Friday, 8 November 2024

'নন্দিত নরকে' উপন্যাস নিয়ে কেনো ভাবছি?

 

তরুণ হুমায়ুন আহমেদ

লোকজনের ছবি, কবিতা, আঁকাআঁকি দেখি। সেসবে একটা নির্বিকার ভাব, য্যানো কোথাও কিছু ঘটে নাই। এই নির্বিকার অবস্থা থেকে, যাদের আমরা বিকারগ্রস্ত বলি তাদের প্রতি, তাদের জন্য নাম কা ওয়াস্তে বানানো  প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অযত্নটা বুঝি।

সেই বড় মেয়েটি, সেই বড় ভাইটি, সেই ছোট ভাইটি, সেই ছোট বোনটি, সেই বাবা, মা, সেই মাস্টার কাকা। বড় মেয়েটি যুবতী,দেখতে সুশ্রী, তাকে বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী, পাগল, উন্মাদ, অটিস্টিক, স্কিজোফ্রেনিক বললে কি তার পরিণতি বদলে যাবে?

হুমায়ুন আহমেদের বই কত কোটি কপি বিক্রি হয়েছে। সবাই তা থেকে কত ভালো, মন্দ আবেগের ঘটনা, কোটেশন শিখেছে। এরকম লেখক একটা জাতি, একটা ভাষা তৈরি করে পলে পলে। ঐ নির্মাণ বলে দেয়, আরো কত সমকালীন স্থানীয় ভালো লেখক তার চারপাশে ছিলো। একজন লেখক ভুঁইফোড় নন, আকাশ থেকে পড়েন না, পরিবেশ থেকে এগিয়ে থাকলেও আবশ্যকিয়ভাবে সে পরিবেশের ফসল। 

যে হুমায়ুন  তার স্বোপার্জিত এবং পরিবেশ প্রসূত পরিশীলনে চারপাশ আমাদের দেখালো, আমরা সে পরিশীলনটুকু বুঝতে ব্যর্থ হয়ে, কোন ফাকে হীনমন্যতা আক্রান্ত হয়ে আমাদের বইয়ের তাক, বইয়ের দোকান ভরিয়ে ফেললাম কোলকাতার বইপত্রে। এক ধরনের চাহিদা আর যোগান হচ্ছে পরিশীলনপ্রসুত, যা থেকে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ,  হুমায়ুন আহমেদ, মাহমুদুল হক, সেলিনা হোসেন, নির্মলেন্দু গুন, আবুল হাসান, দিলশাদ খানম, সুরাইয়া খানম তৈরি হয়। আরেক ধরনের চাহিদা এবং যোগান হচ্ছে হীনমন্যতা প্রসূত, এর থেকে যে পশ্চিম বঙ্গীয় মুদ্রণ বাজারের ভোক্তায় আমরা পরিণত, তা পুরোপুরি গায়েব করে দিয়েছে উল্লেখিতদের। 

পশ্চিম বঙ্গীয় সাহিত্য আগ্রাসন, আমাদেরকে যদি আরো ভালো সাহিত্যানুরাগী করতো, তাহলে হুমায়ুনের সমকালীন ভালোরা আউট অফ প্রিন্ট হতো না । হুমায়ুন আহমেদ এখানে একা। প্রকাশকের পাওয়া অঢেল অর্থের মাপের পরও হুমায়ুন আহমেদ একা। হীনমন্যতার কাছে এখানে পরিশীলন পরাজিত হয়েছে, বাজে টাকার কাছে ভালো টকার পরাজিত স্ফীতির মত। আমরা জানতেই পারছি না আর মুস্তফা আনোয়ার কে, কেনো আবু রুশদ ওনাকে নিয়ে লিখেছিলেন। 

আমার প্রকাশক জাগৃতির প্রতিষ্ঠাতা দীপনকে জঙ্গিরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। দীপনের বাবা এখন বাংলা একাডেমির সভাপতি হলেন। কোভিডের সময় দীপনপুরের গুটিয়ে যাওয়া দেখে বোঝা গিয়েছিলো যে আমাদের পরিশীলিত মোটা গাছগুলোকে ওপড়ানোর মাশুল দিচ্ছি আমরা। দীপন সাহস করে অভিজিত রায়ের বই পত্র প্রকাশ করতো। অভিজিতকেও হত্যা করা হয়েছিলো। দীপনের বাবা যে ঢেউ বদলে দিতে পারবেন, তা মনে হয় না। ওনার ছাত্র,ছাত্রীরা জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ছাত্রছাত্রীদের মতোই পুরপুরি প্রস্তুত একটি পাঠক সমাজকে অপ্রস্তুত হীনমন্যতায় ফেলে এই অবস্থায় এনেছে। আমরা সবাই য্যানো 'নন্দিত নরকে'র বড় বোন, সবাই য্যানো সেই ছোট ভাই। 

