলিনি, হিটলারের পুরোটা ফ্যাসিস্ট শাশনামল জুড়ে; একই ঘটনা ঘটেছিল টিটোর মৃত্যুর পরের ইয়গোস্লাভিয়াতে বিভিন্ন উগ্র ধর্মভিত্তিক জাতিয়তাবাদি প্রকাশনায় ও প্রচারনায়।উলটাপালটা  সমিকরনকে মার্ক্সিও বশিকরন মন্ত্র বলে চালানোর জন্য খ্যাতনামা 'বাংলাদেশ লেখক শিবিরের' প্রতিষ্ঠাতাও এই আহমদ সফা।এই একই সংগঠনের সভ্য আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হসান আজিজুল হক।ইলিয়াস বা হাসান, সফার 'বাঙালি মুসলমানের মন' কখনো সত্যায়িত করেছিল কি না আমার জানা নাই!সত্যায়িত না করলেও নিন্দা করেছিল কি না তাও আমার জানা নাই!কিন্তু তারা নিশ্চয়ই জানতো যে এই বইটার গুনে ব্যাক্তি সফা কথিত মার্ক্সিস্ট-জামাতিদের ডার্লিং হয়ে ঊঠেছিল এবং এখনো সেই মর্জাদায় আসিন!

'প্রাদোষে প্রাকৃতজন' পড়লে আমরা একটা জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধ্বে এক মহা অন্যায়ের ঘটনা জানতে পারি, কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে সেই অন্যায়ের আল বদর, রাজাকার সংগঠকদের নাম জানতে পারি না।১৯৭১এর মারনযোজ্ঞ্বের  জামাতি হোতাদের নাম আমরা জানি, তাদের বিচার এখনো সম্পন্ন হয় নাই।সেই বিচ্চারের পথ ধরেই আমরা জানতে পারবো রামু এবং অন্যান্য ঘটনার নৈতিক বা অনৈতিক দায়িত্ব কাদের উপর বর্তায়!এখানে লালনের গান শুনায়ে বিমুর্ততার অবকাশ আর নাই।আমরা বিলা খেয়েছি এবং আমাদের বিলাতেই বুদ্ধের ওম পাদ্মে হুম!এটাকে যে অপসংস্কৃতি বলে সে বাঙ্গালির শত্রুপক্ষ্য।

চয়ন খায়রুল হাবিব
১/১০/১২
ব্রিটানি।ফ্রান্স


লেখাটা নিয়ে ফেসবুকে কথাবার্তাঃ