Wednesday 17 February 2010

ফেব্রুয়ারির টেনশান ২/৩/৪/৫/৬ঃ ছন্দের ছিরি, বিচ্ছিরি

(২)

'বিজি আছিরে ভাই', এরকমটা শুনলে আমার বিচ্ছিরি লাগে।বুঝে যাই, এ্দের সাথে শ্রি, শ্রিমাভো নিয়ে তর্ক নিস্ফল।' ওরা ক্যাম্পাস হতে সদরঘাটে গেল', এরকমটা পড়লেও বিচ্ছিরি লাগে।বুঝি যে 'থেকে' আর 'হতে'র' বিড়ম্বনাতে ভোগা এই লোকের সাথেও আসর ঠিক জমবেনা! কেরদানির পাহাড়ের চাপে কেরদানিকারক যখন নিজেই ধরাশায়ি তখন তাকে দেখি কেরদানির ক্যনভাসে এই বেলা ডিলিট করছে  ঠিকুজি, কুলুজি; ঐ বেলা ঘোষনা করছে ধর্শনকারিরাই আমাদের  দাদু আর বড়আব্বা!

অনেক ভাই'য়ের সংসারে লুকিয়ে, লুকিয়ে পেটিকোট, ব্রেসিয়ার শুকাতে, শুকাতে বেড়ে ওঠা লিংগ-লুকানো মেয়েটিকে দেখি এক কুহেলিকাময়-সান্ধ্য-সাংকেতিক ভাষাতে; ব্রাভো, ব্রাভো, চালারে কাদিরা'র সোরগোলে বিশাদ সিন্ধুর কসাইদের বাহবা দিচ্ছে   সংসপ্তকের কির্তনিয়া বলে!

মহাবিচ্ছিরিরও একটা মহাছিরি থাকে! সেটা গের্নিকা!নৈশব্দের পরান য্যামন শব্দময়ঃ শব্দ এখানে ঠিক সংলাপ নয়! এই শব্দ চাপা, গোমরানো এবং ক্ষুধিত।ইতিহাসের-স্লোগান এবং ইতিহাসের-দায়হিন দুই রশিতে বেধেই  দেহছন্দের মুখ আর মুখোশগুলোকে  শুন্যের কড়িকাঠে ঝুলতে দেখি; মেলা আর বটতলার মিশেলে দেখি গড়ে উঠেছে এক আদিভৌতিক জিঞ্জিরা কালচার; বুঝি যে এই 'কেরদানি'র উত্তর  'কেরদানি'র আসল, নকল কোন এটিমোলজিতেই পাওয়া যাবেনা!

(৩)

প্রত্যেক ভাষাতেই কিছু শব্দ থাকে যার আক্ষরিক অনুবাদ প্রায় অসম্ভব।শব্দটির ব্যাখ্যা নিয়েও এত দৃষ্টিকোন থাকে যে শেষমেষ তার ব্যবহারিকতা হয়ে দাড়ায় বিমুর্ত আর মুর্তের দৈনন্দিন যোগসুত্র।ব্যুতপত্তিও এখানে পরাজয় বরন করে চোয়াল, নাকের অল্প একটু  নদি বা খাল পারাপারের পার্থক্যে।

বাংলা ভাষাতে, 'ছন্দ'; ইংরেজিতে 'সেরেনডিপিটি', আর গ্রিকদের ps কে এক অক্ষরে  গেথে বানানো শব্দগুলো
এ-গোত্রের।ছন্দ প্রকরনের বেহুদা বিতর্ক এ-রচনার উদ্দেশ্য নয়।বরং ছন্দের সামাজিক, রাজনৈতিক বন্ধগুলো সংখ্যালঘুদের কিভাবে ব্ল্যাকমেল করে তার ওপর আলোকপাতই  উদ্যেশ্য। সেরেনডিপিটি ভারতিয় শব্দ 'স্বর্নদ্বিপ' থেকে এই সেদিন এলেও; এটিমোলজি অনুযায়ি যদি স্বর্নদ্বিপের অনুবাদ এখানে বসিয়ে দেয়া হয় সেটা নরোদম সিহানুক'কে নরোত্তম সিংহনায়ক ডাকবার সামিল!

