Wednesday 17 February 2010

ফেব্রুয়ারির টেনশান ১ঃ মহাভাঙ্গনের উপকথা

গান্ধি থেকে গের্নিকায়ঃ


গান্ধি ছবিটা'র সেই দৃশ্যটা আমার খুব মনে আছেঃ

ভারত'কে দু'ভাগ করে দুটো পাকিস্তানসহ দুটো স্বাধিন দেশ ঘোষনা করা হয়েছে।উদযাপনের পাশাপাশি রক্ত হিম করা হিন্দু মুসলিম রায়ট।মায়ের বুক থেকে কোলের শিশু ছিনিয়ে তাকে আছড়ে মারছে মায়ের'ই সামনে দু'পখ্যের খুনে'রা; বি,  জ়ে পি আর জামাতের কিশোরেরা পুজ-রক্তের নিশানে ঝালিয়ে নিচ্ছে 'বন্দেমাতরম', 'বাচলে গাজি মরলে শহিদ'  স্লোগানগুলো। দু' দেশেই পুলিশ তার নব্য রিক্রুটদের জিবন্ত টার্গেটে চাদমারির অনুশিলন করিয়ে নিচ্ছে।
রক্তগঙ্গা থামাতে গান্ধি শুরু করলেন মরনপন অনশন।কোনটায় যে কাজ হ'লো; গান্ধির মরো মরো অবস্থা, না কি লাখ লাখ লোকের রক্তে হাত রাঙ্গানো সরোয়ার্দি, আদভানিদের ক্লান্তি  তা বলা মুশকিল।ছবির অবিস্মরনিয়  অনেক ক্লিপের একটাতে দেখা গেল গান্ধির অনশন-বিধ্বস্থ শরির বহনকারি চারপাইয়ের অল্প   দুরে ব্যল্কনির রেলিং-এ ভর দিয়ে দাড়ানো সরোয়ার্দি'কে; এম্বুল্যন্সের চাপা গোমরানির আবহে  খাটো ধুতি পরা ওম পুরি চাপাট নামিয়ে রাখছে গান্ধির পায়ের কাছে।জয় সে দৃশ্যের, জয় ওম পুরির অভিনয়, জয় হোক সে বার্তারঃ মুস্লিম খুনেদের কাছে সন্তান হারানো হিন্দু বাবা স্বিকার করছে মুস্লিম  মায়ের বুক থেকে কোলের সন্তান ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করার কথা; তাকে গান্ধি বলছেঃ যাও, একজন এতিম শিশুকে খুজে নাও।লালন করো তাকে নিজের ছেলের মতো।শর্ত একটাইঃ সে যেন হয় মুস্লিমের সন্তান।

হায়, কি পরিমান নিস্ব আজ ভারত, বাংলাদেশ পাকিস্তান।

বিভাজনগুলো কি পরিমান  বিকট আর উলংগ।  হিন্দু-মুস্লিম রায়টের অন্যতমো খলনায়ক হোসেন শহিদের কুখ্যাতি'র চোটে মলিন হয়ে গেছে কোলকাতা'র বুধ্বিবৃত্তিক বিকাশে শাহেদ আর হাসান সরোয়ার্দিদের অবদান।যে কমল কুমার মজুমদারেরা এক সময় বলতেন অবলিলায় যে বিশ্নু দে সহ পুরো বিশের, তিরিশের কোল্কাতা তালিম নিয়েছে সরোয়ার্দি পরিবারের কাছে; সেই কমল কুমারারেরা'ই ১৯৫২ সালে এসে প্রামান্য ভাবে বল্লেনঃ 'মুসলমানের বাঙ্গালি হবার খায়েস হয়েছে।'

এই অভিমান যে কতটুকু গড়িয়েছে তার আরো প্রমান মেলে  পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাবার পর লন্ডন হয়ে  বাংলাদেশে ফেরবার পথে কোলোকাতার প্যারেড গ্রাঊন্ডে বংগবন্ধুর বক্তৃতার রেকর্ড শুনলে।পশ্চিম বংগসহ সারা ভারত শুধু যে মুক্তিযুধ্বের ন'টা মাসই নিরন্ন, উদবাস্তু , স্বজন হারানো বাংলাদেশিদের আগলে রেখেছিল তাই নয়, যোগেন মিত্রদের মতো ৪৭' এ সর্বস্ব হারানো লাখো লাখো বস্তিবাসি বাঙ্গালি মুহুর্মুহু তালির ভেতর ইন্দিরা'কে  জানিয়ে দিয়েছিলঃ বাংলাদেশিদের পাকিস্তানি পিশাচ'দের হাত থেকে বাচানোর খরচ বাবদ হোটেলে চালের সর্বরাহ বন্ধ তারা মেনে নেবে!

এটা কেবল সেন্টিমেন্ট নয়।সারাদিন উদয়াস্তের চেয়ে বেশি কাজ করবার পর দিন মজুরের কাছে শেষ বেলার সস্তার হোটেলে পেট পুরে ভাত খাওয়াটা যে জরুরি তা ইন্দিরা বুঝেছিল ঠিকই।কিন্তু মানেক শ'কে তিনিত আর লেংটা, নিরস্ত্র অবস্থায় 'পরদেশে'র খালে, জঙ্গলে পাঠাতে পারেন না।ইন্দিরা, মানেক শ'কে বাংলাদেশিরা যে সম্মানের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে তাদের মা, বোন'দের আখ্যরিক অর্থেই ধর্শন হওয়া  থেকে বাচানো'র জন্য তার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত 'ভারতের দালাল' নামাবলিটি।প্রখ্যিপ্ত প্রসঙ্গে না গিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে ফেরা যাকঃ

উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন সেদিন মুজিব দর্শনে এসে স্ট্যম্পেডের শিকার।কেউ ওদের দিকে তাকাচ্ছে না। প্যারেড গ্রাউন্ডে সমবেত লাখো জনতার ভেতর থেকে গম গম করে ভেষে আসছে মুজিবের দিকে ছুড়ে দেয়া, গুরু, গুরু, গুরু ধ্বনি।সেই উন্মত্ততার ভেতর মুজিব শুরু করলেনঃ গান্ধি আমার নেতা, আজাদ আমার নেতা, সুভাস আমার নেতা...এরকম করে করে যেই বল্লেনঃ সরোয়ার্দি আমার নেতা!সবকিছু থেমে গেল।রেকর্ডের পিন ভেঙ্গে গেল সেই অভিমানি নিরবতায়ঃ যোগেন মিত্রের মত সেই সর্বস্ব হারানো অতিথি বতসল নিরন্ন বস্তিবাসি মুজিব'কে  নিরব ভতসনায় জানিয়ে দিয়েছিলঃ পেটে খুধা সইতে হয় তাও সইবো, কিন্তু দরিদ্র'রে মান খোয়াতে বোলো না।ঐ মানটুকুই তোমার জয় বাংলা'র জন্য তোলা।

 আবেগের রাশ টেনে ধরবার জন্য মানু্ষ ব্যবহার করেছে  যুক্তি।কোনটা যে যুক্তি, আর কোনটা যে অপযুক্তি  চাল, বোলচাল আর চালিয়াতিতে তার ঠাওর পাওয়া মুস্কিল।খ্রিস্টান বা ইহুদির কাছে যে যুক্তি হালাল, মুস্লিমের কাছে তা হারাম।এরিস্টটালের অরগাননে প্রভাবিত মুতাজিলা যুক্তিকে মানবেনা আভেসিনার যুক্তি।যুক্তি, অপযুক্তির ছায়ায়  বিস্তৃত হয়েছে কালচার ও কাউন্টার কালচার।যে সোভিয়েত সোলঝেনিতসিন'কে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল, পাস্তেরনাক'কে করেছিল গৃহবন্দি তার কাছে বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে লেখালেখি ছিল কাউন্টার কালচার!নিক্সন, কিসিঞ্জারের আমেরিকাতে, 'মানুষ মারা খারাপ' এরকমটা বলা ছিল কাউন্টার কালচার!আহমাদিনিজাদের মত নিও ফ্যসিস্ট'রা ইহুদি নিধন'কে গৌন করতে ঢালাওভাবে হিরোসিমা, নাগাসাকি দিবস পালন করে।নৈতিকতার নিক্তিতে, হলোকস্ট আর আনবিক বোমার ধ্বংশযজ্ঞ্ব কোনটাকেই কি গৌন করা যায়?

অভিমান অনেক সময়ই যুক্তিবোধকে ম্লান করে দেয়।অভিমান এবং যুক্তির আখ্যরিক পালন দুই'ই অন্যের মানহানি এবং স্ববিশেষে জিবনহানি'র উস্কানিকেও নৈর্ব্যক্তিক করে তুলতে পারে।বেতবুনিয়া ভু-উপগ্রহ কেন্দ্র উদবোধনে গিয়ে আদিবাসিদের সবাই'কে বাঙ্গালি হবার উপদেশ দেবার সময় মুজিবের এটা মনে ছিলনা যে ঢাকা'র রেসকোর্সে ইন্দিরা সবাইকে ভারতিয় হয়ে যাবার আহবান জানান নি।

আবার ইন্দিরা যে নৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় অর্থেই নিক্সন, কিসিঞ্জারের চোখ রাঙ্গানি, মাওয়ের ঠান্ডা মাথার হিশাব'কে উপেখ্যা করে পুর্বপাকিস্তানের সিমান্ত অতিক্রম করে্ছিল;  সে নৈতিকতা সোভিয়েত শাষকেরা দেখায় নি ফ্রাঙ্কোর মারনযজ্ঞ্বের মুখে স্প্যানিশ রিপাব্লিকা্নদের সহায়তা করে।আমরা জ়ানি ফ্রাঙ্কোর দোসর হিটলারের বিমানবাহিনি গের্নিকা গ্রামটাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল।লোকজনের ভাগ্যে ঘটেছিল  জিবন্ত সমাধি।পিকাসো তার কাল জয়ি ক্যনভাসে মানুষের বদলে ব্যাবহার করেছিল জন্তুদের প্রতিকি মোটিফ।এটা কি কমিউনিস্ট বন্ধু নেরুদার প্রতি কটাখ্য, তা পিকাসো কখনো বলে নি!

আরো সব প্রশ্ন মাথায় খেলা করে।পরের পর্বে কথা বলবো বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়েঃসরকারের ভেতর সরকার সেজে পাব্লিক/প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিখ্যকেরা কিভাবে ভাঙ্গনের ভেতর ফাটলগুলোকে করে তুলছে চিরস্থায়ি তার আখ্যান নিয়ে।

আশা করি লম্বা ঈকার, লম্বা ঊকার, ণ, চাদবিন্দু, ক্ষ না ব্যবহার করাটা মার্জনা করবেন।এটা আমার বাংলা ভাষা।এটা আমার মায়ের ভাষা।কিভাবে লিখবো, কিভাবে বোলবো তা নিয়ে কারো মামদোবাজি শুনবনা...


চখাহা
ব্রিটানি
২১ শে জানুয়ারি/২০১০

ফেব্রুয়ারির টেনশান ২/৩/৪/৫ঃ ছিরি, বিচ্ছিরি এবং বাংলা ভাষাভাষিদের হাতে সংখ্যালঘুদের ব্ল্যাকমেলঃ
http://dhootoorafm.blogspot.com/2010/02/blog-post_2328.html