বলতে দ্বিধা নেই বাংলা একাডেমির অভিভাবকদের, জাতীয় কবিতা পরিষদের নেতৃত্বকে, জাতীয় গ্রন্থ-কেন্দ্রের পরিচালকদের, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের, সাহিত্য এবং কলা শাস্ত্রের শিক্ষকদের, সংবাদপত্রের প্রতিবেদকদের,  লিটল ম্যাগের সম্পাদকদের কথা ভাবলে আমার 'নন্দিত নরকের'  মাস্টার-কাকার কথা মনে পড়ে।

হুমায়ুন আহমেদের প্রকাশক এখন জাতীয় পুরস্কারের প্যাকেজ বিক্রি করছেন। শুল্ক কমিশনার, ব্যাংকাররা সেই প্যাকেজ কিনছেন,আর  কোলকাতার কবিদের এনে বৈঠকখানা ভরিয়ে তুলছেন। হুমায়ুন আহমেদকে 'একা' বলেছি, তার অবদান আরো লাখো কপি বিক্রি হলেও তিনি একা। একটি জনপ্রিয় সাহিত্য থেকে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তৈরি হয়। ভারতীয়রা একাধারে শরৎচন্দ্র, মান্টো, প্রেমচাঁদ, সুনীলকে নিয়ে কাজ করেছে। আমাদের এদিকে সাহিত্য নিয়ে কাজ করাকে বলা হয়েছে আর্ট ফিল্ম। হুমায়ুন আহমেদের জনপ্রিয়তাকে অনেকে বলেছেন সস্তা জনপ্রিয়তা। হুমায়ুনকে পুরো একটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গড়ে নিয়ে নিজের লেখাকে চলচ্চিত্রের আনতে হয়েছে। সেখানে যে তিনি ব্যর্থ তা নন, কিন্তু এটি বিপুল, বিশাল ভার। সামাজিক, নান্দনিক হীনমন্যতাকে একাই মোকাবেলা করতে চেয়েছেন।

একাই বটে। শামসুর রাহমানকে নিয়ে হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন 'নিঃসঙ্গ শেরপা'। যার উত্তরে সৈয়দ শামসুল হক লিখেছিলেন, 'শেরপা নিঃসঙ্গ নয়'। অনেক সময় একজন ক্রিটিক তার জায়গা থেকে, তার দুরভিসন্ধি থেকে একজন মেজর লেখককে একা করে দিতে পারেন। হুমায়ুন আজাদের বইটি ছাড়াও শামসুর রাহমান বাংলা ভাষীদের প্রধান কবিদের একজন হয়ে থাকবেন। কোলকাতা কোলকাতা করছি বলে অনেকে আমাকে বর্ণবাদি, জাত্যভিমানী বলবেন। যে যেভাবে দেখতে চায়। আপনাদের বলবো যে শহীদ কাদরী, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, মাহমুদুল হকের ভাষা পাশাপাশি করে তুলনা করুন। জন্রে আলাদা হলেও এখানে তুলনা করা যাবে। দেশ বিভাজনের পর পরিবারের সাথে কাদরী, মাহমুদুল বাংলাদেশে এলেও তাদের লেখাতে পশ্চিম বঙ্গের এক্সেন্ট থেকে গেছে। সেখানে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, হুমায়ুন আহমেদদের ভাষা শৈলী বা ধাঁচ এদিকের। এটা অনেকটা বিলাত, অস্ট্রেলিয়া, এমেরিকার ইংলিশের পার্থক্যের মত। আবার একই এমেরিকাতে ইংলিশ শত দিকে চলিষ্ণু হয়েছে। জে, কে, রাউলিং পড়লে বোঝা যায় তার চরিত্ররা কাল্পনিক হলেও, সে চরিত্রায়ন ঘটছে বিলাতের ছোট্ট দ্বিপে, এমেরিকাতে নয়। 