সিহানুক সাহেব দমদম বিমানবন্দরে লাগেজ হারিয়ে মাথায় হাত দিয়েও উদ্ধার পাবেন না!নিজের নামের এটিমোলজি খুজতে তাকে রাচি বা পাবনাতে  যেতে হবে!সেখানে দেখা যাবে রোমান হরফে লালিত ইংরেজ, ফরাসি যাজকদের অধস্থনেরা গ্রিক ps এর একত্র অক্ষর উচ্চারনে ব্যার্থ হয়ে মনস্তত্ত্বের এত শত পাঠশালা খুলে বসেছে যে মন'ই উধাও!সিহানুকের কাছে তখন মনে হবে পৃথিবির যে কোন বিমানবন্দরে অবতরনের আগে গন্তব্যের শাখামৃগদের চোয়াল, নাকের আদলে বাপের দেয়া নামটা বদলে ফেলাই ছিল প্রজ্ঞ্বার পরিচয়!অনলাইনে টাইপ করবার সময় আমার য্যামন 'সিংঘ' হয়, 'সিঙ্ঘ' হয়!'সিংহ' করতে লাগে প্রায় মিনিট খানেক!

একই অবস্থা মুর্শিদাবাদে জন্ম নেয়া মুসিলিম পরিবারগুলোর; ঢাকার  জেনেভা ক্যাম্পের বিহারিদের, ধাংগড়পট্টির উল্কিধারি জমাদার, শান্তিনিকেতনের সাওতালদের এবং ইত্যাকার দেশের ইত্যকার সংখ্যালঘু বৌদ্ধ্ব, হিন্দু, মুসলিম, ইহুদি, খ্রিষ্টান, চেচেন, চাকমা, গারো, উইগুর, তিব্বতি,  কমিউনিস্ট, ন্যুডিস্ট, ফ্যাসিস্ট, ক্যাপিটালিস্ট, সোশালিস্ট,ডাডাইস্ট, ইস্লামিস্ট, অকালিস্ট, হুদাইস্ট, হেনো, তেনো,হোমো,ব্যামো সাত সতেরো!

লাগেজ খুজে পাবার পর  এই সঙ্খ্যালঘুদের ভেতরেই যারা ভাগ্যবান তারা দেখা যায় অসাচ্ছন্দের চাকা' ঘুরিয়ে সঙ্খ্যাগুরুর কুচকাওয়াজে তালে তাল মিলিয়ে নতুন শেখা ছন্দবদ্ধ্ব  শব্দ, চরন, কার্তুজ তাক করে বসে আছে সব সমাজের সবচেয়ে বেশি যে সংখ্যালঘু সেই সে 'একলা' ব্যাক্তির দিকে।বাংলাদেশের আক্ষ্যরিক হিন্দু ব্রাম্মনেরা, কলিম খান জাতিয় সজনিকান্তরা,  ভারতে জর্জ ফার্নান্দেজ  জাতিয় মার্ক্সিস্টেরা এমনটি করছে।

(৪)

সেনানিবাসগুলোতে ঢুকলে দেখা যাবে গাছগুলোকে পর্জন্ত সাদা চখ খড়িতে ঢেকে স্পার্টান সমরকলায় ছন্দবন্ধ করা হয়েছে।অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি; টিন ড্রামের শিশুটির তারস্বরে মাদল বাজানো ছন্দপতনে কান পেতে পেতে  শুনিঃশুনি দেহছন্দের জন্মধ্বনিঃ আজম খানের গানে, হ্যাপি আখন্দের উচাটনে, আশির দশকের কবিতার মৌলিক পত্তনিতে!আজিম্পুর পিলখানা রোডের শেষ মাথা থেকে ময়মনসিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধার ঘেষে চলে যাওয়া ব্রক্ষপুত্র নদির তলদেশে গল্পের ভিতর গল্পের কথাকথায়ঃ হাটু অব্দি ঢিলাঢালা জোব্বা, সাদা চটের পাতলুন আর খড়ম পরা সাবদার সিদ্দিকি দেখি  নদির অল্পতলে দলকল্মিতে জড়িয়ে স্মরন করছে কোলকাতার রায়টের ভিবিষিকা; স্যাঙ্গাত ভাস্কর রাশার পাশে  পাটুয়াটুলির আবগারি জানজটে জড়িয়ে সাবদারেরই অবতার চেচাচ্ছে ইউরেকা, ইউরেকাঃ পেয়ে গেছি দেহছন্দ।পেয়ে গেছি ভাঙ্গা লিরিকের ম্যুরাল মোজাইক!

