Tuesday 18 November 2008

নভেরায় হংসনিল

দ্রস্টব্যঃ সংস্কৃত-শিব্যলেথ অর্থাৎ শ্রেনি বিভেদের ভাষা-হাতিয়ার ইকার, উকারের বৈষম্য আর চাদবিন্দু এ-কবিতাতে ব্যবহার করা হয় নি।বাংলা ভাষাভাষি মানুষের নাক, চোয়াল, জিভের গড়ন আর এসব উচ্চারনের জায়গাতে নেই।


হাওরে বাওরে
দেবংশিদের নাইওর নভেরার
হাতুড়ি বাটাল ছেনি
আমাকে
রিতিমত চমকেছে
প্রবালি কমলায়
ইটভাটার নিলাশায়
বানভাষি অডানায়
পকুরনিল
আকাশনিল
হংসিগুলো
অংশিদার এখন
পথহারা ঘরছাড়া
নভেরা-নিল-নিষাদের


বাংলাদেশি  ভাস্কর্যের বড় আম্মা
কেন গো হংশিদের পালকে
এমন বিষাদ

ক্ষরার অবসাদ
কি ভেঙ্গে চুরমার করে নাই
কুমারটুলিতে
গ্যন্ডারিয়াতে
রায়ের বাজারে
প্রমিতামহিদের হাতে গড়া
মনকা পাথরের
খেলনা হাড়ি পাতিল মুর্তি


মনকা
মানে
আকিক মেশানো মাটি
ভিজবার আগে
ওরা ভেঙ্গেছিল
স্লেট-পাথর-ভাঙ্গা
রাজকিয় বাঘের চোখে
পাকা কামরাঙ্গা পোড়ানো
আমন শুকানো নিদাঘে

জমাট মাটি আবার ভেজে বর্ষায়
গাছগাছালি পাখপাখালি
ইট পাথর বালি গুগলি শামুক শুশুকসহ
বাংলাদেশি হংশির
গোলাপি পায়ের পাতা
হাসন রাজার নাশকতাকে চেরে
হাসনেরই কোমল সাতারে
পানির রাজা বদর পির
বেহুলা লক্ষিন্দরের বিয়েতে
ঘটকালি করে


মাটির খেলনায়
খেলতে খেলতে
মাটির শিশু নভেরা ঘুমায়
মাটির দোলনায়

সোলেমানি উপকথার খাটিয়ায়

শিশু কিন্তু আসলে ভেজে
আষাড়ের শেকড়ে
শ্রাবনের ধুনে
বধ্যভুমিতে হারানো
ইতিহাসের কবরস্থানে
কবর ফাটায়ে
ডানা ঝাকড়ায়ে
আবার আবার জাগে
বাংলাদেশের হংশি
একডানা ছড়ানো
এগার সিন্দুরের
এক্সপ্রেস ট্রেনে

আরেক ডানা হারায়েছে
শ্রিমংগলি চা পাতায় ঢাকা
পাহাড়ি-পুরানের

স্যতস্যতে হালখাতায়
কানফুল নদিতে
মহুয়া গাছের ভেলায়
বাংলাদেশি হংশিতে ভরা
জংলায়
জলায়
পটুয়াখালিতে
মংলায়



সোনালি কদমেরা হংশিদেরই গা গুটানো ছানা

কয়েক কোটি বছর ধরে
মৌমাছিদের স্বচ্ছ ডানা
মৌমাছিদের দেহের বাইরে
ওড়াওড়ির কারবারে
আর কদমরুপি হংশিছানারা
তাদের রেনু-পালকে
মৌমাছিদের আকর্ষনে ব্যস্তসমস্ত ছিল

রেনুতে জড়ানো
পালকে প্যচানো
ব্যক্তিগত রংধনু হারাতে হারাতে
কদমেরা হংশিছানারা
নভেরার বুকে গাথা মৌমাছিদের
স্থাবর অস্থাবর
মৌচাক ও কবর
বদলাবদলি করেছিল
বাংলাদেশের মানুষের সাথে

রাগে অনুরাগে
স্বাদে বিস্বাদে
কদম মৌমাছি
আর হংশিছানারা
ডালে অডালে
থোকায় ও থুক্কুতে বেশ ঝুলেমুলে ছিল
কোনোই মেটামরফসিস ঘটে নাই
বর্নাশ্রমের কোপানলে
মুঘলের খেয়ালে
ব্রিটিশের বিভাজনে
পাকিস্তানের চোয়ালে
ঘটবার আশঙ্কা
একটু একটু করে হাজার বছর ধরে
বধ্বমুল হচ্ছিল
রেসম-পোকার ভেতর প্রজাপতি
কদমের ভেতর হংশিছানারা
যাবতিয় আমিষ নিরামিষ প্রান
এতে খুব অস্বস্তিতে ছিল



“অস্বস্তি” শব্দময়
সালতামামি সংখ্যায়ঃ
১৮৫২
১৯৫২, ১৯৭১
অস্বস্তি মানে মহাগুমোট অস্বস্তি
চিন্তা করুনঃ
কদমের ভিতর হংশিছানা
হংশিছানার কলিজাতে
মৌমাছির পাখনা
এই দেহতত্ত্ব
আঠায় আঠায় সাটা
কমিউনিস্ট আর জ়েনারেল পত্নিদের
গোপন কদমেঃ
নান্দিগ্রাম সারা
চলেশের ছেলে পিতৃহারা

