Sunday, 5 December 2010

লৌকিক ধ্রুপদে

 রবীন্দ্রনাথের নামের বানান ছাড়া ঈকার, ঊকার, ণ, চাদবিন্দু  না-ব্যাবহার মার্জনাসুন্দরভাবে দেখবেন।চখাহা

প্রকরন বনামঃ

সভ্যতার সঙ্কেতসুত্র যে মুদ্রামান, তা শক্তিশালি না হলে কি সাহিত্য শক্তিশালি হয় না?মুদ্রামানের থেকেও এগিয়ে থেকে ধ্রপদ'কে নিত্য প্রয়োজনিয়তাতে কিভাবে গড়ায়ে নেয়া যায়?

শক্তির সাথে মুদ্রামান বেধে দিলেই কেবল উপরের প্রশ্ন'টার ভ্যালিডিটি থাকে!কিন্তু সাহিত্যের মৌলিক প্রবর্তনাতে যে-জাগতিক-যত্নবোধ তা ওপরের প্রশ্নটার ভ্যালিডিটির সাথে জোর-যার-মুল্লুক-তার প্রবনতাগুলার বিরোধিতার পাশাপাশি আবারো কিন্তু উপরের প্রশ্নটারই একটা বৈধ, অবৈধ ঘুর্নিপাকে জড়িয়ে যায়!যার ফলশ্রুতিতে লৌকিক হাস্যরস, করুনরসের পাশাপাশি কখনো, কখনো বিররসের উসিলায় পারলৌকিক প্রতিকের চোখ রাঙ্গানি!

মুদ্রারাক্ষসের স্বার্থপর পেষল প্লাস্টিকের থাবা যখন হয়ে উঠে শ্রমিকের পুস্টির নিয়ন্ত্রক, তখন কিন্তু অলৌকিকতার মোহজাল পারায়ে আরেকবার ধ্রুপদের লৌকিকতায় আস্থাশিল হবার একটা ইচ্ছা জাগতেই পারে!নাই, নাই মামলার বিবাদি, ফরিয়াদি পক্ষ্য দুজনেই এখানে সামজিকভাবে দেউলিয়া!মেথডবাজির এক
অপুষ্ট, নিম্নপুষ্ট, অভাবপুস্ট এবং এমনকি যোগ্যপুস্ট হাপিত্যেসের কারনেই এপিক বা বর্ননাধর্মিতা হয়ে উঠতে পারে শক্তিকাঠামোর সমান্তরালে বহুস্তরবিশিষ্ট চিরকাসিয়ান ঢালঃ যার যার রুপকথা সে সে লিখে ফেলতে পারলে আমরা প্রত্যেকেই হয় উঠতে পারি একে অন্যের নিবিড় দর্পনঃ পরস্পরের পাঠক!

প্রকরনের খোজে হন্য হয়ে, বিজ্ঞ্বাপনি উদ্ভাবনিতে চমকে উঠে যারা genre মেশাচ্ছে;  প্লট, চরিত্র, উতপ্রেক্ষার তলাশে বিবরনিকে যারা করে তুলছে চুল ছিড়বার সামিল; তাদের কাছে মনেই হতে পারে যে গোলমাল'টার তত্ত্ব লুকায়ে আছে 'হয়েছে', 'হইসে', 'হইতেছে'র ফারাকের ভিতর!গোলমালের তত্ত্ব-তলাশের ছিরি ছাদ এখানে বেধে ফেললে সবচেয়ে আপাত সহজও গড়াবে আলঙ্কারিকতার নবায়িত চোরাবালুতেঃ যার গাল ভরা নাম মেথডোলজি, আধুনিকতা, প্রাগাধুনিকতা, পোস্ট, প্রি-পেইড-পোস্ট, রিপোস্ট ইত্যকার পোস্টাপোস্টিতে!চিঠিত কতভাবেই লেখা যায়!লেখার আগের কাগজটার যে শুন্যতা তারও কিন্তু একটা বিবর্তিত ইতিহাস আছে যার যোগসুত্র সবসময়েই ধ্রুপদি বর্ননাধর্মিতা!genre সেখানে ছেদবিন্দু, গন্তব্য নয়!