রাশাঃ দেহছন্দ কি রে দোস্ত?
সাবদারঃ যাহা অক্ষরবৃত্ত, স্বরবৃত্তের  যোয়ালে বন্দি নয়!
রাশাঃ তাইলেত সবকিছু!
সবাদারঃ ঐ মানে ঐ অক্ষরবৃত্ত, স্বরবৃত্ত ছাড়া!
রাশাঃ মানে আমার ভাস্কর্জ?
সাবদারঃ হ
রাশাঃ মানে তোমার কবিতা?
সবাদারঃ না, এইখানে খটকা!
রাশাঃ কে মিটাবে এই খটকা?কেউ পারবে?
সাবদারঃ ঢাকেশ্বিরর ঐ খানে কয়েকটাকে ছোকরাকে দেখলাম,
ওরা দেখলাম তোমার ভাস্কর্জটাকে কবিতাতে এনে আরো বেশি বলে ফেলছে!
রাশাঃ কারা এরা?
সাবদারঃ কয়েকজনের নাম মনে আছে রিফাত, কচি, চয়ন!
রাশাঃ নামগুলাত খাশা!জেন্ডার কি?
সবদারঃনা জেন্ডারের বাইরে!বলে, দেহছন্দের জেন্ডার নাই!
বলে, দেহছন্দ না কি জোনাকিদের ভিতরের জ্বালানি এবং জ্বলুনি!
রাশাঃ আরো কি জানি বলতে চায়, তাই না!
সবাদারঃহ্যা বলে যে, ১৯৭১এর মুক্তিযুধ্ব বিরোধিতায়, য্যামন ১৯৭৫এ, তেমন ২০০৮-এ পিলখানার বি, ডি, আর এর হত্যাকান্ডে মার্ক্সিস্ট-সুন্নিদের এবং সুন্নি-মার্ক্সসিস্টদের ভুমিকা ছিল।এই পঞ্চম বাহিনির হাতে আমরা এবং আমাদের ভাষাভাষি সবাই ব্ল্যাক্মেলের শিকার!যাবতিয় রুচি-বিকৃতি এবং নন্দনের একদেশদর্সি অবনয়ন ঘটেছে এদের হাতেই।বলে, দেহছন্দেই না কি উধ্বার!চারদিকে না কি জংগল পোড়া গন্ধ,
তার ভিতর ওরা ভাজবে...দাও হে কল্কিটা দাও!
রাশাঃ না হে আমি বেশ মাছভাজার গন্ধ পাচ্ছি!
সাবদারঃ ঐ ছোকরাগুলাকেই আমার মাছকুমারি মনে হয়েছে, দোস্ত!
রাশাঃ মাছকুমারিদের গোস্ত!দেহছন্দের কিবাব!খাশা হবে, খাশা হবে...
সাবদারঃ কিন্তু বাদ সাধছে PTS!
রাশাঃ ওটা কি?

(৫)

গড়পরতা গদ্যে PTS সমিকরনঃ

আর তাবত  সমাজের মতই বাংলা ভাষায় অবতির্ন সামন্তবাদি বনেদি পরিবারগুলোতেও বেশ মজার মজার টোস্ট বিস্কুট আছে!মহাজ্ঞ্বানি গোলাম মুর্শিদ'কে দেখা যাবে খুনে ছোট ভাই গোলাম ফারুক অভির ব্যাপারে নিসচুপ!উদারপন্থি  কবি বেলাল চৌধুরির ভাই গিয়াস কামাল'কে দেখা যাবে বেলালের ঠিক উলটো দিকের মঞ্চগুলোতে। বিপ্লব শেষ করেই হায়দর আকবর আর রাশেদ খান মেনন, জেনারেল জিয়ার উপদেস্টা-বড়-ভাই এনায়েতুল্লার সাথে লন্ডনে উড়াল বাংলাদেশে ধরা পায়রাগুলো কভেন্ট গার্ডেনে ওড়াতে।পরিবারগুলোতে সময় সময় লোক দেখানো লাঠালাঠিও হয়।তাতেওত হাস্যকরভাবে বিপ্লবি মেনন হেরে যায়, কুলাঙ্গার অভির কাছে।ফেরদৌসি মজুমদার আত্মচরিতে চৌধুরি থেকে মজুমদারে রুপান্তরে দুই পরিবারের  মুখ না  দেখাদেখি'র ব্যাখ্যান   পুরোপুরি এয়ারব্রাশ!কাউন্টার কালচারের কাচকলা কে যে কাকে দেখায়!  এই যে পরিবারগুলোর আমরা-আমরা খেলা তাতে কবির চৌধুরিদের সাথে নামহিন, গোত্রহিন ছফাদের যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয় বিদেশি দুতাবাসগুলো্র সাংস্কৃতিক সচিবেরা!

