Thursday, 27 April 2017

প্রবনতা ও পরিচ্ছন্নতা

পরিচ্ছনতার নিরিখে ঢাকা ক্যান্টনম্যান্ট, কন্ঠশীলন, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পাশাপাশি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শিল্পকলা, বাংলা একাডেমি, গন গ্রন্থাগার, সওরোওয়ার্দি উদ্যান, জাতিয় হাসপাতাল ইত্যাদি জায়গাগুলো তুলনা করলে আমরা কি পাচ্ছি?
ঢাকা ক্যান্টনম্যান্টের জাহাঙ্গির গেট থেকে মাটিকাটা চেক পোস্ট অব্দি সব কিছু পরিচ্ছন্ন ও নিয়মমাফিক।অনেকে এর কারন হিশেবে বলবেন, অর্থবল ও সুশৃঙ্খল, সামরিক লোকবল।ক্যান্টনমেন্টের তুলনায় এলিফেন্ট রোডের বাটার মোড়ের কাছে ওয়াহিদুল হক প্রতিষ্ঠিত 'কন্ঠশীলনে'র মহড়া দফতরটির পরিসর একেবারেই অনুল্লেখ্য এবং লোকবলও হাতে গোনা, কিন্তু পরিচ্ছন্নতায় দৃষ্টান্তযোগ্য।আব্দুল্লাহ আবু সাইয়ীদ প্রতিষ্ঠিত, বাংলা মোটরের কাছে সুরম্য, বহুতল 
'বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র' প্রতিষ্ঠানটিও পরিচ্ছন্নতায় সুবিদিত!আব্দুল্লাহ আবু সাইয়ীদ এবং প্রয়াত ওয়াহিদুল হকের একজনও কিন্তু 'সামরিক শৃঙ্খলায় শিক্ষিত' নন।

ক্যান্টনমেন্ট, কন্ঠশীলন, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র যে দেশের লোকজন চালাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ উপরে উল্লেখিত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও সেই একই দেশের লোকজন চালাচ্ছে।ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনকেন্দ্রের টয়লেট, আধুনিক ভাষা ইন্সটিউটের টয়লেট সহ পুরো ক্যাম্পাসের সার্বিক অপরিচ্ছন্নতাকে লোকবল, অর্থবলের অজুহাতে না ঢেকে প্রবনতা ও বিভিন্ন পর্জায়ে নেতৃত্বের সঙ্কটের ফসল বলা যেতে পারে।একই অপরিচ্ছন্নতা বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমিতে।আর রমনা পার্ক যেখানে সুব্যবস্থপনায় আছে, তার পাশেই সওরোওয়ার্দি উদ্যান একেবারে ফাক্ট আপ অবস্থা।

