স্টুডিওতে ভ্যানগেলেস সত্তর দশকে |
ভ্যানগেলেস প্রথমে শুনি ঢাকায় ১৯৮১ সালে,
'চ্যারিয়টস অফ ফায়ার' ছবিতে ফুলার রোড ব্রিটিশ কাউন্সিলে।
ছবিটা মুক্তি পাবার সাথে সাথে দেখতে পেরেছিলাম,
বুঝে না বুঝে কালচারাল সেন্টারগুলোতে বিদেশি ছবি দেখতাম।
আজিমপুর থেকে হেটে হেটে চলে যেতাম ধানমন্ডিতে
গেটে সেন্টার, আলিয়ান্স ফ্রসেস, ভারতীয় আর রুশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে
সবুজাভ ঢাকার হালকা ভিড়ে বন্ধুরা ছিলো রডডেন্ড্রন, বাগান বিলাস।
বাসার সামনে কানে রেডিও চেপে চলে যাচ্ছে প্রেমাংশুর নির্গুণ।
বন্ধুদের ভেতর ইগেলস, এলভিস, বিজিস, য়্যাবা নিয়ে হুড়োহুড়ি।
তখনো আমি কাদামাঠে ফুটবলে মত্ত, আর এদিকে ওদিকে আড্ডা।
অবশ্য বারান্দার ঘরে দেয়ালে ছোটো ছোট বনিএম পোস্টার।
মামাতো ভাই রুবেনের কৈশোর থেকে ছিলো ইয়ামাহা গিটার।
রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল গীতি, হেমন্ত, সুচিত্রা মিত্র, দেবব্রত,
ভুপেন, লতাদের সাথে মিশেছে বিটিভির শাহনাজ ও জাফর ইকবাল।
রুবেনের ক্যাসেট প্লেয়ারে শুনেছি সায়মন, গার্ফুঙ্কেল, মাহিনের ঘোড়াগুলো।
ভ্যানগেলেস শোনার পরও ভ্যানগেলেসকে তখন বুঝি নাই।
কিন্তু কানে, চোখে লেগে আছে সিনথেসাইজারে বাজানো
পিয়ানোর আবহে সাগর পারে সেই দৌড়বিদদের কঠোর রেওয়াজ।
প্রগ্রেসিভ রক, ইলেকট্রনিক নিউ এজ টেকনো সমঝাতে
য্যানো ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ চাকুরি ছেড়ে লন্ডনে হারিয়েছিলাম।
ফরাসি, জার্মান সিনেমার খোলামেলা দৃশ্যগুলোতে
অনেক অনেক বাসন্তী আলো ফেলে,
প্যাস্টেল নম্রতায়, বেচে থাকার তীব্র সংগ্রামে,
কুরিয়ার সাইকেল বেলে শুনেছি নন্দনের স্বরগ্রাম।
দেখা হলো বন্য বুদ্ধিজীবী নাচপাগল প্যাট্রিসিয়ার সাথে।
রিক্লেম দা স্ট্রিট, ওয়ারলি গিগে চিল আউট,
এক্সটাসির উদ্দা্ম আলোআধারিতে হঠাত ফিসফাস,
চার পাঁশে জেঁকে ধরে সাইকেডেলিক যাদুই আওয়াজ।
বিশাল ছড়ানো সিনথেসাইজারে দাড়িয়াল সেই গ্রিক
মেঘলা এনভেলাপে ঢুকিয়ে দিচ্ছে অলিম্পিয়ান বিজলি চমক।
হেলেনের কাহিনীতে জ্বলছে চন্দ্রাবতীর জোনাকি।
মাতিস-জ্যোতি জন্মালো ভ্যানগেলেসের দোলনায়।
সাগরের নিঝুমতায় যত আমি হেঁটেছি মহাসাগরের কাছে,
সেন্টিমেন্টাল স্টুপিডটি খুলেছে সেরেন্ডিপিটির বাজনায়।
যা যা আমি সুন্দর মনে রাখতে চাই 'ব্লেড রানারের'
তার সব এবং আরো বেশী সেই তীরহারা অর্কেস্ট্রার মূর্ছনায় :
''আমি এমন কিছু দেখেছি যা আপনারা বিশ্বাস করবেন না...
ওরিয়নের কাঁধ থেকে ছোড়া আগুনে ঝলসানো হামলাকারী জাহাজ...
টানহাউস তোরণের অন্ধকারে সি-বিমের তুমুল চমক।
মুহূর্তগুলো হারাবে বৃষ্টির কান্নায়... মৃত্যুর ফোটায়।''**
লালবাগ কেল্লার দেয়াল থেকে সুড়ঙ্গ পথে
যাওয়া যেতো বুড়িগঙ্গায়।আখের গুড়, মসলিন,
ঢাকাই আতর চলে যেতো পশ্চিমের বন্দরে,
গালিবের শায়েরে হাল খোলে কাভাফির কবিতা।
থেসালির সেই কিশোর যাযাবর
সত্তরের লন্ডনে গড়েছিলো সঙ্গীতের 'ল্যাবরেটরি'।
আমারে ধরায়ে দিলো 'ভাঙ্গা লিরিক, ভাঙ্গা বয়ান'।
বিদায়ি শ্বাস যে ফ্রান্সে সেখানে চয়নের বিশ্রাম।
চয়ন খায়রুল হাবিব
১৯/০৫/২২
ব্রিটানি, ফ্রান্স
**'Tears in rain' monologue from the fim 'Blade Runner'.