কোন ভাটাতে পুড়ে ঐ পাথরখাকি নভেরা



জেরা পালটা জ়েরাতে
জ়েনারেল আর কমি’রা জানতে পেল
স্ত্রিদের কদমে বসা
মৌমাছিরাই আসলে
শুমারিতে নিখোজ
অজুত কোটি হংশিছানা
আর বসাটা একেবারে চিরস্থায়ি বসা

কমিউনিস্ট আর মৌলোবাদিরা এককাট্টা হলোঃ মাতৃদায় আমাদের
দায়মুক্ত হতে চলুন গ্রেনেড ফাটাই
আমাদের স্ত্রিদের কদমে

ছররায় ছররায়
গ্রেনেডের বিস্ফোরনে
আত্মবিনাশি বুলডজারের তান্ডবে
কদমদের সাথে সাথে
হংশিছানারাও
মৌমাছিরাও পুড়ে গেলঃ
বাস্তুহারা বাবুপুরার সাথে
জিবন বদলালো বাস্তুহারা নভেরাঃ
বড়লোক বাড়ির ফোয়ারার মাঝখানে
পেটে গর্ত খোড়া পাথরের ষাড়
চার কোনায় চারটা পাথরের সিঙ্ঘ
ঝাপায়ে পড়বার অপেক্ষায়

নিজের চারপাশের অনাত্মিয় বিকারে
নভেরা জেনেছিল
শিকারি যে সেইত কালের প্রথম শিকার
সেইত ডুবে যাবে
সকালের
বিউগলে বিহ্বল
জোর কদম
কুচকাওয়াজে
জাহাজি হারানো জাহাজে
প্যরিসের সাজেলিজে
ক্যমি ক্লদেলের ভাস্কর্যে


লাজে
বেলাজে
মিরাবো সেতুকে খায়
আপোলিনেয়ারের
মাথার খুলিতে বেধা
বিশ্বযুধ্বের সপ্লিন্টার
আর তুই রাজকুমারির চিতকারঃ
মাথা ব্যথা দাত ব্যথা পেট ব্যথা
মাজা কোমর পা ব্যথা ব্যথা ব্যথা
শিতে ঝরে
স্বপ্ন-স্যকা
অভিবাসনের রুপকথাঃ

আপোলিনায়ারঃ তুই আমার মা
নভেরাঃ মা ডাকলি, আবার আমাদের শোয়াশুয়িও হ'লো!প্যরিসকে এবার মড়কে খাবে!
আঃ ওটাত গ্রিক ট্র্যাজেডির ব্যপার।য়োকাস্টাত সত্যিকারভাবেই ইদিপাসের মা ছিল।
তুইত আর সত্যি সত্যি আর আমার মা নস।
নঃ মিথ্যামিথ্যি দুধ ভাত মা!
আঃ মিথ্যা না, মিথ্যা না,স্বপ্নত সত্যও না মিথ্যাও না!
নঃ সত্যালোকে তোর সাথে দেখা হলনা।তাইত স্বপ্নালোকে তোকে আমি ভিতরে নিলাম!


আহ কি আরাম
স্বপ্নে
শোধনে
ফাটালাম
দেহ-কার্তুজ
আঃ নিমেশে নির্বানে
গলে
না ফাটা বোমার খোল

এখন আমরা
জিবনের যৌথ মাদল
মনিপুরি নাচের
টুং টুং টুং
নারি-নিবিড়তায়
পাহাড় পরেছে
কালো সিল্কের মোজা
কলাপাতা চিরে চলে যায়
ভোরের কুয়াশাঃ
কুয়াশা ভেজ়া আঙ্গুলে
আমি ছুই মোজায় ঢাকা কলাগাছ
মোজাতে চোখ বোজা
পাহাড়ি পায়ের পাতা
পাহাড়ি পায়ের তালু




গর্ত কেন?
আপোলিনেয়ার এ-প্রশ্ন সুধাতে

নাকের কানের চোখের মুখের
গর্তগুলোতে হাত বোলাতে
বোলাতে
নাভিতলে যোনিগর্তে
পরমাত্মার সঙ্কেতে
শব্দময় হতে হতে

নভেরা বলেছিলঃ

গর্ত ভিতিকর
গর্ত প্রিতিকর
গর্তই পরম অধ্মাত্ম

আর সে-অধ্মাত্মে পোয়াতি
বাংলাদেশি হংশি আর তাদের ছানারা
আর আর মৌমাছিরা
এবং সোনালি কদমের রেনুরা
এখন লেপ্টালেপ্টি
কাদামাটির স্লেটে
কার্বন পোড়া কাফনের লিখনে
নভেরার দহনে।

চয়ন খায়রুল হাবিব
অক্টোবর/২০০৮
লন্ডন

নভেরা'র ভাস্কর্যেগুলোর ছবি ঢাকা'তে জাতিয় যাদুঘর প্রদর্শনিতে আনুষ্ঠানিক অনুমতি নিয়ে মনজুরুল আজিম পলাশের তোলা।
ছবির স্বত্ত্বঃLINK BANGLA।অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বাঞ্ছনিয় নয়।