রমনা পার্কের ক্ষেত্রে অনেকে বলবেন যে চারপাশে সরকারি উচ্চ পদস্থদের আবাসিক ভবন থাকায়
এবং তারা পার্কে নিয়মিত প্রাতভ্রমন, বৈকালিক ভ্রমন করায় পার্কটির সংরংক্ষন ও ব্যাবস্থাপনা ভাল।
দাড়ালো যে আমরা যদি নিয়মিত কিছু ব্যাবহার করি এবং তার সাথে পদস্থদের আনাগোনা যোগ হয় তাহলে আমরা পরিচ্ছন্ন থাকি।সেটাও আমাদের এক উৎকট পদলেহি প্রবনতার দিকে আঙ্গুলি নির্দেশ করে।আবার ক্যান্টনমেন্টের যেসব যায়গায় পদস্থ কর্মকর্তারা যায় না সেসব জায়গাও পরিচ্ছন্ন।কন্ঠশীলনে পদস্থ কর্মকর্তাদের তেমন আনাগোনা আছে বলে আমার জানা নাই।বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভোক্তারাও তরুন।তাহলে কি ধরে নেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, সওরোওয়ার্দি উদ্যান কতৃপক্ষ্য তাদের নিয়মিত ভোক্তাদের প্রতি উদাসিন।হাইকোর্ট ও সওরোওয়ার্দি উদ্যানে জড়ো হওয়া বিপুল গঞ্জিকা সেবি অবস্য অনুষংগজাত কারনেই সামাজিক পয়পরিচ্ছন্নতার বিবিধ শর্তাবলির দায়ভারমুক্ত!
অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের ফোকর গলে যেসব সামাজিক বিষ সঙ্ক্রমিত হয়, তার প্রায় সবকটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকট।আবার দেখা যাবে এসব প্রতিষ্ঠানে ইসলাম ধর্মাবলম্বি পুরুষদের ইবাদতের জন্য প্রায় প্রতি ভবনে স্থাপনা যোগ করা হয়েছে।আনুপাতিক হারে ঢাকা শহরের অন্যান্য
জায়গায় মসজিদ উপচে, রাস্তা আটকে যেরকম জুম্মার নামাজ আদায় হয়, সেরকম না হলেও হিজাবিদের তুলনামুলক সংখ্যাধিক্য ঢাবিদেও দেখা যায়।কিন্তু ইবাদতের সাথে পরিচ্ছন্নতার যোগাযোগ থাকলেও সে প্রবনতার সুফল এক্ষেত্রে দেখা যায় নাই।অপরাপর বিভাগগুলোর মত ইসলামি ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রিগনও তাদের টয়লেটকে পরিস্কার রাখতে পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের এবং সেটলার বাংগালিদের বাসাবাড়িগুলো পরিচ্ছন্নতার নিরিখে চেনা যায়।পার্বত্য চট্টগ্রামের সেটলার বাঙ্গালিরা অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় বেশিদুর এগোতে পারে নাই এবং বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠির অংশ।কিন্তু পাহাড়ি, আদিবাসিরা দারিদ্রকে অপরিচ্ছন্নতার অজুহাত বানাচ্ছে না।আবার ঐ দরিদ্রদের ভেতর মেধাবিদের যদি ঢাবির মত অপরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাসে পাঠানো হয়, সেখান থেকেও তাদের প্রবনতার হেরফের হবে না।মহাশ্চর্যের এটাই যে ঢাবির অনেক শিক্ষক, শিক্ষিকা উন্নত, পরিচ্ছন্ন দেশে দির্ঘদিন কাটিয়েছে।
ঢাকাতে অবস্থাপন্নদের ব্যালকনিগুলোও অনেক সময় পরিত্যাক্ত সরঞ্জামে ঠাসাঠাসি দেখা যায়।কিন্তু সেগুলো বিলিয়ে দেবার কোন প্রবনতাও নেই, আর যেহেতু প্রবনতা নেই, সেহেতু তা ঘিরে কোন ব্যাবস্থাপনাও নেই।অনেক অবস্থাপন্ন কথিত শিল্পি, বুদ্ধিজিবিদের বাড়িতে গিয়ে কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও এটাসেটার অপরিচ্ছন্নতা দেখে মন খারাপ হয়ে গেছে।
মোদ্দায় দাড়ালো যে ধর্মের বিধান দিয়ে, সামরিক শৃঙ্খলা দিয়ে বা কথিত উচ্চশিক্ষা দিয়ে পরিচ্ছন্নতার প্রবনতা তৈরি হয় না।পরিবারের একটা ভুমিকা থাকে, উদাসিনতা পার হয়ে ব্যাক্তির অর্জিত প্রবনতারও বিশেষ ভুমিকা থাকে।ক্যান্টনম্যান্ট, কন্ঠশীলন, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের মিশেল থেকে আমরা পরিচ্ছিন্নতার ব্যাক্তিক ও সামাজিক অনুশিলনে প্রানিত হতে পারি বৈ কি!আর ভরা বর্ষার আগে পরিচ্ছন্নতাইতো বাঙ্গালির প্রধান বর্ম হবার কথ!
চয়ন খায়রুল হাবিব
২৭/০৪/১৭
ঢাকা