জাতপাতের ঠিকানাহিন লুম্পেনদের আরেক ডেটিং-নিকেতন প্রিন্সটনের থিওলজিক্যাল সেমিনারি বা PTS।এদের বাজেট প্রায় মার্কিন সরকারের মতই।কোনটা যে মার্কিন, ব্রিটিশ, অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি আর কোনটা PTS ডিগ্রি তা বোঝা মুস্কিল।পশ্চিমের সব বিশ্ববিদ্যালয়েই PTS ঘাটি গেড়ে বসে আছে।PTS নিজের সনদ'কে বলে 'খ্রিস্টান মৌলবাদি সনদ' আর প্রকাস্যে ঘোশনা দিয়ে রেখেছে যে যারাই একেশ্বরবাদের কথা বলবে তারাই PTS বৃত্তির দাবিদার।

এখানেই ভারতিয়, বাংলাদেশি, পাকিস্তানি বাম্পন্থি শিক্ষকেরা ধরা।শুধু চোমস্কি করলেত আর সব পেয়েছির দেশে যাওয়া যাবে না!তার সাথে দরকার PTS এর কাছ থেকে তহবিল পাওয়া স্থানিও NGO গুলোর ছাড়পত্র!কাপিশ!পড়তে চাইলে পড়ো!না পড়তে চাইলে বাইজিরও খরচ যোগাবে ঐ PTS!লাল ঝান্ডার পাশে শুধু ক্ষনে ক্ষনে লাল সালুটা'র ইশারা দেখালেই হবে!PTS এর ব্যাক ট্রান্সলেটররা শ্যান নজর রাখছে তহবিল প্রাপ্তরা দেশে ফিরে নাফরমানি করছে কি না!

দুই দুগুনে চার।সামন্তবাদি পরিবারগুলার হাতে একবার এবং PTS আশির্বাদপুস্ট NGOগুলার হাতে আরেকবার নাজেল হইলো সেকুলারিজম বিরোধি মার্ক্সবাদি-সুন্নি, মার্ক্সবাদি-হিন্দু কাউন্টার কালচার!!দুই মাথা ওয়ালা এই ছন্দনাশক-দানোরে এখন কোন ল্যাবিরিন্থে ঢুকাইবেন হে বৃত্তি-পরভুক-নপুংশকেরা!


(৬)

এখন প্রায় সত্তর বছর বয়সি দক্ষিন আফ্রিকার স্বেতাংগ লেখক আন্দ্রে ব্রিঙ্ক ১৯৬০ সালে প্যারিসে পড়াশোনার সময় সংবাদপত্রের পাতায় নিজ দেশের পুলিশকে কালোদের অহিংস মিছিলে গুলি চালাতে দেখে বলেছিলেনঃ  সঙ্খ্যালঘু স্বেতাংগ দের একজন হিশেবে নিজেকে চিন্তা করা কঠিন; তার চেয়েও মহাকঠিন নিজ সম্প্রদায়ের এই সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদ কায়মনে প্রার্থনা করা।

ব্রিঙ্কের পাশাপাশি পড়ছিঃ চল্লিশ বছরের ফরাসি লেখিকা ইমানুয়েল পাগানোর সাক্ষাতকার।ইমানুয়েল হাসতে, হাসতে জানালোঃ চুলে ফুল গুজে আমি লিখতে বসিনা!মাংস কামড়াতে, কামড়াতে আমি লিখি।

এক জিবনে ছোট্ট ছোট্ট কিন্ত তিব্র আবেগি কিছু বিজয় আমার চলার পথকে অর্থবহুল করে।

সংস্কৃত জাজকের হাতে নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম বঙ্গের বা আরব্য রজনিতে নির্দেশনা খোজা বাংলাদেশের বাংলা ভাষার জয়কে আমার  আর নিজের জয় বলে মনে হয় না!

ব্যুতপত্তি' নয়; বিচ্ছিরি থেকে রক্ষা পেতে দেহছন্দের নতুন ছিরি, ছাদের সন্ধানে অভিনিবেশ করি!

চখাহা
১৭/০২/২০১০
ব্রিটানি


ফেব্রুয়ারির টেনশান ১ঃ মহাভাঙ্গনের উপকথাঃ
http://dhootoorafm.blogspot.com/2010/02/blog-post_17.html