প্রাদেশিকতা বনামঃ

মুঘল সাম্রাজ্যের দরবারি ভাষা হলেও পাকিস্তানের সুচনালগ্ন থেকেই উর্দু ভাষা একটা প্রাদেষিক চারিত্র অর্জন করে!সামন্তবাদের কুপমন্ডুকতা অর্থেই এখানে 'প্রাদেশিক' শব্দটা ব্যাবহার করা হ'লো।দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের পর পর নিজেদের সামজিক, রাজনৈতিক আচরনের খোল নলচে সমুল সংস্কারের আয়োজনে ব্যাস্ত হবার পাশাপাশি উপনিবেশবাদি শক্তিগুলা আঞ্চলিক জাতিয়তাবাদের অবক্ষয়ি প্রতিকগুলাকে চিন্নিত করতে সমর্থ হয় এবং দির্ঘমেয়াদে নিজেদের স্বার্থোপযোগি করে তোলে!বৈশ্বিক ক্ষ্মতাবলয়ের যে পক্ষ্যপাত এবং তার ভেতর জ্বালানি রাজনিতির কারনে মধ্যপ্রাচ্য নিতির যে একপেষে রমরমা সেখানে পাকিস্তান যে ধারনা ও প্রবর্তনা  হিশাবে মুল মধ্যপ্রাচ্য-নিতির কোন ধরনেরই গন্তব্য নয় বরং  একটা বাই প্রোডাক্ট তা বুঝতে এখন আর জুলিয়ান আঙ্গাসের ওয়াইকিলিকের দুয়ারস্থ না হলেও চলে!

কিন্তু এই বাই প্রোডাক্টের সংশ্লিষ্টতা যে বাংলাভাষার ধ্রুপদি নান্দনিকতার ধারাবাহিকতাতেও প্রাদেশিকতার শর্তদুষন ঘটায়েছে, তার সুরতহাল ফরেনসিক প্রতিবেদন কিন্তু এই ভাষার চর্চাকারিদের নিরোগ পথ্যনির্দেশের জন্যই জরুরি হয়ে উঠেছে!

পাকিস্তানি কৃষ্টিসংলগ্ন যে-ইকবাল চর্চা, অন্তর্গত চারিত্রে তা প্রাদেশিক হবার ফলে তার বহিরাঙ্গিক প্রতিক্রিয়াতে পুর্ব  পাকিস্তানে এবং পশ্চিম বঙ্গেও রবীন্দ্রনাথের চর্চা তথা ধ্রুপদের ধারাবাহিকতা আমার ধারনাতে প্রাদেশিক হয়ে পড়ে!ধ্রপদের কালান্তরি, লিঙ্গান্তরি প্রবর্তনাগুলাও হয়ে পড়ে পুরুষতান্ত্রিক!
পাকিস্তান আরো কিছুদিন টিকে গেলে সমস্ত অসত্য, ভুল সত্যের দায় বহন করে রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠতো ইকবালের সম্পুরক!কি হতে পারত তার চেয়েও দেখা
যাক কি ঘটেছে!যা ঘটেছে তা হচ্ছে সামাজিক, আত্তিক পর্জায়ে স্কিতজোফ্রেনিক হেলুশিনেশান!অডিও এবং ভিজ্যুয়াল দুই অর্থেইঃ মসজিদের পাশে নজরুল'কে কবর দিয়ে এই হেলুশিনেশান'কে প্রতিমার মহিমায় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নজরুলের সিফিলিস রোগ'কে গ্রহনযোগ্য মানবিক মাত্রা দেয়া বাঙালি মানষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে!

উপরের স্বল্প পরিসরে যা মুলত বলতে চেয়েছি তা হচ্ছে ১৯৪৭এর পর থেকেই বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদ পত্তনিকে আমরা বার বার খন্ডিত ক্যানভাসে দেখেছি।আমাদের এখানে নজরুল একাডেমি হয়েছে, রবীন্দ্রনাথেরও ব্যাপক চর্চা হচ্ছে!কিন্তু বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদি ধারা যার হাত ধরে পারলৌকিক দেবার্চনা থেকে দোষে, গুনে মিশানো লৌকিক মানুষের অর্চনা শুরু  করেছিল সেই মাইকেল'কে আমরা এখনো ঠিক মাঝখানে এনে বসাতে পারিনি!এখানেই আমাদের সাহিত্য প্রবর্তনাগুলা সুসমঞ্জস হতে পারছে না!লৌকিক ধ্রুপদের বিন্যস্ততাতেও থেকে যাচ্ছে শুভঙ্করের ফাকি!

চয়ন খায়রুল হাবিব
৫/১২/১০
ঢাকা