সেলিম আল দীন (১৮ আগস্ট, ১৯৪৯ - ১৪ জানুয়ারি, ২০০৮), ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে।
তিনটি লাশ এবং একজন প্যাথলজিস্ট
চরিত্র :
মলি, প্যাথলজিস্ট
হাসপাতাল পরিচালক
তিনটি লাশ, রাহনুমা, মিশুক, পানতোয়া
হাসপাতালের একটি চেম্বার। শাড়ির ওপর সাদা এপ্রন পরা একজন নারী একটি মাইক্রোস্কোপে চোখ রেখে বসে আছে। পাশে ফোন বাজে। মহিলা ফোন ওঠায়। মহিলার নাম মলি।
ওপাশ থেকে :
ম্যাডাম, আমি হাসপাতাল পরিচালক। তিনটা লাশ আসছে, সঙ্গে অনেকগুলা ছেলেমেয়ে। আপনি একটু আসেন, লাশগুলো মর্গে নিয়ে যান।
মলি : স্যার, আমিতো প্যাথলজিস্ট। এটাতো ফরেনসিকের লোকেরা নিয়ে যাবে। তার পর ওরা স্যাম্পল আমাকে পাঠাবে।
পরিচালক : ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টে ফোন দিচ্ছি। কেউ ধরছে না। কোথাও কেউ ধরছে না। আপনি একমাত্র ধরলেন। ম্যাডাম, আপনি একটু আসেন। এই ছেলেমেয়েদের কি করে বুঝাবো যে আমি এনেস্থেশিস্ট। লাশের ময়না তদন্ত করি না। ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যেতে বলছি, কিন্তু কথা শুনছে না। আপনি একটু আসেন প্লিজ।
মলি : আসছি স্যার
মলি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। পরিচালকের ঘর। পরিচালক একা।
মলি : স্যার ছেলেমেয়ে, লাশ কই?
পরিচালক : ছেলেমেয়েগুলা কতক্ষণ চিল্লাচিল্লি করে চলে গেলো। তার পর লাশগুলাও চলে গেলো।
মলি : চলে গেলো, মানে স্যার।
পরি : হ্যা ঐ ছেলেমেয়েরা করিডোরে স্ট্রেচারে লাশ রেখে, রুমে ঢুকে চিল্লাতে থাকলো। কিভাবে মরলো, এটা বের করে দিতে হবে, পুলিশকে খবর দিতে হবে, বাবা মাকে খবর দিতে হবে......আমি করিডোরে গিয়ে দেখে আসলাম, চার দিকে ফোন দিতে থাকলাম। কেউ ধরে না, কারফিউর হাসপাতাল যে খুব কম লোকবলে কাজ করছে, বোঝাতে চেষ্টা করলাম। ওরা চিল্লাতেই থাকলো। আপনি আসতে আসতে চলে গেলো। তার পর লাশগুলো ঘরে ঢুকে বললো, ওরা খুব টায়ার্ড, চলে যাচ্ছে, বিরক্ত করার জন্য খুব দুঃখিত। চা খেতে বললাম, বসলো না।
মলি : স্যার আমি তাহলে ডিপার্টমেন্টে যাই। অনেকগুলো স্লাইড কনফার্ম করতে হবে।
মলি নিজের ঘরে আসে। ওখানে ওর টেবিলের চার পাশে তিন জন আগন্তুক বসে আছে। দুজন বয়স্ক, পুরুষ এবং নারী, আরেকজন এক কিশোরী। তিনজনের পরনে ফিটফাট পোশাক। কিশোরী শাড়ি পরে আছে। বয়স্ক পুরুষ ফতুয়া, প্যান্ট। বয়স্ক নারী, ঢিলেঢালা প্যান্ট, হাফ হাতা টপস।
মলি : আপনারা
কিশোরী : জি আমরা তিনজন লাশ। এরা দুজন আমার ছেলেমেয়ে। আমার নাম রাহনুমা। আমার ছেলের নাম মিশুক, মেয়ের নাম পানতোয়া। আপনি কি প্যাথলজিস্ট?
মলি : জি
রাহনুমা : আচ্ছা, কোনো মৃত্যুর কারণ আপনারা কিভাবে নির্ণয় করেন?
মলি : প্রথমত একটি মৃতদেহকে ফরেনসিক ডক্টররা ময়না তদন্ত করেন। মানে তার বিভিন্ন অর্গান কেটেছিঁড়ে দেখেন, অস্বাভাবিকতা পেলে তা নোট করেন। তারা যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহগ্রস্থ হন বা আরো চুলচেরা সিদ্ধান্ত নিতে চান, অর্গানের অংশ কেটে নেন, বা পুরোটা সেটা বিশেষভাবে সংরক্ষণ করে আমাদের কাছে পাঠান। আমাদের টেকনোলজিস্টরা সেই স্যাম্পলের সূক্ষ্ম অংশ একটা স্লাইডে নেন সে স্লাইডটা মাইক্রোস্কোপে রেখে আমরা স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক তারতম্য দেখি।
কিশোরী : তাহলে আমরা আমাদের অর্গান কেটে দিচ্ছি। টেকনোলজিস্ট ডেকে স্লাইড বানিয়ে দেখুন আমরা কিভাবে মরলাম?
মলি : কিন্তু আপনারা তো মৃত নন।
কিশোরী : আলবত আমরা মৃত।
মলি : দেখুন, এসবের একটা নিয়ম, কানুন আছে। একজন চিকিৎসক আপনাদের মৃত ঘোষণা করতে হবে। মানে ডেথ সার্টিফিকেট লাগবে। তার পর ফরেনসিকের ময়নাতদন্ত, তার পর আমার কাজ।
কিশোরী : আপনি এসে আমাদের পালস দেখুন, ব্রেন ওয়েভ দেখুন।
মলি এগিয়ে গিয়ে সবার পালস দেখে, চোখ দেখে।
মলি : ঠিক আছে, আপনারা মৃত। কিন্তু কাটাছেঁড়া তো আমি পারবো না।
কিশোরী : সেটা আমরা করে দিচ্ছি।
তিনজন তিনজনের জিব্বাসহ ভেতরের অর্গান গলায় হাত দিয়ে বের করে আনে। মলির টেবিলে রাখে।
কিশোরী : এবার স্লাইড বানান
মলি কয়েকটা স্লাইড নিয়ে, একটা ক্যামিকেলে তুলো জড়ানো কাঠি দিয়ে টেবিলে রাখা মৃত তিনজনের জিব্বাতে ছুঁয়ে কাঠিটা দিয়ে স্লাইডে রাখে।
মলি : জিব্বা দিয়ে শুরু করি।
বলে মলি মাইক্রোস্কোপে ঝুঁকে পড়ে। একটু পর মাইক্রোস্কোপ থেকে চোখ উঠিয়ে ঘুরে বলে :
আপনাদের তিনজনের জিব্বাতে পোড়া দাগ পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে সেলগুলো দেখছি, তাতে টানাটানির চিহ্ন আছে, যে আপনাদের সাথে যা কিছু করেছে, তার লক্ষ্য ছিলো আপনাদের জিব্বা, আপনাদের কন্ঠস্বর।
কিশোরী : এটা লিখে স্বাক্ষর করে দিন তাহলে।
মলি : দিচ্ছি।
মলি তিনটি কাগজে লিখে স্বাক্ষর করে দিলে, কিশোরী তা নিয়ে বয়স্ক দুজনকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
চয়ন খায়রুল হাবিব
১৮/৮/২৪
ব্রিটানি, ফ্রান্স