![]() |
জাহানারা বেগম জ্যোতি |
উৎসর্গ পত্র
বিড়িখোর সেই রাজকন্যাকে, আম্মা'কে
সকলের গড় আয়ুর চেয়ে এগারো বছর আগে চলে গেলে
চণ্ড সেই ক্যান্সার যন্ত্রণা তোমার চোয়ালে
প্যারালাইজড হয়ে পড়ি ভাবতে গেলে
মন খারাপ হই প্যারালাইজড হই না আসলে
যন্ত্রণা অনেক কম পেতে নিয়মিত গাজা সেবন করলে
সি, এন, এন রিপোর্টে সর্বাধুনিক মেডিকেল সাইন্স তাই বলে
এগারো বছরের হায়াত দরাজের এই হিশাবটা কোথায় পেলাম
'মরণ রে, তুঁহু মম শ্যামসমান' মাতৃস্মরণে একটা নামতা বানালাম
বিড়িখোর না বলে যদি বলি চেন স্মোকার
তাইলে কি বদলে যাবে
আচলের গিট খোলা বরাদ্দের আটানায় কেনা
আলির দোকানের মধু সন্দেশ আর বরইর আচার
আমার মায়ের ব্র্যান্ড ছিলো কড়া তামাকের কম পয়সার স্টার
সাইকেল চলো রাইফেল বলো
পিন্ডি পেশাওয়ার সারগোদার বিমানঘাটিতে
চোদ্দগ্রামের কিশোরী মেয়েটি
ঘোড়সওয়ারিতে চানমারিতে,ছিলো বেশ খাসা
এই ফোকাফোকি পেয়ে বসে
আমার আর যমজ বোনের জন্মের সময়ের ঠিক আগে
না কি তার পর পর মধ্য বয়সের ঢাকায়
মানে ষাটের দশকে প্রিয় এক ছোট ভাইয়ের স্মরণশোকে
যে ভাইয়ের সাথে দুষ্টামি ছলে শুরু সেই ধূমজালের নেশা
তারপর সাকো ছেড়ে পালালো নদী
নদিতে ডুবে গেল ঘর সেটা ছিলো মুক্তিযুদ্ধের বছর
ছয় সন্তানসহ আরো বেশুমার উদ্বাস্তুর সাথে
এ গ্রামে সে গ্রামে নয় মাস পালিয়ে থাকার পর
স্বামী ফিরে পেলো ধ্বংসপ্রাপ্ত এক বিমানবন্দর
রানওয়েতে ছড়ানো নিঝ্যুম সব কার্তুজ মিসাইলের খোল
আজিমপুর বাসার লাগোয়া বাগানে রক্তজবাদের বিচিত্র মাদল
মেয়েটির মনে তখন শুধু সাগর জাগানিয়া অবসন্ন ঘুম
দুপুর ছাড়িয়ে বিকাল পাল খোলে লালবাগের দেয়াল ঘেসে
বেড়িবাধ ধরে জবুথুবু বুড়িগঙ্গা শহর থেকে দুরে চলে যায়
যেতে যেতে কেউ একজন কারো নাম ধরে ডাকছে
তোমার আম্মার নাম কি গো নাম কি গো হে তিথি ভাঙ্গা অতিথি
আমার আম্মার ডাক নাম জ্যোতি
জেন্টেলভাবে জ্যোতির কবরের পাশে
একটা কাঠালিচাপার গাছ লাগাতে ইচ্ছা করছে
গাছটা এখনো লাগানো হয় নাই
অথচ কলিগুলো চোখ মেলছে লং শটে
আর ক্লোস শটে টিফানির ব্রেকফাস্ট রেস্তোরায়
অড্রে হেপবার্নের কনুই অব্ধি ইয়া লম্বা সাদা দস্তানায় ধরানো
ইয়া লম্বা পাইপের আগায় বসানো ফকফকে ধবল বিড়ির
নিলাশা ধোয়ার চক্কর হাসছে ভাঙ্গা লিরিকের মেহগনি বনে
চয়ন খায়রুল হাবিব
৬/০২/১৭
ব্রিটানি
২০২২এ প্রকাশিতব্য উপকথা সংগ্রহ।