কোলকাতা-মুখি আমাদের হীনমন্যতার কারণে আমাদের এদিকের অনেক উপভাষা হারিয়ে গেছে। শামসুর রাহমান জন্মেছেন, বড় হয়েছেন  পুরান ঢাকায়। সেখানকার মূল ভাষা 'কুট্টি' এবং 'সুখবাস' হারিয়ে গেছে। রাহমানের 'স্মৃতির শহরে', তার 'মাতোয়ালা রাইতে' সেই ভাষাভাষীদের ফ্লেবার ধরে রাখা আছে। লন্ডনের যে টোয়াং ককনি হিশেবে পরিচিত, অক্সফোর্ড ইংলিশের কাছে তা পিছু হটে যায় নাই। এদিক থেকে আমার বরিশাল থেকে কোলকাতায় যাওয়া জীবনানন্দকেও একাকী মনে হয়, হীনমন্য মনে হয়। তবে  একাকী হীনমন্যতার ভেতর, কোলকাতায় থেকেও জীবনানন্দ এদিকের এক্সেন্ট ধরে রেখেছিলেন।

'নন্দিত নরকে'র কথা অল্প একটু বলেই চলে গেছি তুলনামূলক সাহিত্যের আলোচনায়, বাংলাদেশের বইয়ের বাজারের আলোচনায়। মানসিক প্রতিবন্ধীত্বের চূর্ণ, বিচূর্ণ সমস্ত স্বরূপের দর্পণই ভাষার এবং সাহিত্যের মাধ্যমে সম্ভব। ফরাসি মনো-সমীক্ষক ও মনোরোগ চিকিৎসক জাক লাকা ভাষাবিজ্ঞানে প্রভূত অবদান রেখেছেন। গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক যখন কলম্বিয়াতে তুলনামূলক ভাষাতত্ব ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন, তখন ফরাসি থেকে প্রথমে অনুবাদ করেন জাক লাকাকে। এটা বলার কারণ এ জন্য, পশ্চিম বঙ্গের বিনয় মজুমদারকে নিয়ে আমরা অনেক কিছু বলি। বিনয় এক পর্যায়ে পুরোপুরি স্কিতজোফ্রেনিয়ার শিকার হন এবং গায়ত্রীকে নিয়ে স্থায়ী ফিক্সেশানে চলে যান। তাদের কখনো দেখা বা সখ্যতা হয়েছিলো বলে জানা যায়  না। কিন্তু অনেকে অনেক কিছু বলতে ভালবাসেন। 

গায়ত্রীর পুরো অর্জনটুকু পশ্চিমে। 'নন্দিত নরকের' চরিত্র নিয়ে ভাবতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, এ স্বল্প দীর্ঘ উপন্যাসটির ব্যাবচ্ছেদ করতে, মিথগুলোকে পাশ কাটিয়ে, মনোচিকিৎসা বা সাইকোনালিসস ও ভাষাবিজ্ঞানের মিশেল দরকার। কোলকাতার বাজার আগ্রাসন নিয়ে বললেও আমি মহাশ্বেতা, সুনীল, বিনয়, গায়ত্রীদের বড় লেখক মনে করি। বড়কে বড় বলতে বাধা নাই। কিন্তু বড় যদি অন্যার  বিকাশ বন্ধ করে দেয় তা ছত্রাকের প্রভাব, মননের প্রভাব নয়। পশ্চিম বঙ্গীয় ছত্রাকের প্রভাবে আমরা আর বাদবাকি ভারতীয় সাহিত্যকেও তেমন জানতে পারছি না।

'নন্দিত নরকে' হুমায়ুন চরিত্রদের পরিবেশ, বিত্ত নিয়ে একটু বলে  মর্মান্তিক ক্লাইম্যাক্সে চলে গেছেন। সেই  'একটু বলা' আমরা পাই হেমিংওয়ের 'ওল্ড ম্যান এন্ড  দা সি', 'সান অলসো রাইজেস' ধরনের বইতে। বড় বোনকে যদি ওফেলিয়ার মাপের, ছোট ভাইকে যদি হ্যামলেটের মাপের সংলাপ দিতেন তাহলে কি চরিত্রগুলোর ব্যাপ্তি আরো বাড়তো? বরং উলটো করে বলা যায়, চরিত্রগুলো অল্প বলেও মহাকাব্যের ব্যাপ্তিতে চলে গেছে। এ ঘটনাটিকে আত্মস্থ করে হুমায়ুন যখন লিখছেন, ১৯৭২ সালে তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে পড়ছেন, আবাসিক ছাত্র হিসেবে থাকছেন হাজি মোহাম্মদ মোহসিন হলে, যে হলে এক সময় পাক সেনারা নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, যে হলে স্বাধীনতার পর পর সরকারি ছাত্র দলের নেতা অপর বেশ কিছু ছাত্রকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করেছিলো।

এসব চড়া দাগের সাদা, কালোর আবহে 'নন্দিত নরকে'র চরিত্ররা সরাসরি সাদা, কালো নয়। মানসিকভাবে অস্বাভাবিক বড় বোন ছাড়াও অন্যদের ভেতরেও একটা মেলাঙ্কোলিয়া, একটা আড়ালচারিতা, একটা সার্বক্ষণিক মৃদু লয়। গর্ভধারণ, হত্যা সব মিলিয়ে একটা ক্রেসেন্ডো তৈরি হয়েছে, যা পাহাড় কেটে একটা রক্তাক্ত ঝর্ণাধারায় আমাদের ভাসিয়ে নেয়, আবার ভাসিয়ে নেয় না। আমরা চুপচাপ, আনমনা হয়ে পড়ি। সাহিত্যের পরিভাষায় যা এলিয়েনেশান। ছাত্র হুমায়ুন তো টেনিসি উইলিয়ামসের সেই টান টান 'স্ট্রিট কার নেমড ডিসায়ার' দেখেন নাই,  আর্থার মিলারের 'ডেথ অফ এ সেলস্ম্যান' দেখেন নাই। না কি এসব পড়েছিলেন? এই তথ্য আমরা জানি না।

আমরা জানতে পারছি,  হুমায়ূন আহমেদের বাবা, ছয় সন্তানের জনক ফয়জুর রহমানকে ১৯৭১ সালে পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর তীরে পাকিস্তান আর্মি  গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। এখান থেকে আমাদের একটা সেন্টিমেন্ট তৈরি হবার কথা এবং হয়। অনেকে সেই সেন্টিমেন্টকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। 'জীবন যে রকম’এ এই তথ্যটি  'নন্দিত নরকের' বড় বোনটি বাংলাদেশের প্রতীক কি না, সে প্রশ্ন জাগায়। কিন্তু আমরা বাংলাদেশ প্রবর্তনাটি নিহত হোক তা চাই না। 

'নন্দিত নরকে' উপন্যাসে আমরা ছোট ভাইটিকে হত্যাকাণ্ড ঘটাতে দেখি। এ হত্যা কাণ্ডটি কি কামুর 'আউটসাইডার' ধরনের নির্বিকার বোধ থেকে, না কি প্যাশনেট প্রতিশোধ স্পৃহা থেকে এসব প্রশ্ন আমরা আনতে পারি জীবনের আরো অভিজ্ঞতার পর। কামু 'আউটসাইডার' লিখেছিলেন ২৮ বছর বয়সে, আলজিরিয়ার ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ থেকে ফ্রান্সে এসে। হুমায়ুন 'নন্দিত নরকে' লিখছেন ১৯৭১এর জেনোসাইডের পর। হত্যাকান্ড ঘটানোর আগে বা পরে হত্যাকারী সম্পর্কে বিষদ কিছু নেই। সেই হত্যাকাণ্ডটি থেকে খালাস পেলে ঐ তরুণের জীবন কি রকম হতে পারতো? হত্যাকাণ্ডটি হবার পর কি আমরা উপন্যাসের আর সব চরিত্রের পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে চাইছি? অন্তত পুলিশ তা জানতে চাইবে।

আমরা পুলিশ নই, পাঠক এবং বিচারক। আমরা কি সবাইকে কাঠগড়ায় দাড় করাবো? না কি শুধু হত্যাকারীকে? কাঠগড়ায় কি আমরা দাড় করাবো, বিচারিক হত্যাকান্ডের খবরে আমাদের সন্তুষ্টির জন্য? কিম্বা হত্যাকারীর প্রতি দুঃখবোধ থেকে, আমরা কি হত্যার শিকারের প্রতি এবং  গর্ভপাতের ওষুধে মরে যাওয়া বড় বোনটির প্রতি আমাদের মর্শকামি চাহিদা উপভোগ করবো? আমরা কি হত্যার শিকার আত্মীয়কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে মনে করবো, যে তার এভাবে নিহত হওয়াটা ঠিক ছিলো?

'নন্দিত নরকে' অবলম্বনে তৈরি নাটকটি বিটিভিতে দেখেছিলাম শৈশবে। টিভিতে সবকিছু দেখতাম, ভাবতাম না। পড়ার পরও কি খুব একটা ভেবেছিলাম? তা মনে পড়ে না। কিন্তু বহু বছর পর আজকে ভাবলাম।


চয়ন খায়রুল হাবিব 

৯/১১/২৪

ব্রিটানি, ফ্রান্স